ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪ | ২০ আষাঢ় ১৪৩১

সামান্য বৃষ্টিতেই পানিবদ্ধতা : দুর্ভোগে সৈয়দপুরবাসী

Daily Inqilab নজির হোসেন নজু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে

০২ জুলাই ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:০৪ এএম

নীলফামারীর প্রথম শ্রেণির সৈয়দপুর পৌরসভায় সামান্য বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার বাসা-বাড়িতে উঠছে পানি।
ফলে বৃষ্টি হলেই পৌরবাসীর দুর্ভোগ ও কষ্টে পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে শহরের মুন্সিপাড়া, নতুন বাবুপাড়া, পুরাতন বাবুপাড়া, বাঁশবাড়ি, মিস্ত্রিপাড়া, বাঙালিপুর নিজপাড়া ও নিচু এলাকার মানুষ পানিবদ্ধতার কবলে পড়ছেন। প্রতিবছরই সামান্য বৃষ্টিপাতেই শহরজুড়ে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। শহরের প্রধান সড়ক শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কও হাঁটু পানিতে ডুবে থাকছে।
পৌরবাসী আতিয়ার রহমান ও সবুর গোসেন অভিযোগ করে বলেন, পৌর মেয়র পৌরবাসীর সমস্যা সমাধানের জন্য কোনো উদ্যোগই নেন না। কাউন্সিলর ও পৌর মেয়রের পক্ষ থেকে পানিবদ্ধতার শিকার লোকজন সহযোগিতাও পান না বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েন ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের শহীদ নূর মোহাম্মদ স্ট্রিটের উভয় পাশের মানুষ ও মুন্সিপাড়া, বাঁশবাড়ির সাদরা লেন এলাকাসহ ৮ নম্বর ওয়ার্ডের শত শত পরিবার। এছাড়া শহরের শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কে পানিবদ্ধতার কারণে ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েন। মাত্র ১ ঘণ্টার বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় পুরো এলাকা। বৃষ্টির পানি নালা-নর্দমা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার আউটলেট সুবিধা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে ড্রেনের পানি উপচে ঢুকে যায় ব্যবসায়ীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ও বসবাসকারী মানুষের ঘরে ঘরে। এছাড়া বেশকিছু সড়ক মেরামত ও সংস্কার না করায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।
শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে পরিবারের বসবাস করে এখানে একটি মহিলা কলেজ আছে একটু পানি হলে মুন্সিপাড়া, খেজুর বাগ এলাকাসহ ৬ নং ওয়ার্ড ৩ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায় দেখার কেউ নাই।
এলাকার একজন মুদি দোকানদার আইনুল ভাই বলেন, আমরা খুব কষ্টে থাকি একটু আকাশের পানি হলে হাটু পানিতে আমাদের চলাচল করতে হয় এলাকায় পানি নিষ্কাসনের কোনো ব্যবস্তা করে না পৌরসভা।
শহরের বাঙালিপুর নিজপাড়ার (৮ নম্বর ওয়ার্ডের) কৃষি অধিদপ্তরের সাবেক কর্মকর্তা আলতাব হোসেন ও পান দোকানদার মনসুর আলী বলেন, পুরো বর্ষাকাল এখানকার হাজারো পরিবারকে পানিবদ্ধতার কারণে পানিবন্দি হয়ে থাকতে হয়। পানিবদ্ধতা যেন আমাদের বিধিলিপিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমান মেয়র ও কাউন্সিলের কাছে আমরা একটি মাস্টার ড্রেনের জন্য বহুবার ধরণা দিয়েছি। প্রতিবারই তিনি সমস্যা সমাধানে শুধু আশ্বাসই দিয়েছেন কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেননি। যার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই ড্রেনের পানি উপচে তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি।
একই অবস্থা ১ নম্বর রেলগেট থেকে হাতিখানা কবরস্থান যাওয়ার রাস্তাটি। ওই এলাকার ফল ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা ওই রাস্তাটি একাধিকবার উঁচু করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
ফল ব্যবসায়ী বাদশা বলেন, আমাদের সমস্যার কথা পৌর কর্তৃপক্ষকে বলে বলে বিরক্ত হয়ে গেছি। তাই নিজেরাই সমস্যা সমাধানের জন্য মাটি দিয়ে উঁচু করার চেষ্টা করেছি।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের সময় মেয়র ফল মার্কেটর সড়কসহ সৈয়দপুর শহরকে মডেল শহরে রূপান্তরিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। অথচ প্রতিবছরই শহর উন্নয়নে ১০০ কোটি টাকারও বেশি বাজেট ঘোষণা করা হচ্ছে সৈয়দপুর পৌরসভায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পৌর কাউন্সিলর বলেন, সৈয়দপুর পৌর শহরের দূষিত পনি নিষ্কাশনের নালাগুলোতে পলিথিনসহ নানা কিছু আটকে থাকে। পরিষ্কারও করা হয় না মাসের পর মাস। ফলে পানি তাৎক্ষণিক নামে না। এছাড়া পৌর এলাকার রেলওয়ে আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকার নালা-নর্দমা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করায় সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতে ব্যর্থ হয় পৌর কর্তৃপক্ষ। যার ফলে মাত্র ১ ঘণ্টার বৃষ্টিতেই সৈয়দপুর শহর তলিয়ে যায় ২ থেকে ৩ ফুট পানির নিচে।
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সহিদুল ইসলাম বলেন, পানিবদ্ধতা নিরসনে আমাদের নিজস্ব টিম আছে। কিন্তু মাস্টার ড্রেন নির্মাণ বা সংস্কার করতে বাজেট ঘাটতি থাকায় ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অনেক কিছুই সম্ভব হয়নি।
সৈয়দপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, পৌর মেয়র দায়িত্বে আছেন প্রায় ৪ বছর। এ ৪ বছরে সময় তিনি সৈয়দপুরের উন্নয়নে কোনো কাজই করেননি। তিনি যদি শহরের প্রধান ৩টি সড়কও সংস্কার করতেন তাহলে শহরবাসীর কাছে মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারতেন। এছাড়া মেয়র ও কাউন্সিলরদের দ্বন্দ্বের কারণে পৌরসভার উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে পৌর মেয়র রাফিকা আকতার জাহানের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। পরে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে পানিবদ্ধতা নিয়ে কোনো কথাই বলবেন না বলে জানান।


বিভাগ : অভ্যন্তরীণ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে নিজস্ব প্রযুক্তির মাধ্যমে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জগুলো জয় করা হবে : পলক

উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে নিজস্ব প্রযুক্তির মাধ্যমে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জগুলো জয় করা হবে : পলক

ঋণ-আমানতে সোনালীকে ছাড়িয়ে সর্ববৃহৎ এখন ইসলামী ব্যাংক

ঋণ-আমানতে সোনালীকে ছাড়িয়ে সর্ববৃহৎ এখন ইসলামী ব্যাংক

ব্র্যাক কুমন-এর সহযোগিতায় নারীদের শিক্ষা-উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ তৈরি করেছে ব্র্যাক ব্যাংক ‘তারা’

ব্র্যাক কুমন-এর সহযোগিতায় নারীদের শিক্ষা-উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ তৈরি করেছে ব্র্যাক ব্যাংক ‘তারা’

পটুয়াখালীতে বিএনপির মিছিলে অস্ত্র নিয়ে হামলার অভিযোগ

পটুয়াখালীতে বিএনপির মিছিলে অস্ত্র নিয়ে হামলার অভিযোগ

চুয়াডাঙ্গা চেম্বারের নির্বাচন বাতিল ও প্রশাসক নিয়োগ দাবী

চুয়াডাঙ্গা চেম্বারের নির্বাচন বাতিল ও প্রশাসক নিয়োগ দাবী

পাওনা টাকা খরচ করে ফেলা প্রসঙ্গে।

পাওনা টাকা খরচ করে ফেলা প্রসঙ্গে।

সড়কের ওপর বাজার

সড়কের ওপর বাজার

মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর বিকল্প নেই

মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর বিকল্প নেই

রেল ট্রানজিটে ভারতেরই লাভ

রেল ট্রানজিটে ভারতেরই লাভ

দুর্নীতিবিরোধী অভিযান যেন আইওয়াশ না হয়

দুর্নীতিবিরোধী অভিযান যেন আইওয়াশ না হয়

কেনিয়ায় নিহত ৩৯

কেনিয়ায় নিহত ৩৯

বিপজ্জনক নজির

বিপজ্জনক নজির

মালিতে নিহত ৪০

মালিতে নিহত ৪০

গাজা একটি উন্মুক্ত কারাগার : চীন

গাজা একটি উন্মুক্ত কারাগার : চীন

বিএনপির মনের জোড় কমে গেছে, গলার জোড় বেড়ে গেছে- সাভারে ওবায়দুল কাদের

বিএনপির মনের জোড় কমে গেছে, গলার জোড় বেড়ে গেছে- সাভারে ওবায়দুল কাদের

মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে বন্যায় আটকা পড়েছে হাজারো মানুষ

মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে বন্যায় আটকা পড়েছে হাজারো মানুষ

বেরিল তা-বে ক্ষতিগ্রস্ত ৯০ শতাংশ ঘরবাড়ি ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে

বেরিল তা-বে ক্ষতিগ্রস্ত ৯০ শতাংশ ঘরবাড়ি ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে

বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা ফি দ্বিগুণ করল অস্ট্রেলিয়া

বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা ফি দ্বিগুণ করল অস্ট্রেলিয়া

খোলামেলা পোশাক নিষিদ্ধ করলো কলেজ কর্তৃপক্ষ

খোলামেলা পোশাক নিষিদ্ধ করলো কলেজ কর্তৃপক্ষ

শিশু কিডনি চিকিৎসক সোসাইটির প্রেসিডেন্ট হলেন অধ্যাপক ডা. আফরোজা বেগম

শিশু কিডনি চিকিৎসক সোসাইটির প্রেসিডেন্ট হলেন অধ্যাপক ডা. আফরোজা বেগম