ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে : জেফ্রি হিন্টন

৩০ কোটি পূর্ণকালীন চাকরির জায়গা নেবে এআই

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক :

০২ মে ২০২৩, ১১:৪১ পিএম | আপডেট: ০৩ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিকাশের ক্ষেত্রে গডফাদার হিসেবে অভিহিত ড. জেফ্রি হিন্টন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, আর কিছুকাল পরই ডিজিটাল কথপোকথনের জন্য ব্যবহৃত চ্যাটবটগলি মানুষের চেয়েও বুদ্ধিমান হয়ে উঠতে পারে, যা ভয়াবহ বিপদের কারণ হবে। মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসে দেয়া এক বিবৃতিতে ৭৫ বছর বয়স্ক ব্রিটিশ-ক্যনাডিয়ান এই কম্পিউটার বিজ্ঞানী গুগল থেকে তার পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেছেন এবং কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে যেসব উন্নতি হচ্ছে তার বিপদ সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের ক্ষেত্রে তিনি যেসব কাজ করেছেন তার জন্য তিনি অনুতাপ বোধ করেন। সোমবার একটি টুইটে তিনি লেখেন, ‘গুগলের সমালোচনা নয়, বরং এআই-এর ভয়াবহতা সম্পর্কে খোলাখুলি কথা বলার জন্যই আমি চাকরি ছেড়েছি। আমি গুগলের চাকরি ছেড়েছি যাতে শুধু গুগল নয়, অন্য সকল প্রযুক্তিক্ষেত্রে এআই কিভাবে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে, তা ব্যাখ্যা করতে পারি।’

‘নিউরাল নেটওয়ার্ক’ নামে পরিচিত মানব মস্তিষ্কের সমতুল্য ব্যবস্থাপনা এবং সেগুলোর মানুষের মতই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণের ক্ষমতা, যেটিকে ‘ডিপ লার্নিং’ বলা হয়ে থাকে, এই দু’টি ক্ষেত্রে ড. হিন্টনের মৌলিক গবেষণাগুলি চ্যাট জিপিটির মত এআই সিস্টেম তৈরির পথ সৃষ্টি করেছে। হিন্টন বলেন, ‘এআই চ্যাটবট থেকে এমন কিছু বিপদ হতে পারে যা রীতিমত ভয়ঙ্কর। এ মুহূর্তে এরা আমাদের চাইতে বুদ্ধিমান নয়, কিন্তু শিগগিরই তারা তা হয়ে যাবে বলে আমার শঙ্কা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, জিপিটি ফোরের মত জিনিসগুলি সাধারণ জ্ঞানের পরিমাণের দিক থেকে একজন মানুষকে অনেকখানি ছাড়িয়ে যাচ্ছে। রিজনিং বা যুক্তিতর্কের ক্ষমতার দিক থেকে অবশ্য তারা ততটা ভালো নয়, কিন্তু তারা এখনই সাধারণ যুক্তিতর্কগুলি করতে পারছে।’

নিউ ইয়র্ক টাইমসের নিবন্ধে জেফ্রি হিনটন শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন যে, অসৎ উদ্দেশ্যে খারাপভাবে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করা হতে পারে। বিষয়টির ব্যাখ্যা জানতে চাইলে হিনটন বিবিসিকে বলেন, এটি হবে অনেকটা দু:স্বপ্নের মতো। তিন্রি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘আমরা মানুষ। আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যান্ত্রিক। বড় পার্থক্য হলো, ডিজিটাল ব্যবস্থায় একই বিষয়ের অনেক অনুলিপি তৈরি তরা যায়। বিশ্বের সব জায়গায় একই মডেল আছে। আর এসব অনুলিপি থেকেই আলাদাভাবে শেখা যেতে পারে। জ্ঞানের আদানপ্রদাণ হতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘এটা এমন একটি ব্যাপার ধরুন আপনার ১০ হাজার লোক আছে, এবং একজন লোক একটা তথ্য জানলেই বাকি সবাই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা জানে যাবে। এভাবেই একটি চ্যাটবট কোনো একজন মানুষের চাইতে বেশি জেনে ফেলতে পারে।’

হিন্টন বলেন, ‘এখন যে হারে অগ্রগতি হচ্ছে তাতে খুব দ্রুতই এতে আরো উন্নতি হবে। সুতরাং আমাদের এ নিয়ে উদ্বিগ্ন বোধ করতেই হবে। আমি পরিশেষে বলতে চাই যে ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়ন আমরা করছি তা বর্তমানে যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আছে তার চেয়ে পুরোপুরি আলাদা হবে।’ তবে, শুধু হিন্টনই প্রথম গুগলের কর্মী নন, গত বছরের জুলাইতে তথ্য সুরক্ষা নীতি লঙ্ঘন করার দায়ে কোম্পানিটি একজন প্রকৌশলীকে বরখাস্ত করে। তিনি তখন অভিযোগ করেছিলেন যে, একটি অপ্রকাশিত এআই সিস্টেম খুবই সংবেদনশীল হয়ে উঠছে। তবে তার ওই দাবিকে অনেক বিজ্ঞানীরাই তখন সমর্থন করেননি। এরপর, গেল মার্চে একদল উচ্চপদস্থ ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞ ‘সমাজ এবং মানবতার জন্য গভীর ঝুঁকি’ উল্লেখ করে কমপক্ষে ছয় মাসের জন্য বর্তমানে সবচেয়ে শক্তিশালী এআই সিস্টেমের প্রশিক্ষণ বন্ধ করার জন্য একটি খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেন।

চিঠিটিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে আছেন টুইটার ও টেসলার প্রধান ইলন মাস্ক, অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওজনিয়াক এবং ডিপমাইন্ড ও ফিউচার অব লাইফ ইনস্টিটিউটের মত প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ গবেষকরা। তারা বলছেন যে, এআই প্রযুক্তি নিয়ে যে প্রতিযোগিতা চলছে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এতে ভবিষ্যতে মানুষের বুদ্ধির সাথে প্রতিযোগিতা করার মত সিস্টেম তৈরি হতে পারে, যা ‹সমাজ ও মানবতার জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে উঠতে পারে। ওই চিঠিতে আরো সতর্ক করা হয়েছে যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভুয়া খবরের বন্যা বইয়ে দিতে পারে এবং স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র এসে মানুষের চাকরির জায়গা দখল করে নিতে পারে। উন্মুক্ত এআই-এর চ্যাটজিপিটি-৪ ঘোষণা করার মাত্র দুই সপ্তাহ পরেই চিঠিটি স্বাক্ষরিত হয়। চাটজিপিটি-৪ প্রযুক্তির আরও শক্তিশালী সংস্করণ। প্রাথমিক পরীক্ষা ও একটি কোম্পানির ডেমোতে মামলার খসড়া তৈরি করতে, মানসম্মত পরীক্ষায় পাস করতে এবং হাতে আঁকা চিত্র থেকে শুরু করে একটি কার্যকরী ওয়েবসাইট তৈরি এর মুন্সিয়ানা প্রদর্শন করা হয়েছে।

সম্প্রতি গোল্ডম্যান স্যাক্স নামের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে একই ধরনের আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে যে, ভবিষ্যতে ৩০ কোটি পূর্ণকালীন চাকরির জায়গা নিয়ে নিতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এদিকে, আগামী ৫ বছরে বিশ্বের কর্মজগতে বড় পরিবর্তন ঘটতে চলেছে বলে, পূর্বাভাস দিয়েছে ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম’। সোমবার কর্মজগতের ভবিষ্যত বিষয়ে জেনেভায় প্রকাশিত একটি বিশেষ প্রতিবেদনে সংস্থাটির সমীক্ষা বলছে যে, ২০২৭ সালের মধ্যে এআই, ডিজিটাইজেশন, গ্রিন এনার্জির মতো অর্থনৈতিক উন্নয়নের জেরে, বিশ্বের সমস্ত কাজের অন্তত এক চতুর্থাংশের প্রকৃতিতে বড় পরিবর্তন আসবে। বিশ্বের ৮শ’রও বেশি সংস্থায় সমীক্ষা চালিয়ে এবং ৬৭ কোটি ৩০ লাখ কাজের তথ্য ব্যবহার করে প্রতিবেদনটি তৈরি করে সংস্থাটি।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রযুক্তির ব্যবহার একই সাথে নতুন পেশা তৈরি করছে, আবার পুরোনো পেশা ধ্বংসও করছে। একই সময়ে বাড়ছে, সাইবার সিকিওরিটি স্পেশালিস্টদের মতো প্রযুক্তিবিদদের চাহিদা। গুটেনবার্গের ছাপাখানা থেকে শুরু করে বিশ্ব একের পর এক প্রযুক্তি বিপ্লবের সাক্ষী হচ্ছে। চলতি দশকের শুরুতেই কোভিড-১৯ মহামারি এবং অটোমেশনের দ্বৈত প্রভাবে কপাল পুড়েছে চাকরিজীবিদের। যত দিন যাচ্ছে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, অর্থাৎ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো প্রযুক্তির চাপে ক্রমেই কসংকুচিত হচ্ছে চাকরির বাজার। ২০২৭ সালের মধ্যে ৬ কোটি ৯০ লাখ নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। আর একই সময়ে ৮ কোটি ৩০ লাখ কাজ বিলুপ্ত হবে। সব মিলিয়ে ১ কোটি ৪০ লাখ কাজ হ্রাস পাবে। কাজ হারাবে বিশ্বের সামগ্রিক কর্মশক্তির ২ শতাংশ।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই যুগে সারা বিশ্বের অন্তত ৩০ কোটি পেশা যন্ত্রের মাধ্যমে করা হবে। প্রতিবদনে বলা হয়েছে যে, সবার আগে হারিয়ে যাবে সচিব বা কেরানির পদগুলি। যেমন ব্যাঙ্কের ক্যাশিয়ারের কাজ স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র দিয়েই করা যাবে। আর এআই মেশিন লার্নিং স্পেশালিস্ট এবং সাইবার সিকিওরিটি বিশেষজ্ঞদের মতো পদের চাহিদা বাড়বে। একই সময়ে ডিজিটাল কমার্সের ক্ষেত্রে ২০ লাখ নতুন কাজ তৈরি হবে। স্থিতিশীলতা বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশগত সুরক্ষা পেশাদারদের জগতে কর্মসংস্থান বাড়বে যথাক্রমে ৩৩ শতাংশ এবং ৩৪ শতাংশ। শিক্ষা ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান বাড়বে ১০ শতাংশ। আর বিশ্বে কৃষিজীবীদের জন্য তৈরি হবে অতিরিক্ত চল্লিশ লাখ কাজ। বিশেষ করে মেশিন অপারেটর, গ্রেডার এবং সর্টারের চাহিদা ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। সূত্র : টিভি ৯, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

পিসিবির অভিনব উদ্যোগ- ‘কানেকশন ক্যাম্প’

পিসিবির অভিনব উদ্যোগ- ‘কানেকশন ক্যাম্প’

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ