দক্ষিণ এশিয়াতে গ্রীষ্মের দাবদাহ আরো ভয়াবহ হয়ে উঠছে

ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমিতে আবহাওয়া পরিবর্তন বিপর্যকর হবে

Daily Inqilab দ্য ইকোনোমিস্ট

০৫ এপ্রিল ২০২৩, ১০:০৬ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:৪১ পিএম

২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় বছরে অতিরিক্ত ১ লাখ ১০ হাজার লোকের মৃত্যু হয়েছে। ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমি, যা পাকিস্তানের মধ্য থেকে উত্তর ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ব-দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত পৃথিবীর অন্যতম উষ্ণ, দরিদ্র এবং জনবহুল স্থান। এটি ৭ কোটি মানুষের আবাসস্থল এবং ঘন ঘন আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে দাবদাহের জন্য ব্যতিক্রমীভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল। ভারত ১৯০১ সালের পর থেকে সবেমাত্র তার সবচেয়ে উষ্ণতম ডিসেম্বর এবং ফেব্রুয়ারি অনুভব করেছে। মার্চ মাসে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) এবং এর অনুরূপ পাকিস্তানের পিএমডি মে মাসের শেষ পর্যন্ত গড় তাপমাত্রা এবং দাবদাহ সম্পর্কে সতর্কতা জারি করেছে।

একটি ‹ওয়েট-বাল্ব’ পরিস্থিতি, যেখানে প্রায় ৯৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বাতাসে অতিরিক্ত আদ্রতার কারণে ঘাম বাষ্পীভূত হতে পারে না এবং মানব শরীর আর শীতল হতে পারে না, ফলে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে তাপ নির্গত করা কঠিন হয়ে পড়ে। ওয়েট-বাল্ব তাপমাত্রায় মস্তিষ্কের ক্ষতি এবং হৃদরোগ ও কিডনি অকোজো হয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মারাত্মক বলে মনে করা হয়। এবং ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমি এমন কয়েকটি স্থানের মধ্যে অন্যতম। নভেম্বরে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে যে, ভারত সেই স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম, যেখানে তাপমাত্রা নিয়মিতভাবে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করে। পাকিস্তানের সিন্ধু ও বেলুচিস্তান প্রদেশের সীমান্তে অবস্থিত জাকোবাবাদে গত বছর তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শহরটির ২ লাখ জনসংখ্যার অর্ধেক তীব্র দাবদাহ থেকে বাঁচতে অঞ্চলটি ত্যাগ করেছিল।

ভারতের আবহাওয়া সংস্থা অনুসারে, দেশটিতে গত দুই দশকে প্রতি বছর গড়ে ২৩.৫টি তাপপ্রবাহ ঘটেছে, যা ১৯৮০ থেকে ১৯৯৯ সালের ৯.৯ এর বার্ষিক গড়ের দ্বিগুণেরও বেশি। ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ভারতে দাবদাহ জনিত মৃত্যুর হার ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির এলফাতিহ এলতাহির ও তার সহকর্মীদের একটি গবেষণাপত্র অনুসারে, ‘এমনকি যদি বিশ্ব গ্রিনহাউস-গ্যাস নির্গমন রোধে সম্ভাবনার চেয়ে বেশি অগ্রগতি করেও থাকে, ‹দক্ষিণ এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলগুলিতে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি দাবদাহের আশঙ্কা করা হচ্ছে, যা বেশিরভাগ মানুষের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে মনে করা হয়।›

প্রচন্ড দাবদাহ জনিত ক্ষতির পরিমাণ ইতিমধ্যেই বিশাল। উত্তর ক্যারোলিনার ডিউক ইউনিভার্সিটির লুক পার্সন মনে করেন, দিল্লিতে গড় গ্রীষ্মে প্রতি ঘন্টায় ১৫ থেকে ২০ মিনিটের শ্রম ক্ষতি হয়। প্রতি বছর চরম দাবদাহে ভারত ১০ হাজার ১শ’ কোটি এবং পাকিস্তান ১৩শ’ কোটি বিলিয়ন শ্রমঘন্টা হারায়। গত বছরের গ্রীষ্মে, স্বাভাবিক কৃষিকাজ অসম্ভব হয়ে পড়ে এবং গমের উৎপাদন উভয় দেশে প্রায় ১৫শতাংশ এবং কিছু অঞ্চলে ৩০শতাংশ হ্রাস পায়। সেসময় অঞ্চলটিতে ব্যাপক গবাদিপশুও মারা গিয়েছিল। পাশাপাশি, বিদ্যুত বিভ্রাট, আংশিকভাবে শীতলকরণের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে শিল্পকারখানাগুলি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল এবং স্কুল-দিবস গুলি সংক্ষিপ্ত বা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।

ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় গুজরাট রাজ্যের শহর আহমেদাবাদে ২০১০ সালে তীব্র দাবদাহে এক সপ্তাহে ৮শ’ জনের মৃত্যু হয়েছিল। কর্পোরেট পরামর্শদাতা ম্যাককিন্সে গ্লোবাল ইনস্টিটিউট (এমজিআই)-এর ২০২০ সালের একটি সমীক্ষা বলেছে যে, ভারতে প্রচ- গরমে শ্রমের ক্ষতি ১৯৮০ সালের ১০শতাংশ থেকে বেড়ে বর্তমানে ১৫শতাংশ হয়েছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এটি দ্বিগুণ হবে। এই প্রভাবটি শ্রম-নিবিড় ভারত এবং অন্যান্য গরম এবং দরিদ্র অঞ্চলগুলিতে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৭ সালে তাপ-উন্মুক্ত কাজ ভারতের জিডিপির ৫০% এবং শ্রমশক্তির ৭৫% বা প্রায় ৩৮০ মিলিয়ন নিযুক্ত করেছিল। এমজিআই মনে করে, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত জিডিপির ২.৫ থেকে ৪.৫ শতাংশ এবং পাকিস্তান পাকিস্তান তার জিডিপির ৬.৫ থেকে ৯ শতাংশ হারাতে পারে।

বিশ্বব্যাংক গত বছর সতর্ক করেছিল, ‹বন্যা এবং দাবদাহ কৃষি ও গবাদি পশুর উৎপাদন হ্রাস করে, অবকাঠামো ধ্বংস করে, শ্রমের উৎপাদনশীলতা নষ্ট করে এবং স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।› বছরের পর বছর দরিদ্র এবং জনাকীর্ণ ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমির কিছু অংশ একসময় বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে। এমনকি সবচেয়ে সক্ষম সরকারও তা প্রতিরোধ করতে হিমশিম খাবে, যা বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাবে। নিউ জার্সির প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির একজন বিজ্ঞানী গ্যাব্রিয়েল ভেচি বলেছেন, ‹আমাদের একটি উষ্ণতর পৃথিবীতে বাঁচতে শিখতে হবে।’ এখন প্রশ্ন হল, এই শেখার প্রক্রিয়াটি কতটা সুবিন্যস্ত, ব্যয়বহুল বা বিপর্যয়কর হবে?


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ইথিওপিয়ায় ৫.৮ মাত্রার ভূমিকম্প ,আতঙ্কে জনজীবন
চীনে চাকরির বাজারের সংকট ,উচ্চশিক্ষিত যুবকরা কম যোগ্যতার চাকরি নিচ্ছে
নিজের মৃত্যুদণ্ড দ্রুত কার্যকর করতে বন্দী অ্যারন ব্রায়ান গাঞ্চেসের আবেদন
বিদায়বেলায়ও ইসরাইলকে আরও ৮০০ কোটি ডলার সামরিক সহায়তা দিচ্ছেন বাইডেন
চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বোরিকের ঐতিহাসিক দক্ষিণ মেরু সফর
আরও

আরও পড়ুন

শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে, এই ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতেই হবে- এহসানুল হক মিলন

শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে, এই ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতেই হবে- এহসানুল হক মিলন

সালথা উপজেলা আ'লীগের সহ-সভাপতি সাহিদুজ্জামান পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার

সালথা উপজেলা আ'লীগের সহ-সভাপতি সাহিদুজ্জামান পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার

তাসকিনকে নিয়ে সাবধানী ছিলেন উসমান

তাসকিনকে নিয়ে সাবধানী ছিলেন উসমান

মাটি, কৃষি ও দেশ বাঁচান শ্লোগানে কৃষকদের কৃষি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সেমিনার

মাটি, কৃষি ও দেশ বাঁচান শ্লোগানে কৃষকদের কৃষি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সেমিনার

আমরা কি সুন্দর তাই না?

আমরা কি সুন্দর তাই না?

ইথিওপিয়ায় ৫.৮ মাত্রার ভূমিকম্প ,আতঙ্কে জনজীবন

ইথিওপিয়ায় ৫.৮ মাত্রার ভূমিকম্প ,আতঙ্কে জনজীবন

দেবহাটায় তিনটি বিদেশি পিস্তল -গুলিসহ একজন আটক

দেবহাটায় তিনটি বিদেশি পিস্তল -গুলিসহ একজন আটক

হরিরামপুরে নাশকতা মামলার আসামী দিনমজুর কাঠমিস্ত্রির নিত্য সরকারের কারাগারে মৃত্যু

হরিরামপুরে নাশকতা মামলার আসামী দিনমজুর কাঠমিস্ত্রির নিত্য সরকারের কারাগারে মৃত্যু

টঙ্গীবাড়ীতে রাস্তার উপরেই বিদ্যুতের খুঁটি!

টঙ্গীবাড়ীতে রাস্তার উপরেই বিদ্যুতের খুঁটি!

চীনে চাকরির  বাজারের সংকট ,উচ্চশিক্ষিত যুবকরা কম যোগ্যতার চাকরি নিচ্ছে

চীনে চাকরির বাজারের সংকট ,উচ্চশিক্ষিত যুবকরা কম যোগ্যতার চাকরি নিচ্ছে

রাজবাড়ীতে এফিডেভিট এর ফাঁদে বাল্য বিয়ে

রাজবাড়ীতে এফিডেভিট এর ফাঁদে বাল্য বিয়ে

বিয়ে এখনও হয়নি,কেবল ছবি তোলা হয়েছে: তাহসান খান

বিয়ে এখনও হয়নি,কেবল ছবি তোলা হয়েছে: তাহসান খান

জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের দাবিতে ৬ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা

জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের দাবিতে ৬ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা

ওবায়দুল কাদের ও তার ভাই এ জনপদকে সন্ত্রাসের জনপদ বানিয়েছিল-ফখরুল ইসলাম

ওবায়দুল কাদের ও তার ভাই এ জনপদকে সন্ত্রাসের জনপদ বানিয়েছিল-ফখরুল ইসলাম

মধ্যরাতে  শিক্ষার্থীরা বুলডোজার দিয়ে ছাত্রলীগের কার্যালয় গুঁড়িয়ে দিলেন

মধ্যরাতে শিক্ষার্থীরা বুলডোজার দিয়ে ছাত্রলীগের কার্যালয় গুঁড়িয়ে দিলেন

ভারতে যাচ্ছেন আরও ৫০ বিচারক

ভারতে যাচ্ছেন আরও ৫০ বিচারক

হাত পা বেধে একটি কারখানায় ডাকাতি ৪০ লাখ টাকার মালামাল লুট

হাত পা বেধে একটি কারখানায় ডাকাতি ৪০ লাখ টাকার মালামাল লুট

চলতি মৌসুমে শতকোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা গদখালীর চাষিদের

চলতি মৌসুমে শতকোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা গদখালীর চাষিদের

বৃষ্টি ও তাপমাত্রা নিয়ে নতুন বার্তা

বৃষ্টি ও তাপমাত্রা নিয়ে নতুন বার্তা

কাপ্তাইয়ে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় শীতের প্রকোপ বেড়েছে

কাপ্তাইয়ে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় শীতের প্রকোপ বেড়েছে