এবার বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ায় কৃষক পরিবারে নেই নবান্ন উৎসব
৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৯ এএম
প্রকৃতিতে চলছে শীতকাল। পৌষের এ সময়টাতে কৃষকরা নতুন ধান ঘরে তোলেন। নতুন ধানের চালের গুঁড়োতে বানানো নানা রকম পিঠাপুলিতে কৃষকদের ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। তবে এ বছর চিরাচরিত এ দৃশ্যের ব্যত্যয় ঘটেছে। এ বছর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় আমন ধানের চারা নষ্ট হওয়ায় এবং বন্যা পরবর্তী ভারি বৃষ্টির ফলে আমন আবাদ ব্যাহত হওয়ায় কুমিল্লার বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার অধিকাংশ কৃষকের ঘরে নেই নবান্নের আমেজ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এ বছর বন্যা ও ভারি বৃষ্টির কারণে দুই উপজেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমন আবাদ শুরু মুহূর্তে দেখা দিয়েছিল আমন চারার সংকট। এতে আমন আবাদ পিছিয়ে পড়ে। তারপর আবারও কৃষকেরা ভারি বৃষ্টির কবলে পড়ে। এতেও ফসলের ক্ষতি হয় এবং অসময়ে আমন আবাদ করতে হয় কৃষকদের। যার ফলে উপজেলার বিভিন্ন আমন মাঠের অধিকাংশ ক্ষেতে এখনো পাকেনি ধান। কোনো কোনো ক্ষেতে সবে মাত্র ধান বের হচ্ছে। কোথাও কোথাও বন্যা ও বন্যা পরবর্তী ভারি বৃষ্টির কারণে আমন আবাদ করতে না পারায় ফাঁকা পড়ে আছে আমন ক্ষেত। এসব ক্ষেতে এ সময় ফসলের সমারোহ থাকার কথা থাকলেও আগাছায় ভরে আছে এসব অনাবাদি ক্ষেত। এ সময়টায় কৃষকরা নতুন ধান ঘরে তোলার কথা থাকলেও এখনো শূন্যই রয়ে গেছে অধিকাংশ কৃষকের গোলা। তাই অন্যান্য বছরের মতো এ বছর বুড়িচং- ব্রাহ্মণপাড়া কৃষকদের ঘরে নেই নবান্ন উৎসব।
বুড়িচং উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের আগস্টে ঘটে যাওয়া স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে বুড়িচং উপজেলা এ বছর আমনের বীজতলা ও চারা রোপণ করতে পারেনি অনেক কৃষক। আমনের লক্ষ্যমাত্র ছিল ৯ হাজার ৪শ’ হেক্টর আর্জিত হয়েছে ৮ হাজার ৯৬ হেক্টর। সব মিলিয়ে ৫৭ হাজার কৃষক ভয়াবহ বন্যার কারণে কমবেশি ক্ষতির মুখে পরে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় ৫ হাজার ৩২ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৯০ কোটির বেশি টাকার আউশ, আমন ও শাকসবজির ক্ষতি হয়েছে। এতে প্রায় ৩০ হাজার কৃষক ক্ষতির মুখে পড়ে। বন্যা পরবর্তী সময়ে ভারি বৃষ্টির ফলে আবারও আমন ধানের ক্ষেত পানিতে ডুবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে অনেক কৃষক আবারও আমন আবাদ করেছেন। এ বছর আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৪৩০ হেক্টর। তবে দুর্যোগের কারণে এ বছর আমনের আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৫৬৩ হেক্টর জমিতে। তবে আবাদ করা অধিকাংশ জমির ধান এখনো পাকেনি। যে কারণে কিছু কিছু কৃষক আমন ধান ঘরে তুললেও অধিকাংশ কৃষকরা এখনো আমন ধান ঘরে তুলতে পারেননি। তবে দেরিতে হলেও আমন আবাদ করা কৃষকরা পাকা ধান ঘরে তুলতে পারবেন।
এদিকে উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের কৃষক আবদুল মালেক বলছেন, প্রথমে বন্যা, বন্যাপরবর্তী কয়েক দফা ভারি বৃষ্টির ফলে আমন আবাদ পিছিয়ে পড়েছিল। অসময়ে আমন আবাদ করার ফলে তারা এখনো আমন ধান ঘরে তুলতে পারছেন না। এ বছর ফলনও ভালো হয়নি। কোনো কোনো ক্ষেতে এখনো ধানই বের হয়নি। বার বার ফসলের ক্ষতির মুখে পড়ে চিন্তাগ্রস্ত কৃষকেরা। যে কারণে এবার নবান্ন উৎসব নেই অধিকাংশ কৃষকের ঘরে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের নাগাইশ এলাকার কৃষক হুমায়ুন কবির বলেন, এবার বন্যায় আমাদের পাকা আউশ ধান ও জমিতে রোপণ করা আমন ধানের চারা ও আমন বীজতলা নষ্ট হয়েছে। বন্যার পর ধানের চারা সংকট দেখা দিয়েছিল। আমরা আশপাশের উপজেলা থেকে ধানের চারা সংগ্রহ করে আমন আবাদ করেছিলাম। কিন্তু সেগুলোও ভারি বৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবার ফসলের ক্ষতির মুখে পড়ে এ বছর আমাদের মধ্যে নবান্নের আমেজ নেই। উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের অলুয়া এলাকার কৃষক আবুল হোসেন বলেন, বন্যার পর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমাদের কৃষি প্রণোদনা দেয়া হয়েছিল। তবে এ বছর বন্যা ও ভারি বৃষ্টির কারণে আমন আবাদ পিছিয়ে পড়ায় আমরা এখনো আমন ধান ঘরে তুলতে পারিনি। ফসলের ফলনও তেমন ভালো হয়নি। এখনো অনেক জমির ধান গাছে ধান বের হয়নি, সেসব জমির আদৌও ফলন হবে কি না এ নিয়ে আমরা সন্দিহান। সবমিলিয়ে এ বছর আমাদের মধ্যে নবান্নের আনন্দ নেই।
বুড়িচং উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আফরিনা আক্তার বলেন, এ বছর গোমতী বাঁধ ভেঙে বুড়িচং উপজেলার অনেক কৃষক আমন ধান চাষ করতে পারেনি। তবে বন্যার পানি কমার আমরা উপজেলার কৃষকদের মাঝে নগদ অর্থ, রবি ফসল ও ধানের বীজ এবং সার প্রণোদনা দিয়েছি। কৃষক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরিষা ভুট্টা আলু বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি বাপন করেছে। আশা করি কৃষক এ বছর তা পুষিয়ে নিতে পারবে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মাসুদ রানা বলেন, এ বছর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় মাঠের প্রায় সব শস্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। আমন ধানের চারা রোপনের সময়ই বন্যা হওয়ার কারণে এ বছর আমন ধানের চারা অনেকটা দেরিতে রোপণ করা হয়। এজন্যই অন্যান্য বছরে যে সময়ে আমন শস্য কর্তন হয় এ বছর দেরিতে শস্য কর্তন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি ইউনিয়নে আমন শস্য কর্তন শুরু হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে অন্য বছরের তুলনায় এবছর প্রনোদনাও বেশি দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এ বছর বন্যা পরবর্তী সময়ে আমন, বোরো, রবি ফসল ও শাক সবজিসহ প্রায় ১০ হাজারের বেশি কৃষককে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। আশা করছি আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দেরিতে হলেও কৃষকরা আমন ধান ঘরে তুলতে পারবেন। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে কৃষকরা যেন আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারেন সেলক্ষ্যে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নিরলসভাবে কাজ করছে।
বিভাগ : অভ্যন্তরীণ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিস্ফোরক মামলায় নিক্সন চৌধুরীর অন্যতম সহযোগী জব্বার মাস্টার গ্রেপ্তার
সাবেক এমপি কবির উদ্দিন আহমেদ আর নেই
রেকর্ড ৫,৬৩৪ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা সোনালী ব্যাংকের
১৪৮ চিকিৎসককে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বদলি
৭ উইকেট ছেলেকে দিলেন তাসকিন
প্রধান উপদেষ্টার রাজবাড়ী সফর স্থগিত
ভিসা সত্যায়নের বেড়াজালে বিপুল সংখ্যক সউদীগামী কর্মী বায়রা নেতৃবৃন্দের সাথে বিএমইটির ডিজি
মোবাইলের ব্যাককভারে প্রিন্ট করা ছবি লাগানো প্রসঙ্গে
প্রেমিকাকে বিয়ে করলেন জনপ্রিয় গায়ক আরমান মালিক
সরকারি দপ্তরে তদবির বন্ধে সচিবদের উদ্দেশে পত্র দিয়ে তথ্য উপদেষ্টার অনন্য দৃষ্টান্ত
ফুলপুরে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান, ৫ পরিবহনকে জরিমানা
গরুর গাড়ির দৌড় প্রতিযোগিতায় উৎসবের আমেজ
সাইবার আক্রমণ: আসিফ-সাদিক-হান্নানের ফেসবুক আইডি সচল
গোয়ালন্দে শিক্ষার্থীদের মাঝে স্কুল ব্যাগ উপহার
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ ২৩৪ অবৈধ অভিবাসী আটক
১৫% ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করুন মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী
প্লাস্টিক দূষণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে : পরিবেশ উপদেষ্টা
ঝিনাইদহে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত
নোয়াখালীতে কৃষি জমির মাটি কাটায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
লিভ টুগেদার ইস্যুতে এবার স্বাগতাকে উকিল নোটিশ