ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১
বনদস্যুরা নিয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ

বঙ্গোপসাগর গিলে খাচ্ছে টেংরাগিরি বন

Daily Inqilab জাহাঙ্গীর কবীর মৃধা, বরগুনা থেকে

২৯ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৫৬ পিএম | আপডেট: ৩০ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম

বঙ্গোপসাগরের উত্তাল হিংস্র ঢেউয়ের ছোবল আর ভাঙনের ফলে সাগর উপকূলীয় বনাঞ্চল টেংরাগিরি এখন বিলীনের পথে। শত শত কোটি টাকা মূল্যের ২ হাজার একর জমিসহ লক্ষ লক্ষ নানান প্রজাতির গাছ সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সাগরের অব্যাহত ভাঙনরোধে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় অদূর ভবিষ্যতে বনটির অস্তিত্বহীনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তান সরকার ১৯৬০ সালে বরগুনার টেংরাগিরি বনটিকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করে।

কাগজে টেংরাগিরি বন হলেও স্থানীয়ভাবে বনটি ফাতরার বন হিসেবে খ্যাত। ১৩ হাজার ৬শ’ ৪৭.০৩ একর আয়তন বিশিষ্ট টেংরাগিরি বনটির পূর্বদিকে রয়েছে কুয়াকাটা, মহিপুর ও আন্দারমানিক নদী। পশ্চিমে লালদিয়া, কুমিরমারাচর, পায়রা ও বিষখালী নদীর মোহনা। উত্তরে সোনাকাটা, নিশানবাড়িয়া ও সখিনা খাল। দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। বনটির চতুর্দিকে সাগর-নদী বেষ্টিত এবং শ্বাস মূলীয় হওয়ায় পর্যকটদের কাছে এর আকর্ষন অনেক বেশি।

প্রতিবছর বয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অসাধু লোকজন কর্তৃক নির্বিচারে গাছ নিধন ও সাগরের ঢেউয়ের হিংস্র ছোবলে বনটি বিপর্যয়ের কারণে জৌলুস হারিয়ে ফেলায় টেংরাগিরিতে পর্যটক সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। ১১ কিলোমিটার প্রস্ত আর ১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বনের পুরোটাই রয়েছে সাগরের তীর ঘেঁষে। ১৯৬০ সালে ঘোষিত বনটি ২০২৩ সালে এসে মাত্র ৬২ বছরের ব্যবধানে বনের আয়তন কমে গেছে অনেক। ইতোমধ্যে প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা মূল্যের ২ হাজার একর বন সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। ভেসে গেছে কোটি কোটি টাকা মূল্যের বনের গেওয়া, কেওড়া, ধুন্দল, হেতাল রেন্ট্রিসহ বহু প্রজাতির গাছ।
প্রতিবছরের বর্ষা মৌসুমে সাগরের হিংস্রতা বেড়ে যায়। পাহাড় সমান ঢেউ এসে বনের ওপর আঁছড়ে পড়ে। এভাবে অনবরত ঢেউয়ের ছোবলে ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে গাছের গোড়ার মাটি সরে গাছগুলো উপড়ে সাগরে ভেসে যায়। এভাবে বছরে অন্তত কোটি টাকা মূল্যের গাছ ভেসে যায় সাগরে। অন্যদিকে সাগরের ঢেউয়ে বনের ভেতরে বালু জমে শ্বাস মূল নষ্ট হওয়ায় অনেক গাছ মরে যাচ্ছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, সাগরের তীর ঘেঁষে অবস্থিত ১৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বনের হাজার হাজার কেওড়া, গেওয়া, করমচা, হেতাল, রেন্ট্রি গাছ সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে উপরে মাটিতে পড়ে আছে। ভাটার সময় গাছগুলো দেখা গেলেও জোয়ারের পরে এসে দেখা যায় গাছগুলো আর নেই। যা সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এভাবেই দিনের পর দিন বছরের পর বছর ধরে গাছ যাচ্ছে সাগরের পেটে। সাগরের তীরের বালু পেড়িয়ে বনের ভেতরে ঢুকেই দেখা যায় ঢেউয়ের তোড়ে বনের ভিতরের প্রায় ৫শ’ মিটার পর্যন্ত গাছের গোড়ার মাটি সরে গেছে। এ সকল গাছ এখন মৃত্যুর পরোয়ানা মাথায় নিয়ে কোনোমতে দাঁড়িয়ে আছে। যে কোনোসময় বিলীন হয়ে সাগরের পেটে চলে যাবে।

স্থানীয়রা জানান, একশ্রেণির বনদস্যু প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় বনের গাছ কেটে নিচ্ছে। বনদস্যুরা দিনের বেলায় গভীর জঙ্গলে গাছ কেটে ফেলে রাখে রাতের বেলায় কাটা গাছ ট্রলার ভর্তি করে নিয়ে যায়। এ সকল গাছ ইটভাটা এবং লাকরি হিসেবে বিক্রি করে তারা। তারা আরও জানান, সাগরের তীর ঘেঁষে যে সকল গাছ রয়েছে তা ঢেউয়ের তোড়ে উপড়ে মাটিতে পরে আছে। বনদস্যরা এ সকল গাছও নিয়ে যায়।

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরের সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাতে বনটি প্রায় ল-ভ- হয়ে যায়। কয়েক লক্ষ গাছ দুমড়ে মুছড়ে যায়। এ রেশ কাটতে না কাটতেই ২০০৯ সালে আবার আঘাত হানে সাইক্লোন আইলা। এতেও বনের অনেক ক্ষতি হয়। এর পর রয়েছে বনদস্যুদের উৎপাত। স্থানীয় বন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে একদল বনদস্যু দিনে রাতে সমান তালে বনের গাছ কেটে নদী পথে পাচার করছে উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন ইট ভাটাসহ স-মিলে।

পটুয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম জানান, সাগরের ভাঙনের হাত থেকে বনকে রক্ষার জন্য নতুন করে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। জাইকার ২ সদস্য বিশিষ্ট একটি টিম বন এলাকা পরিদর্শন করেছে। ঝাউ এবং অন্যান্য প্রজাতির গাছ ঘন করে লাগানো হয়েছে। যাতে সাগরের ঢেউ আছড়ে পরে মাটির ক্ষয় করতে না পারে।


বিভাগ : অভ্যন্তরীণ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার