ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তনে যা ঘটতে পারে বিশ্বে
৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ এএম
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আইওয়া এবং নিউ হ্যাম্পশায়ারে বিজয়ী হওয়ার পর তার হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়েছে। মার্কিন নির্বাচনের দশ মাস বাকি থাকা সত্ত্বেও বিশ্ব ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে।
দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরা প্রথমটির থেকে আলাদা হবে, কারণ বিশ্ব এখন আরও অস্থিতিশীল এবং ট্রাম্প তার পরিকল্পনাগুলির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বাধা সহ্য করবেন, এমন সম্ভাবনা কম। কিছু রাজনীতিবিদ এবং দেশের জন্য, যাদের সাথে ট্রাম্প আদর্শিকভাবে একাত্ম, তার প্রেসিডেন্ট হওয়াটি সুসংবাদ হবে। ইসরায়েলে বিনইয়ামিন নেতানিয়াহু যদি ২০২৫ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পারেন, তাহলে তিনি পক্ষে ট্রাম্পের পূর্ণ সমর্থন এবং নিজস্ব রাষ্ট্রের জন্য ফিলিস্তিনিদের আকাক্সক্ষা বাতিলের আশা করতে পারেন। হাঙ্গেরির ভিক্টর অরবানের মতো ট্রাম্পের প্রানের বন্ধুরা ওভাল অফিসে উষ্ণ অভ্যর্থনা আশা করতে পারেন।
ট্রাম্পের সাথে দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এবং তাই ভারত তার নাগরিক স্বাধীনতার বিষয়ে কম সমালোচনা এবং মার্কিন পররাষ্ট্র নীতিতে ধারাবাহিকতা আশা করে। সউদী আরবের প্রতিও ট্রাম্পের রয়েছে নরম অবস্থান। তবে, ট্রাম্পের দ্বারা বেশিরভাগ মার্কিন মিত্রকে ‘অপব্যবহারকারী’ (অকৃতজ্ঞ মিত্র), ‹ক্ষতিকারক› (দুষ্ট প্রতিপক্ষ) এবং ‹অপদার্থ› (যে দেশগুলির বিষয়ে তিনি চিন্তা করেন না) হিসাবে দেখা হবে, যারা তারা অসংবেদনশীল আচরণ আশা করতে পারে।
উত্তর আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো) বা এশিয়ায় ৩৮টি মার্কিন মিত্রের ২৬টির সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ২০২৩ সালে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল। গত বছর দেশগুলি প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপির ২শতাংশেরও কম ব্যয় করেছে যার জন্য ট্রাম্পিয় মাপকাঠিতে তারা খারাপ অবস্থানে থাকবে।
কিছু দেশ ইতিমধ্যে ট্রাম্পের হিসাবের খাতায় তাদের আবেদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে। একজন জার্মান সরকারী কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে, ১০হাজার ৯শ’ কোটি ডলারের বিশেষ সামরিক তহবিল তৈরির পর জার্মানির প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি পেতে চলেছে; এটি এখন মার্কিন এফ-৩৫ জেটের জন্য ১হাজার ৪শ’ কোটি ডলার ব্যয় করছে। দেশটি পাইপযুক্ত রাশিয়ান গ্যাসের পরিবর্তে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করছে, যার বেশিরভাগই মার্কিন সরবরাহকারীদের কাছ থেকে আসছে।
যে ‘অপব্যবহারকারী’ মিত্ররা ট্রাম্পের সুনজরে আসতে অক্ষম, তারা চাপের মধ্যে থাকতে পারে। তারা শুল্ক সংক্রান্ত হুমকি বা নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি প্রত্যাহারের সম্মুখীন হতে পারে। মেক্সিকো তাদের অন্যতম হতে পারে। তবে, ট্রাম্প প্রশাসন ২০২০ সাল থেকে উত্তর আমেরিকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিকে তার নিজস্ব চুক্তি দিয়ে প্রতিস্থাপন করায় বাণিজ্য ঘাটতি কার্যত বেড়েছে।
ট্রাম্প যেভাবে চিন্তা করেন, তার জন্য একজোড়া মার্কিন মিত্রের ভবিষ্যত বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। তাইওয়ান যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি বড় বাণিজ্য উদ্বৃিত্ত উপভোগ করছে, যা জানুয়ারী এবং ২০২৩সালের নভেম্বরে ৪হাজার ৫শ’ কোটি ডলার। গত বছর তিনি অভিযোগ করেছিলেন যে, ‘তাইওয়ান আমাদের ব্যবসা কেড়ে নিয়েছে।’
ট্রাম্প প্রশ্ন করতে পারেন যে, আমেরিকানদের প্রতিরক্ষা ব্যয় সমর্থন করা উচিত নাকি তা করতে গিয়ে মারা যাওয়া উচিত। ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধকে মূল্যবান মার্কিন সম্পদের অপচয় হিসাবে দেখতে পারেন এবং তাই ইউক্রেনকে রাশিয়ার সাথে একটি শান্তি চুক্তিতে বসানোর চেষ্টা করতে পারেন। সেক্ষত্রে, যুক্তরাষ্টের তাইওয়ান এবং ইউক্রেন ত্যাগ করা জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো অন্যান্য এশিয়ান মিত্রদের জন্য একটি নজির স্থাপন করবে, কারণ তারাু চীনের চারপাশে একটি ‹দ্বীপ শৃঙ্খল› তৈরি করে রেখেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা সম্প্রতি দাবি করেছেন যে, ২০২০ সালে ট্রাম্প ইইউ কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন দার লেয়েনকে বলেছিলেন যে, ইউরোপ আক্রমণের মুখে পড়লে যুক্তরাষ্ট মহাদেশটির সাহায্যে আসবে না। ট্রাম্প আরও বলেছিলেন, ‹যাই হোক, ন্যাটো এখন মৃত, এবং আমরা প্রস্থান করবো, আমরা নাটো ছাড়ব।›
‘ক্ষতিকারকদের’ প্রতি ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি বিবিধ, যা সুযোগ তৈরি করে। ট্রাম্প প্রশাসন ২০২০ সালে ইসরাইল এবং বেশ কয়েকটি আরব রাষ্ট্রের মধ্যে আব্রাহাম চুক্তির মধ্যস্থতা করতে সক্ষম হওয়ার পর, যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু এবং প্রতিপক্ষরা সম্ভবত সুবিধা পাওয়ার উদ্দেশে ট্রাম্পের হুমকি এবং পরিবর্তনশীল ‹চুক্তির’ জন্য পর্যায়ক্রমিক উন্মুক্ততা আশা করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি ইরান এবং এর মিত্রদের একটি আঞ্চলিক শান্তি চুক্তিতে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করতে পারেন।
২০১৯ সালে সীমান্ত পেরিয়ে উত্তর কোরিয়ায় ট্রাম্পের পা রাখার কথা ভাবুন, যা তিনি আগে পুড়িয়ে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন। সবচেয়ে সম্ভাব্য ফলাফল হল দেশটির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা। প্রতিপক্ষদের মধ্যে রাশিয়া পুতিনের প্রতি ট্রাম্পের প্রশংসার কারণে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের অপেক্ষা করতে পারে। ট্রাম্পের সাথে পূর্ববর্তী আলোচনা ভেস্তে যাওয়ায় এবং পারস্পরিক শত্রুতা এখন উভয় দেশের রাজনীতিতে চেপে বসায় চীনের প্রত্যাশা কম হবে। চীনের সাথে ‹স্থায়ী স্বাভাবিক বাণিজ্য সম্পর্ক’ স্থগিত করার জন্য শুল্ক ১০শতাংশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ট্রাম্প তাদের নাম ‘অপদার্থদের’ খাতায় লিখতে পারেন যে দেশগুলো আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র নয়, বা প্রতিপক্ষও নয়। যসব জায়গায় যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ কম, সেখানে দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে পড়েছে। সুদানের গৃহযুদ্ধ, আফ্রিকার সাহারা জুড়ে একটি নতুন ‹অভ্যুত্থান বেল্ট› এবং একটি নতুন আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধ এর উদাহরণ। একটি ট্রাম্প-শাসনামল বাণিজ্য থেকে মানবাধিকার পর্যন্ত সমস্ত বিষয়ে বৈশ্বিক শৃঙ্খলার আরও পতন অবলোকন করবে। দুর্বল দেশীয় প্রতিষ্ঠান সম্পন্ন দরিদ্রতম দেশগুলির জন্য এর অর্থ বিরোধের উচ্চ সম্ভাবনা। বৈশ্বিক সংস্থাগুলি খুব কমই এই ব্যবধান পূরণ করতে সক্ষম হবে।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
একই কেন্দ্রে ভোট দিলেন মোদি ও অমিত শাহ
ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির জন্য পুতিনের সঙ্গে শান্তি আলোচনার আহ্বান ইতালির
উপজেলা নির্বাচনের দিনে ভোটকেন্দ্রে না যেতে ভোটারদের প্রতি বিএনপির আহ্বান
বজ্রপাতে পদ্মা সেতুর টোলস্কেলের মাদারবোর্ডে ত্রুটি, ৩ কিলোমিটার যানজট
'ফ্রি প্যালেস্টাইন' স্লোগানে মুখরিত ইবি ক্যাম্পাস
যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই রাফায় কার্পেট বম্বিং ইসরাইলের
পরমাণু বোমা মেরে ভিয়েতনামকে ধ্বংস করতে ফ্রান্সকে প্রস্তাব দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র
কারওয়ান বাজার মেট্রোরেল স্টেশনের সামনে প্রাইভেট কারে আগুন
৯ মে হজ ফ্লাইট, এখনো ভিসা পাননি বেশিরভাগ হজযাত্রী
টাইম ম্যাগাজিনে ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় জাহিদ মালেক
কেন্দ্রে অনুপ্রবেশ, প্রভাব, অনিয়ম বন্ধে কড়া নির্দেশনা সিইসির
পশ্চিমা হুমকির জবাবে পারমাণবিক অস্ত্র মহড়া চালাবে রাশিয়া
আক্রমণের খুব কাছে রাফাহ, ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নিল ইসরায়েল
কাল মানিকগঞ্জে দুই উপজেলা নির্বাচন
সখিপুরে চেতনানাশক স্প্রে করে লুট
টেকনাফে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
রেনআই রিফ নিয়ে উস্কানিমূলক আচরণ বন্ধ করতে চীনের তাগিদ
বজ্রপাতের বিকট শব্দে মাদরাসার ১৯ শিক্ষার্থী অসুস্থ
জার্মানির স্কুলগুলোতে সহিংসতা বাড়ছে
ডোপ টেস্ট দিয়ে ভর্তি হতে হবে চবিতে