ইউক্রেনে রাশিয়া ও ন্যাটোর ছায়া-যুদ্ধ কি সম্মুখসমরে রূপ নিতে পারে?
০৭ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫৬ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০২:৩৯ এএম
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই সমর বিশেষজ্ঞদের অনেকে এই সংঘাত আরো ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন। তারা বলছেন মস্কো তার প্রতিবেশী ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালালেও, এই যুদ্ধ আসলে রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে প্রক্সি ওয়ার বা ছায়া-যুদ্ধ। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ কয়েকটি দেশের পক্ষ থেকে ইউক্রেনে অত্যাধুনিক সামরিক অস্ত্র পাঠানোর ঘোষণা দেওয়ার পর খোদ রাশিয়ার পক্ষ থেকেও পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতের হুমকি দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি উভয়পক্ষের মধ্যে এরকম এক সরাসরি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে যেখানে একটি রুশ যুদ্ধবিমানের সাথে সংঘর্ষের পর পাইলট-বিহীন একটি মার্কিন ড্রোন কৃষ্ণ সাগরে বিধ্বস্ত হয়। এর জের ধরে পশ্চিমা বিশ্বের সাথে রাশিয়ার ছায়া-যুদ্ধ কি সম্মুখসমরে রূপ নিতে পারে?
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সমরবিদ ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী বলছেন রণক্ষেত্রে রাশিয়া বনাম ইউক্রেনের সংঘাত হলেও, এই যুদ্ধ আসলে নেটো তথা পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে রাশিয়ার পরোক্ষ যুদ্ধ।তিনি বলেন, এই যুদ্ধ শুরু হয়েছে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি যখন রুশ বাহিনী ইউক্রেনের সুনির্দিষ্ট সীমারেখা অতিক্রম করে ইউক্রেনের ভূখ-ে এবং তার আকাশ সীমায় হামলা চালায়। কিন্তু এর অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে নেটো জোটের সদস্য দেশগুলো ইউক্রেনের পক্ষে সংঘাত চালিয়েছে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস এলাকায়।
এই অঞ্চলে রুশ ভাষাভাষী অনেকেই ২০১৪ সালে ইউক্রেন সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এসময় রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রাইমিয়া অঞ্চল দখল করে নেয়। ‘সেই সময় থেকে যুদ্ধ চলছে। আমরা সেই যুদ্ধ সম্পর্কে খুব একটা জানি না। কারণ পাশ্চাত্যের সংবাদ মাধ্যমগুলো এই যুদ্ধের ব্যাপারে খুব একটা খবর দেয়নি। কিন্তু রুশ সংবাদ মাধ্যমে তার খবরাখবর রোজই প্রচারিত হয়েছে,’ বলেন. আলী। তিনি বলেন, ‘এই যুদ্ধটি চলছে ২০১৪ সাল থেকে, যখন থেকে নেটো জোট ইউক্রেনীয় বাহিনীকে প্রশিক্ষণ, অস্ত্র এবং গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করে চলেছে। কাজেই এই সংঘাত রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের হলেও, বহু বছর ধরেই নেটো জোট ইউক্রেনকে মদত যুগিয়েছে, আর সেকারণেই আমরা এটিকে একটি পরোক্ষ যুদ্ধ বলে বর্ণনা করছি।’
কিন্তু এই সংঘাত শেষ পর্যন্ত রাশিয়া-নেটো ছায়া-যুদ্ধের মধ্যে সীমিত থাকে কি না সে বিষয়ে অনেক বিশেষজ্ঞ সংশয় প্রকাশ করছেন। এরকম সরাসরি যুদ্ধের হুমকি এসেছে ক্রেমলিন থেকেও। যুক্তরাষ্ট্রসহ নেটো জোটের বিভিন্ন দেশ যখনই কিয়েভে অস্ত্র পাঠানোর কথা ঘোষণা করেছে, তখনই মস্কো এই জোটের ওপর পাল্টা আক্রমণের ব্যাপারে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে। সম্প্রতি এই উত্তেজনায় নতুন করে ঘি ঢেলেছে রাশিয়ার যুদ্ধবিমান এবং আমেরিকার একটি ড্রোনের সংঘর্ষের ঘটনা। বিশ্লেষকরা বলছেন ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া মুখোমুখি হলে কী বিপদ হতে পারে এই সংঘর্ষ তারই ইঙ্গিত দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে আমেরিকান পাবলিক ইউনিভার্সিটি সিস্টেমের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক সাঈদ ইফতেখার আহমেদ মনে করেন- সরাসরি এই সংঘাতের ঘটনা উদ্বেগজনক হলেও, দুই পক্ষ এই উত্তেজনাকে বেশি দূর যেতে দেবে না। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াকে পরস্পরের সামরিক যানের ওপর আক্রমণ চালাতে দেখা যায়নি। স্নায়ু-যুদ্ধ এবং তার পরবর্তী সময়েও এই দুটো দেশ তাদের সামরিক লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করার বিষয়টি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছে। সবসময়ই এধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে এরকম সরাসরি সংঘাতের ঘটনা যে এই প্রথম ঘটলো তা নয়। ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুর দিকে রুশ বিমান বাহিনী ইউক্রেনে নেটো জোটের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আক্রমণ চালিয়ে বেশ কিছু সৈন্যকে হত্যা করেছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার তিন সপ্তাহের মধ্যে, ১৩ মার্চ রাশিয়ার বিমান বাহিনী ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলীয় ইয়াভরিভ শহরে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিরক্ষা জোট নেটোর একটি সেনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ওপর এই হামলা পরিচালনা করে।
প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাবেক এক মুখপাত্র সের্গেই মারকভ, যিনি এখন মস্কোর ইন্সটিটিউট অব পলিটিক্যাল স্টাডিজের একজন পরিচালক, সম্প্রতি বিবিসিকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তিনি বলছেন ইউক্রেনে এখন যে যুদ্ধ চলছে, সেটি আসলে তার ভাষায়, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নেটোর যুদ্ধ। তার মতে, ইউক্রেনের এই হাইব্রিড যুদ্ধ কার্যত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। কিন্তু আমেরিকান পাবলিক ইউনিভার্সিটি সিস্টেমের শিক্ষক সাঈদ ইফতেখার আহমেদ মনে করেন, এরকম এক পরিণতির আশঙ্কা থেকেই পরমাণু শক্তিধর এই দুটো দেশ সরাসরি যুদ্ধ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন- আমেরিকা ও রাশিয়ার সৈন্যরা যখনই একে অপরের দিকে গুলি ছুঁড়ে মারবে তখনই বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। বিশ্লেষকরা বলছেন এরকম সংঘাতের আশঙ্কা নির্ভর করছে নেটোর কোনো সদস্য দেশের এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ওপর। আর এরকম কিছু ঘটলে ইউক্রেন যুদ্ধ যে বিপদজনক দিকে মোড় নেবে না সেই গ্যারান্টি কেউ দিতে পারে না। সূত্র : বিবিসি নিউজ।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
পেকুয়া প্রেসক্লাব পরিদর্শন করেন কক্সবাজার প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দ
সুপ্রিম কোর্টে আরও এক হেল্পলাইন চালু, মিলবে আইনি সেবা
চলতি সপ্তাহে টানা দুদিন বৃষ্টির আভাস দিল আবহাওয়া অফিস
ভারতের ছত্তিশগড়ে সেপটিক ট্যাংক থেকে সাংবাদিকদের লাশ উদ্ধার
বিএনপি নেতা এস এ খালেকের মৃত্যুতে বাসায় ছুটে গেলেন জামায়াত আমির
এনআইডি সেবা নিশ্চিতে কর্মকর্তাদের প্রধান ফটকে অফিস করার নির্দেশ
ছাত্রদল আমাদেরকে প্রতিপক্ষ মনে করে : শিবির সভাপতি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির কর্মসূচি শুরু আজ
জকিগঞ্জের সন্তানরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নেতৃত্ব দিচ্ছে : ব্যারিস্টার সাইফ উদ্দিন খালেদ
এইচএমপিভি ভাইরাসের সংক্রমণ এবার মালয়েশিয়ায়
গণ-অভ্যুত্থানে হত্যা : চিকিৎসক-নার্সসহ বিএসএমএমইউর ১৫ জন বরখাস্ত
ভারতে পালানোর সময় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার
চলতি সপ্তাহেই পদত্যাগ করতে পারেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো
সাভার ও আশুলিয়ায় খাঁটি খেজুরের রস খেতে দূর দূরান্ত থেকে আসছে মানুষ
‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু নিয়ে আজও দূষণের শীর্ষে ঢাকা
ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর হলে কী প্রভাব পড়তে পারে আগামী নির্বাচনে?
রাজধানীতে অটোরিকশায় মোটরসাইকেলের ধাক্কা, প্রাণ গেল দুই যুবকের
নবীনগর - চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ
কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে লন্ডন যাবেন খালেদা জিয়া
চিকিৎসকের ভুলে ৩০০ হাঁসের মৃত্যু, আরো ৩৭০টি অসুস্থ