জার্মানির স্কুলগুলোতে সহিংসতা বাড়ছে
০৭ মে ২০২৪, ০১:১০ পিএম | আপডেট: ০৭ মে ২০২৪, ০১:১০ পিএম
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে জার্মানির স্কুলগুলো থেকে সহিংসতাসহ নেতিবাচক সংবাদ আসা বেড়েই চলেছে। যা জার্মানির শিক্ষা ব্যবস্থার উপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
২০২৩ এর ডিসেম্বরে, পিআইএসএ শিক্ষা র্যাঙ্কিংয়ে জার্মান ছাত্রদের গণিত ও পড়ায় পিছিয়ে পড়ার বিষয়টি উঠে আসে। ২০২৪ সালের ইয়ুথ স্টাডির জরিপ অনুসারে স্কুলগুলোতে ডিজিটালাইজেশনেরও যথেষ্ট ঘাটতি দেখা গেছে। সেখানে শিক্ষার্থীরা নিজেদের চাকরি খুঁজে পাওয়া ও বাস্তব জীবনের প্রতিকূলতার মুখোমুখি হওয়ার জন্য নিজেদের প্রস্তুত বলে মনে করছে না।
শুলবারোমিটার (স্কুল ব্যারোমিটার) নামে পরিচিত সংস্থার এপ্রিলে পরিচালিত সমীক্ষায় পাওয়া গেছে আরও উদ্বেগজনক ফলাফল। সেখানে উঠে আসে, প্রতি দুইজনের মধ্যে একজন শিক্ষক তার ছাত্রদের কাছ থেকে মানসিক বা শারীরিক সহিংসতা প্রত্যক্ষ করেছেন।
জরিপের জন্য এক হাজার ৬০০ জনেরও বেশি শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা রবার্ট বশ ফাউন্ডেশনের প্রাক্তন শিক্ষক এবং শিক্ষা গবেষণার প্রধান ডাগমার ওল্ফ বলেন, ‘‘আমরা একটি অসুস্থ ব্যবস্থার একটি খণ্ড চিত্র দেখছি।'' তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা উৎপীড়নের কথা বলছি, আমরা ভাঙচুরের কথা বলছি, তবে শারীরিক সংঘর্ষের কথাও বলছি, যার মধ্যে কিছু স্কুল সীমানার বাইরে পর্যন্ত চলে যায়।''
তিনি আরও বলেন, 'আমরা অভিভাবকদের জড়িত থাকার খবরও পেয়েছি। এটি অস্বাভাবিকের চেয়েও বেশি, তবে এমন নয় যে এটা আগে ঘটেনি।"
প্রাথমিক বিদ্যালয়েও সহিংসতা
সম্প্রতি ‘জাতীয় ধর্ষণ দিবসে' অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে টিকটকে ভাইরাল হওয়া একটি মিথ্যা প্রতিবেদনের জন্য বার্লিনের শিক্ষা মন্ত্রীকে আটশ বিদ্যালয়ে চিঠি পাঠিয়ে সতর্ক করতে হয়েছিল।
ভূ-রাজনৈতিক সংকট ও যুদ্ধেরও প্রভাব রয়েছে এতে। ওল্ফের মতে, স্কুল প্রশাসকেরা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহিংসতা দেখেছেন। এটি যে শুধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতেই হচ্ছে তা নয়। এমনকি ৬ থেকে ১০ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেও উৎপীড়ন ও হাতাহাতির ঘটনা বেড়েছে।
শরণার্থীদের একীভূত করা জার্মানির স্কুলগুলোর জন্য একটি কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডাগমার ওল্ফ বলেন, ‘‘গত দুই বছরে, আমরা ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা দুই লাখেরও বেশি শিশুকে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করেছি। এবং অন্যান্য দেশ থেকে আসা যেখানে বড় অর্থনৈতিক সমস্যা রয়েছে বা গৃহযুদ্ধ রয়েছে সেখানকারও শিক্ষার্থী রয়েছে। অবশ্যই, এটি পরিস্থিতিকে ১০ বছর আগের তুলনায় অনেক বেশি কঠিন করে তুলেছে, এমনকি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেও।''
স্মার্টফোন, কোভিড-১৯ নাটকীয় পরিবর্তন এনেছে
টরস্টেন মুলার (ছদ্মনাম) জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থ রাইন-ওয়েস্টফেলিয়ার একটি নামকরা স্কুলের একজন সমাজকর্মী। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন হয়েছে। তিনি শিক্ষার্থীদের চাপ, ক্লান্তি, অবসাদ বাড়ার জন্য স্মার্টফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকে দায়ী করেছেন।
তিনি বলেন, ‘‘এটি যোগাযোগের ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছে। তরুণরা নিজেদের চেয়ে অন্যের সম্পর্কে বেশি কথা বলে এবং যে কারণে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়। এছাড়া আমরা এখনও করোনভাইরাস মহামারীর পরবর্তী প্রভাবগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করছি। যা মানসিক অসুস্থতার পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে।''
কোভিড-১৯ মহামারীর সময় কয়েক মাস ধরে স্কুলগুলো বন্ধ রাখা সবচেয়ে বড় ভুল হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। সেসময় জার্মান ছাত্রদের ১৮০ দিনেরও বেশি সময় বাড়িতে থাকতে হয়েছিল, যা অনেক ইউরোপীয় দেশের তুলনায় অনেক বেশি।
প্রয়োজন আরও মনোবিজ্ঞানী, সমাজকর্মী
মুলার মনে করেন জার্মানির স্কুলগুলোকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য ছোট ক্লাস, পর্যাপ্ত শিক্ষক, সমাজকর্মী এবং মনোবিজ্ঞানীদের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা প্রয়োজন।
কিন্তু জার্মান শিক্ষক সমিতির সভাপতি স্টেফান ডুল আরও ভালো কিছু করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘মনোবিজ্ঞানী, প্রশাসনিক সহকারী ও যুব কর্মীদের পাশাপাশি আমাদের এমন অনেক লোক দরকার যারা জার্মান শেখাতে পারে। কিন্তু আমরা চাইলেই সহজে নিয়োগ করতে পারি না। চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে, কিন্তু শ্রমশক্তি কমে যাচ্ছে। এভাবে পুরো ব্যবস্থা চলতে পারে না।''
শিক্ষকদের মধ্যেও হতাশা বাড়ছে। তাদের শ্রেণীকক্ষে পড়ানোর চেয়ে দ্বন্দ্ব অবসানে মধ্যস্থতা করতে হচ্ছে বেশি। ‘স্কুল ব্যারোমিটার' এর জরিপ অনুসারে, তিনজনের মধ্যে একজন শিক্ষক প্রায়শই আবেগগতভাবে ক্লান্ত বোধ করেন এবং ২৭% বলেছেন যে তারা চাকরি ছেড়ে দেয়ার কথা ভেবেছেন। তাদের সবার কাছেই এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল শিক্ষার্থীদের আচরণ। সূত্র: ডিডাব্লিউ।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
এমপি আনোয়ারুল আজিমের ব্যবহৃত নম্বরটি খুলছেন আবার বন্ধ করছেন: ডিবি
লুটপাট করে গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে আ'লীগ: প্রিন্স
অ্যাকাডেমিক ব্যাংকিং সেবা ‘প্রাইমঅ্যাকাডেমিয়া’ চালু করলো প্রাইম ব্যাংক পিএলসি
বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ইউএইর সভাপতি মামুন সম্পাদক মুহাম্মদ মোরশেদ
পোশাকখাতের উন্নয়নে ইইউকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান বিজিএমইএর
দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও রিজার্ভ সংকট জাতির জন্য অশনি সংকেত: ১২ দলীয় জোট
সংকট গভীর হওয়ার আগেই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের স্থায়ী সমাধান জরুরি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত : চলছে অনুসন্ধান
পর্তুগাল বাংলা প্রেস ক্লাবে যুক্ত হলেন একদল নতুন সদস্য
কাল থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত দেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ
দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই : মহিলা ও শিশু প্রতিমন্ত্রী
মিডিয়ার কন্ঠরোধ করে দেশকে বাকশালের দিকে নিয়ে যাচ্ছে সরকার
ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ নিয়ে গবেষণা চলছে: বিএসএমএমইউ উপাচার্য
বৈষম্য কমিয়ে শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য মজুরিসহ অধিকার নিশ্চিত করতে হবে : ড. খলীকুজ্জমান
২৪ ঘন্টা থেকে সাত দিনের মধ্যে মৃত বীমা দাবি পরিশোধ করবে এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইনসুরেন্স কোম্পানি
বেগম সুফিয়া কামাল এবং কবি ও সাহিত্য সমালোচক আবদুল কাদির নানাভাবে দেশের শিল্প-সাহিত্যকে ঋদ্ধ করেছেন : সেলিনা হোসেন
কোরবানির গোস্ত দিয়ে কোন অনুষ্ঠান করে টেবিল বসিয়ে টাকা বা উপহার নেওয়া প্রসঙ্গে।
শিরোপার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা : শেষ ম্যাচে মাঠে নামছে সিটি-আর্সেনাল
কিরগিজস্তানে আহত বাংলাদেশি ছাত্রদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনুন
বিক্ষোভ, গাড়ি ভাঙচুর, অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া