ভারত সন্ত্রাসকে রাজনৈতিক সুবিধায় কাজে লাগাচ্ছে
০৭ মে ২০২৩, ০৮:৩৪ পিএম | আপডেট: ০৮ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম
আন্তসীমান্ত সন্ত্রাস সমাধানে ভারতের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি। তিনি বলেছেন, সন্ত্রাস সমাধানের চেয়ে ভারত সরকার সন্ত্রাসকে তাদের রাজনৈতিক সুবিধায় কাজে লাগাচ্ছে। ভারতের গোয়ায় এসসিও (সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন) জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠকের এক ফাঁকে বিবিসির ভিনিত খারের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বিলওয়াল ভুট্টো বলেন, সন্ত্রাসকে কাজে লাগিয়ে ‘ইসলাম বিদ্বেষ’ ছড়ানো এবং ‘হিন্দু শ্রেষ্ঠত্ববাদকে’ উস্কে দিয়ে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করার কৌশল ‘পুরনো’ এবং ‘অকেজো’ হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা যদি সত্যিই সন্ত্রাস বন্ধ করতে চাই, তাহলে ‘অনর্থক বাগাড়ম্বর’ বাদ দিয়ে সত্যিকারের উদ্বেগ নিয়ে কথা বলতে হবে।’’ বিলাওয়াল বলেন, ‘ভারতের উদ্বেগকে আমরা গুরুত্ব দেই। এ ব্যাপারে পাকিস্তানের নিজেদেরও অনেক উদ্বেগ রয়েছে।’ ভারত সব সময়ই অভিযোগ করে, তাদের দেশের ভেতর বিভিন্ন সন্ত্রাসী তৎপরতায় পাকিস্তানের সরাসরি মদত রয়েছে। ২০১৯ সালে ভারত শাসিত কাশ্মীরের পুলাওয়ামায় ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে এক সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত পাকিস্তানের ভেতরে বিমান হামলা চালায়। সে সময় দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ লেগে যাওয়ার জোর সম্ভাবনা দেখা গিয়েছিল। এর আগে ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে এক সন্ত্রাসী হামলায় প্রায় ১৮০ জনের মৃত্যুর পরও যুদ্ধের আশংকায় বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। দিল্লিতে বিবিসির সাংবাদিক ভিনিত খারে পাকিস্তানী পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, যখনই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রশ্নে মীমাংসা আলোচনা শুরুর সম্ভাবনা তৈরি হয়, তখনই কেন এ ধরণের সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটে? সেই প্রশ্নের উত্তরেই বিলাওয়াল এসব মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তান নিজেই সন্ত্রাসের মস্ত বড় শিকার। ‘এসসিও জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সন্ত্রাসী ঘটনায় পাকিস্তানে সবচেয়ে বেশি লোক মারা গেছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেই সন্ত্রাসের শিকার।’ বিলওয়াল ভুট্টোর মা এবং পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো ২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর রাওয়ালপিন্ডিতে সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত হন। এদিকে প্রায় ১২ বছর পর এই প্রথম পাকিস্তানের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারত গেলেন । তবে এই সফরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বা ভারত সরকারের অন্য কোনো মন্ত্রী বা কর্মকর্তার সঙ্গে বিলাওয়ালের দ্বিপক্ষীয় কোনো বৈঠক হয়নি। এমনকি এসসিও বৈঠকের পর জয়শঙ্কর পাকিস্তানি মন্ত্রীর সঙ্গে হাতও মেলাননি। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়ালকে এমনকি ‘সন্ত্রাসের মুখপাত্র’ বলে বর্ণনা করেন। বিলওয়াল ভুট্টো অবশ্য বিবিসিকে বলেন, তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের কোনো প্রস্তাবও করেননি। তারপরও ১২ বছর পর পাকিস্তানি কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে ভারতের মাটিতে পা রাখলেন তাকে দু-দেশের সম্পর্কে ইতিবাচক কোনো অগ্রগতি হিসাবে কি দেখা যেতে পারে?—বিবিসির এই প্রশ্নে পাকিস্তানী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে ভারতের ওপর। ‘বর্তমান বাস্তবতায় আপস-মীমাংসার জন্য ভারতকেই উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’ ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারতে সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ করে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খর্ব করার প্রসঙ্গ তুলে বিলাওয়াল বলেন, ভারত তাদের এই পদক্ষেপ পুনর্বিবেচনা না করলে দুই দেশের মধ্যে ‘অর্থপূর্ণ কোনো আলোচনা’ সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি।’ তবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর তার সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেছেন, ‘আর্টিকেল ৩৭০ এখন ইতিহাস।’ পাকিস্তানের অর্থনীতি বর্তমানে কঠিন সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বন্যা এবং ইমরান খানের ক্ষমতাচ্যুতির পর শুরু হওয়া রাজনৈতিক সংঘাত অর্থনীতিতে সেই সংকটকে আরো সঙ্গিন করে তুলেছে। এই অবস্থায় প্রতিবেশী হিসেবে ভারত কি পাকিস্তানকে সাহায্য করতে পারে, যেমন তুরস্কে ভূমিকম্পের পর ভারত সে দেশে সাহায্য পাঠিয়েছে? এই প্রশ্নে বিলওয়াল ভুট্টো মুখে হাসি নিয়ে বলেন, ‘আমরা তেমন কোনো সাহায্য চাইছি না, বা তেমন প্রস্তাবও পাইনি।’ ১২ বছর পর পাকিস্তানের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারতে যাওয়ার তেমন কোনো তাৎপর্য দেখছেন না সিংহভাগ পর্যবেক্ষক। তেমনি কেউই মনে করছেন না যে এতে সম্পর্কের বরফ গলবে। ২০১১ সালে তৎকালীন পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার যখন দিল্লিতে গিয়েছিলেন, তখনও দুই দেশের মধ্যে যে সম্পর্ক ছিল তার ছিটেফোঁটাও এখন নেই। দিল্লিতে জওয়াহারলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হ্যাপিমন জেকব বিবিসিকে বলেন, ‘অনেকদিন পর পাকিস্তানের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতে আসলেন, এটি ছাড়া দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই সফরের তেমন কোনোই তাৎপর্য নেই।’ জেকব বলেন, ‘কোনো পক্ষই এখন নৌকা আরো দোলাতে চাইছে না, কিন্তু বিরোধ নিষ্পত্তি নিয়ে আলোচনা শুরুর জন্য দুপক্ষের কেউই তেমন কোনোই ছাড় দিতে রাজী নয়।’ একই ধরনের মন্তব্য করেন যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেইন হাক্কানি। তিনি বলেন, ‘সম্পর্কে বরফ গলানোর সঙ্গে এই সফরের কোনো ভূমিকা নেই।’ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখ দিয়েও বিন্দুমাত্র কোনো ইতিবাচক শব্দ শোনা যায়নি। জয়শঙ্কর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘তিনি (বিলওয়াল ভুট্টো) এখানে এসেছেন এসসিও জোটের সদস্য হিসেবে। এই সফরের ভেতর আপনারা এর চেয়ে বেশি কিছু খুঁজতে যাবেন না।’ বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কমিউনিটি ব্যাংকে ট্রাফিক মামলার জরিমানা দেওয়া যাবে
বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দেবে না: দ্য ইকোনমিস্টকে ড. ইউনূস
ফ্যাসিবাদী প্রধানমন্ত্রী ও এমপিরা তাদের কৃত কর্মের জন্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে
ব্রাহ্মণপাড়ায় ট্রাক্টরের চাপায় কলেজ ছাত্রের মৃত্যু, আহত ২
কুরআন শিক্ষা বোর্ড ঢাকা মহানগর উত্তরের নগর সম্মেলন অনুষ্ঠিত
এবি ব্যাংক পিএলসি. এর "বিজনেস রিভিউ মিটিং" অনুষ্ঠিত
উথ এশিয়ান বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেল সোনালী লাইফ
নেতাকর্মীদের রেখে লক্ষণ সেনের মত পালিয়ে গেছে স্বৈরাচার: ব্যারিস্টার সালাম
অভিনেতা অপূর্বকে নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে মিথ্যাচার
বরিশালে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অংশীজন সভায় প্রধান প্রকৌশলী
দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক উর্ধ্বগতিতে সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস
সংস্কারোত্তর পিআর পদ্ধতিতেই জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে
‘শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে’
‘রাষ্ট্রের সকল স্তরে ইসলামী সংস্কৃতির অনুশীলন নিশ্চিত করতে হবে’
মেট্রোকে থামিয়ে ফাইনালে রংপুর
৪৩ বছর পর কুয়েতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি, হাসিনার ভরসা ভারতে: দুলু
মন্ত্রিসভায় বড় রদবদল, কানাডায় কি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন ট্রুডো?
পাকিস্তান থেকে যেসব পণ্য নিয়ে এবার এলো জাহাজ
ভারতের সেবাদাসী হাসিনাকে পুনর্বাসনে এবার জঙ্গি মিশনে তারা!