নিরাপদ আশ্রয় সন্ধানে মরিয়া ফিলিস্তিনিরা

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক :

১৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৬ এএম

ইসরাইলের স্থল অভিযান শুরুর আগে পূর্বসতর্কতা মেনে গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে বেসামরিক ফিলিস্তিনিরা দক্ষিণে সরে গিয়েও বিপদ থেকে রেহাই পাচ্ছে না। ইসরাইলের অবিরাম বোমাবর্ষণের শিকার হচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছোটা এই মানুষেরাও। শনিবার গাজার দক্ষিণাঞ্চলের একটি ভবনে বিমান হামলায় কয়েকজন হতাহত হয়েছে। ইসরাইল বেসামরিক লোকজন তাদের হামলার লক্ষ্য নয় বলে আসলেও ভিডিওতে উত্তর গাজা থেকে পালানোর সময় মানুষজনের ওপর বিমান হামলা চলতে দেখা গেছে। ফলে নিরাপদ জায়গার সন্ধানে দক্ষিণ যাওয়াটাও ঝুঁকিতে ভরা। গাজায় বিমান হামলা চলার মধ্যেই ইসরাইল সেখানে স্থল হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুত হয়েছে। এ হামলা শুরু হওয়ার আগেই একটি নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ পেতে এখন মরিয়া হয়ে আছে ফিলিস্তিনিরা। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র ঘোষণার সময়কার নাকাবা বা বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তির ভয়ে অনেক গাজাবাসী বাড়িঘর ছেড়ে দক্ষিণে সরে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র ঘোষণার দিনেও বহু ফিলিস্তিনিকে বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ হতে হয়েছিল। প্রায় ৭ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছিল প্রতিবেশী আরব দেশগুলোতে। আবার অনেকে এখনও বাস করছে শরণার্থী শিবিরে। এদিকে, গাজার দক্ষিণের নগরী খান ইউনিস। উত্তর গাজা থেকে ফিলিস্তিনিরা পালিয়ে এই নগরীতে জড়ো হওয়ায় সেখানে নেমেছে মানুষের ঢল। গাড়ি, ঘোড়া, ভ্যানে চড়ে কিংবা পায়ে হেঁটে যে যেভাবে পেরেছে সেভাবেই এখানে এসেছে। এসেই তারা দেখেছে মানুষের ভারে নুয়ে পড়া এক নগরীকে। যেখানে এক রাতেই জনসংখ্যা হয়েছে দ্বিগুন। জড়ো হওয়া লাখো মানুষের চাপ সামলাতে সেখানে নেই কোনও প্রস্তুতি। নগরীর প্রতিটি রাস্তাঘাট, প্রতিটি ঘর, আনাচে-কানাচে খালি মানুষ আর মানুষ। আর কোথাও যাওয়ার জায়গাও নেই। ইসরাইলের সেনাবাহিনী গত শুক্রবারেই উত্তর গাজার ১১ লাখ বাসিন্দাদকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দক্ষিণে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। হামাস জানিয়েছে, এই ১১ লাখের মধ্যে ৪ লাখ বাসিন্দা গত ৪৮ ঘণ্টায় সালাহ আল দিন সড়ক ধরে দক্ষিণের দিকে চলে গেছে। কিন্তু গাজা খুব ছোট একটি ভূখ-। সব দিক দিয়েই অবরুদ্ধ। বহির্বিশ্ব থেকেও বিচ্ছিন্ন। সেখানে কারও পালিয়ে কোথাও আশ্রয় নেওয়ার জায়গা খুবই সীমিত। নিরাপত্তার কোনও নিশ্চয়তাও নেই। ফলে দিশেহারা গাজাবাসীদের অনেকেরই যাদের বাড়ি উড়ে গেছে বোমায়, যারা সবকিছু হারিয়েছে, যারা ভীত-শঙ্কিত তারাই এসে জড়ো হয়েছে খান ইউনিসে। এরপর তাদের ভাগ্যে কী ঘটতে চলেছে তা তারা কেউই জানে না। খান ইউনিস নগরীতে সাধারণত ৪ লাখ মানুষের বাস। গতরাতে সেখানে মানুষের সংখ্যা বেড়ে ১০ লাখেরও বেশিতে দাঁড়িয়েছে। বাড়তি এই সব মানুষ উত্তরের পাশাপাশি পূর্ব দিক থেকেও এসেছে। ২০১৪ সালের যুদ্ধে যারা ভয়াবহ ক্ষতির শিকার হয়েছিল। এই প্রতিটি মানুষেরই দরকার আশ্রয়, খাবার। আর সেটা কতদিনের জন্য তাও তাদের জানা নেই। অপ্রতুল যে সম্পদ খান ইউনিসে আছে তাও ফুরিয়ে আসার পথে। নগরীটির অবস্থা এরই মধ্যে নাজুক। তার মধ্যে হঠাৎ করে আরও মানুষের ঢলে গোটা সিস্টেমই ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। নগরীর প্রধান হাসপাতাল, যেখানে প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাব লেগেই থাকে, সেখানে এখন ঠাঁই দিতে হয়েছে উত্তর দিক থেকে আসা অসুস্থ এবং আহতদের। হাসপাতালটি এখন শরণার্থী মানুষের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠৈছে। শরণার্থীরা করিডোরে লাইন ধরে আছে। আর চিকিৎসকরা ইসরাইলি বোমায় আহত নতুন নতুন মানুষদের সেবা দিচ্ছে। হাসপাতালে ভিড় করার জন্য মানুষজনকে দোষারোপ করা যায় না। কারণ, যুদ্ধের সময় হাসপাতালগুলোই সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা। আন্তর্জাতিক আইনে এর নিরাপত্তা সুরক্ষিত। সেদিক থেকে হাসপাতালে আশ্রয় পাওয়া মানুষেরা সৌভাগ্যবান বলা যায়। অন্তত আপাত সময়ের জন্য। চিকিৎসকরা বলছেন, হাসপাতালে নতুন আহতদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার মতো বলতে গেলে কিছুই নেই। রোগীদের জন্য দিনে মাত্র ৩শ’ এমএল এর পানি বরাদ্দ আছে। শরণার্থীদেরকে দেওয়ার মতো কিছু নেই। কোথাও কোথাও খান ইউনিসের বাসিন্দারা নতুন আগতদের জায়গা দিচ্ছে। খান ইউনিসে অনেকেই খুব অল্প জায়গার মধ্যে বাস করে। এখন সেখানে মানুষে গাদাগাদি অবস্থা। গাজা থেকে বের হয়ে যাওয়ার একটি মাত্র যে বিকল্প পথ আছে তা হচ্ছে রাফা সীমান্ত পারাপার এলাকা। যেটি চলে গেছে মিসরে। এই সীমান্ত ক্রসিংটিও বন্ধ করে রাখা হয়েছে। কারণ, কায়রো জানে এই ক্রসিং খুলে দেওয়া হলে নতুন মানবিক বিপর্যয় তৈরি হবে। বিবিসি, আল-জাজিরা।

 

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি আজ

ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি আজ

গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনে ১০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন

গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনে ১০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন

অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকিয়ে ইইউ

অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকিয়ে ইইউ

ভারতের উদ্বেগের মধ্যে হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে পাকিস্তান

ভারতের উদ্বেগের মধ্যে হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে পাকিস্তান

সান্ত¡না খুঁজে পাচ্ছেন না, দুই দেশে কলঙ্কিত টিউলিপ

সান্ত¡না খুঁজে পাচ্ছেন না, দুই দেশে কলঙ্কিত টিউলিপ

দুর্নীতির মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবির কারাদণ্ড

দুর্নীতির মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবির কারাদণ্ড

বিদেশে টাকা পাচারের রাজনীতি মানুষ চায় না : পীর সাহেব চরমোনাই

বিদেশে টাকা পাচারের রাজনীতি মানুষ চায় না : পীর সাহেব চরমোনাই

শেখ পরিবারের রক্তের জন্যই দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন টিউলিপ -রিজভী

শেখ পরিবারের রক্তের জন্যই দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন টিউলিপ -রিজভী

নামাজ মু’মিনের জন্য মেরাজস্বরূপ

নামাজ মু’মিনের জন্য মেরাজস্বরূপ

ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে বাংলাদেশিদের লেনদেন কমেছে

ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে বাংলাদেশিদের লেনদেন কমেছে

স্বনির্ভর অর্থনীতির পথে দেশ

স্বনির্ভর অর্থনীতির পথে দেশ

বগুড়ার বিমানবন্দর দ্রুত চালুর দাবি

বগুড়ার বিমানবন্দর দ্রুত চালুর দাবি

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশকে মানবাধিকার লংঘন বন্ধ করতে হবে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশকে মানবাধিকার লংঘন বন্ধ করতে হবে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

হাজারীবাগের ট্যানারির গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

হাজারীবাগের ট্যানারির গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

জুলাই বিপ্লব ঘোষণাপত্র দেওয়া জরুরি : নুরুল হক নুর

জুলাই বিপ্লব ঘোষণাপত্র দেওয়া জরুরি : নুরুল হক নুর

গণঅভ্যুত্থানের ইশতেহারে বিএনপির ভূমিকা লিখতে হবে : জয়নুল আবদিন

গণঅভ্যুত্থানের ইশতেহারে বিএনপির ভূমিকা লিখতে হবে : জয়নুল আবদিন

নির্বাচনে রাজনৈতিক নেতাদের পরিবেশ রক্ষায় প্রতিশ্রুতি দিতে হবে

নির্বাচনে রাজনৈতিক নেতাদের পরিবেশ রক্ষায় প্রতিশ্রুতি দিতে হবে

ব্যবসা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রে অফিস খুলবে

ব্যবসা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রে অফিস খুলবে

হেলমেট পরা দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত চালকদলের সভাপতি

হেলমেট পরা দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত চালকদলের সভাপতি

পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত ৪ জন আহত

পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত ৪ জন আহত