তুরস্কের নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারেন এরদোগান
১১ মে ২০২৩, ১১:১৯ পিএম | আপডেট: ১১ মে ২০২৩, ১১:১৯ পিএম
উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করছে ১৪মে অনুষ্ঠিতব্য তুরস্কের জাতীয় নির্বাচন। বিশে^র প্রধান গণমাধ্যগুলি এটিকে ২০২৩ সালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন বলে অভিহিত করছে। তুরস্কের গূরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান, সাথে রাশিয়ার সম্পর্ক এবং ইউক্রেন যুদ্ধে তুরস্কের ভূমিকা এবং দেশটির ব্যাপক অর্থনৈতিক সংকট, ভূমিকম্পে ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু ও ঘরছাড়া লাখো মানুষ এবং মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে সামরিক সম্পর্ক, যা নেতা পরিবর্তনের মাধমে পুরবর্তিত হতে পারে, সব মিলিয়ে তুরস্কের জাতীয় নির্বাচন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
পশ্চিমের অনেকেই আশা করছে যে, তুর্কিরা শেষ পর্যন্ত প্রেেিসডেন্ট রেসেপ তাইয়েব এরদোগান এবং তার জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি)কে ক্ষমতাচ্যুত করবে। তারা এরদোগানের বিপরীতে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী প্রার্থী কেমাল কিলিচদারোগ্লুকে সমর্থন করে, যিনি ক্ষমতায় এলে তুরস্কের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নীতিতে গভীর পরিবর্তন আনবেন এবং পশ্চিমাদের সাথে সম্পর্ক সংশোধন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু এরদোগান বিরোধীদের এই স্বপ্ন ভন্ডুল হয়ে যেতে পারে। এমনকি, যদি এরদোগান নির্বাচনে পরাজিতও হন, তুরস্কের জন্য তার অবদান ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
পশ্চিমা বিশ^ এরদোগানকে দ্বিতীয় পুতিন হিসাবে অভিহিত করে থাকেন, যিনি একজন জনবিমূখ স্বৈরাচারী এবং তার সাম্রাজ্যের স্বপ্ন সফল করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। পশ্চিমারা তাকে স্বজনপ্রীতি, দুর্বল অর্থনীতি, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং মুদ্রার অবমূল্যায়নের জন্য দায়ী করে থাকে। এই মুহুর্তে এরদেগান বিরোধী ঢালাও প্রচারণা চালাচ্ছে দ্য ইকোনোমিস্টের মতো প্রধান পশ্চিমা গণমাধ্যগুলি। এদিকে, এরদোগানের প্রতিদ্বন্দ্বী কিরিচদারোল্গু ক্ষমতায় এলে এরদোগানের গৃহীত নীতিগুলিতে অনেক পরিবর্তনের আভাস দিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে প্রবাসী ভোটের বেশিরভাগই সম্পন্ন হয়ে গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কে হবেন তুরস্কের পরবর্তী রাষ্ট্রপ্রধান, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
বেশিরভাগ জাতীয় জরিপে এরদোগান কয়েক পয়েন্টে কিলিচদারোগ্লুর থেকে পিছিয়ে রয়েছেন। বাস্তবে, এরদাগান তার সমাবেশে যথেষ্ট সম্পদশালী প্রমাণিত হয়েছেন। একজন পাকা রাজনীতিবিদ এবং ক্যারিশম্যাটিক প্রচারক হিসেবে তিনি গ্রামীণ ও শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে তার ভিত্তিকে শক্তিশালী করেছেন। কিলিকদারোগ্লুর ছয়-দলীয় বিরোধী জোটের থেকে এরদোগানের সমর্থকরা তার পুন:নির্বাচনে জন্য বেশি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং বেশি বিনিয়োগ করেছে বলে মনে হচ্ছে এবং তাই তার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এরদোগান স্পষ্টতই বোঝেন যে, নির্বাচনে জয় বা পরাজয়ে বেশিরভাগই অভ্যন্তরীণ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে, বিদেশী বিষয়ের ওপর নয়। তাই তিনি তুরস্কের আসন্ন নির্বাচনের প্রাক্কালে বড় ঘোষণা দিয়ে রাষ্ট্রের নিয়ামকগুলিকে তার অনূকলে করার জন্য কাজ করেছেন।
নির্বাচনের প্রাক্কালে সমাজের সব শ্রেনীর জন্যই কিছু সুন্দর পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। গত সপ্তাহে তিনি সরকারী কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি করেছেন, এবং ৪৫ হাজার সরকারী শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। এর কিছুদিন আগে তিনি ছাত্রদের জন্য কম্পিউটার ও মোবাইল কেনার শুল্ক মওকুফ করেছেন। এবং যারা বিয়ের উপযুক্ত, তাদের ক্ষেত্রে তিনি বিশাল অঙ্কের ভাতা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কৃষকদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভূর্তকি দিয়েছেন ও শৃল্ক মওকুফ করেছেন এরদোগান। এবং তাদের কাছ থেকে নায্য মূল্যে ফসল কিনেছে তার সরকার। অবসর প্রাপ্ত, যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের ভাতা বৃদ্ধি করেছেন এরদোগান। যারা প্রসূতি মা, বা যাদের সন্তান রয়েছে, তাদের জন্য চাকরি ও আর্তিক ক্ষেত্রে বহু সুবিধা প্রদান করেছেন তিনি।
অন্যদিকে, এরদোগানের প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিলিচদারোগ্লুর বিরোধীদের ‘আবার বসন্ত আসবে’, এই প্রতিশ্রুতি এবং তুরস্কের নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন পিকেকে এবং ফেতোর সাথে তাদের সম্পৃক্ততার স্বীকারোক্তি তুর্কিদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। বিশ^জুড়ে প্রযুক্তি ও সামরিক শিল্পে তুরস্কের সাফল্য, বিশেষ করে বিশ^ বাজারে তুর্কি যুদ্ধ জাহাজ ও বাইরাখতার ড্রোনের সাফল্যকে ভুয়া বলে সমালোচনা করেছে তার দল। সেইসাথে, সুদীর্ঘ সময় ধরে যারা এরদোগানকে সমর্থন করেছেন, তাদেরকে দুর্নীতির দায়ে বিচারের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়ে কিলিচদারোগ্লুর দল পরিবারগুলির এবং দেশপ্রেমিক ভোটারদের মনোভাব নেতিবাচক করে তুলেছেন কিলিচদারোগ্লু।
ফলে, আসন্ন এ নির্বাচনে কে বিজয়ী হবেন, তা এখনো স্পষ্ট বলা না গেলেও, নির্বাচনপূর্ববর্তী জরিপগুলোতে দেখা গেছে যে, এরদোগানের চেয়ে জনসমর্থনের সামান্য ব্যবধানে পিছিয়ে আছেন কিলিচদারোগ্লু। রাশিয়ার অন্যতম ঘনিষ্ঠ দেশ তুরস্ক। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে এরদোগানের সঙ্গে পুতিনেরও বেশ ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছে। নির্বাচনে হেরে গেলে পুতিনের সঙ্গে কিরিচদারোগ্লু প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক বর্তমান সময়ের মতো হবে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধেও বেশ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে তুরস্ক। দুই পক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে যুদ্ধ বন্ধের প্রচেষ্টাসহ কৃষ্ণসাগর দিয়ে শস্য চুক্তি করে বিশ্ব দরবারে সমাদৃত হয়েছেন এরদোগান। নির্বাচনে তিনি হারলে ইউক্রেন-রাশিয়ার উত্তেজনা প্রশমনে তুরস্ক কী ভূমিকা পালন করবে তা, নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
এরদোগান জয়ী হলে, তিনি নিশ্চিতভাবে তার দেশী ও বিদেশী লক্ষ্যগুলিকে দ্বিগুণ করে ফেলবেন, বিশেষ করে রাশিয়া, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কিত। তিনি পশ্চিম এবং রাশিয়ার সাথে তুর্কি স্বার্থের ভারসাম্য বজায় রেখে প্রধান শক্তিগুলির প্রতি একটি হাইব্রিড পদ্ধতির সামঞ্জস্য চালিয়ে যাবেন। তিনি রাশিয়ার সাথে বাণিজ্য ও ভূ-রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার পাশাপাশি ন্যাটোতে তুরস্কের সদস্যপদও বজায় রাখবেন। অন্যদিকে কিলিচদারোগ্লু, যার পররাষ্ট্র নীতির অভিজ্ঞতা নেই, তিনি অভ্যন্তরীণ ইস্যু এবং দুর্বল অর্থনীতির উপর তীক্ষè দৃষ্টি হেনেছেন। নির্বাচিত হলে, তিনি সম্ভবত তার পশ্চিমা এবং ন্যাটো অংশীদারদের প্রতি তুরস্কের সুর নরম করবেন এবং সামরিক জোটে সুইডেনের সদস্যপদ থেকে ভেটো তুলে নেবেন।
তবে, এটা অনিশ্চিত যে, পশ্চিমাদের সন্তুষ্ট করার জন্য কিলিচদারোগ্লু মস্কোর সাথে আঙ্কারার লাভজনক অর্থনৈতিক এবং জ¦ালানী সম্পর্ককে ত্যাগ করবেন কি না, বিশেষ করে যখন গত বছর রাশিয়ার সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৭হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এরদোগানের প্রাক্তন মিত্র এবং কৌশলবিদ আহমেত দাভুতোগ্লুকে পাশে নিয়ে কিলিকদারোগ্লু সম্ভবত তুরস্কের সক্রিয় আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক অবস্থান বজায় রাখতে পারেন, যা দেশের অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধি করেছে, যার ধারাবাহিকতা জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং কুর্দি ইস্যুতে কিছু পরিবর্তন ঘটলেও, থাকবে।
প্রকৃতপক্ষে, আঙ্কারার সাথে সম্পর্ক পুন:স্থাপনের পশ্চিমা আশা বিফল হতে পারে। কারণ, নীতি ও মানবাধিকার নিয়ে অনেক বক্তৃতা সত্ত্বেও পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে উভয় পক্ষই বাস্তববাদী। পশ্চিমাদের তাই মেনে নিতে হবে যে, নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন তুরস্কেরও আঞ্চলিক আকাঙ্খা থাকবে। দুই দশক ক্ষমতায় থাকার পর এরদোগান তুরস্কের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং বৈদেশিক নীতিকে আমূল পরিবর্তন করেছেন এবং এটিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা কঠিন হবে, বিশেষ করে তার দল একেপি সামাজিক এবং আমলাতান্ত্রিক প্রভাবের সাথে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। তাকে ভালোবাসা হোব বা ঘৃণা, এটি অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, এরদোগান একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক, যিনি আসন্ন নির্বাচনে পরাজিত হলেও, তুরস্কে তার ছাপ থেকে যাবে। সূত্র: আল জাজিরা, তেহরান টাইম্স, ইন্টারনেট।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আবারও ভানুয়াতুতে দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প
হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি
রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'
‘প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে’
যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত
ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার
ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস
ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?
বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত
হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি
কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫
ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের
নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত
সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প
আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ
মার্চের মধ্যে রাষ্ট্র-সংস্কার কাজ শেষ হবে : ধর্ম উপদেষ্টা
জামালপুরে দুই ইজিবাইকের চাপায় সাংবাদিক নুরুল হকের মৃত্যু