ইউরোপের উত্তর সাগর সংলগ্ন অঞ্চলে অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চোখে পড়ে। ছুটি কাটানোর জায়গা হিসেবে জায়গাটি বেশ জনপ্রিয়। ডেনমার্কের ভাইলে ফিয়র্ড উপকূল দেশের সবচেয়ে দামী বসতি এলাকার অন্যতম। কিন্তু সেই সৌন্দর্য্যের একটা কালো দিকও রয়েছে। জেলে হিসেবে প্রতি সপ্তাহে বেরিয়ে পড়ে লাসে মাকেলসেন দেখতে পাচ্ছেন, ফিয়র্ড কীভাবে ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে।

ফিয়র্ডের নীচে অ্যালজি গজিয়ে উঠে পানি ঘোলাটে করে দিচ্ছে। ফলে মাছ ও সামুদ্রিক উদ্ভিদ আলো ও অক্সিজেন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বৈজ্ঞানিকদের তোলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, যে ফিয়র্ডের তলদেশে আর প্রাণের প্রায় কোনো অস্তিত্বই নেই। আগে সেখানকার উপকূলে কর্ড, ফ্লাউন্ডার ও লাম্পফিশের ঝাঁক দেখা যেত। লাসে আসলে মাছ ধরে অবসর জীবনের জন্য অর্থ সঞ্চয় করতে চেয়েছিলেন। আজ আর তিনি মাছ ধরতে বেরোতেই চান না। তিনি বলেন, ‘কেউ কিছু করছে না বলে ক্রোধ ও হতাশার সংমিশ্রণ অনুভব করি। আমার মতে, যাদের কিছু করার কথা ছিল, তারা অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে।’

মিকেলসেনের মতে, বিশেষ করে ডেনমার্কের চাষিদের কারণে এমন অবস্থা দেখা যাচ্ছে। বাল্টিক সাগরের উপকূলের কাছে তাঁদের কর্মকা-। মাত্র ৬০ লাখ জনসংখ্যার দেশে গরু ও শুকরের সংখ্যা মানুষের প্রায় দ্বিগুণ। অনেক চাষি নিজেদের জমিতে সার দেন, যা শেষ পর্যন্ত সমুদ্রে গিয়ে পড়ে। ফিয়র্ড থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ক্রিস্টিয়ান আরিল্ড মাডসেনের চাষের জমি। ফসফেট ও নাইট্রেটের মাত্রা যতটা সম্ভব কমিয়ে দিয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন। কোন গাছের গোড়ায় সার দিতে হবে, আর কোন গাছে এখনই যথেষ্ট সার আছে, স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবির সাহায্যে তিনি সেটা দেখতে পান। কিন্তু তার মতে, একেবারে সার না দিলে চলবে না। ক্রিস্টিয়ান বলেন, ‘আমি মনে করি আমরা নাইট্রোজেন কমিয়ে ভালো করেছি। তবে এর বেশি এগোতে পারবো বলে মনে হয় না। চাষি হিসেবে নিম্নসীমা এর থেকে কমানো বোধহয় মেনে নিতে পারবো না।’

চাষি হিসেবে তার বক্তব্য, উদ্ভিদের পুষ্টির প্রয়োজন। তা না হলে শস্যের ফলন হবে না। যবে থেকে তিনি সারের মাত্রা কমিয়ে দিয়েছেন, তখন থেকে তার খেতের গাছগুলি উচ্ছিষ্ট সম্বল করে বেঁচে আছে। মাড্স ফিয়েল্ডস্যো ক্রিস্টেনসেন এমন উভয় সংকট সম্পর্কে সচেতন। জীববিজ্ঞানী হিসেবে তিনি ভাইলে ফিয়র্ড এলাকার ইকো সিস্টেম পুনর্গঠনের দায়িত্বে রয়েছেন। তথাকথিত এই নেচার ম্যানেজার সব পক্ষের যুক্তি, তর্ক ও তথ্য জানেন। মাড্স বলেন, ‘বর্তমানে আমরা জানি, যে ভাইলে ফিয়র্ডের পানিতে যে পুষ্টি বয়ে আসে, তার প্রায় ৮০ শতাংশের উৎসই কৃষিক্ষেত্র। প্রায় দশ শতাংশ আসে শহরের নর্দমা এবং আরো দশ শতাংশ মাছের ভেড়ি থেকে। ফলে কোন দিকে নজর দেয়া উচিত, তা আমাদের কাছে স্পষ্ট।’

নাইট্রেটের কারণে অ্যালজির অভাবনীয় বাড়বাড়ন্ত দেখা যাচ্ছে। গোটা ফিয়র্ডই ঢেকে যাচ্ছে। এমনকি সি-গ্রাসও আলোর অভাবে মরে যাচ্ছে। অথচ বাল্টিক সাগর উপকূলের ইকো সিস্টেমে সি-গ্রাস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলির একটি। সি-গ্রাস অক্সিজেন সৃষ্টি করে এবং ছোট মাছগুলির বাঁচার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করে। সে কারণে ক্রিস্টেনসেন ও তার টিম সি-গ্রাসের নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি করছেন। এই ফিয়র্ড বাঁচাতে সবই আরো দায়িত্ব গ্রহণ করবে বলে মিকেলসেন আশা করছেন। কারণ ডেনমার্ক বর্তমানে এমন সব সমস্যার সমাধান খুঁজছে, যা গোটা বাল্টিক সাগর উপকূলকে হুমকির মুখে ফেলছে। সূত্র : ডিডব্লিউ।