চীন দাবি করেছে, তারা ‘গোল্ডেন ভেইল’ নামে এমন এক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে যার ফলে তাদের ক্রুইজ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো রাডার স্ক্রিনে যাত্রীবাহী বিমানের মতো লাগবে। এই স্বল্প ব্যয়ের প্রযুক্তিটি অত্যাধুনিক বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করবে এবং ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করার সময় কমিয়ে আনবে। উত্তর-পশ্চিম চীনের একটি গবেষণাদল প্রকল্পটি নিয়ে কাজ করছে। তাইওয়ান (ফার্স্ট আইল্যান্ড চেইন), গুয়াম এবং এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখ-ের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পরাজিত করার জন্য বৈচিত্র্যপূর্ণ পদ্ধতি আবিষ্কার করার অব্যাহত প্রয়াসের অংশ হিসেবে তারা এই উদ্ভাবন করেছে। ‹গোল্ডেন ভেইল› ছদ্মনামের এই প্রকল্পে বোয়িং ৭৩৭ কিংবা এয়ারবাস এ৩২০-এর মতো বড় বিমানের উপস্থিতি নকল করার জন্য ক্ষেপণাস্ত্রের রাডার ক্রস-সেকশন সংস্কার করা হয়। চীনা সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের সামরিক অবস্থান প্রধানত ‹রক্ষণাত্মক› হলেও এ ধরনের সক্ষমতা তাইওয়ান কিংবা দক্ষিণ চীন সাগরের মতো আঞ্চলিক বিষয়াদিতে বিদেশী হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য শক্তি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। প্রায় এক কিলোগ্রাম (২.২ পাউন্ড) ওজনের এই প্রযুক্তিটি চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লার সাথে সামঞ্জস্য। তাছাড়া এটি ব্যয়-সাশ্রয়ী হওয়ায় আগামী দিনগুলোতে তা সম্ভাব্য চাহিদা সামাল দিতে পারবে। শানঝি প্রদেশের জিয়ানের নর্থওয়েস্টার্ন পলিটেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির রাডার বিজ্ঞানর অধ্যাপক জং বলেন, গবেষণাগারের পরীক্ষঅয় দেখা গেছে, এই যন্ত্রটি প্রতি বর্গ মিটারে এক থেকে ৩০ ডেসিবেলের মধ্যে উড়ন্ত টার্গেটের রাডার ক্রস-সেকশন বাড়াতে পারে। বিশেষ কোণ থেকে দেখা হলে এই বৃদ্ধি বোয়িং ৭৩৭ বা এয়ারবাস৩২০-এর মতো বড় বিমানের রাডার সিগনেচারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হবে। যুক্তরাষ্ট্র রাডার স্ক্রিনে বিমান দেখার জন্য এডিএম-১৬০ এমএএলডির মতো রাডার রিফ্লেক্টর ব্যবহার করে। আবার এফ-২২ যুদ্ধবিমান এবং বি২ বোমারু বিমানের মতো স্টিলথ সামরিক বিমান সাধারণভাবে লুনবার্গ লেন্স নামে পরিচিত রিমোভেবল রিফ্লেক্টর ব্যবহার করে তাদের সত্যিকারের রাডার সিগনেচার গোপন করার জন্য। চীন সরকার ক্রুইজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনের মতো আধুনিক এবং সেইসাথে সাশ্রয়ী অস্ত্রের মাধ্যমে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় নিয়োজিত রয়েছে। চীনের ক্রুইজ ক্ষেপণাস্ত্রের শিকড় নিহিত রয়েছে স্নায়ুযুদ্ধে। অপর এক খবরে বলা হয়, ১৩ই জানুয়ারি তাইওয়ানে প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন। তার আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীন। তারা বলেছে, ক্ষমতাসীন দল যদি তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে একগুয়েমিভাবে সমর্থন করে যায়, তাহলে তাইওয়ানের বিরুদ্ধে আরও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেবে চীন। বুধবার চীন সরকার এ হুমকি দিয়েছে বলে খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। উল্লেখ্য, তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখ- বলে দাবি করে চীন। অন্যদিকে তাইওয়ান নিজেদেরকে সার্বভৌম দেশ হিসেবে দাবি করে। কিন্তু তাকে নিজেদের অধীনে নিতে প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগের হুমকি দিয়েছে চীন। এরই মধ্যে তাইওয়ান থেকে কিছু রাসায়নিক চীনে রপ্তানিতে শুল্ক কর্তনের বিষয়টি বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছে বেইজিং। এর প্রতিক্রিয়ায় তাইওয়ান এ মাসে চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে। বলেছে, চীনের এই ক্ষতিকর অর্থনৈতিক উদ্যোগ তাদের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ। অন্যদিকে বেইজিংয়ের অভিযোগ, ২০১০ সালে তাইওয়ান ও বেইজিং বাণিজ্যে যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল তা লংঘন করেছে তাইপে। বেইজিংয়ে নিয়মিত এক সংবাদ সম্মেলনে চীনের তাইওয়ান বিষয়ক অফিসের মুখপাত্র চেন বিনহুয়া বলেছেন, তাইওয়ানের ক্ষমতাসীন দল ডেমোক্রেট প্রোগ্রেসিভ পার্টি (ডিপিপি) ২০১০ সালে যে চুক্তি করেছিল সমস্যার মূলে রয়েছে সেটা। তা হলো তাইওয়ানের স্বাধীনতা নিয়ে। তিনি বলেন, ডিপিপি কর্তৃপক্ষ যদি তাইওয়ানের স্বাধীনতার প্রশ্নে একগুঁয়ে অবস্থান অব্যাহত রাখে, তাদের অবস্থানে দৃঢ় থাকে এবং অবস্থান পরিবর্তনে রাজি না হয়, তাহলে আইন অনুযায়ী পরবর্তী আরও ব্যবস্থা নিতে আমরা সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে সমর্থন করবো। ইউরোএশিয়ান টাইমস, রয়টার্স।