রাশিয়ার সোনায় উজ্জ্বল আমিরাত, চীন ও তুর্কি

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

২৬ মে ২০২৩, ০৮:১৩ পিএম | আপডেট: ২৭ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

উৎপাদন করা সোনার পাহাড় নিয়ে বড় বিপদে পড়ে যাচ্ছিল রাশিয়া। বছরে উৎপাদিত ৩২৫ টন সোনার পুরোটাই দেশের সীমানায় বন্দি থাকলে বড় বিপর্যয় নামতো রুশ অর্থনীতিতে। সুকৌশলে সেই বিপদ এড়িয়েছে রাশিয়া। তাতে লাভ হয়েছে সংযুক্ত আমিরাত, চীন এবং তুরস্কের।

রাশিয়ার আবগারি বিভাগের তথ্য বলছে, পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা নেমে আসার পর সে দেশ থেকে প্রায় এক হাজার সোনার চালান গেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। এই সময়ে সেখানে রুশ সোনার আমদানি না কমে বরং বেড়েছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগের বছর, অর্থাৎ ২০২১ সালে ৭৪.৩ টন সোনা রাশিয়া থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়েছিল, ২০২২ সালে সেখানে আমদানিকৃত সোনা ১.৩ টন বেড়ে হয়ে গেছে ৭৫.৭ টন। ইউক্রেনে হামলা চালিয়ে নিষেধাজ্ঞার চাপে পড়া রাশিয়ার সোনার সবচেয়ে বড় ক্রেতা এখন সংযুক্ত আরব আমিরাত। তার ঠিক পরেই রয়েছে চীন এবং তুরস্ক। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ৩ মার্চ পর্যন্ত এই দুটি দেশে ২০ টন করে সোনা রপ্তানি করেছে রাশিয়া।

রাশিয়ার কাস্টমস বিভাগের নথিভুক্ত তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশটি নিষেধাজ্ঞা শুরুর পর থেকে যে পরিমান সোনা রপ্তানি করেছে তার ৯৯ দশমিক ৮ শতাংশই গেছে এই তিন দেশ, অর্থাৎ সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন এবং তুরস্কে। নিষেধাজ্ঞার খড়গ নেমে আসার আগে রাশিয়ার সোনা সবচেয়ে বেশি যেতো ব্রিটেনে। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলো নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর বিশ্বের অনেক বহুজাতিক ব্যাংক, ধাতু পরিশোধন ও ক্রয়-বিক্রয় প্রতিষ্ঠান মস্কোর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ২০২২ সালের ৭ মার্চ লন্ডন বুলিয়ন মার্কেট অ্যাসোসিয়েশনও রাশিয়া থেকে সোনার বার আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে। ২০২২ সালের আগস্টের মধ্যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা এবং জাপানও রাশিয়ার সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয়।

নিষেধাজ্ঞা শুরুর পরপরই টিকে থাকার কৌশল ঠিক করে নেয় রাশিয়া। পুটিন আক্রমণ থামাবেন না, তাই নিষেধাজ্ঞা থাকবেই। এ অবস্থায় যেসব দেশ নিষেধাজ্ঞা দেয়নি তাদের সঙ্গে আগের চেয়ে বেশি হারে সোনা রপ্তানির চেষ্টা শুরু করেন রুশ উৎপাদনকারীরা। ক্রেতাদের প্রকৃত বাজারমূল্যের চেয়ে ১ শতাংশ কমে ক্রয়ের সুযোগ দেন তারা। রাশিয়ার এ কৌশলকে অকার্যকর করার চেষ্টা হয়েছে অনেক, কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হুমকি দিয়েছিল তুরস্ক আর সংযুক্ত আরব আমিরাতকে। ওয়াশিংটন বলেছিল, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এমন কোনো দেশ বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখলে দেশ দুটি জি-৭ অঞ্চলের বাজারে প্রবেশাধিকার হারাবে।

অর্গ্যানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এর স্বর্ণ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ লুইস ম্যারেচাল মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের তখন বড় দুর্ভাবনা ছিল, রাশিয়া থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন এবং তুরস্কে যাওয়া সোনা গলিয়ে নতুন চেহারায় বাইডেনের দেশেও পাঠানো হতে পারে! তবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের গোল্ড বুলিয়ন কমিটি জানিয়েছে, তারা সবসময় এক রত্তি অবৈধ সোনাও যেন আমদানি বা রপ্তানি না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখে। এক বিবৃতিতে তারা আরো জানায়, ‘ইউএই খোলামেলাভাবে এবং সৎভাবে জাতিসংঘের ঘোষণা করা নিয়ম মেনে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে ব্যবসার এ ধারা অব্যাহত রাখবে।’

তবে তিন দেশে রপ্তানি অব্যাহ রাখতে পারলেও উৎপাদিত সব সোনা যে রাশিয়া বিক্রি করতে পারছে, ব্যাপারটা সেরকম নয়। ২০২২ সালে মোট ৩২৫ টন সোনা উৎপাদন করেছে রাশিয়া। সেখান থেকে এ পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১১৬ দশমিক ৩ টন। সূত্র : ডয়চে ভেলে।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের
বাংলাদেশ থেকে আরও দক্ষকর্মী নিতে আগ্রহী লিবিয়া
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
ইইউভুক্ত দেশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের হুমকি কাতারের
দক্ষিণ কোরিয়ার সৌন্দর্যের পেছনে ছুটে বিপদের ফাঁদে পর্যটকরা
আরও

আরও পড়ুন

উপদেষ্টা হাসান আরিফকে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন

উপদেষ্টা হাসান আরিফকে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন

ডলার বাজারে অস্থিরতা, দাম বেড়ে ১২৯ টাকা

ডলার বাজারে অস্থিরতা, দাম বেড়ে ১২৯ টাকা

উত্তরার বিপ্লবী জনতাকে যে কঠিন মূল্য দিতে হয়েছিল

উত্তরার বিপ্লবী জনতাকে যে কঠিন মূল্য দিতে হয়েছিল

পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের

পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের

বাংলাদেশ থেকে আরও দক্ষকর্মী নিতে আগ্রহী লিবিয়া

বাংলাদেশ থেকে আরও দক্ষকর্মী নিতে আগ্রহী লিবিয়া

৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরায়েল

৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরায়েল

ইইউভুক্ত দেশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের হুমকি কাতারের

ইইউভুক্ত দেশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের হুমকি কাতারের

দক্ষিণ কোরিয়ার সৌন্দর্যের পেছনে ছুটে বিপদের ফাঁদে পর্যটকরা

দক্ষিণ কোরিয়ার সৌন্দর্যের পেছনে ছুটে বিপদের ফাঁদে পর্যটকরা

ঢাকার বাতাস আজ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’

ঢাকার বাতাস আজ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’

২৮ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদ

২৮ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদ

হিরো নয় কারিনার ছেলের চরিত্রে অভিনয় করতে পারি

হিরো নয় কারিনার ছেলের চরিত্রে অভিনয় করতে পারি

রাওয়ার নেতৃত্বে আবদুল হক ও ইরশাদ সাঈদ

রাওয়ার নেতৃত্বে আবদুল হক ও ইরশাদ সাঈদ

স্লোভাক প্রধানমন্ত্রীর মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক

স্লোভাক প্রধানমন্ত্রীর মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক

কুমিল্লায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৩ কিশোর নিহত

কুমিল্লায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৩ কিশোর নিহত

গাজীপুরে কারখানা থেকে দগ্ধ আরও এক লাশ উদ্ধার

গাজীপুরে কারখানা থেকে দগ্ধ আরও এক লাশ উদ্ধার

সিরিয়ার আকাশে নিষিদ্ধ হলো ইরানের বিমান

সিরিয়ার আকাশে নিষিদ্ধ হলো ইরানের বিমান

বিমানে ‘ঘুমিয়ে’ ছিলেন বাইডেন : সেনাদের লাশ পেতে অপেক্ষায় স্বজনরা

বিমানে ‘ঘুমিয়ে’ ছিলেন বাইডেন : সেনাদের লাশ পেতে অপেক্ষায় স্বজনরা

ভারতে পণ আইন নিয়ে বিতর্ক, এক ব্যক্তির আত্মহত্যা ঘিরে আলোড়ন

ভারতে পণ আইন নিয়ে বিতর্ক, এক ব্যক্তির আত্মহত্যা ঘিরে আলোড়ন

ভারত সীমান্তের শূন্যরেখায় পড়ে ছিল বাংলাদেশির গুলিবিদ্ধ লাশ

ভারত সীমান্তের শূন্যরেখায় পড়ে ছিল বাংলাদেশির গুলিবিদ্ধ লাশ

এক্সপ্রেসওয়েতে কভার্ডভ্যান ও প্রাইভেটকার সংঘর্ষে নারী নিহত, আহত ৫

এক্সপ্রেসওয়েতে কভার্ডভ্যান ও প্রাইভেটকার সংঘর্ষে নারী নিহত, আহত ৫