ইসরাইলকে মোকাবেলায় যেভাবে প্রস্তুত হামাস

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক :

১৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৬ এএম

গাজায় বিমান হামলা আগেই শুরু করেছে ইসরাইল। এবার সমুদ্র এবং স্থলপথেও হামলার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তারা। গাজা সীমান্তে ইতিমধ্যেই ১০ হাজার সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। জড়ো করা হচ্ছে ট্যাঙ্কবাহিনীকেও। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী একইসাথে হামাসকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজা না ছাড়লে তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে। গাজার উত্তর প্রান্তে ১০ লাখেরও বেশি মানুষের বাস। ইসরাইলের সেই হুঁশিয়ারি পাওয়ার পরই তাদের কেউ কেউ সরে যেতে শুরু করে। তবে অনেকেই রয়ে যায় তাদের অবস্থানে। অবশ্য, শেষ কথা হলো, গাজা এখনো হামাসের নিয়ন্ত্রণে। আর সেখান থেকেই ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তারা। এক দিকে, বিমান হামলা চালিয়ে হামাসকে দুর্বল করার চেষ্টা চালাচ্ছে ইসরাইল। অন্য দিকে, গাজায় ঘরে ঘরে ঢুকে হামাস সদস্যদের খুঁজে বের করে হত্যা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। কিন্তু ইসরাইল স্থলপথে হামলার কথা বললেও তাদের সামনে এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞেরা। তাদের মতে, হামাসের তুলনায় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর কাছে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠবে হামাসের বানানো সুড়ঙ্গের ‘জাল’। উল্লেখ্য, গোটা গাজায় ছড়িয়ে রয়েছে সুড়ঙ্গ। যে সুড়ঙ্গপথগুলোকে ভিয়েতনামের সুড়ঙ্গপথের সাথে তুলনা করা হচ্ছে। ২০ বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়েও ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে জিততে পারেনি আমেরিকা। কারণ আমেরিকার সেনাবাহিনী এই সুড়ঙ্গপথ পার করে ঢুকতে পারেনি। হামাসও সে রকমই গোটা গাজায় সুড়ঙ্গের জাল বিছিয়ে রেখেছে, যা ইসরাইলি সেনাবাহিনীর কাছে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠতে পারে। ২০২১ সালে ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) দাবি করেছিল, ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি হামাসের তৈরি সুড়ঙ্গপথ ধ্বংস করে দিয়েছে তারা। কিন্তু হামাস নেতা ইয়াহা সিনওয়ার পরবর্তীকালে দাবি করেন, গাজায় ৫০০ কিলোমিটার সুড়ঙ্গপথ রয়েছে। যার মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কয়েকটি রিপোর্টের দাবি, এই সুড়ঙ্গ গোলকধাঁধার মতো। কোথায় শুরু, কোথায় শেষ তার সন্ধান পাওয়া মুশকিল। বেশ কয়েকটি রিপোর্টে এমনও দাবি করা হয়েছে, কোথাও কোথাও সুড়ঙ্গপথ শুরু হয়েছে গাজার বাসিন্দাদের ঘর থেকে। সেই সুড়ঙ্গ নাকি সীমান্ত পেরিয়ে এক দিকে মিসর এবং অন্য দিকে ইসরাইল পর্যন্ত বিস্তৃত। আর এই কারণেই ইসরাইলি সেনা হামাসের এই সুড়ঙ্গ জালকে ‘গাজা মেট্রো’ও বলে থাকে। এই সুড়ঙ্গকে নিরাপদ আশ্রয় এবং অস্ত্র মজুতের ঠিকানা হিসাবেও ব্যবহার করে হামাস বাহিনী। গত ৭ অক্টোবর রকেট হামলার পাশাপাশি গাজা সীমান্ত সংলগ্ন ইসরাইলের শহরে হামলা চালাতে এই সুড়ঙ্গপথকে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে দাবি ইসরাইলি সেনাবাহিনীর। গাজা সীমান্ত দিয়ে বাইরের কেউ যাতে প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য অত্যাধুনিক সেন্সর লাগিয়ে রেখেছে ইসরাল। কিন্তু সুড়ঙ্গপথ ব্যবহার করে ইসরাইলের মাটিতে হামাস বাহিনী ঢোকার কারণে সেই সেন্সর হামাস সদস্যদের গতিবিধি ধরতে পারেনি বলেই মনে করা হচ্ছে। রিচম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেফনে রিচমন্ড বরাক বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, হামাসের বানানো সুড়ঙ্গে অত্যাধুনিক সব ব্যবস্থা রয়েছে। হামলা থেকে নিজেদের বাঁচানোর জন্য ওই সুড়ঙ্গে আশ্রয় নেয় তারা। সুড়ঙ্গগুলোতে ‘কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল’ সেন্টার রয়েছে। বেশির ভাগ সুড়ঙ্গ ১ মিটার চওড়া এবং আড়াই মিটার উঁচু। স্থলপথে হামলা চালানোর জন্য ইসরালও যেমন প্রস্তুতি নিচ্ছে, হামাসও এই হামলা রুখতে তৎপর হয়ে উঠেছে। দুই বাহিনীর কাছে কোন কোন অস্ত্র রয়েছে, সেই অস্ত্র কতটা ঘাতক তা জেনে নেয়া যাক। হামাস শুরু থেকেই রকেট হামলা চালাচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে অস্ত্র বানানোর কাজও করছে তারা। ৭ অক্টোবর ২০ মিনিটের মধ্যে যে ৫,০০০ হাজার রকেট হামলা চালানো হয়েছিল ইসরাইলে, ঘটনাচক্রে, সেই রকেট নাকি বানানো হয়েছিল ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন দিয়ে। হামাস সাধারণত ইরানের তৈরি ফতেহ-১১০ রকেট ব্যবহার করে। ৫০০ কেজির ওজন এই রকেট ৩০০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত হামলা চালাতে সক্ষম। এ ছাড়াও আল কুদস নামে এক ধরনের রকেটও ব্যবহার করে হামাস। সেটি নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি। আল-জাজিরা, এবিপি।

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মেডিকেল কলেজে শিক্ষক বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার

মেডিকেল কলেজে শিক্ষক বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার

ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি আজ

ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি আজ

গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনে ১০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন

গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনে ১০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন

অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকিয়ে ইইউ

অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকিয়ে ইইউ

ভারতের উদ্বেগের মধ্যে হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে পাকিস্তান

ভারতের উদ্বেগের মধ্যে হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে পাকিস্তান

সান্ত¡না খুঁজে পাচ্ছেন না, দুই দেশে কলঙ্কিত টিউলিপ

সান্ত¡না খুঁজে পাচ্ছেন না, দুই দেশে কলঙ্কিত টিউলিপ

দুর্নীতির মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবির কারাদণ্ড

দুর্নীতির মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবির কারাদণ্ড

বিদেশে টাকা পাচারের রাজনীতি মানুষ চায় না : পীর সাহেব চরমোনাই

বিদেশে টাকা পাচারের রাজনীতি মানুষ চায় না : পীর সাহেব চরমোনাই

শেখ পরিবারের রক্তের জন্যই দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন টিউলিপ -রিজভী

শেখ পরিবারের রক্তের জন্যই দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন টিউলিপ -রিজভী

নামাজ মু’মিনের জন্য মেরাজস্বরূপ

নামাজ মু’মিনের জন্য মেরাজস্বরূপ

ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে বাংলাদেশিদের লেনদেন কমেছে

ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে বাংলাদেশিদের লেনদেন কমেছে

স্বনির্ভর অর্থনীতির পথে দেশ

স্বনির্ভর অর্থনীতির পথে দেশ

বগুড়ার বিমানবন্দর দ্রুত চালুর দাবি

বগুড়ার বিমানবন্দর দ্রুত চালুর দাবি

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশকে মানবাধিকার লংঘন বন্ধ করতে হবে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশকে মানবাধিকার লংঘন বন্ধ করতে হবে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

হাজারীবাগের ট্যানারির গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

হাজারীবাগের ট্যানারির গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

জুলাই বিপ্লব ঘোষণাপত্র দেওয়া জরুরি : নুরুল হক নুর

জুলাই বিপ্লব ঘোষণাপত্র দেওয়া জরুরি : নুরুল হক নুর

গণঅভ্যুত্থানের ইশতেহারে বিএনপির ভূমিকা লিখতে হবে : জয়নুল আবদিন

গণঅভ্যুত্থানের ইশতেহারে বিএনপির ভূমিকা লিখতে হবে : জয়নুল আবদিন

নির্বাচনে রাজনৈতিক নেতাদের পরিবেশ রক্ষায় প্রতিশ্রুতি দিতে হবে

নির্বাচনে রাজনৈতিক নেতাদের পরিবেশ রক্ষায় প্রতিশ্রুতি দিতে হবে

ব্যবসা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রে অফিস খুলবে

ব্যবসা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রে অফিস খুলবে

হেলমেট পরা দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত চালকদলের সভাপতি

হেলমেট পরা দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত চালকদলের সভাপতি