মেরুকরণই হাতিয়ার মোদির!
১৮ মে ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৮ মে ২০২৪, ১২:০১ এএম
নির্বাচনী প্রচারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী যেভাবে মেরুকরণকে হাতিয়ার করছেন, তা অভাবনীয়। ভোটে নগ্নভাবে ধর্মের কার্ড খেলার জন্য বম্বে হাই কোর্ট একদা বাল ঠাকরে ও তার চিকিৎসক রমেশ প্রভুর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছিল। কিন্তু তা থেকে শিক্ষা কতটা নিয়েছে রাজনীতির জগৎ?
ব্যক্তিগত চিকিৎসক রমেশ প্রভুর হয়ে ভোট চাইতে গিয়ে হিন্দু-মুসলমান বিভাজন করার চেষ্টা করেছিলেন প্রয়াত শিবসেনা প্রধান বাল ঠাকরে। এই অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ছয় বছরের জন্য ভোটাধিকার হারিয়েছিলেন তিনি। ঠাকরেকে এই ধরনের বিভাজনমূলক প্রচারে বাধা না দেয়ায় প্রভুও ছয় বছরের জন্য ভোটাধিকার এবং ভোটে প্রার্থী হওয়ার অধিকার হারান। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক ভোটপ্রচারের উল্লেখ করে ইতিমধ্যেই বালাসাহেবের পুত্র উদ্ধব ঠাকরে প্রশ্ন তুলেছেন, কেন নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে একইরকম শাস্তির ব্যবস্থা করবে না নির্বাচন কমিশন?
১৯৮৭ সালে মহারাষ্ট্রের একটি উপনির্বাচনে ডা. রমেশ প্রভু প্রার্থী হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন বাল ঠাকরের ব্যক্তিগত চিকিৎসক। প্রভুর প্রচারে ঠাকরে নগ্নভাবে হিন্দুত্বের কার্ড খেলেছিলেন। যদিও ওই কেন্দ্রে কোনও মুসলিম প্রার্থী ছিলেন না, তবুও ঠাকরে মন্তব্য করেছিলেন, প্রভুর পরাজয় হলে হিন্দুদের বিপদ হবে। ঠাকরের বিভাজনমূলক মন্তব্যের বিরুদ্ধে বম্বে হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী প্রভাকর কুন্তে। বম্বে হাই কোর্ট প্রভুর নির্বাচন বাতিল করেছিল এবং ঠাকরের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিল। মামলা সুপ্রিম কোর্টে গড়ায়। ১৯৯৫ সালে একটি ঐতিহাসিক নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট বম্বে হাই কোর্টের রায়কে বহাল রাখে।
তিন দশক আগে সুপ্রিম কোর্টের করা এই পর্যবেক্ষণ যে ভারতের রাজনৈতিক নেতারা বিস্মৃত হয়েছেন, তা এবারের নির্বাচনী প্রচারে বোঝাই যাচ্ছে। প্রথম দফার ভোটের পর মোদি তার প্রচারে যেভাবে মেরুকরণের হাতিয়ার প্রয়োগ করছেন, তা অভাবনীয়। উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলিতে একই দিনে অল্প সময়ের ব্যবধানে চারটি সভায় মোদি প্রকাশ্যে হিন্দু-মুসলমান বিভাজনের রাজনীতি করেছেন বলে অভিযোগ। খোদ প্রধানমন্ত্রীর মুখে এই ধরনের ভাষা অনেককেই বিস্মিত করেছে। কংগ্রেসের ইস্তাহারে কোথাও বলা নেই যে এসসি, এসটি ও ওবিসিদের শিক্ষা এবং সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ তুলে দিয়ে ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ চালু করা হবে। অথচ, ১৯৯৫ সালে করা কর্নাটক সরকারের একটি সিদ্ধান্তকে তুলে এনে মোদি সভায় বলেছেন, কংগ্রেস ওবিসিদের সংরক্ষণ মুসলিমদের দিয়ে দেবে। এক তৃণমূল বিধায়কের করা একটি বিতর্কিত ভাষণকে সামনে এনে তিনি সভায় এ রাজ্যের হিন্দুদের অবস্থা নিয়ে মন্তব্য করেছেন। যা স্তম্ভিত করেছে সবাইকে।
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন কেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসব বিভাজন সৃষ্টিকারী প্রচারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে না, সেই প্রশ্ন খুব জোরালোভাবে উঠতে শুরু করেছে। মোদি দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে যখন প্রচারে বলেছিলেন কংগ্রেস বড়লোকদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে মুসলিমদের মধ্যে বণ্টন করে দেবে, তখন তার বিরুদ্ধে ঘৃণাভাষণের অভিযোগ এনে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানায় সিপিএম। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন সামান্য ভর্ৎসনার রাস্তাতেও যায়নি। কমিশনের পক্ষ থেকে একটি শোকজের চিঠি পাঠানো হয়েছিল শুধুমাত্র বিজেপি সভাপতির কাছে।
গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে কমিশনের নিরপেক্ষ অবস্থান জরুরি। এবারের ভোটের গোড়া থেকেই কমিশনের নিরপেক্ষতা রক্ষার প্রশ্নটি সামনে এলেও পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি। যেভাবে কমিশনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঘৃণাভাষণ চলছে, তা অবশ্যই ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক কাঠামোটিকে রক্ষার ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। সুপ্রিম কোর্টের আশা ছিল, বাল ঠাকরের মতো নেতার ছ’বছরের জন্য ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া সব রাজনৈতিক নেতাকে শিক্ষা দেবে। শীর্ষ আদালতের সেই আশা যে দুরাশাই, তা বার বার প্রমাণিত হয়ে চলেছে।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
শৈলকুপায় আ’লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ২০
আগামী জাতীয় নির্বাচন নিবন্ধিত সব দল নিয়েই হবে: সিইসি
বিভাগ সংস্কারে আন্দোলনে ইবি শিক্ষার্থীরা
কালের কণ্ঠ বিতর্ক: যা বললেন শিবির সেক্রেটারি
জাতিগতভাবে আমরা একটু বেশি জাজমেন্টাল: তাহসান খান
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায়
আখাউড়ায় আসার পর কাপলিং ভাঙ্গলো উপকুল এক্সপ্রেসের
‘কালের কণ্ঠের ভূমিকা নিয়ে অবগত ছিলাম না’, ফাতেমার দুঃখ প্রকাশ
পুতুলকে দৌড়ের উপর রেখে ভারতকে কী বার্তা দিতে বললেন পিনাকী
সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বিএসএফের
বার্মিংহামের সিরাজাম মুনিরায় ১৪ জানুয়ারি ফুলতলী ছাহেব (রহ.) এর ঈসালে সাওয়াব মাহফিল
নিকলীতে ভুট্টা চাষে আশার স্বপ্ন বুনেছে কৃষক
জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশের দাবিতে লক্ষ্মীপুরে লিফলেট বিতরণ
মেঘনা নদীতে দুই স্পিডবোটের সংঘর্ষে নিহত ৩, নিখোঁজ ১
হবিগঞ্জের সড়কে প্রাণ গেল তিন নারী পোশাক শ্রমিকের
বরিশালে জাতীয় মহাসড়কের ওপর নির্মিত পাক অপসারণে নগর ভবনকে সড়ক অধিদপ্তরের চিঠি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হাতাহাতি, আহত ৩
দুইবার আবেদন করেও দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় মাল্টার নাগরিকত্ব পায়নি তারিক সিদ্দিকের পরিবার
মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
এবি পার্টির জাতীয় কাউন্সিল শুরু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে