মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিস্থাপন করছে চীন?মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিস্থাপন করছে চীন?
২৫ এপ্রিল ২০২৩, ১১:২০ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫৯ পিএম
গত ৬ এপ্রিল বিগত সাত বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো বৈঠকে বসেছিলেন সউদী আরব ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। বছরের পর বছর শত্রুতার পর এক মাস আগে, দুই দেশের শীর্ষ জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বিশ্বকে হতবাক করে দিয়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুন:প্রতিষ্ঠিত করেন। কিন্তু যে বৈঠকগুলো সউদী আরব ও ইরানের সম্পর্ককে নাটকীয় অগ্রগতির দিকে নিয়ে গেছে, সেগুলো মধ্যপ্রাচ্যে অনুষ্ঠিত হয়নি। ওমান এবং ইরাকের বছরের পর বছর ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর অবশেষে তা চীনের আতিথেয়তায় এবং মধ্যস্থতায় সফলতার মুখ দেখেছে। পশ্চিমা বিশ^ নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও রাশিয়ার অর্থনীতিকে সচল রাখতে চীনের কেন্দ্রীয় ভূমিকা এবং ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে মস্কোর সমালোচনা করতে বেইজিংয়ের অনিহার তীব্র সমালোচনা করেছে। তবুও বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি স্থাপনকারী হিসাবে চীনের নতুন সাফল্য দেশটির জন্য একটি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে এবং এটি বড় স্বপ্ন দেখছে বলে মনে হচ্ছে। ফেব্রুয়ারিতে ইরান-সউদী বৈঠক শেষ হওয়ার প্রাক্কালে আলোচনা ও পরামর্শের মাধ্যমে দেশগুলির মধ্যে পার্থক্য ও বিরোধ শান্তিপূর্ণভাবে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বেইজিং তার ‘গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ’ চালু করে। এরপর, গত সপ্তাহে চীনের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং ঘোষণা দেন যে, বেইজিং ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত। এই সবই এমন এক সময়ে ঘটে চলেছে, যখন মধ্যপ্রাচ্যে বিশে^র সবচেয়ে বড় শক্তি-দালাল যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমে গেছে। ইরানের পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত, সউদী আরবের সাথে অস্থিতিশীল সম্পর্ক এবং ইরাক ও আফগানিস্তানে দীর্ঘ আগ্রাসন ও বিশৃঙ্খল সেনা প্রত্যাহার যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। গার্হস্থ্য রাজনীতিও যুক্তরাষ্ট্রকে বিভ্রান্ত করে রেখেছে, যেমন বিশ্বব্যাপী খবরদারি করার দেশটির কয়েক দশকের বিতর্কিত ভূমিকা সম্পর্কে মার্কিন জনসাধারণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সতর্কতা রয়েছে।সউদী আরব-ইরান চুক্তির বহু আগেই চীন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। চীন সউদী আরব ও ইরানের শীর্ষ ব্যবসায়িক অংশীদার এবং দুই দেশের তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দেশটি এই সম্পর্কগুলিকে আরও দৃঢ় করেছে। চীন ২০২১ সালে ইরানের সাথে একটি ২৫-বছর মেয়াদী সহযোগিতা চুক্তি এবং ২০২২ সালে স্উদী আরবের সাথে একটি ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু চীনের সুসম্পর্ক সউদী আরব এবং ইরানের বাইরেও প্রসারিত হয়েছে, যখন এর বিশাল ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ বা বিআরআই বন্দর, রেলপখ, মহাসড়ক এবং অন্যান্য অবকাঠামো প্রকল্পগুলিতে একটি চীন-সমর্থিত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এশিয়া, ইউরোপ এবং আফ্রিকাকে সংযুক্ত করার লক্ষ্যে ২০১৩ সালে প্রকল্প চালু হয়েছে। ২০০৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে চীন এই অঞ্চলে ২৭হাজার ৩শ’ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে।চীন মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম বিনিয়োগকারী। এটি ইরাক থেকে তেল, কাতার থেকে গ্যাস ক্রয় করে এবং আলজেরিয়া, মরক্কো, তুরস্ক, মিশর এবং সউদী আরবে অস্ত্র রপ্তানি করে। এটি মিশরকে কায়রোর বাইরে তার নতুন রাজধানী তৈরি করতে সাহায্য করছে এবং মক্কায় মেট্রো রেল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তিন দিনের জন্য সউদী আরব সফর করেন। সেই সময় তিনি আরব লীগ এবং উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) সাথে বেইজিংয়ের প্রথম শীর্ষ বৈঠকও করেন। সউদী আরবের ছায়া শাসক ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান শি’র এই সফরকে চীন ও তার দেশের সম্পর্কের ‘নতুন ঐতিহাসিক যুগ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এদিকে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে চীনের দ্রুত অগ্রগতির অর্থ হল, বেইজিং হুয়াওয়ের মতো সংস্থাগুলির মাধ্যমে ৫এ সংযোগের মতো পরিষেবাগুলিতে অ্যাক্সেস দিতে পারে। এই সমস্ত বিষয় এই অঞ্চলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চীনের প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছে।এই অঞ্চলের দেশগুলো অর্থনৈতিক কারণে চীনের অনুগ্রহের আওতায় থাকতে চায়। বেইজিংকে একটি আদর্শিকভাবে নিরপেক্ষ বাণিজ্য অংশীদার হিসাবেও দেখা হয়, যেটি দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির রাজনীতি থেকে মানবাধিকার পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলিতে হস্তক্ষেপ না করার নীতি বজায় রেখেছে। এটি চীনকে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের তুলনায় কম বিতর্কিত ও গ্রহনযোগ্য মধ্যস্থতাকারী করে তুলেছে। ওয়াশিংটন ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‹কুইন্সি ইনস্টিটিউট ফর রেসপন্সিবল স্টেটক্রাফ্ট›-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ত্রিতা পার্সি বলেছেন, ‹দিন শেষে, কেন এই দেশগুলির মধ্যে অনেকেরই চীনের প্রতি সৌম্য দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে শুধুমাত্র এই কারণে নয় যে, চীন তাদের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না, তার একটি মূল কারণ হল, তারা দেখেনি যে, চীন নিজেকে এমনভাবে পরিবেশন করতে পারে, যা তাদের জন্য হুমকিস্বরূপ হবে, বা এর থেকে হুমকির সম্ভাবনা রয়েছে’।যুক্তরাষ্ট্র চীনের এই খ্যাতির অংমীদার হতে পারেনি। এমনকি, কিছু ঐতিহ্যবাহী মার্কিন অংশীদারদের মধ্যেও ইউক্রেনের যুদ্ধের জন্য রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞাগুলি অস্বস্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা দেখেছে যে, এটি মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন করার ক্ষমতা রাখে। এবং যুক্তরাষ্ট্র গত ২০ বছর ধরে নিজেকে খুব একটা দায়িত্বশীলভাবে পরিচালিত করেনি। যার অর্থ, একটি বেপরোয়া খেলোয়াড়ের হাতে নিষেধাজ্ঞাগুলি একটি অত্যন্ত শক্তিশালী হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এটা হুমকি স্বরূপ। একই সময়ে তারা এটাও দেখছে যে, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা বেইজিং ওয়াশিংটনের পথ অনুসরণ করছে না। সাংহাই ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ ইউনিভার্সিটির মিডল ইস্ট স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফান হংদা বলেছেন, ‘চীন কখনোই মধ্যপ্রাচ্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়নি। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কর্মকা- চীনের পছন্দ নয়। সংক্ষেপে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির সাথে সহযোগিতা করার জন্য চীনের নিজস্ব উপায় রয়েছে’। সূত্র : আল জাজিরা।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন
গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত
মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ
কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের
৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী
৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান
তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ
ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?
মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি
গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের
পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি
আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান
শুধু নারীদের জন্য
নিথর দেহ
আত্মহননে
জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী
মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়
শুধু নামেই জিমনেসিয়াম