নরসুন্দা নদী যেন ডাস্টবিন
১৯ মার্চ ২০২৫, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৫, ১২:০৩ এএম

নরসুন্দা নদী বা নাগচিনি নদী বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ জেলার একটি নদী। কিশোরগঞ্জ জেলা শহর এ নদীর তীরে অবস্থিত। নদীটির দৈর্ঘ্য ৫৭ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৮০ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। নদীটি বর্তমানে মৃতপ্রায়। আবর্জনা, অবৈধ্য দখলে নদীটি খালে পরিনত হয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা ‘পাউবো’ কর্তৃক নরসুন্দা নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ৪২। একসময় এই নদী ছিল এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডর মূল চালিকাশক্তি। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের চাপে নদীটি সংকুচিত ও দূষিত হয়ে পড়েছে। কিশোরগঞ্জ শহরের আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনাসহ শহরের তিন বাজার ‘বড়বাজার, কাচারীবাজার, পুরানথানা বাজার’ এর সব ধরনের বর্জ্য সরাসরি নরসুন্দা নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, অবৈধ দখল ও অপরিশোধিত শিল্পবর্জ্যের কারণে নদীটি এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে।
নরসুন্দা নদী নৌপরিবহনের জন্য এক সময় বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নদীর কয়েকটি স্থানে পলি জমে প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। বর্ষাকাল এলে এটি কিছুটা জোয়ারের পানির সংস্পর্শে আসে। শুকনো মৌসুমে থাকে মৃতপ্রায়।
জনশ্রুতি আছে, অতীতে নরসুন্দার ভয়াল রূপের কারণে মানুষ আঁতকে উঠত। কিন্তু বর্তমানে নদী ভরাট, অবৈধ দখল, মাত্রাতিরিক্ত দূষণ, কচুরিপানা নরসুন্দার অতীত ঐতিহ্যকে গ্রাস করে ফেলছে। নদীর পানি ছেয়ে গেছে কচুরিপানার কারণে। দেখে মনে হয় সবুজে ঘেরা বিসৃত কোনো মাঠ! একসময়ের জোয়ার-ভাটাতে পরিপূর্ণ এ নদীতে এখন পানি চলাচল চোখে দেখা দায়। এ ছাড়া দুই তীরের মানুষের পয়োনিষ্কাশনের সহজ স্থানে পরিণত হয়েছে নরসুন্দা নদীটি। নদীর বিশাল অংশ চলে গেছে অবৈধ দখলদারদের কবজায়।
কিশোরগঞ্জবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালে নদীর ৩৫ কিলোমিটার পুন:খননের কাজ শুরু হয়ে ২০১৬ সালে শেষ হয়। এ প্রকল্পে ১১০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। তৎকালীন শহরের ভেতর নরসুন্দার ওপর নির্মাণ করা হয় বেশ কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন সেতু। কিন্তু পরবর্তী সময় সুষ্ঠু তদারকির অভাবে প্রকল্পের সৌন্দর্য ক্রমে হারিয়ে যায়। নদীর প্রবাহ সামান্য ঠিক হলেও কিছুদিন পরই আবার নদীর পাড়ে কোথাও কোথাও অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠে। পাশাপাশি শহরের প্রায় সব বর্জ্য ফেলা হয় এই নদীতে। এ ছাড়া বিভিন্ন হাসপাতাল, বাসাবাড়িসহ বাজারের অপচনশীল প্লাস্টিক বর্জ্য নদীতে ফেলার কারণে ও কচুরীপানা পচে নরসুন্দার পানি দূষিত হয়ে কালো বিবর্ণ রূপ ধারণ করেছে।
নদীর পাড় দিয়ে নির্মিত শহরের বড়বাজার থেকে কাচারীবাজার সেতু পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার ওয়াকওয়েতে (হাঁটার পথ) ময়লা-আবর্জনা ও পশু জবাই বর্জ্যের দুর্গন্ধে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন বাজারের সব ধরনের আবর্জনা এখানে ফেলা হয়। আবর্জনার উৎকট গন্ধে নাক চেপে হাজারো মানুষকে ওয়াকওয়েতে চলাচল করতে হচ্ছে। কেউ একবার এ পথ দিয়ে গেলে দ্বিতীয়বার আর যেতে চান না এ পথে। পৌরসভা ময়লা না ফেলার নির্দেশনা দিয়ে সাইনবোর্ড লাগালেও এর নিচেই ময়লার স্তুপ করে রাখা হয়।
নদীর অবস্থা নিয়ে সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ড বেশ কয়েকবার আলোচনা করলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। নদীপাড়ের মানুষ দাবি করছেন, সরকার চাইলে নরসুনন্দা নদী পুনরুদ্ধার সম্ভব। তার জন্য রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সদিচ্ছার প্রয়োজন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কিশোরগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম জুয়েল ইনকিলাবকে বলেন, কিশোরগঞ্জ জেলার প্রাণ নরসুন্দা নদীর উপর নির্মিত ব্রিজের দুই পাশে ময়লা আবর্জনা ফেলে এক চরম দূর্গন্ধময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এখানে ময়লা ফেলে রাখার আরেকটি অসৎ উদ্দেশ্যও রয়েছে। হোটেল ও বাসাবাড়ির ময়লা আবর্জনা নদীতে ফেলে পায়তারা করছে নদীর তীর ভরাট করে দখলের। এতে নদীতে পানি প্রবাহে বাঁধারও সৃষ্টি হচ্ছে। হোটেল ও ফার্মের মালিকরা ময়লা আবর্জনা ও হাঁস মুরগির বিষ্ঠা নির্দিষ্ট গর্তে না ফেলে রাস্তার পাশে, খালে-জলাশয়ে, বিভিন্ন বাজারে, মসজিদ মাদরাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে ফেলে পরিবেশ দূষণ করছেন। কিন্তু জনসচেতনতা সৃষ্টি কিংবা পরিবেশ দূষণ রোধে কারো কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছেনা। স্থানীয় গুরুদয়াল কলেজের মুক্তমঞ্চের চারপাশের নরসুন্দার পাড়ে ময়লা আবর্জনার স্তুপ পড়ে আছে। পৌরসভায় বর্জ্য নিষ্কাশনে অব্যবস্থাপনার ফলে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনায় পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ছে। পৌর শহরের ব্যবসায়ী ও বাসাবাড়ির নিত্যদিনের ময়লা-আবর্জনা যেখানে-সেখানে ফেলায় শহরের পরিবশে নোংরা হচ্ছে। বর্জ্য অপসারণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় গন্ধে ও মশা মাছির যন্ত্রণায় পৌরবাসী অতিষ্ঠ।
কিশোরগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মমিন ভুইয়া ইনকিলাবকে বলেন, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার সাথে যোগাযোগ করে অনুরোধ করবো নরসুন্দা পাড়ের ময়লা পরিস্কার করার জন্য।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন ইনকিলাবকে বলেন- নরসুন্দার অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরী করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বিভাগীয় কমিশনারের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। জেলা ভিত্তিক বরাদ্ধ পেলে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক মমতাজ বেগম ইনকিলাবকে জানান, আমি নিজে গিয়ে নরসুন্দা পরিদর্শন করে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
বিভাগ : অভ্যন্তরীণ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

সিলেটে লালগালিচা দেখে যেভাবে বিরক্তি প্রকাশ করলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

রাজবাড়ীতে ৩ ফসলী জমি থেকে মাটি বিক্রির অভিযোগ

বিমানবাহিনী ঘাঁটির নাম পরিবর্তন

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হলেন মফিদুর রহমান

লৌহজংয়ে ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন

ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে রাজধানীতে বিএনপির র্যালি

আট দফা দবিতে রাঙ্গামাটি কৃষি ইনস্টিউটের একাডেমিক ভবনে তালা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা

উখিয়ায় প্রবেশপত্র না পাওয়ায় ১৩ এসএসসি পরিক্ষার্থী, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারায় বিদ্যালয়ে হামলা, ভাংচুর ও সড়ক অবরোধ

ভুরুঙ্গামারীতে ভুয়া কাজির দৌরাত্ম্য, বাড়ছে বাল্যবিবাহ

সুন্দরবনের ডাকাতের কবল থেকে উদ্ধার ৬ নারীসহ ৩৩ জেলে

মৃত বাবার লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষা দিলেন ছেলে

শার্শায় ছাত্রীদের শোবার ঘরে সিসি ক্যামেরা, মাদ্রাসা শিক্ষকের কক্ষে মনিটর

সেই জুলহাসকে ফের আর্থিক সহায়তা তারেক রহমানের

ড. ইউনূসের এক কলেই আয়েশি জীবন ছেড়ে আসা কে এই আশিক চৌধুরী?

রেকর্ডের মালা গেঁথে জিতল বাংলাদেশ

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ছাত্রশিবিরের স্মারকলিপি প্রদান

বিএনপির প্রতিবাদী র্যালি ঘিরে নয়াপল্টনে জড়ো হচ্ছেন নেতাকর্মীরা

চাঁদপুরে মিষ্টি তৈরিতে ভেজাল, দুই দোকানির জরিমানা

প্যালেস্টাইনে গণহত্যায় ভারতের প্রতিক্রিয়া নিয়ে তীব্র সমালোচনা করলেন পিনাকী ভট্টাচার্য

মতলবে নানার বাড়িতে বেড়াতে এসে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু