ইসরাইলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত তুরস্কের
০৪ মে ২০২৪, ০১:০৫ এএম | আপডেট: ০৪ মে ২০২৪, ০১:০৫ এএম
গাজা উপত্যকায় ‘ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়’কে কারণ হিসেবে উল্লেখ করে ইসরাইলের সাথে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত করেছে তুরস্ক। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরাইল গাজায় ‘বাধাহীন ও যথেষ্ট পরিমাণ ত্রাণ প্রবাহ’ অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত এ পদক্ষেপ বহাল থাকবে। দেশ দুটির মধ্যে বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় সাত বিলিয়ন ডলার।
ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোগানকে ‘স্বৈরশাসক’ এর মতো আচরণের দায়ে অভিযুক্ত করেছেন। সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাৎয বলেছেন, এরদোগান ‘তুরস্কের জনগণ ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থকে অসম্মান করেছেন এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সমঝোতাকে উপেক্ষা করেছেন’। তিনি জানান যে, তিনি মন্ত্রণালয়কে ইতোমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছেন যে তুরস্কের সাথে বাণিজ্যের বিকল্প সন্ধান করতে যাতে স্থানীয় উৎপাদন এবং অন্য দেশ থেকে আমদানিতে জোর দেয়া হবে। অন্যদিকে এক বিবৃতিতে তুরস্ক জানিয়েছে যে, এই বাণিজ্য স্থগিত করার সিদ্ধান্ত সব ধরনের পণ্যের ক্ষেত্রেই কার্যকর হবে। ‘তুরস্ক কঠোরভাবে ও সন্দেহাতীতভাবেই নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে যতদিন পর্যন্ত ইসরাইল সরকার গাজায় বাধাহীন ও পর্যাপ্ত ত্রাণ প্রবাহের অনুমোদন না দেয়,’ বিবৃতিতে বলা হয়েছে। ১৯৪৯ সালে প্রথম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয় তুরস্ক। তবে সাম্প্রতিক দশকগুলোতে দেশ দুটির মধ্যকার সম্পর্কের অবনতি হয়েছে।
২০১০ সালে গাজায় তুরস্ক মালিকানাধীন জাহাজ ইসরাইলের সমুদ্রসীমা লঙ্ঘন করার সময় ইসরাইলি কমান্ডোদের সাথে সংঘর্ষে দশজন ফিলিস্তিনপন্থী তুর্কি অধিকারকর্মী নিহত হবার ঘটনায় তুরস্ক কূটনৈতিক সম্পর্কও ছিন্ন করেছিলো। পরে ২০১৬ সালে আবার দেশ দুটির মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনস্থাপন হয়। কিন্তু এর দুই বছরের মাথায় উভয় দেশ একে অন্যের শীর্ষ কূটনীতিককে বহিষ্কার করে গাজা সীমান্তে ইসরাইল কর্তৃক ফিলিস্তিনি নিহত হবার ঘটনায়।
গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি নিয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে সমালোচনা বাড়ছে। জাতিসংঘ সমর্থিত এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে গত মাসে এগার লাখ মানুষ তীব্রক্ষুধায় জর্জরিত ছিলো এবং এ মাসের মধ্যে গাজার উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজ বলেছে, গাজা উপকূলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী যে পিয়ার নির্মাণ করেছে ত্রাণ প্রবাহ বাড়ানোর জন্য সেটি কয়েকদিনের মধ্যেই উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। ভাসমান ওই পিয়ারে নৌযান ও লোকজনের কাজের ছবিও প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তার কাছেই নৌবাহিনীর জাহাজ ছিলো। যদিও জাতিসংঘ বলেছেন সামুদ্রিক করিডোর কখনো স্থলপথে ত্রাণ সরবরাহের বিকল্প হতে পারে না। আর সড়কপথ হলো একমাত্র উপায় যেখানে একসাথে অনেক পরিমাণ ত্রাণ নেয়া যায়। এর আগ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর বারংবার অনুরোধের প্রেক্ষাপটে চলতি সপ্তাহে গাজার উত্তরাঞ্চলে ত্রাণ সরবরাহের জন্য ইসরাইল ইরেয ক্রসিং আবার খুলে দিয়েছে।
তবে জর্ডান বলেছে তাদের কিছু ত্রানবাহী লরি ওই ক্রসিং পার হওয়ার সময় ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের হামলার শিকার হয়েছে। জাতিসংঘের রিপোর্ট বলছে গাজার মানবিক বিপর্যয় একটি মানব সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সিনিয়র কর্মকর্তা ভলকার তুর্ক বিবিসিকে বলেছেন যে এটা এখন ‘বিশ্বাসযোগ্য’ যে ইসরাইল ক্ষুধাকে গাজা যুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
এদিকে, জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরাইলের হামলায় গাজার যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে কমপক্ষে ৮০ বছর লেগে যাবে। আর গাজা পুনর্গঠনে খরচ হবে ৪০ বিলিয়ন ডলার। জর্ডানের রাজধানী আম্মানে বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব ও ইউএনডিপির পরিচালক আব্দাল্লাহ আল দারদারি আরো জানিয়েছেন, ইসরাইলের আগ্রাসনের ফলে গাজার আবাসিক ভবনে ৭২ শতাংশই পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির হিসাব মতে এই পুনর্গঠনে ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি লাগবে, কোনো ক্ষেত্রে তা ৪০ বিলিয়ন ডলারও ছাড়িয়ে যেতে পারে।’
রাফায় ইসরাইলের আসন্ন ‘গণহত্যা’ নিয়ে হুঁশিয়ারি জাতিসংঘের : অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার রাফা শহরে ইসরাইলি অনুপ্রবেশ কয়েক লাখ ফিলিস্তিনির জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে, জাতিসংঘের সংস্থা ওসিএইচএর মুখপাত্র জেনস লায়েরকে বলেছেন। গতকাল রাফায় একটি বাড়িতে বোমা হামলা চালিয়ে চার শিশুসহ সাতজনকে হত্যা করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে ২৬ জন নিহত ও ৫১ জন আহত হয়েছে। ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ৩৪,৬২২ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৭৭,৮৬৭ জন আহত হয়েছে। ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলায় ইসরাইলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১,১৩৯ জন যেখানে কয়েক ডজন মানুষ এখনও বন্দী রয়েছে।
সহিংসতায় জড়িত ইসরাইলিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ব্রিটেনের : ‘চরমপন্থী ইসরাইলি গোষ্ঠী’ এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে সহিংসতায় জড়িত থাকা বেশ কয়েকজন ব্যক্তির ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গতকাল এক বিবৃতিতে এ ঘোষণা দিয়েছে। ‘নিষেধাজ্ঞার এই সর্বশেষ প্যাকেজটি এই হামলার নেতৃত্বদানকারী দুটি গ্রুপকে এবং চার ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে যারা ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে গুরুতর সহিংসতার জন্য সরাসরি দায়ী,’ এতে বলা হয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ইসরাইলি কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দমন করতে হবে। সূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বাংলাদেশ পুলিশের অত্যাচারী আচরণের নতুন ভিডিও ফাঁস
সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে মামলা
আজ ছোট পর্দায় মুক্তি পাবে নাটক 'হোয়াট এ বৌ'
পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের ছবি সরিয়ে ফেললেন ভারতের সেনাপ্রধান
বরিশাল ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড অ্যলায়েড সায়েন্সেস চিকিৎসা সেবায় ব্যাপক অবদান রাখছে
হাসিনাকে নিয়ে ‘সম্ভাব্য ঝুঁকি’তে সচেতন ছিলেন না টিউলিপ এটি ‘দুঃখজনক’ : লরি ম্যাগনাস
শেখ পরিবার একটি চোরের কারখানা’
অব্যাহতি পাওয়া এসআইদের আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতা মামুন
জিমি কার্টারের প্রতি ৩০ দিনের শোকাবস্থা উপেক্ষা করে ট্রাম্পের পতাকা উত্তোলন
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা: খালেদা-তারেকসহ সব আসামি খালাস
টিউলিপের জায়গায় নিয়োগ পেলেন এমা রেনল্ডস
পদত্যাগপত্রে টিউলিপ সিদ্দিক যা লিখেছেন
টিউলিপের পদত্যাগ ইস্যুতে প্রেস উইংয়ের বিবৃতি
আজ বায়ুদূষণের শীর্ষে কায়রো, ঢাকার অবস্থান ৬ নম্বরে
মেয়ের বাড়ি থেকে ফেরার পথে লাশ হলো "মা"!
মীরসরাইয়ে মুন্না খুনের ঘটনায়, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক বহিষ্কার
দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন গ্রেফতার
আজ সারদায় ৪৮০ এসআইয়ের সমাপনী কুচকাওয়াজ
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৬৩ জন ফিলিস্তিনি, মানবিক সংকট চরমে
ছাগলকাণ্ডের সেই মতিউর ও তার স্ত্রী গ্রেফতার