ঢাকা   শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪ | ১৭ কার্তিক ১৪৩১
লজ্জার হারে হোয়াইটওয়াশ

অবশেষে শান্তও বুঝলেন, ‘এভাবে আর চলে না’

Daily Inqilab ইমরান মাহমুদ

০১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৫ এএম | আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৫ এএম

শঙ্কাটা আগের দিনই জেগেছিল। তবে চট্টগ্রামের রানপ্রসবা জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম বলেই কিছুটা লড়াইয়ের আশায় বুক বেধেছিল ক্রিকেটপ্রেমীরা। তবে তাদের হতাশা উপহার দিয়ে প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ভয়াবহ ব্যাটিং ব্যর্থতায় অল্পতে গুটিয়ে গেল বাংলাদেশ। একদিনে ১৬ উইকেট হারিয়ে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হলো তারা। গতকাল চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্টের ফয়সালা হয়েছে তৃতীয় দিনেই। যে পিচে প্রোটিয়ারা ৬ উইকেটে ৫৭৫ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছিল, সেই একই পিচে দুই ইনিংসেই বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল ভীষণ হতাশাজনক। প্রথম ইনিংসে ১৫৯ রানে অলআউট হওয়ার পর ফলো-অনে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে টাইগাররা থামে ১৪৩ রানে।
দুঃস্বপ্নের মতো পারফরম্যান্স দেখিয়ে ইনিংস ও ২৭৩ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এটি তাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানে পরাজয়। ২০০২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ইনিংস ও ৩১০ রানে পরাস্ত হয়েছিল তারা। সেই রেকর্ড ২২ বছর ধরে টিকে আছে। অন্যদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকা পেল নিজেদের টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়ের স্বাদ। তাদের আগের কীর্তিটিও ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে। ২০১৭ সালে ব্লুমফন্টেইনে ইনিংস ও ২৫৪ রানের ব্যবধানে জিতেছিল তারা। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ¯্রফে তিন ব্যাটার পৌঁছেছিলেন দুই অঙ্কে। দ্বিতীয় ইনিংসে সেই সংখ্যা একটি বাড়লেও শান্ত হোসেন শান্তর দলের সংগ্রহ উল্টো আরও কমে যায়। প্রতিরোধ কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোনো ঝাঁজই দেখাতে পারেননি স্বাগতিক ব্যাটাররা।
আগের দিনের ৪ উইকেটে ৩৮ রান নিয়ে এদিন নেমে ১৫৯ করে থামে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। এরপর ফলোঅনে পড়ে ফের ব্যাটিংয়ে নেমে চা বিরতির আগেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা। এমন বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য প্রয়োজন ছিল একাধিক ব্যাটারের বড় ইনিংস খেলার। কিন্তু কেউই দায়িত্ব নিতে পারেননি। ম্যাচ শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে এদিন সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন ‘অনেক আরাধ্য’ অধিনায়ক শান্ত। তিন দিনেই এত বড় হারের মূল কারণ ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা, অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন তিনিও, ‘এটা তো অবশ্যই খুবই হতাশাজনক। এগুলো থেকে বোঝা যায় আমাদের কত উন্নতির জায়গা আছে। পাকিস্তানে ভালো ক্রিকেট খেলেই জিতেছি। মাঠে, মাঠের বাইরে অনেকগুলো জায়গা আছে, যেখানে আমাদের উন্নতি করতে হবে।’
মাঝে পাকিস্তান সিরিজটি বাদ দিলে টেস্টে এমন লজ্জার ঘটনা খুব একটা বিরল নয় দেশের ক্রিকেটে। বিদেশের মাটিতে তো বটেই, ইদানিং দেশের মাঠেও নিজেদের খুঁজে ফিরছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। শান্তও চিন্তিত সেই অধারাবাহিকতা দেখে, ‘লম্বা সময় ধরেই এ রকম হচ্ছে। টেস্টে টপ অর্ডার থেকে যদি জুটি না হয়, তাহলে পরের ব্যাটসম্যানদের জন্য খুবই কঠিন। ওপরে যারা ব্যাটিং করে, তারা কী চিন্তা করে বা কী ধরনের প্রস্তুতি নেয়, আমি জানি না। তবে এভাবে চলতে থাকলে এ রকম ফলাফলই হবে।’ বাংরাদেশ অধিনায়কের দৃষ্টিতে সমস্যাটা ক্রিকেটারদের দক্ষতা এবং মানসিকতা- দুই জায়গাতেই, ‘দক্ষতার অনেক জায়গা আছে, যেখানে উন্নতি করতে হবে। পাশাপাশি চিন্তাভাবনাতেও পরিবর্তন আনতে হবে। কোন জায়গায় উন্নতি দরকার, এটা খুঁজে বের করতে হবে।’ মাঠের বাইরের বিতর্ক নিয়ে বলেছেন, ‘এগুলো প্রভাব ফেলতে পারে। তার মানে এই নয় যে এত খারাপ খেলব, এক শ’-দেড় শ’ রানে অলআউট হয়ে যাব। খেলোয়াড়দের এই জিনিসগুলোও মানিয়ে নিতে হবে।’
এই টেস্টেই তাইজুল প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন, মুমিনুল ৮২ রানের ইনিংস খেলেছেন। অধিনায়কের আক্ষেপ, তাঁদেরকে কেউ সমর্থন দিতে পারেননি। তাই দলীয়ভাবে ভালো করাটাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন তিনি, ‘তিন-চারজন আমরা ওপরে ব্যাট করি, এখানে একটা জুটি হলেও দলের সাহায্য হয়। পাকিস্তানেও ২৬ রানে ৬ উইকেট চলে গিয়েছিল। ম্যাচ জিতেছি, কিন্তু ওপরের ব্যাটসম্যানরা ভালো করেনি। দলগতভাবে ভালো করা জরুরি। বিশেষ করে টপ অর্ডারের। তাহলে দল নিয়মিত ভালো করবে।’
হতে পারে অধিনায়ক হিসেবে এটাই শান্তর শেষ ম্যাচ। আবার তা না-ও হতে পারে। কী হবে, তা জেনে যাওয়ার কথা গতকাল রাতের মধ্যেই। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ কথা বলবেন শান্তর সঙ্গে। এরপরই আসবে সিদ্ধান্ত। সংবাদ সম্মেলনে তাই এ নিয়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি শান্ত। তবে বলেছেন, অধিনায়কত্ব তার ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে না, ‘ব্যাটিংয়ের সময় আমার কাছে একবারও মনে হয়নি আমি অধিনায়ক। অধিনায়ক বলে সব আমাকে একা করতে হবে, এমন নয়। আমি বল দেখি ব্যাটিং করি, ব্যাটিং উপভোগ করি। এখন পর্যন্ত চাপ হয়নি, আলহামদুলিল্লাহ।’ শুধু তা-ই নয়, অধিনায়কত্বটা নাকি উপভোগই করছেন শান্ত, ‘বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই অনেক জায়গায় বলে আসছি, অধিনায়কত্ব আমি সব সময় উপভোগ করি। গত কয়েকটা সিরিজও মাঠের ভেতরে আমি উপভোগ করেছি। এটা সব সময়ই আমার ভালো লাগার জায়গা।’
পাকিস্তানের মাটিতে তাদেরকে হোয়াইটওয়াশ করার কীর্তির পর এই নিয়ে টানা দুটি টেস্ট সিরিজে ধরাশায়ী হলো বাংলাদেশ। ভারতের মাটিতে বিধ্বস্ত হওয়ার পর এবার দেশের মাটিতে অনভিজ্ঞ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে উড়ে গেল তারা। সত্যিই, এবাবে চলে না। চলতে পারে না।


বিভাগ : খেলাধুলা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল

হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল

লুইস ঝড়ের কবলে ইংল্যান্ড

লুইস ঝড়ের কবলে ইংল্যান্ড

আজ জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে জাতীয় পার্টি

আজ জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে জাতীয় পার্টি

গাজায় ইসরাইলি হামলায় আরো ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত, লেবাননে ৪৫

গাজায় ইসরাইলি হামলায় আরো ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত, লেবাননে ৪৫

স্পেনে আকস্মিক বন্যায় নিহত ছাড়িয়েছে দেড়শ

স্পেনে আকস্মিক বন্যায় নিহত ছাড়িয়েছে দেড়শ

সাবেক মন্ত্রী উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী গ্রেপ্তার

সাবেক মন্ত্রী উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী গ্রেপ্তার

প্রায় ৪ হাজার বছর আগের হারিয়ে যাওয়া শহরের সন্ধান সউদীতে

প্রায় ৪ হাজার বছর আগের হারিয়ে যাওয়া শহরের সন্ধান সউদীতে

মার্কিন নির্বাচন ২০২৪ : জয় পরাজয় সমীকরণ পালটে দিতে পারে বিশ্ব পরিস্থিতি

মার্কিন নির্বাচন ২০২৪ : জয় পরাজয় সমীকরণ পালটে দিতে পারে বিশ্ব পরিস্থিতি

ইসরাইলে প্রতিশোধমূলক হামলার জবাব দিতে খামেনির নির্দেশ

ইসরাইলে প্রতিশোধমূলক হামলার জবাব দিতে খামেনির নির্দেশ

অমিত শাহকে অভিযুক্ত করলেন কানাডার মন্ত্রী, কোনপথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক?

অমিত শাহকে অভিযুক্ত করলেন কানাডার মন্ত্রী, কোনপথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক?

টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন

টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন

না.গঞ্জে ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গুতে আরও ৫০ জন আক্রান্ত

না.গঞ্জে ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গুতে আরও ৫০ জন আক্রান্ত

উত্তরায় ডেঙ্গু সচেতনতা লিফলেট বিতরণ করেন বিএনপি নেতা মোস্তফা জামান

উত্তরায় ডেঙ্গু সচেতনতা লিফলেট বিতরণ করেন বিএনপি নেতা মোস্তফা জামান

ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক উত্তেজনার মধ্যে সামরিক বাজেট দ্বিগুণ বাড়াচ্ছে ইরান

ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক উত্তেজনার মধ্যে সামরিক বাজেট দ্বিগুণ বাড়াচ্ছে ইরান

ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে সিলেটে প্রথম শহীদ জিলুর মৃত্যু বার্ষিকীতে সিলেট যুবদলের দোয়া মাহফিল

ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে সিলেটে প্রথম শহীদ জিলুর মৃত্যু বার্ষিকীতে সিলেট যুবদলের দোয়া মাহফিল

বগুড়ায় স্ত্রী হত্যার দায়ে ১৯ বছর পর স্বামীর মৃত্যুদন্ড

বগুড়ায় স্ত্রী হত্যার দায়ে ১৯ বছর পর স্বামীর মৃত্যুদন্ড

ইসরায়েল-লেবানন যুদ্ধবিরতি চুক্তি শিগগিরই হচ্ছে : লেবাননের প্রধানমন্ত্রী

ইসরায়েল-লেবানন যুদ্ধবিরতি চুক্তি শিগগিরই হচ্ছে : লেবাননের প্রধানমন্ত্রী

সাবেক ছাত্রলীগ নেতার মুজেজায় সিলেটে (এক লাফে) অধ্যক্ষ হয়ে যান হাকিম মুহিব বুল্লাহ

সাবেক ছাত্রলীগ নেতার মুজেজায় সিলেটে (এক লাফে) অধ্যক্ষ হয়ে যান হাকিম মুহিব বুল্লাহ

আদর্শিক ছাত্র জনতার ভূমিকা রাখতে হবে -মাওলানা ইমতিয়াজ আলম

আদর্শিক ছাত্র জনতার ভূমিকা রাখতে হবে -মাওলানা ইমতিয়াজ আলম

গাড়িতে অগ্নিসংযোগকারীরা পতিত সরকারের প্রেতাত্মা- মাওলানা ইউনুছ আহমাদ

গাড়িতে অগ্নিসংযোগকারীরা পতিত সরকারের প্রেতাত্মা- মাওলানা ইউনুছ আহমাদ