আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন যেভাবে ধ্বংস করা হবে
০৬ মে ২০২৩, ০৮:০৮ পিএম | আপডেট: ০৭ মে ২০২৩, ১২:০৩ এএম
প্রায় আড়াই দশক ধরে মহাকাশে নভোচারীদের আবাসস্থল হিসেবে কাজ করছে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন বা আইএসএস। কিন্তু তার এখন বিদায় নেবার সময় হয়েছে। আর কয়েক বছরের মধ্যেই এটিকে কক্ষপথ থেকে ছাড়িয়ে পৃথিবীতে নামিয়ে এনে ধ্বংস করে ফেলা হবে বলে পরিকল্পনা করছে নাসা। কিন্তু এ মহাকাশ স্টেশনকে কি অন্য কোন কাজে লাগানো সম্ভব?
একটা ফুটবল মাঠের সমান বড়, আর ২০০টি হাতির মোট ওজনের চেয়েও ভারি এই বিশাল আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। একে কক্ষপথ থেকে নামিয়ে আনা এক অত্যন্ত জটিল চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সেটাই ঘটতে যাচ্ছে আগামী আট বছরের মধ্যে - কারণ মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা এমনই এক পরিকল্পনা তৈরি করেছে। আপনি যদি সে সময় ঘটনাচক্রে প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে থাকেন – তাহলে দেখতে পাবেন সেই আশ্চর্য দৃশ্য। প্রায় ৪০০ টন ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি আইএসএস তীব্র গতিতে পৃথিবীর বায়ুম-লে ঢুকছে, বাতাসের সাথে সেই ঘর্ষণে তার গায়ে আগুন ধরে যাচ্ছে, তার পর সেই জ্বলন্ত অগ্নিগোলক আছড়ে পড়ছে সাগরের বুকে। সমুদ্রের কয়েক হাজার কিলোমিটার এলাকার মধ্যে কোথাও ঘটবে এ ঘটনা। আর এর সাথেই শেষ হবে মানবজাতির মহত্তম প্রকল্পগুলোর একটি এ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের জীবনকাল।
নাসা পরিকল্পনা করেছে যে আগামী ২০৩১ সালে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনকে ‘ডি-অরবিট’ করা হবে - অর্থাৎ কক্ষপথ থেকে নামিয়ে পৃথিবীর বায়ুম-লে ঢুকিয়ে এটিকে নিরাপদে সাগরে আছড়ে ফেলা হবে। আজ পর্যন্ত যত মহাকাশযান পৃথিবীতে ফিরে এসেছে - তার মধ্যে এটিই হবে বৃহত্তম । টাগবোট নামের ছোট নৌযান দিয়ে যেমন বড় জাহাজ টেনে নিযে যাওয়া হয়, ঠিক তেমনি একটি ‘স্পেস টাগ’ তৈরির করার জন্য গত মার্চ মাসে মার্কিন কংগ্রেসের কাছে অর্থ চেয়েছে মহাকাশ সংস্থা নাসা। এ স্পেস টাগ হবে এমন এটি মহাকাশযান যা আইএসএসকে ঠেলে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে নিয়ে আসবে। এরকম একটা যান তৈরি করতে প্রায় ১০০ কোটি ডলার খরচ হবে, বলেছেন নাসার হিউম্যান স্পেসফ্লাইট কর্মসূচির প্রধান ক্যাথি লুডার্স। ঠিক কীভাবে আইএসএসকে তার কক্ষপথ থেকে বের করে আনা হবে তা এক বিশাল চ্যালেঞ্জ।
পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে ঢোকার সময় বড় বড় মহাকাশযান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। যেমন ২০০১ সালে রাশিয়ার মির স্পেস স্টেশন, এবং ১৯৭৯ নাসার স্কাইল্যাব। তবে আইএসএসের ক্ষেত্রে সমস্যাটা আরো জটিল - কারণ এটা মিরের চেয়ে তিনগুণেরও বেশি বড়। হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর এ্যাস্ট্রোফিজিক্সের মহাকাশবিজ্ঞানী জোনাথন ম্যাকডাওয়েল বলছেন, এটা এক বড় চ্যালেঞ্জ, কারণ ৪০০ টন ওজনের একটা জিনিস আকাশ থেকে খসে পড়ছে – এটা কোন সহজ ব্যাপার নয়। আইএসএস ঘন্টায় ১৭,১০০ মাইল বেগে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করছে। এখান থেকে নভোচারীরা প্রতি ২৪ ঘন্টায় ১৬ বার সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে পারেন।
পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে ঢোকার সময় আইএসএসের অধিকাংশই পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। এখানে স্পেস স্টেশনটি পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের অপেক্ষাকৃত ঘন গ্যাসের স্তরে ঢুকে পড়বে। এসময় তার গতি হবে ঘন্টায় ২৯,০০০ কিমি বা ১৮,০০০ মাইল। এ পর্যায়ে প্রথমেই আইএসএসের সোলার প্যানেলগুলো মূল অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। স্পেস স্টেশন মিরকে যখন পৃথিবীতে নামানো হয়েছিল সেসময়কার অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, আইএসএসের ক্ষেত্রে মোটামুটি ৬২ মাইল উচ্চতায় আসতে আসতেই সবগুলো সোলার প্যানেল ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে।
আইএসএস ৫০ মাইল উচ্চতায় নেমে এলে মূল মডিউলগুলো আলাদা হয়ে যেতে শুরু করবে। তখন এগুলোর তাপমাত্রা হবে কয়েক হাজার ডিগ্রি। এ প্রচ- তাপে এগুলো গলে যাবে এবং ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে তাতে আগুন ধরে যাবে। স্পেস স্টেশন মিরকে যখন নামিয়ে আনা হয় – সেই দৃশ্য টিভির দর্শককে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছিল। কিন্তু মিরের ওজন ছিল ১৪০ টন, আর আইএসএসের ওজন হচ্ছে এর প্রায় তিন গুণ- ৪০০ টন। তাই আইএসএসের পৃথিবীতে ফেরার দৃশ্য হবে আরো বেশি চমকপ্রদ।
আইএসএসের এক বিরাট অংশই পৃথিবীর বায়ুম-লেই পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। যতটুকু অবশিষ্ট থাকবে – সেগুলো এসে পড়বে ‘পয়েন্ট নেমো’ নামে প্রশান্ত মহাসাগরের একটি বিস্তীর্ণ এলাকায় - যা নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আমেরিকার মাঝখানে। এ জায়গাটিকে প্রায়ই মহাকাশযানের কবরখানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কারণ এ জায়গাটি মানুষের বসতি থেকে অনেকটা দূরে এবং এখানকার পানিতে সামুদ্রিক প্রাণীও খুবই কম। তার পরও আইএসএসের ধ্বংসাবশেষ যে জায়গাটিতে পড়বে তা প্রায় ৬,০০০ কিমি দীর্ঘ এবং বেশ কয়েক কিলোমিটার চওড়া। সুতরাং এ এলাকাটিতে সেই সময় বিমান ও জাহাজ চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে যাতে কোন প্রাণহানির সম্ভাবনা কমানো যায়, বলছেন ম্যাকডাওয়েল। সূত্র : বিবিসি নিউজ।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
পাকিস্তানে সেনানিবাসে আত্মঘাতি হামলা, সেনাসহ নিহত ১৮
জুলাই বিপ্লবে শহিদের সংখ্যা ১৪২৩, আহত ২২ হাজার
নড়াইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জুয়েল গ্রেফতার
বিচারবিভাগ নিয়ে আজ রোডম্যাপ দেবেন প্রধান বিচারপতি
নেছারাবাদে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার নিহতদের স্মরণে বিএনপির আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিল
নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে চায় চীন: শি জিনপিং
পতিত স্বৈরাচারের দোষর মিডিয়া আর স্বার্থান্বেষী মহল পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে
পাকিস্তান-ইংল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্টও মুলতানে
৭০টির বেশি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা সিআইআইই-তে অংশ নেবে
সুস্থতার জন্য দোয়া কামনা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে আজ প্রতিনিধিদল যাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে
৩ হাজার কয়েদির সাজা মওকুফ অথবা হ্রাস করতে যাচ্ছে ইরান
অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পর শ্রীলংকায় প্রথম নির্বাচন আজ
জুনে ইউরোপে আশ্রয়ের আবেদন ১৭ শতাংশ কমেছে
রাঙামাটিতে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট
গারো পাহাড়ের বালু খেকোদের বিরুদ্ধে এসিল্যান্ডের সতর্কবার্তা
রেকর্ডের মালা গেঁথে দ. আফ্রিকার বিপক্ষে আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়
মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফর, চীনকে ঠেকাতে কোয়াড কি এখনও প্রাসঙ্গিক?
টেলর সুইফটের পর কমলাকে বিখ্যাত বিজ্ঞান ম্যাগাজিনের সমর্থন নিয়ে বিতর্ক
ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়