ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১
দক্ষিণ এশিয়াতে গ্রীষ্মের দাবদাহ আরো ভয়াবহ হয়ে উঠছে

ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমিতে আবহাওয়া পরিবর্তন বিপর্যকর হবে

Daily Inqilab দ্য ইকোনোমিস্ট

০৫ এপ্রিল ২০২৩, ১০:০৬ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:৪১ পিএম

২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় বছরে অতিরিক্ত ১ লাখ ১০ হাজার লোকের মৃত্যু হয়েছে। ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমি, যা পাকিস্তানের মধ্য থেকে উত্তর ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ব-দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত পৃথিবীর অন্যতম উষ্ণ, দরিদ্র এবং জনবহুল স্থান। এটি ৭ কোটি মানুষের আবাসস্থল এবং ঘন ঘন আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে দাবদাহের জন্য ব্যতিক্রমীভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল। ভারত ১৯০১ সালের পর থেকে সবেমাত্র তার সবচেয়ে উষ্ণতম ডিসেম্বর এবং ফেব্রুয়ারি অনুভব করেছে। মার্চ মাসে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) এবং এর অনুরূপ পাকিস্তানের পিএমডি মে মাসের শেষ পর্যন্ত গড় তাপমাত্রা এবং দাবদাহ সম্পর্কে সতর্কতা জারি করেছে।

একটি ‹ওয়েট-বাল্ব’ পরিস্থিতি, যেখানে প্রায় ৯৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বাতাসে অতিরিক্ত আদ্রতার কারণে ঘাম বাষ্পীভূত হতে পারে না এবং মানব শরীর আর শীতল হতে পারে না, ফলে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে তাপ নির্গত করা কঠিন হয়ে পড়ে। ওয়েট-বাল্ব তাপমাত্রায় মস্তিষ্কের ক্ষতি এবং হৃদরোগ ও কিডনি অকোজো হয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মারাত্মক বলে মনে করা হয়। এবং ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমি এমন কয়েকটি স্থানের মধ্যে অন্যতম। নভেম্বরে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে যে, ভারত সেই স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম, যেখানে তাপমাত্রা নিয়মিতভাবে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করে। পাকিস্তানের সিন্ধু ও বেলুচিস্তান প্রদেশের সীমান্তে অবস্থিত জাকোবাবাদে গত বছর তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শহরটির ২ লাখ জনসংখ্যার অর্ধেক তীব্র দাবদাহ থেকে বাঁচতে অঞ্চলটি ত্যাগ করেছিল।

ভারতের আবহাওয়া সংস্থা অনুসারে, দেশটিতে গত দুই দশকে প্রতি বছর গড়ে ২৩.৫টি তাপপ্রবাহ ঘটেছে, যা ১৯৮০ থেকে ১৯৯৯ সালের ৯.৯ এর বার্ষিক গড়ের দ্বিগুণেরও বেশি। ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ভারতে দাবদাহ জনিত মৃত্যুর হার ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির এলফাতিহ এলতাহির ও তার সহকর্মীদের একটি গবেষণাপত্র অনুসারে, ‘এমনকি যদি বিশ্ব গ্রিনহাউস-গ্যাস নির্গমন রোধে সম্ভাবনার চেয়ে বেশি অগ্রগতি করেও থাকে, ‹দক্ষিণ এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলগুলিতে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি দাবদাহের আশঙ্কা করা হচ্ছে, যা বেশিরভাগ মানুষের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে মনে করা হয়।›

প্রচন্ড দাবদাহ জনিত ক্ষতির পরিমাণ ইতিমধ্যেই বিশাল। উত্তর ক্যারোলিনার ডিউক ইউনিভার্সিটির লুক পার্সন মনে করেন, দিল্লিতে গড় গ্রীষ্মে প্রতি ঘন্টায় ১৫ থেকে ২০ মিনিটের শ্রম ক্ষতি হয়। প্রতি বছর চরম দাবদাহে ভারত ১০ হাজার ১শ’ কোটি এবং পাকিস্তান ১৩শ’ কোটি বিলিয়ন শ্রমঘন্টা হারায়। গত বছরের গ্রীষ্মে, স্বাভাবিক কৃষিকাজ অসম্ভব হয়ে পড়ে এবং গমের উৎপাদন উভয় দেশে প্রায় ১৫শতাংশ এবং কিছু অঞ্চলে ৩০শতাংশ হ্রাস পায়। সেসময় অঞ্চলটিতে ব্যাপক গবাদিপশুও মারা গিয়েছিল। পাশাপাশি, বিদ্যুত বিভ্রাট, আংশিকভাবে শীতলকরণের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে শিল্পকারখানাগুলি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল এবং স্কুল-দিবস গুলি সংক্ষিপ্ত বা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।

ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় গুজরাট রাজ্যের শহর আহমেদাবাদে ২০১০ সালে তীব্র দাবদাহে এক সপ্তাহে ৮শ’ জনের মৃত্যু হয়েছিল। কর্পোরেট পরামর্শদাতা ম্যাককিন্সে গ্লোবাল ইনস্টিটিউট (এমজিআই)-এর ২০২০ সালের একটি সমীক্ষা বলেছে যে, ভারতে প্রচ- গরমে শ্রমের ক্ষতি ১৯৮০ সালের ১০শতাংশ থেকে বেড়ে বর্তমানে ১৫শতাংশ হয়েছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এটি দ্বিগুণ হবে। এই প্রভাবটি শ্রম-নিবিড় ভারত এবং অন্যান্য গরম এবং দরিদ্র অঞ্চলগুলিতে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৭ সালে তাপ-উন্মুক্ত কাজ ভারতের জিডিপির ৫০% এবং শ্রমশক্তির ৭৫% বা প্রায় ৩৮০ মিলিয়ন নিযুক্ত করেছিল। এমজিআই মনে করে, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত জিডিপির ২.৫ থেকে ৪.৫ শতাংশ এবং পাকিস্তান পাকিস্তান তার জিডিপির ৬.৫ থেকে ৯ শতাংশ হারাতে পারে।

বিশ্বব্যাংক গত বছর সতর্ক করেছিল, ‹বন্যা এবং দাবদাহ কৃষি ও গবাদি পশুর উৎপাদন হ্রাস করে, অবকাঠামো ধ্বংস করে, শ্রমের উৎপাদনশীলতা নষ্ট করে এবং স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।› বছরের পর বছর দরিদ্র এবং জনাকীর্ণ ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমির কিছু অংশ একসময় বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে। এমনকি সবচেয়ে সক্ষম সরকারও তা প্রতিরোধ করতে হিমশিম খাবে, যা বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাবে। নিউ জার্সির প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির একজন বিজ্ঞানী গ্যাব্রিয়েল ভেচি বলেছেন, ‹আমাদের একটি উষ্ণতর পৃথিবীতে বাঁচতে শিখতে হবে।’ এখন প্রশ্ন হল, এই শেখার প্রক্রিয়াটি কতটা সুবিন্যস্ত, ব্যয়বহুল বা বিপর্যয়কর হবে?


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

টেলর সুইফটের পর কমলাকে বিখ্যাত বিজ্ঞান ম্যাগাজিনের সমর্থন নিয়ে বিতর্ক

টেলর সুইফটের পর কমলাকে বিখ্যাত বিজ্ঞান ম্যাগাজিনের সমর্থন নিয়ে বিতর্ক

ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়

ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়

কোহলি রিভিউ না নেওয়ার যে কারণ জানালেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার

কোহলি রিভিউ না নেওয়ার যে কারণ জানালেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার

মাঠের বাইরে নতুন পরিচয়ে মেসি

মাঠের বাইরে নতুন পরিচয়ে মেসি

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার