বাজার মূল্যে আলু চাষির মুখে হাসি
২১ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৯ এএম
দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ আলু উৎপাদনকারী জেলা মুন্সীগঞ্জ। গত কয়েক বছর আলু চাষে কৃষক লোকসানে পরে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুঁজি হারিয়ে আবারো লাভের মুখ দেখার আশায় আলু চাষ করে। দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর পর এবার প্রান্তিক কৃষক লাভের মুখ দেখছে। এবার ফলন কম হলেও বাজার মূল্য বেশী থাকায় ক্ষতি পুষিয়ে যাচ্ছে। আলুর বাজারমূল্য বেশি পাওয়ায় অনেক কৃষক উৎপাদিত আলু কিক্রি না করে সংরক্ষণের জন্য বাড়িতে মাচা করে এবং হিমাগারে রেখে দিচ্ছে। জেলায় চলতি বছর ৩৪ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। আলুর ফলন হয়েছে প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন।
মুন্সীগঞ্জ জেলার প্রধান অর্থকরি ফসল আলু। এখানকার প্রান্তিক কৃষকরা আর্থিক ঝুঁকি নিয়ে আলু চাষ করে আর ফায়দা লুটে মধ্যস্বত্বভোগীরা। প্রতিবছর প্রান্তিক চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারপরও আলু আবাদ মৌসুমে তারা আবাদে সক্রিয় হয়ে উঠে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি আলু মৌসুমে জেলায় ৩৪ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জ সদরে ৯ হাজার ৫৯০ হেক্টর, টংগীবাড়ী উপজেলায় ৯ হাজার ১৫ হেক্টর, শ্রীনগরে ১ হাজার ৮৫০ হেক্টর, সিরাজদিখানে ৮ হাজার ৭৫৫ হেক্টর, লৌহজেং ৩ হাজার ১০৮শ’ হেক্টর এবং গজারিয়ায় ১ হাজার ৯৮৭ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়।
মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ায় জমিতে লাগানো বীজ নষ্ট হয়ে যায়। কৃষককে নতুন করে আবাদ করতে হয়। অনেকে আর্থিক অভাবে পরে নতুন করে চাষ করতে পারেনি। এতে ওই সব জমিতে ফলন কম হয়। আবার সময় মতো আবহাওয়া ঠান্ডা না থাকায় গাছে রোগ হওয়ায় ফলন কম হয়। চলতি মৌসুমে জেলায় আলু উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন।
সদর উপজেলার বকুলতলা গ্রামের আজমির হোসেন বলেন, গত বিশ বছরের মধ্যে এবার মৌসুমের শুরুতে আলুর বাজার মূল্য সবচেয়ে বেশী। এবছর কৃষক লাভের মুখ দেখছে। গত কয়েক বছর লোকসান দিতে দিতে ১৬ কড়া ফসলি জমি বিক্রি করে দিয়েছি। গত বছর লোকসান দিয়েছি প্রায় ৫ লাখ টাকা। এ বছর ৪ কানিতে আলু চাষ করি। মৌসুমের শুরুতে দাম কম থাকলেও এখন বস্তা ১২শ’ ৫০ টাকা মনে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এ মূল্য ছিল সাড়ে ৭শ’ টাকা থেকে ৮শ’ টাকা। এতে গত বছর আমার প্রায় ৫ লাখ টাকা ক্ষতি হয়। এ বছর ভালো লাভ হওয়ায় কিছুটা ক্ষতি পুষিয়েছে। প্রতি কানিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা। আলুর ফলন হয়েছে প্রায় ৫শ’ মন। বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা।
রামপালের ফিরোজ দেওয়ান বলেন, গত কয়েক বছর লোকসান হওয়ায় এবার আলু চাষ কম করি।এ বছর ১০ গন্ডা জমিতে আলু চাষ করি।বাকী জমিতে সরিষা চাষ করি। গত বছর মৌসুমের শুরুতে জমিতে আলু বিক্রি হয়েছে বস্তাপ্রতি ৫শত টাকা থেকে ৭ শত টাকা। এখন আলু ব্যবসায়ীরা কৃষক থেকে আলু কিনছে বস্তাপ্রতি ১১শত থেকে সাড়ে ১২ শত টাকা দরে। মাকাহাটি গ্রামের জিযাউর রহমান বলেন, ৩৫ শতাংশ জমিতে আলু চাষ করেছিলাম। প্রতি বছর আলুতে লোকসান হওয়ায় এ বছর আলু চাষ করিনি। সরিষা চাষ করেছি।
আলুর বাজার মূল্য বেশী থাকায় কৃষক আলু বিক্রি না করে নিজেরাই সংরক্ষণ করছে।
হিমাগার মালিক সমিতির সভাপতি মো. মোশাররফ হোসেন পুস্তি বলেন, এবছর আলুর ফলন কম হওয়ায় হিমাগার পরিপূর্ণ না হবার আশংকা রয়েছে। আলুর বাজার মূল্য বেশী থাকায় প্রান্তিক কৃষক হিমাগারে আলু রাখছে। পরপর কয়েক বছর আলুর ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় ক্ষুদ্র প্রান্তিক কৃষক ঋণ পরিশোধ করতে সামান্য লাভে জমিতে আলু বিক্রি করে দিয়েছে। এ বছর আলু বাজার মূল্য বেশি থাকায় প্রান্তিক কৃষক আলু ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করছে না। মধ্যস্বত্যভোগীরাও আলু কিনে হিমাগারে সংরক্ষন করতে পারছেন না।
সদর উপজেলার হোগলাকান্দি গ্রামের আব্দুল আউয়াল বেপারী বলেন, কৃষক আলু বিক্রি করছে না। শর্ত মোতাবেক লগ্নির টাকার আলুও দিচ্ছে না। আলুর পাইকার মো. শহিদুল্লাহ বলেন, গত বছর মনপ্রতি ৮শ’ টাকা দরে আলু কিনিছি। এবছর জমি থেকে ১২৫০ টাকা দরে আলু কিনছি। হিমাগার ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবহন খরচ নিয়ে হিমাগার পর্যন্ত পৌছাতে খরচ পরে প্রায় ১৬ শত টাকা। হিমাগার ভাড়া এবং পরিবহন খরচ বেশী পড়ায় কৃষক কয়েক মাসের জন্য আলু জমিতে স্তুপাকারে নাড়া দিয়ে ঢেকে, বাড়িতে শেড করে এবং হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করে রাখছে।
কৃষকের আশংকা বছরের শেষে কৃষকের আলু শেষ হয়ে গেলে বাজারে এর প্রভাব পরবে। আলু ব্যবসায়ী এবং মধ্যস্বত্যভোগীরা বাজার সিন্ডিকেট করে আলুর বাজার মূল্য লাগামহীন করে তুলবে। বিদেশ থেকে আলু আমদানী করলে দরপতনের আশংকা রয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ জানান, জেলায় চলতি মৌসুমে আলু আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৪ হাজার ৩৪৬ হেক্টর। জেলায় মোট ৩৪ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। আলুর ফলন হেক্টর প্রতি ৩০ মেট্রিকটন ফলন হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি হওয়ায় লাগানো আলু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ফলন কিছুটা কম হয়।
বিভাগ : অভ্যন্তরীণ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিমানযাত্রীর পকেটে মিলল জ্যান্ত সাপ
ডেঙ্গু সচেতনতা সৃষ্টিতে কাউন্সিলররা পাবেন ৫০ হাজার টাকা
হামলা আসন্ন, নাগরিকদের রাফা ছাড়তে বলল ইসরায়েল
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবিতে দেশটির পতাকা উত্তোলন ছাত্রলীগের
মিল্টন সমাদ্দার মাদকসেবী, তার টর্চার সেলে অত্যাচারের মাত্রা অমানবিক: ডিবি
সম্পদ অর্জনে এমপিদের চেয়ে চেয়ারম্যানরা এগিয়ে : টিআইবি
দেখতে ঢেউটিনের মতো মনে হলেও এটা ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক!
বিএনপির ভাবনায় ক্লান্ত ওবায়দুল কাদের: রিজভী
ইউপি চেয়ারম্যানকে ‘ডিও লেটার’ বন্ধের হুমকি এমপি একরামের স্ত্রীর
মাগুরায় বিএনপির উপজেলা নির্বাচন বর্জনের আহবান
২৫ বৈশাখ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্ম জয়ন্তী
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ও ইজরায়েলের বর্বর নির্যাতনের প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় পদযাত্রা
বরগুনায় 'গণমাধ্যমে হলুদ সাংবাদিকতা প্রতিরোধ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা' শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত
আসছে ঘূর্ণিঝড়, দেশজুড়ে কালবৈশাখীর সতর্কতা
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ২ ইউনিয়নে প্রখর রোদ আর তীব্র গরম।।দুর্বিষহ চরবাসীর জীবন
বিশ্বের অন্যতম ভয়ঙ্কর প্রাণী অনুপ্রবেশ করতে যাচ্ছে ব্রিটেনে
পিরিয়ডে হেভি ফ্লো নিয়ে হ্যাসেল-ফ্রি থাকতে, কী করবেন
নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাচন চেয়ারম্যান পদে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা
বিশ্বে অস্থিরতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে চীন
ইসরায়েলে মার্কিন গোলাবারুদের চালান আটকে দিল বাইডেন প্রশাসন