মিয়ানমারে আসলে কী ঘটছে?

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

স্বাধীনতার পর থেকে সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাত চলমান থাকলেও, এবারের সংকট সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটির জান্তা বা সামরিক শাসকরা। বিশেষ করে অন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সমর্থন নিয়ে সরকারের বিরোধিতা করা শান রাজ্যের তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর একজোট হয়ে চালানো একের পর এক হামলা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে ক্ষমতায় থাকা দেশটির সামরিক বাহিনী। বিদ্রোহী বাহিনীর কাছে প্রদেশ হারানো ও প্রতিবেশী দেশে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের পালিয়ে আশ্রয় নেবার খবর প্রতিদিনই উঠে আসছে গণমাধ্যমে।

সামরিক জান্তার নতুন করে ক্ষমতা দখলের তিন বছর পূর্ণ হতে চলেছে। তবে প্রথম আড়াই বছর সামরিক বাহিনী দমন-পীড়নের মাধ্যমে যতটা সহজে তাদের ক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছে, পরে সে দৃশ্য অনেকটাই বদলে গেছে। ২০২১ সালের এপ্রিলেই ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেতৃত্বে নির্বাচনে জয়ী সদস্যরা জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠন করে, যাকে সংক্ষেপে বলা হয় এনইউজি। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরাও এতে যোগ দেয়। সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে থাকা বিদ্রোহী বাহিনীর সঙ্গে মিলে তারা প্রশিক্ষণ নেয়া শুরু করে এবং সব গোষ্ঠীর সমন্বয়ে তৈরি করে ‘পিপল ডিফেন্স ফোর্স’।

সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা সক্রিয় থাকলেও এটি নতুন মাত্রা পায় উত্তরাঞ্চলের তিনটি বিদ্রোহী বাহিনীর এককাট্টা হয়ে আক্রমণ শুরুর পর। ২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষের দিকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর একজোট হয়ে হামলা চালায় দেশটির উত্তরের জাতিগতভাবে সংখ্যালঘু তিনটি বিদ্রোহী বাহিনী, যাদের একসঙ্গে ডাকা হচ্ছে ‹থ্রি গ্রুপ অ্যালায়েন্স› নামে। ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ), তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) এবং আরাকান আর্মি (এএ) নিয়ে এই জোট গঠন করা হয়েছে। তারা একে নাম দেয় ‘অপারেশন ১০২৭’।

এছাড়াও শত শত স্বেচ্ছাসেবী জাতিগত বিদ্রোহীদের সাথে যোগ দেয়। তাদের সাথে অস্ত্রে সুসজ্জিত সেনাবাহিনীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে দুই বছরের আপাত অচলাবস্থার অবসান ঘটে। সামরিক বাহিনীকে এই মুঘূর্তে নানা ধরনের হামলার সম্মুখীন হচ্ছে হচ্ছে। আর তা কেবল একটি জায়গাতেই না, বরং সারা দেশব্যাপী।
গত নভেম্বর মাসে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের প্রেসিডেন্ট সতর্ক করে বলেছিলেন, দেশটির শান রাজ্যে শুরু হওয়া যুদ্ধ সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পুরো দেশই ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের বিদ্রোহীদের উত্তর শান রাজ্যের বিশাল এলাকা দখলের কথা উল্লেখ করে একথা বলেন তিনি। উল্লেখ্য, জোটের তিনটি জাতিগত সশস্ত্র বাহিনী এখন চীনের সাথে সীমান্তের বেশির ভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে।

এদিকে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি সম্প্রতি মিয়ানমারের চিন রাজ্যের পালেতোয়া অঞ্চলটি দখল করে নিয়েছে। বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটারের মতো দূরত্বে এই এলাকাটি বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের সীমান্তের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে শত শত সৈন্য সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার রাস্তা বেছে নিয়েছে। যুদ্ধ না করেই হাজার হাজার সৈন্য আত্মসমর্পণ করেছে।

সব শেষ এই সপ্তাহেও নতুন করে ২৭৮ জন মিয়ানমারের সেনা ভারতের মিজোরামে পালিয়ে গেছেন। নভেম্বর থেকে দফায় দফায় প্রায় ৬০০ জন সেনা সদস্য এভাবেই মিজোরামে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের অনেককে আবার ফেরতও পাঠানো হয়েছে। এর আগে শান রাজ্যে পরাজিত ছয় জেনারেলকে তাদের অপহরণকারীদের সাথে পানীয় পান করতে দেখা যায়। সেখানে তাদের মধ্যে অপমানবোধের চেয়ে স্বস্তিই বেশি দেখা যাচ্ছিলো। তবে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করার পরে তাদের মধ্যে তিনজনকে মৃত্যুদ- এবং তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়।

অন্যদের হাল ছেড়ে দেয়া থেকে বিরত রাখতেই এটা করা হয়েছিলো বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের ৭৫ বছরের দীর্ঘ ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন। সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে পড়েছে। এই অবস্থায় নতুন সদস্য সংগ্রহের কাজটি বেশ কঠিন। সূত্র : বিবিসি।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দুরানের তিন মিনিটের ম্যাজিকে লিভারপুলকে রুখে দিল অ্যাস্টন ভিলা

দুরানের তিন মিনিটের ম্যাজিকে লিভারপুলকে রুখে দিল অ্যাস্টন ভিলা

ইয়ামাল-রাফিনিয়ার গোলে জয়ের ধারায় বার্সা

ইয়ামাল-রাফিনিয়ার গোলে জয়ের ধারায় বার্সা

বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত ম্যাচ,গুজরাটের বিদায়

বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত ম্যাচ,গুজরাটের বিদায়

জর্ডানে যৌথ সামরিক মহড়া

জর্ডানে যৌথ সামরিক মহড়া

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে চীন-রুশ প্রেসিডেন্টের বিনিময় খুব গুরুত্বপূর্ণ

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে চীন-রুশ প্রেসিডেন্টের বিনিময় খুব গুরুত্বপূর্ণ

টোলের নামে চাঁদাবাজিতে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম : সাঈদ খোকন

টোলের নামে চাঁদাবাজিতে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম : সাঈদ খোকন

মাইজিপি অ্যাপেই খোলা যাচ্ছে বিকাশ অ্যাকাউন্ট

মাইজিপি অ্যাপেই খোলা যাচ্ছে বিকাশ অ্যাকাউন্ট

আ.স.ম আবদুর রবকে দেখতে গেলেন মির্জা ফখরুল

আ.স.ম আবদুর রবকে দেখতে গেলেন মির্জা ফখরুল

২৫ দিনেও ধরতে পারেনি সেই ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার

২৫ দিনেও ধরতে পারেনি সেই ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার

ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ব্যবসায় প্রবেশপথ হবে বাংলাদেশ-তুরস্ক

ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ব্যবসায় প্রবেশপথ হবে বাংলাদেশ-তুরস্ক

লৌহজংয়ে সমলয় পদ্ধতিতে যন্ত্রের মাধ্যমে ধান কর্তন উদ্বোধন

লৌহজংয়ে সমলয় পদ্ধতিতে যন্ত্রের মাধ্যমে ধান কর্তন উদ্বোধন

মোরেলগঞ্জে যুবকের গলায় রশি পেচানো লাশ উদ্ধার

মোরেলগঞ্জে যুবকের গলায় রশি পেচানো লাশ উদ্ধার

ফিলিস্তিনকে মুক্ত করতে মুসলিম জাতিসংঘ গঠন করতে হবে

ফিলিস্তিনকে মুক্ত করতে মুসলিম জাতিসংঘ গঠন করতে হবে

অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগ

অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগ

বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক

বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক

সকল শ্রেণির মানুষের জীবনমান উন্নয়নই এ সরকারের লক্ষ্য

সকল শ্রেণির মানুষের জীবনমান উন্নয়নই এ সরকারের লক্ষ্য

ইবিতে শিক্ষক হেনস্তার অভিযোগ, ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি শিক্ষক সমিতির

ইবিতে শিক্ষক হেনস্তার অভিযোগ, ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি শিক্ষক সমিতির

ইন্দুরকানী উপজেলা যুবলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা

ইন্দুরকানী উপজেলা যুবলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা

শোক সংবাদ

শোক সংবাদ

পটিয়ায় আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি

পটিয়ায় আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি