দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বেসামাল আর্জেন্টিনা
১৯ মে ২০২৩, ০৮:২৩ পিএম | আপডেট: ২০ মে ২০২৩, ১২:০৫ এএম
অর্থনৈতিক বিপর্যয় আর্জেন্টিনার বাসিন্দাদের জন্য নতুন কিছু নয়, গত কয়েক দশকে তারা বহুবার অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলা করেছে। কিন্তু যখন মুদ্রাস্ফীতির হার ১০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে এবং আর্জিন্টিনার মুদ্রা পেসোর মূল্য কমছে, তখন সঙ্কট জর্জরিত মানুষ তাদের ন্যূনতম প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। কারণ জিনিসপত্রের দাম খুব দ্রুত বাড়ছে এবং এর কারণে জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়ে গেছে। বিবিসির প্রতিবেদক ভ্যালি ফনটেইনি আর্জেন্টিনার পাঁচ জন বাসিন্দার সাথে কথা বলেছেন ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে তারা যেসব কৌশল ব্যবহার করছেন তা জানতে।
১. এখন কেনা, পরে দাম দেয়া : আর্জেন্টিনায় গত ৩০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মুদ্রাস্ফীতির হার ১০০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এর মানে হচ্ছে, ভোগ্যপণ্যের দাম গত মাত্র এক বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। অর্থ্যাৎ বিশেষ কোন পণ্য বা নিত্যকার কোন পণ্য কেনার জন্য টাকা জমানোর মানে হচ্ছে কয়েক মাস বা সপ্তাহ পর ওই পণ্যটি আরো বেশি দামে কিনতে হবে। তাহলে উপায়? এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে সুদমুক্ত ক্রেডিট কার্ড। বুয়েন্স আয়ার্সের বাসিন্দা মনিকা যিনি একজন ডিজিটাল আর্টিস্ট তার কৌশলটি হচ্ছে আজ কেনা, পরে দাম পরিশোধ করা।
২. বিনিময় করুন : যেহেতু পণ্যের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যাচ্ছে তাই আর্জেন্টিনার অনেক বাসিন্দার হাতে মাস শেষে আর কোন অর্থ অবশিষ্ট থাকে না যা দিয়ে মৌলিক চাহিদা মেটানো যায়। টেরেসা, যিনি মার ডেল প্লাটা শহরে একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী, তিনি তার বেশিরভাগ আয় ঘর ভাড়ায় ব্যয় করেন। তার দ্বিতীয় সবচেয়ে বড় ব্যয় হয়, সে যে বাড়িগুলোতে কাজ করে সেখানে যাতায়াতে। প্রতিদিন কমপক্ষে চার ঘণ্টা গণপরিবহনে কাটাতে হয় তাকে। এরপর তার আয়ের যৎসামান্যই বাকি থাকে এবং তার হাতে অবসর সময়ও খুব বেশি থাকে না। তাই ৩১ বছর বয়সী এই নারীর হাতে অর্থ বাড়ানোর মতো খুব বেশি বিকল্প থাকে না। ‘আমার হাতে টাকা না থাকলে, আমি বিনামূল্যে যানবাহন ব্যবহারের চেষ্টা করি অথবা হাঁটি,’ বলেন তিনি।
কিন্তু অন্য সব খরচের কী হবে? টেরেসা বলেন, যে তার মতো একই অবস্থায় আছে এমন মানুষ খুঁজে বের করাটা তাকে নগদ খরচ কমাতে সাহায্য করেছে। ‘আমি একটি ক্লাবে যোগ দিয়েছি যেখানে মানুষ জিনিসপত্র অদল-বদল করে। গত সপ্তাহে আমি এক জোড়া জুতার পরিবর্তে আমার এক খদ্দেরের কাছ থেকে দুধ, টুথপেস্ট, রুটি এবং অন্য খাবার নিয়েছি।’
৩. একসাথে একই পণ্য বেশি করে কেনা : কিন্তু এরপরও মাস শেষে যাদের হাতে কিছুটা অর্থ বাকি থাকে, আকাশ ছোঁয়া মুদ্রাস্ফীতি তাদের জন্য সমস্যা তৈরি করছে। মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ এতো বেশি হওয়ার মানে হচ্ছে আপনি সঞ্চয় করলেও তা দ্রুতই মূল্য হারাবে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যদি আপনি আপনার সেভিংস অ্যাকাউন্টে এক লাখ পেসো জমা রাখেন, তাহলে এক বছর পর আপনি এক লাখ পেসোর সাথে আরো কিছু মুনাফা পাবেন। কিন্তু সুদের হারের তুলনায় মুদ্রাস্ফীতি যেহেতু বেশি, তাই আপনার পেসো এক বছর পর বর্তমান সময়ে তুলনায় মূল্য হারাবে। তাহলে মাস শেষে যে অর্থ বেঁচে যাচ্ছে, সেটা দিয়ে আর্জেন্টিনার বাসিন্দারা কী করছে? নইরা নামে মেনডোজা শহরের বাসিন্দা, যিনি একজন নার্স। তিনি বলেন, তিনি এমন পরিমাণ পণ্য বেশি পরিমাণে কেনার চেষ্টা করেন যা পঁচে যাবে না। ‘আমি আমার বেতনের মূল্য যাতে কমে না যায় তা নিশ্চিত করতে নষ্ট হয় না এমন পণ্য যেমন কফি, টয়লেট পেপার-এগুলো বেশি পরিমাণে কেনার চেষ্টা করি,’ বলেন ৫৯ বছর বয়সী এই নারী।
৪. ডলার ক্রয় : দিও পেসো আর্জেন্টিনার জাতীয় মুদ্রা তারপরও নইরার মতো অনেক আর্জেন্টাইনের এই মুদ্রার উপর আস্থা নেই এবং এ কারণে হাতে থাকা অতিরিক্ত পেসোকে তার ডলারে রূপান্তর করতে চান। বাণিজ্যের শিক্ষার্থী ২৩ বছরের ইয়র্গ, তার শুধু পেসোর পরিবর্তে ডলারে উপর আস্থা বেশি তাই নয় বরং আর্জেন্টিনার ব্যাংকের উপরও তার বিশ্বাস নেই এবং এ কারণে তিনি ডলার নিজের বাড়িতে রাখতেই পছন্দ করেন।
৫. খরচ, খরচ, খরচ : কিন্তু ব্লু ডলার এবং পেসোর বিনিময় হার বেশি হওয়ার কারণে আর্জেন্টিনার অনেক বাসিন্দা ডলারকে নিরাপদ বিনিয়োগ মনে করলেও সেটি কেনার প্রতি জোর দেন না। ‘ডলার কেনার মতো অর্থ নেই আমার কাছে এবং আমার হাতে থাকা অবস্থাতেই পেসোর মূল্য কমছে,’ ২৫ বছর বয়সী দোকানের একজন সহকারী রবার্টা বলেন। তাই নিজের অতিরিক্ত অর্থের মূল্য কমা দেখার চেয়ে তিনি তার আয়ের পুরোটাই ‘যত দ্রুত সম্ভব’ ব্যয় করে ফেলতে চান। প্রতি মাসে পণ্যের দাম ৬-১০ শতাংশ বাড়ছে, এটা ব্যাপক হারে বাড়ছে। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতির কারণে তিনি তার আয় করা পেসোর বিনিময়ে প্রতি মাসেই কিছু কম পণ্য কিনতে পারেন। ‘প্রতি মাসেই আমি আগের মাসে যা কিনেছিলাম সেই পরিমাণ পণ্য কিনতে পারি না।’ সূত্র : বিবিসি নিউজ।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
রাণীশংকৈলে ফিল্মি স্টাইলে দোকান চুরি, ১৮ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও চোর ধরতে ব্যর্থ পুলিশ
মাগুরার শালিখায় অজ্ঞাত বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার
আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি আর হাসিনার ভরসা ভারতে -দুলু
বাংলাদেশের গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন
২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচনের পক্ষে মত বিএনপির যুগপৎ সঙ্গীদের
ঢাকায় ‘হযরত ফাতিমা জাহরা (সা.আ.) বিশ্বের নারীদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চার ভাগে ফিরবেন ক্রিকেটাররা
চাঁদাবাজদের ক্ষমতায় আসতে দেবেন না: হাসনাত
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের