সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধির রেকর্ড
০৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:৩২ পিএম | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ১০:১৬ এএম
সম্প্রতি ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা। তাপমাত্রা অত্যাধিক বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সৃষ্টি হয়েছে সামুদ্রিক তাপপ্রবাহ। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এনওএএ) প্রাথমিক তথ্যে দেখা যায়, এপ্রিলের শুরুর দিক থেকে সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা রয়েছে ২১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাসের এ তাপমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে ২০১৬ সালে রেকর্ড করা সর্বোচ্চ ২১ সেলসিয়াস সীমা। নিউ সাউথ ওয়েলস ইউনিভার্সিটির আবহাওয়া বিজ্ঞানী অধ্যাপক ম্যাথিউ ইংল্যান্ডের বরাতে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাপমাত্রার বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এটি আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। বিস্তৃত গ্রীষ্মম-লীয় প্রশান্ত মহাসাগর জুড়ে তিন বছরের ‘লা নিনা’ পরিস্থিতি বৈশ্বিক তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমিয়ে দেয়ায় ভূমিকা রাখছে। লা নিনা এক ধরনের শীতল স্রোত। ফলে এ পরিস্থিতি চলাকালীন পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল বরাবর দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে স্বাভাবিকের চেয়ে শীতল সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয়। এবং গ্রীষ্মম-লীয় অঞ্চলে সৃষ্টি হওয়া উচ্চচাপ আয়ন বায়ুর পশ্চিমমুখী গতিকে ত্বরান্বিত করে। ফলে প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূলীয় এলাকাগুলোতে শুষ্ক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। উল্টোদিকে লা নিনোর প্রভাবে মহাসাগরের পশ্চিম দিকে নিরক্ষীয় অঞ্চলে অবস্থিত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটবে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এখন সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধির মাত্রা এ বছরের শেষদিকে গ্রীষ্মম-লীয় প্রশান্ত মহাসাগরে ‘এল নিনো’ পরিস্থিতি তৈরির ইঙ্গিত দিচ্ছে। এল নিনো উষ্ণ সমুদ্রস্রোত। এর প্রভাবে প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূলে প্রচুর বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে আবহাওয়া চরমভাবাপন্ন হয়ে উঠতে পারে। তাদের আশঙ্কা, এ পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রার রেকর্ডও ভেঙে দিতে পারে বারবার। এনওএএর বিজ্ঞানী ডা. মাইক ম্যাকফ্যাডেন বলছেন, সম্প্রতি লা নিনা পরিস্থিতি শেষ হয়ে গিয়েছে। এর ফলে বায়ুম-লে গ্রিনহাউস গ্যাসের বৃদ্ধি সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী দীর্ঘস্থায়ী শীতকাল দেখা দিচ্ছে। অন্যদিকে এল নিনোর সময় এ অঞ্চলে সমুদ্রের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উষ্ণ থাকবে এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাব স্পষ্টভাবেই পরিবেশে প্রভাব ফেলতে শুরু করবে। গার্ডিয়ান বলছে, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো এবং বন উজাড় করার ফলে বায়ুমন্ডলে ক্রমাগত গ্রিনহাউস গ্যাস যুক্ত হয়ে হয়ে তাপমাত্রা বেড়েছে। আর অতিরিক্ত তাপের ৯০ শতাংশ শোষণ করে সমুদ্রের এমন দশা হয়েছে। তবে আশঙ্কার বিষয় হলো, সমুদ্রে উপরিভাগের তাপমাত্রা ক্রমেই নিচের দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। ইউএস ন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাটমোস্ফেরিক রিসার্চের বিজ্ঞানী ড. কেভিন ট্রেনবার্থ বলেছেন, গ্রীষ্মম-লীয় প্রশান্ত মহাসাগরের উপরিভাগের তাপ ১০০ মিটারেরও বেশি নিচে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতি সমুদ্রস্রোতকে প্রভাবিত করবে এবং ভূমির আবহাওয়া পরিবর্তনে নেতিবাচক ভূমিকা রাখবে। ড. অ্যালেক্স সেনগুপ্তের বরাতে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ১৯৮০ সালের পর থেকে সমুদ্রপৃষ্ঠে তাপমাত্রা মোটামুটি একই রেখায় ছিল। কিন্তু লা নিনা পরিস্থিতি চলার পরও গত তিন বছরে দক্ষিণ ভারত মহাসাগর, দক্ষিণ আটলান্টিক, উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ডের চারপাশে, অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্ব এবং মধ্য আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চলসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক এলাকার তাপমাত্রা রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে। একই সঙ্গে এতগুলো এলাকার তাপমাত্রা চরমভাবাপন্ন হয়ে ওঠাকেও আবহাওয়ার জন্য নেতিবাচক বলে মনে করছেন তিনি। শুধু সমুদ্রস্রোত এবং ভূপৃষ্ঠের আবহাওয়াই নয়, সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে প্রভাবিত হচ্ছে সমুদ্রের পরিবেশেও। সামুদ্রিক বন্যপ্রাণীর ওপরও বিধ্বংসী প্রভাব ফেলতে পারে এ পরিস্থিতি। সমুদ্রের খাদ্যশৃঙ্খল ভেঙে ফেলার পাশাপাশি ধ্বংস করে দিতে পারে গ্রীষ্মম-লীয় প্রবাল প্রাচীরগুলোকেও। এ পরিস্থিতিকে মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ই বলছেন বিজ্ঞানীরা। মোনাশ ইউনিভার্সিটির আবহাওয়া বিজ্ঞানী প্রফেসর ডায়েটমার ডোমেনগেট বলছেন, সমুদ্রে অনেক বেশি পরিষ্কার হয়ে দেখা দিচ্ছে মানবসৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণতার সংকেত। শিগগিরই আমরা একটি চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার মধ্যে পড়তে যাচ্ছি। আমাদের গবেষণা অচিরেই একটি এল নিনো অবস্থার পূর্বাভাস দিচ্ছে। এমনটা ঘটলে আমরা শুধু সমুদ্রেই নয়, এ বছরের শেষদিকে ভূমিতেও তাপমাত্রার নতুন নতুন রেকর্ড দেখতে পাব। গার্ডিয়ান।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
গাজীপুরে ছুটির দিনেও ২৫ শতাংশ কারখানা খোলা ছিল
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বীরত্বগাথা জাতিসংঘে তুলে ধরবেন প্রধান উপদেষ্টা
তিন জেলাসহ সাত বিভাগের ওপর দিয়ে বইছে তাপপ্রবাহ
তিন পার্বত্য জেলার পরিস্থিতি নিয়ে আইএসপিআর এর বিবৃতি
দুই দিনেই পরাজয়ের ধ্বনি শুনছে বাংলাদেশ
ছাত্রআন্দোলনে শহীদ ছাত্রদলনেতা ওয়াসিমের কবর জিয়ারতে কেন্দ্রীয় নেতারা
অনেক সচিবসহ কর্মকর্তারা নাশকতা করার চেষ্টা করছে:রিজভী
রাজধানীতে ঢাকা দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভ মিছিল
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ফিরে আসছে: উপদেষ্টা নাহিদ
কমলা হ্যারিস জিতলে বিনিয়োগ তুলে নেয়ার হুমকি প্রস্তুতি নিচ্ছেন ওয়ারেন বাফেটও: ইলন মাস্ক
বান্দরবানের রুমায় অস্ত্র গোলাবারুদ জ্যামার উদ্ধার
প্রথমবারের মতো ছুটির দিনেও চলছে মেট্রো
বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ ও বিচারের দাবীতে খুলনায় মানববন্ধন
শেখ হাসিনার দলবলকে আগলে রেখেছে বর্তমান প্রশাসন: সেলিমা রহমান
রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০ জনে
অনতিবিলম্বে ভিসি নিয়োগ না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী ইবি শিক্ষার্থীদের
৩শ' আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত: অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
বরিশালে রাইজিং স্কলার অ্যাওয়ার্ড ২০২৪ অনুষ্ঠিত
ঈশ্বরদীতে সাপের কামড়ে ১ ব্যাক্তির মৃত্যু