মেঘনার দুর্গম চরে সোনালি ফসলের সমারোহ
০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম
লক্ষ্মীপুর জেলার মেঘনার চরাঞ্চলে সোনালি ফসল চাষ করে ভাগ্য পরিবর্তন করছেন চাষিরা। পূর্বে পরিত্যক্ত ও গোচারণ ভূমি হিসেবে ব্যবহৃত মেঘনায় জেগে উঠা চরে গত কয়েক বছর ধরে অনাবাদি জমিতে ফলতে শুরু করেছে ধান, সয়াবিনের পাশাপাশি সবুজ শাকসবজিসহ অন্যান্য ফসল।
বর্তমানে জেলার চরের ১২ হাজার ৪০২ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হচ্ছে। এতে মেঘনার চরে চাষিদের জীবনে এসেছে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা। জেলার চাহিদা মিটিয়ে এসব ফসল পৌঁছে যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে প্রায়ই ক্ষতির শিকার হতে হয় কৃষকদের। কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণে বেপারিদের বেঁধে দেয়া মূল্যের ওপর নির্ভরশীল হতে হয় চাষিদের। এতে অনেকাংশ সময় নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয় কৃষক।
কৃষকদের অভিযোগ- কৃষি বিভাগ থেকে কোন সহযোগিতা তো দূরের কথা- পরামর্শও পান না। তাদের দাবি সংশ্লিষ্টদের সুনজর পেলে চরের মাটিতে কৃষিতে আরও বিপ্লব ঘটানো যাবে।
চরের কৃষক জামাল চাষি বলেন, গত তিন বছর ধরে চরে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ধরণের সবজি চাষাবাদ করছি। চরের মাটিতে ধানের পাশাপাশি শশা, খিরা, করল্লা, লাউ, কুমড়া, চিচিঙ্গা, তরীসহ নানা জাতের সবজির ভাল উৎপাদন হয়। বাণিজ্যিক চাষাবাদে মোটা অংকের অর্থের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমরা কোন ঋণ পাই না। সঠিক মতো চাষাবাদ করতে পারলে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে না পড়লে ভাল লাভ হয়। তিনি বলেন, নদীর মাঝে চর হওয়ায় মাঝেমধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলেও পড়তে হয়। গেল মাসে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে অন্তত তিন লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আবার গেল বছরের নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির আঘাতেও ফসলের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। এখনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের শঙ্কায় আছি।
জামাল জানান, তিনি এবার তিন একর জমিতে শশার আবাদ করেছেন। গাছের বয়স হয়েছে ১৫ দিন, ৪৫ দিনের মাথায় ফলনে চেয়ে যাবে শশার ক্ষেত। প্রতি একরে খরচ পড়েছে ছয় লাখ টাকা। মোট ব্যয় হয়েছে ১৮ লাখ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে খরচ বাদ দিয়ে অন্তত ১০ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।
জামাল অভিযোগ করে বলেন, চরের কৃষকেরা সম্পূর্ণ নিজেদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ফসল ফলিয়ে যাচ্ছে। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে কোনো সহযোগিতা এবং পরামর্শ পাই না। এখানকার কৃষকরা কৃষি অফিসারকেও চিনেও না।
ধানচাষি আবদুর রহমান বলেন, ঝড়বৃষ্টি বা জোয়ার উঠলে কিছুটা ক্ষতির মধ্যে পড়তে হয়। আবার নতুন করে চাষাবাদ করি। তবে সব মিলিয়ে লাভও হয়।
চাষি আনোয়ার হোসেন বলেন, চরের মাটির গুণাগুণ ভালো। তাই ফলন ভালো হয়। ১৫ বছর ধরে চরে ধান, সয়াবিন, সবজির চাষ করি। তবে মাঝে-মধ্যে অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে চরের ফসল তলিয়ে যায়। তখন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হই। ক্ষতির শিকার হলেও আমরা সরকারি কোন সহযোগিতা পাই না।
চরের কৃষি শ্রমিক রিয়াজ, ফরিদা বেগম ও নাসরিন বলেন, চরের চাষাবাদ শুরুর পর থেকে অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে। বছরের ছয় মাস চরে কাজ থাকে। আমরা মাসিক ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতে নিয়োজিত আছি। চরেই থাকি, চরেই কাজকর্ম করি।
স্থানীয় কলেজ শিক্ষার্থী মো. জিহাদ হোসেন বলেন, চরের ফসল স্থানীয় বাজারসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে যাচ্ছে। খাদ্য উৎপাদনে চরের জমি এবং কৃষকেরা ভূমিকা রাখছে। কিন্তু কৃষিপণ্য বাজারজাতের ক্ষেত্রে কৃষকদের ঠকতে হয়। তারা নায্যমূল্য পায় না। পণ্য বাজারজাতে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা প্রয়োজন। এতে কৃষি উৎপাদনে উৎসাহিত হবে কৃষকেরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সোহেল মো. শামসুদ্দীন ফিরোজ চরে ফসল উৎপাদনে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বলেন, লক্ষ্মীপুর উপকূলীয় এলাকা। চরের ১২ হাজার ৪০২ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হচ্ছে। চরে বিচ্ছিন্ন কিছু দ্বীপ রয়েছে। সেগুলোকে কেন্দ্র করে কৃষি বিভাগ কিছু পরিকল্পনা নিয়েছে। এখানে জোয়ার-ভাটার একটা প্রভাব রয়েছে। তাই ‘ক্লাইমেট স্মাট এগ্রিকালচার’ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সেখানে আমাদের কিছু প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে। কৃষকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হচ্ছে। মাঠ দিবসও করা হয়। তিনি বলেন, চরের মাটি অত্যন্ত উর্বর। সেখানে সরিষা, ভুট্টা, বাদাম, তিল সম্ভাবনাময় ফসল। আমরা ব্যাপকভাবে এগুলো চাষাবাদের উদ্যোগ নিয়েছি।
বিভাগ : অভ্যন্তরীণ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী
ফ্যাসিস্ট সরকারের ৮ বছরের নিষেধাজ্ঞার পর অবশেষে মঞ্চে আসছে থিয়েট্রিক্যাল বাহাস ও কন্ঠনালীতে সূর্য
মিলেছে ‘হারিছ চৌধুরী’র ডিএনএ, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের নির্দেশ
নাম পরিবর্তনের দাবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের
গলায় ফাঁস দিয়ে বৃদ্ধের আত্মহত্যা
আইএসের নৃশংসতার বিচারে জাতিসংঘ ব্যর্থ : নাদিয়া মুরাদ
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে হেফাজতের মানববন্ধন
মানিকগঞ্জে হাঙ্গার প্রজেক্টের গণতন্ত্র অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত
এবার ভারতের মালদহে বাংলাদেশিদের জন্য হোটেল ভাড়া বন্ধ ঘোষণা
কিশোরগঞ্জের হাওর-অর্থনীতি বেগবান করতে চলছে কয়েকশ কোটি টাকার প্রকল্প
প্লাস্টিক ব্যবহার রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে: অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খানম
দেশের ৬৯ কারাগারের ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ, ৭০ জঙ্গিসহ ৭০০ বন্দি এখনো পলাতক
পায়রার রাজস্ব আয় বাড়বে তিনগুণ, দেশের অর্থনীতিতে রাখবে বড় ভূমিকা
মমতা ব্যানার্জির মনে গভীর কট্টরপন্থি হিন্দুত্ববাদ : রিজভী
কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ : প্রধান উপদেষ্টা
কুড়িগ্রামে সাবেক এমপি পুত্র সবুজ গ্রেফতার
ভারতে ৫.৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প
অমৃতসরে স্বর্ণ মন্দিরে পাঞ্জাবের সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী সুখবীর সিং বাদালের ওপর গুলিবর্ষণ
খুলনায় সন্ত্রাসী হামলায় আহত বিএনপি নেতার মৃত্যু
বাড়তি মেদ কমাতে ‘খাওয়া কমানো’ কতটা কার্যকর