সুদানে গৃহযুদ্ধ তৃতীয় দিনেও অব্যাহত
১৭ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫৫ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৫৭ পিএম
সুদানের সেনাবাহিনী এবং একটি কুখ্যাত আধা-সামরিক বাহিনীর মধ্যে তিন দিন ধরে চলা ক্ষমতার লড়াই দেশটিকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে এবং এ পর্যন্ত দু’পক্ষের শতাধিক মানুষ নিহত আর এক হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। রাজধানী খার্তুমে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এবং সেনা সদর দফতরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বাহিনীর মধ্যে লড়াই চলছে।
চিকিৎসকদের একটি সংগঠন জানিয়েছে, কেবল খার্তুমেই ২৫ জন মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৭ জন বেসামরিক মানুষ।
সুদানে বেসামরিক শাসন ফিরিয়ে আনার এক প্রস্তাবিত পরিকল্পনা নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে এই সংঘাত শুরু হলো। সেনাবাহিনী এবং তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) উভয়েই দাবি করছে, বিমান বন্দর এবং রাজধানী খার্তুমের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা তাদের দখলে। সারারাত ধরে এসব জায়গায় লড়াই চলেছে। খার্তুমের সংলগ্ন শহর ওমডারমান এবং কাছাকাছি আরেক শহর বাহরিতেও রোববার ভোরের প্রথম প্রহরে ভারী গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, লোহিত সাগরের বন্দর নগরী পোর্ট সুদানেও গোলাগুলি চলছে।
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, যুদ্ধবিমানগুলো আরএসএফের ঘাঁটিগুলোতে আক্রমণ চালাচ্ছে। বিমানবাহিনী যখন শনিবার আকাশ থেকে আধা-সামরিক আরএসএফের তৎপরতার ওপর নজর রাখছিল, তখন তারা লোকজনকে তাদের ঘরে থাকতে বলেছিল। খার্তুমের বাসিন্দারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, তারা ভয়ে-আতংকে আছেন। একজন জানিয়েছেন, তার পাশের বাড়ির ওপর গুলি চলছে। সুদানের ডাক্তারদের একটি কমিটি জানিয়েছে, দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে এবং শহরে অন্তত ৫৬ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে। এক ডজনের মতো সেনা সদস্য নিহত হয়েছে। এদের কাউকে কাউকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল। এই সংগঠনটি বলছে, সব মিলিয়ে মোট ১১০০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছে।
জাতিসংঘের একটি সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর (ডাব্লিউএফপি) তিনজন কর্মী সুদানের পশ্চিমের কাবকাবিয়ার একটি সামরিক ঘাঁটির কাছে আরএসএফ এবং সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলির সময় নিহত হয়েছে। সুদানে ২০২১ সালের অক্টোবরে এক সামরিক অভ্যুত্থানের পর হতে দেশটি মূলত জেনারেলরাই চালাচ্ছে। সুদানের ক্ষমতার কেন্দ্রে এখন জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান, তিনিই কার্যত এখন দেশটির নেতা। তার প্রতি অনুগত সামরিক ইউনিটগুলোর সঙ্গে লড়াই চলছে আরএসএফের, যেটির নেতৃত্বে আছেন সুদানের উপ-নেতা মোহাম্মদ হামদান দাগালো, যিনি হেমেডটি নামেও পরিচিত। হেমেডটি বলেছেন, তার সৈন্যরা সব সেনা ঘাঁটি দখল না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে। এর পাল্টা সুদানের সশস্ত্র বাহিনীগুলোও আধা-সামরিক বাহিনী আরএসএফ-কে ধ্বংস না করা পর্যন্ত কোন ধরণের আপোস-আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে।
খার্তুমের আকাশে এখন কুন্ডলি পাকিয়ে উঠছে কালো ধোঁয়া, ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে লোকজন দৌড়াদৌড়ি করছে গোলাগুলি থেকে নিজেদের আড়াল করার জন্য। রয়টার্সের একজন সাংবাদিক জানান, রাস্তায় অনেক সাঁজোয়া যান চলাচল করছে। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, খার্তুম বিমান বন্দরে একটি বেসামরিক বিমান আগুনে পুড়ছে। সৌদি এয়ারলাইন সৌদিয়া বলেছে, তাদের একটি এয়ারবাস গোলাগুলির মুখে পড়েছে। অনেক এয়ারলাইন্স খার্তুমে তাদের ফ্লাইট বাতিল করেছে। প্রতিবেশি দেশ চাড বলেছে, তারা সুদানের সঙ্গে তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে।
‘আমাদের এখানে কোন বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই’, বিবিসিকে জানিয়েছেন খার্তুম সফররত এক ব্রিটিশ-সুদানি ডাক্তার, ‘এখানে খুব গরম। কিন্তু আমরা জানালা পর্যন্ত খুলতে পারছিনা, বাইরে কানে তালা লেগে যাওয়ার মতো এক বিকট আওয়াজ।’
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী, যিনি কেনিয়ায় অবস্থানরত তার বোনের মাধ্যমে বিবিসির সঙ্গে কথা বলেছেন, তিনি জানান, ‘গোলাগুলি এখনো চলছে এবং লোকজন ঘরের মধ্যে আটকে আছে- সেখানে এতটাই ভয় আর আতংক।’ একটি সামরিক বিমান যখন মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে তখন দুয়া তারিক বিবিসির সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, ‘আমার পাশের বাড়ির ছাদের ওপর এই বিমান থেকে গুলি করা হচ্ছে এবং আমরা এখন বাঁচার জন্য আশ্রয় খুঁজছি।’
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন এবং রাশিয়া- সবাই অবিলম্বে এই লড়াই বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব এরই মধ্যে জেনারেল বুরহান এবং জেনারেল দাগালোর সঙ্গে কথা বলেছেন, তাদেরকে সহিংসতা থামাতে বলেছেন। বিবিসির এমানুয়েল ইগুঞ্জা জানাচ্ছেন, দেশটিতে প্রস্তাবিত বেসামরিক সরকারে কে একীভূত সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করবেন - তা নিয়ে বিবাদ তৈরি হয়েছে। পশ্চিমা এবং আঞ্চলিক নেতারা দু পক্ষকে উত্তেজনা হ্রাস করা এবং দেশটিতে বেসামরিক শাসন ফিরিয়ে আনার জন্য আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলো আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে রক্তপাত বন্ধে সহায়তা করারও আহ্বান জানিয়েছে।
গতকাল মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন যে, সুদানে লড়াইয়ের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের মধ্যে ‘গভীর উদ্বেগ’ রয়েছে এবং তিনি সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। ব্লিঙ্কেন দুই জেনারেলকে ‘বেসামরিক এবং অ-যোদ্ধাদের পাশাপাশি তৃতীয় দেশের লোকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য’ অনুরোধ করেছিলেন যারা বর্তমানে সুদানে রয়েছেন। সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে বিকল্প সোলার সিস্টেম চালু করুন
দীর্ঘদিন পর প্রিয় দেশে ফেরার ঘোষনায় খুশির জোয়ারে ভাসছে মুরাদনগর উপজেলায়
ঢাবি ও বণিক বার্তার যৌথ আয়োজনে ৮ম নন-ফিকশন বইমেলা শুরু আগামীকাল
মঠবাড়িয়ায় মালয়শিয়া প্রবাসীর ঘরে ডাকাতি, বৃদ্ধাসহ ৩ নারী আহত
টুইটার থেকে এক্স ,ইলন মাস্কের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নতুন যুগ
বিপুল পরিমাণ গাঁজা, ট্রাক ও ধানসহ নকলার মাদক কারবারিকে ফুলপুরে আটক
বিপিএলে অনিশ্চিত সাকিব নাম লেখালেন পিএসএলে
আলফাডাঙ্গায় চলছে হালি পেঁয়াজ লাগানোর মহোৎসব, শ্রমিকের অভাবে বাড়ছে চাষির খরচ
শ্রীনগরে পুকুর থেকে ভাসমান বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার
কলকাতায় দেশদ্রোহী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকা চিন্ময়ের আইনজীবী এবার জাতিসংঘে যাওয়ার হুমকি দিলেন
রোববার হারিছ চৌধুরীর পুনর্দাফন
চলছে বিক্ষোভ, তারেক রহমানকে স্মারকলিপি, জবির অন্যান্য সংগঠনের প্রতিবাদ
চীনে তৈরি হবে বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ বাঁধ
কোহলির আরও বড় শাস্তি প্রাপ্য ছিল: পন্টিং
বান্দরবানে আগুন দিয়ে ১৭ ঘর পুড়ে দেয়ার সাথে জড়িত দের ছাড় দেয়া হবে না- পার্বত্য উপদেষ্টা
জাহাজ সেভেন মার্ডারের খুনি ধর্মান্তরিত ইরফানের অজানা কাহিনী
খুলনার তাবলীগ মসজিদ এলাকায় সেনাবাহিনীর টহল
দেশে কি চাঁদাবাজি বন্ধ হয়েছে? জামায়াত আমীরের প্রশ্ন
ভারতে ইসকন মন্দিরে চিন্ময়ের আইনজীবীর বৈঠক
নির্বাচনে অংশ নিতে খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের আইনগত কোনো বাধা নেই : অ্যাটর্নি জেনারেল