নেত্রকোনায় এখনও অযত্ন-অবহেলায় অধিকাংশ বধ্যভূমি
৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম | আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম
স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও অযতœ-অবহেলায় ও অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে নেত্রকোনার অধিকাংশ বধ্যভূমি। সেখানে এখনও নির্মাণ করা হয়নি কোনো স্মৃতিফলক। বর্তমান সরকারের আমলে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন হলেও নেত্রকোনার অধিকাংশ বধ্যভূমিগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত ও সেগুলোর কোনো উন্নয়ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা ও নেত্রকোনার সাধারণ মানুষ। স্মৃতিফলক নির্মিত না হওয়ায় নেত্রকোনার ছোট-বড় ১০টি বধ্যভূমির অধিকাংশই হারিয়ে যেতে বসেছে।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় এলাকার রাজাকার, আল-বদর, আল সামস্-এর সহযোগিতায় পাক-হানাদার বাহিনী অসংখ্য মা-বোনকে ধরে নিয়ে গণধর্ষণ, নিরীহ ও মুক্তিকামী বাঙালিকে ধরে নিয়ে অমানসিক নির্যাতনের পর নির্মমভাবে হত্যা করে এসব বধ্যভূমিতে ফেলে রাখত। অগণিত শহীদের রক্তে ভেজা এসব বধ্যভূমি সঠিকভাবে চিহ্নিতকরণ ও যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসেছে। অনেকেই এসব স্থান অবৈধ দখলের পাঁয়তারা করছে। জাতীয় দিবস এলে কিছু কিছু বধ্যভূমির কদর বাড়লেও সারা বছরই এগুলো থাকে অযতœ আর অবহেলায়।
বর্তমান সরকার ও প্রশাসন বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করছে অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজরিত এসব বধ্যভূমি অযতœ আর অবহেলায় পড়ে থাকায় মুক্তিযোদ্ধা আর সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার করছে।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, ইতিহাসবিদ ও বিভিন্ন শহীদ পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ১৪টি বধ্যভূমি রয়েছে। এগুলো হচ্ছে, জেলা শহরের মোক্তারপাড়া সেতু সংলগ্ন মগড়া নদীর তীর, সাতপাই সড়ক সংলগ্ন মগড়া নদীর তীর, জেলা শহরের চন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন মগড়া নদীর তীর, নেত্রকোনা-পূর্বধলা সড়কের ত্রি-মোহনী, সদর উপজেলার চল্লিশা রেলসেতু, পূর্বধলা উপজেলার পুকুরিয়াকান্দা, জারিয়া রেলস্টেশন সংলগ্ন কংস নদীর তীর, রাজপাড়া গ্রামের ডা. হেম বাগ্চীর বাড়ি, দুর্গাপুর উপজেলার বিরিশিরি গ্রাম সংলগ্ন সোমেশ্বরী নদীর তীর, গাওকান্দিয়া, কেন্দুয়া উপজেলার ঘোড়াইল, ধূপাগাতি, সেনের বাজার ও কেন্দুয়া বাজার। এর মধ্যে জেলা শহরের মোক্তারপাড়া সেতু সংলগ্ন মগড়া নদীর তীর, সাতপাই মগড়া নদীর তীর, চন্দ্রনাথ স্কুলের সামনে মগড়া নদীর তীর ও পূর্বধলা উপজেলার ত্রি-মোহনী বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি ১০টি বধ্যভূমি এখনও সম্পূর্ণ-অরক্ষিত।
শহীদ পরিবারের সন্তান মো. আব্দুর রব রব্বানী বলেন, ‘আমার চাচা বদিউজ্জামান মুক্তাকে বিরামপুর বাজার থেকে পাক-হানাদার বাহিনী ধরে নিয়ে গিয়ে মুক্তারপাড়া ব্রিজের কাছে গুলি করে হত্যা করে এবং সিদ্দিকুর রহমানসহ ছয়জন মুক্তিযোদ্ধাকে বিরামপুর বাজারে হত্যা করে। বিরামপুর এলাকায় আজও কোনো স্মৃতিফলক নির্মিত হয়নি। যদি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হতো তাহলে আগামী প্রজন্ম তাদের সম্পর্কে জানতে পারত।’
এ ছাড়াও ১৯৭১-এর ২২ সেপ্টেম্বর পূর্বধলার ত্রি-মোহিনীতে সবচেয়ে বড় হত্যাকা- ঘটেছিল। সেদিন হানাদাররা সুরেশ সাহা, সতীশ সরকার, স্বদেশ দত্তসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের ২৫ জন নিরীহ মানুষকে ধরে এনে গুলি করে হত্যা করেছিল।
স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও জেলার ১০টি বধ্যভূমি এখনও পড়ে আছে অযতেœ আর অবহেলায়।
বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণসহ এগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার দাবি জানান মুক্তিযোদ্ধাসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ^াসী নেত্রকোনাবাসী।
নেত্রকোনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫২ বছরেও কেন বধ্যভূমিগুলোতে স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়নি তা আসলে অবাক করার মতো বিষয়। আমি চাই এসব স্থানে শহীদদের নাম সম্বলিত স্মৃতিফলক নির্মাণ করবে প্রশাসন।’
জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ জানান, ‘জেলার বধ্যভূমিগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিতকরণ, যথাযথ সংরক্ষণ ও সে সব স্থানে স্মৃতিফলক নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পেলে বধ্যভূমিগুলো যথাযথ সংরক্ষণ ও স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হবে।’
বিভাগ : অভ্যন্তরীণ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভারতে 'এক দেশ এক ভোট’ আয়োজন কতটা সম্ভব হবে?
বৈরুতে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত ৯
কুমিল্লায় অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দেওয়ায় প্রবাসীর ওপর হামলা
এবার হলিউডের সিনেমায় জ্যাকুলিন
৯ বছর পর ভারতীয় প্রেক্ষাগৃহে পাকিস্তানি সিনেমা!
জামাত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
‘হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে’: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যানি
ঢাকাস্থ গণচীনের দূতাবাসের প্রতিনিধিদলের ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত
‘হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে’: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যানি
রাসূলুল্লাহ (সা.) আদর্শই একমাত্র অনুসরণীয় আদর্শ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ান
নারী মাদকসেবীদের জীবন মান উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার সবার: তারেক রহমান
আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া কাম্য নয় : ইউট্যাব
আগামী সংসদে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে প্রতিনিধি নির্বাচনের দাবি চরমোনাই পীরের