ঢাকা   রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭ আশ্বিন ১৪৩১

শ্রম অসন্তোষ বাড়ছে পশ্চিমা দেশগুলোয়

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক :

০১ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম

কর্মসংস্থান নিয়ে সৃষ্ট উদ্বেগ ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাড়ছে ধর্মঘট। আর ক্রমবর্ধমান হারে কর্মদিবস নষ্ট হওয়ার ঘটনা নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে দেশগুলোর প্রবৃদ্ধিতে। চলচ্চিত্র থেকে শুরু করে গাড়ি নির্মাণ শিল্প পর্যন্ত বিভিন্ন খাতে নানা সময়ে এসেছে কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত। মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাপনের ব্যয় বৃদ্ধি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও প্রযুক্তিগত সম্প্রসারণে কর্মসংস্থানের ঝুঁকিকে উদ্বেগ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশ্লেষকরা। খবর নিক্কেই এশিয়া। যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ পার্টি চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বার্ষিক সম্মেলন আহ্বান করে। ঠিক সে সময়েই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল ট্রেন চালক ইউনিয়ন। ফলে থমকে যায় স্থানীয় ট্রেন পরিষেবা। যানজটের কারণে বাস চলাচলে সময় লেগে যায় দ্বিগুণ। শ্রমিক ইউনিয়নের দাবি ছিল, কর্মক্ষেত্রের উন্নয়নের পাশাপাশি মজুরি বৃদ্ধি। কেননা মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাপনের ব্যয় বেড়েছে। অক্টোবরেই ধর্মঘটের ডাক দেয় ডাক্তার ও অন্য পেশাজীবীরা। তাদেরও প্রধান দাবি ছিল বেতন বাড়ানোর। স্বাভাবিকভাবেই এ ধর্মঘটে ব্যাহত হচ্ছে অর্থনীতির গতি। যুক্তরাজ্যে গত বছর মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিশ্লেষকদের দাবি, মূল্যস্ফীতির জন্য বিভিন্ন খাতে কর্মীদের ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলে মজুরি বৃদ্ধির দাবি নিয়ে দেয়া হচ্ছে কর্মবিরতির ঘোষণা। কেবল ২০২২ সালেই কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘটনা ছিল যুক্তরাজ্যের ৩৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত বছরে কর্মবিরতির কারণে যুক্তরাজ্যে ২৫ লাখ ১০ হাজার কর্মদিবস নষ্ট হয়েছে। এ বছরও এটা সমপর্যায়ে থাকবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে নষ্ট হয়েছে ৭৪ লাখ ১০ হাজার কর্মদিবস, যা ২০০০ সালের পর সর্বোচ্চ। জার্মানিতে আন্দোলনে গত মার্চে গণপরিবহন ব্যবস্থাকে প্রায় স্থবির করে ফেলেছিল। তার প্রভাব কেবল জাতীয় পর্যায়েই সীমাবদ্ধ থাকেনি। মহামারী-পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং পরে সৃষ্ট ভূরাজনৈতিক টানাপড়েন বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে ধর্মঘট নতুন সংকট তৈরি করেছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার থাবা থেকে কর্মসংস্থানের সুরক্ষায় গত মে-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আন্দোলন করে রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকা। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় ১ লাখ ৬০ হাজার সদস্যের স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড-আমেরিকান ফেডারেশন অব টেলিভিশন অ্যান্ড রেডিও আর্টিস্ট। কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে কেবল আগস্টেই ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কর্মদিবস নষ্ট হয়েছে। গাড়ি নির্মাণ শিল্প বর্তমানে একটি পরিবর্তনকালীন সময় পার করছে। অধিকাংশ কোম্পানির মনোযোগ এখন বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি নির্মাণে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ডেট্রয়েটের তিন বড় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেয় ইউনাইটেড অটো ওয়ার্কার্স (ইউএডব্লিউ)। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেখানে সমর্থন জানালে তা নতুন গতি পায়। যেহেতু অটো শিল্প দেশটির মোট জিডিপিতে ৩ শতাংশ ভূমিকা রাখে, ফলে এ আন্দোলনের প্রভাব পড়ছে দেশের প্রবৃদ্ধিতে। মার্কিন বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকস জানিয়েছে, দেশটিতে আন্দোলন এক সপ্তাহ দীর্ঘ হওয়ার মানে বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি দশমিক শূন্য ৫ থেকে দশমিক ১ শতাংশীয় পয়েন্ট কমিয়ে আনা। বিশেষজ্ঞরা এ মুহূর্তে কর্মক্ষেত্রে প্রযুক্তির অগ্রগতির প্রভাব নিয়ে ভাবছেন। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম গত মে মাসে জানিয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির মাধ্যমে যত বেশি মানুষ চাকরি হারাবে, তার চেয়ে বেশি চাকরি পাবে। তবে এটাও সত্য, অনেক মানুষেরই প্রয়োজনীয় দক্ষতা নেই। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। নিক্কেই এশিয়া।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গোলাগুলি, নিহত ৪

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গোলাগুলি, নিহত ৪

হাসিনা সরকারের ৬ মাসে মেট্রেরেলে ১৮ কোটি, বর্তমানে ১৮ দিনে সাড়ে ২০ কোটি টাকা আয়

হাসিনা সরকারের ৬ মাসে মেট্রেরেলে ১৮ কোটি, বর্তমানে ১৮ দিনে সাড়ে ২০ কোটি টাকা আয়

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হলেন কুমারা দিসানায়েকে, শপথ আগামীকাল

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হলেন কুমারা দিসানায়েকে, শপথ আগামীকাল

রাঙ্গামাটিতে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার, পরিস্থিতি স্বাভাবিক

রাঙ্গামাটিতে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার, পরিস্থিতি স্বাভাবিক

রিমান্ড শেষে দীপু, ইনু, মেনন, পলকসহ ৭ জন কারাগারে

রিমান্ড শেষে দীপু, ইনু, মেনন, পলকসহ ৭ জন কারাগারে

ইলিশ যাচ্ছে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’: উপদেষ্টা

ইলিশ যাচ্ছে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’: উপদেষ্টা

ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ দুই বন্ধুর

ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ দুই বন্ধুর

ইরানের কয়লা খনিতে ভয়াবহ গ্যাস বিস্ফোরণ, নিহত ৩০, আহত ১৭

ইরানের কয়লা খনিতে ভয়াবহ গ্যাস বিস্ফোরণ, নিহত ৩০, আহত ১৭

'নিরাপদ চাঁদপুর' চাই দাবিতে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

'নিরাপদ চাঁদপুর' চাই দাবিতে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

৩ মাসেরও বেশি সময় পর ঢাবিতে ক্লাস শুরু

৩ মাসেরও বেশি সময় পর ঢাবিতে ক্লাস শুরু

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ

৩৫ হাজার ইয়াবাসহ পুলিশ সদস্য আটক, চলছে সমালোচনা

৩৫ হাজার ইয়াবাসহ পুলিশ সদস্য আটক, চলছে সমালোচনা

ইবিতে ভিসির দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত, মহাসড়ক অবরোধ

ইবিতে ভিসির দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত, মহাসড়ক অবরোধ

অভিনেত্রী বাঁধনকে নিয়ে যা বললেন পিনাকী ভট্টাচার্য

অভিনেত্রী বাঁধনকে নিয়ে যা বললেন পিনাকী ভট্টাচার্য

আ.লীগ নেতাদের সম্পর্কে চাঞ্চল্য তথ্য দিলেন যুব মহিলী লীগ নেত্রী

আ.লীগ নেতাদের সম্পর্কে চাঞ্চল্য তথ্য দিলেন যুব মহিলী লীগ নেত্রী

পরিচয় লুকানো ঢাবি শিবিরের সভাপতি কে এই সাদিক কায়েম?

পরিচয় লুকানো ঢাবি শিবিরের সভাপতি কে এই সাদিক কায়েম?

‘হিন্দুপ্রধান’ জম্মু দিয়ে বিজেপির পক্ষে ‘মুসলিম প্রধান’ কাশ্মির জেতা কি সম্ভব?

‘হিন্দুপ্রধান’ জম্মু দিয়ে বিজেপির পক্ষে ‘মুসলিম প্রধান’ কাশ্মির জেতা কি সম্ভব?

গাজীপুরে হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির দাবিতে সড়ক অবরোধ

গাজীপুরে হাজিরা বোনাস বৃদ্ধির দাবিতে সড়ক অবরোধ

আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় আসছে চীনের মেডিক্যাল টিম

আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় আসছে চীনের মেডিক্যাল টিম

মীলাদুন্নবী মাহফিল থেকে আমরা ঈমানকে পুনর্জ্জীবিত করতে পারি  -সায়্যিদ মাআন আল হাসানী আল মক্কী

মীলাদুন্নবী মাহফিল থেকে আমরা ঈমানকে পুনর্জ্জীবিত করতে পারি -সায়্যিদ মাআন আল হাসানী আল মক্কী