যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তন করে দিচ্ছে মিয়ানমারের তরুণ বিদ্রোহীরা

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

২৪ মে ২০২৪, ১২:২১ এএম | আপডেট: ২৪ মে ২০২৪, ১২:২১ এএম

 নিজের সমান আকৃতির দু’টো বিশাল স্পিকার বহন করে পাথুরে পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে যান বহনকারী। প্রায় ৮০০ মিটার নীচে পাসাং শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মিয়ানমারের সেনা ঘাঁটি। সেদিনের তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে। কিন্তু সেই তীব্র গরমকে উপেক্ষা করে আরও কিছু তরুণ যোদ্ধা বাঁশের খুঁটিতে করে বড় ও ভারী ব্যাটারি প্যাক ও অ্যামপ্লিফায়ার পরিবহন করছিলেন। সেই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন প্রাক্তন সেনা ক্যাপ্টেন নে মায়ো জিন। তিনি ১২ বছর সেনাবাহিনীতে ছিলেন। গাঢ় সবুজ রঙ্গের ক্যামোফ্লেজ জ্যাকেটটিকে এক কাঁধে জড়িয়ে মঞ্চে ওঠেন তিনি। নিচের ঘাঁটিতে থাকা ক্ষমতাসীন সামরিক বাহিনীর প্রতি অনুগত সৈন্যদেরকে পক্ষ পরিবর্তনের অনুরোধ করা তার মূল লক্ষ্য। মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলের কারেনি রাজ্যের এই গভীর জঙ্গলে দুই দলের মাঝে গত কয়েক দশক ধরে লড়াই চলছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্রোহীরা যে দ্রুতগতিতে সাফল্য পাচ্ছে, তা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে তারা বেশ কিছু দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় এই দেশ এখন একটি জটিল পরিস্থিতির মাঝে রয়েছে। কারণ কয়েক দশকের সামরিক শাসন এবং নৃশংস দমন-পীড়নের পর দেশটির নৃগোষ্ঠী ও তরুণ বিদ্রোহীদের নিয়ে গঠিত নতুন সেনাবাহিনী মিয়ানমারের স্বৈরশাসনকে একটি সংকটের পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। গত সাত মাসে দেশটির অর্ধেক থেকে দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা প্রতিরোধের মুখে পড়েছে। ২০২১ সালে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর থেকে বহু শিশুসহ কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ২৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। শুধু তাই নয়, সামরিক বাহিনী তার শাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। এই অবস্থায় বিদ্রোহীদেরকে ব্যর্থ করার জন্য তারা নিয়মিত যুদ্ধবিমান থেকে বেসামরিক মানুষ, স্কুল এবং গির্জায় বোমা বর্ষণ করছে। নে মায়ো জিন তার সাউন্ড ইকুইপমেন্ট চালু করার আগে নিচ থেকে সেনাবাহিনী তার ওপর গুলি চালায়। তিনি তখন মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে চিৎকার করে সবার উদ্দেশে বলেন, “সবাই যুদ্ধ বন্ধ করুন! দয়া করে যুদ্ধে বিরতি দিন। শুধুমাত্র পাঁচ মিনিট, ১০ মিনিট শুনুন আপনারা।” কিছুটা আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে তার এই কথা শুনে সেনাবাহিনী থেমে যায়। এরপর তিনি তাদেরকে মিয়ানমারের উত্তরের শান রাজ্যে বিরোধীদের কাছে আত্মসমর্ণকারী চার হাজার সেনার কথা বলেন এবং দেশটির রাজধানী নেপিডোতে সামরিক ভবনগুলোর ওপর হওয়া সাম্প্রতিক ড্রোন হামলার কথাও উল্লেখ করেন। মূল বার্তা হলো— আমরা জয়ী হচ্ছি। আপনার শাসনের পতন হচ্ছে। ইস্তফা দেয়ার সময় হয়েছে। এখানে পাসাং ও কারেনি রাজ্য সহ দেশটির বেশিরভাগ অঞ্চল জুড়ে যুদ্ধ ও অচলাবস্থা চলছে। কারণএমন এক বিদ্রোহ দানা বেঁধেছে, যা সামরিক জান্তার শাসনকে হুমকির মুখে ফেলেছে। ২০২১ সালের সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটির সামরিক বাহিনী পুনরায় ক্ষমতা দখল করে নেয় এবং তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সুচিকে কারাগারে বন্দি করা হয়। তবুও এই বিষয়টি নিয়ে বিশ্বে তেমন কোনও আলোচনা হচ্ছে না। কারণ বিশ্বের সব মনোযোগ এখন ইউক্রেন এবং ইসরাইল-গাজা সংঘাতের ওপর। মিয়ানমারে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বলে কোনও বিষয় নেই। বিদেশি সাংবাদিকরা সেখানে সরকারিভাবে প্রবেশ করতে পারে না বললেই চলে এবং যদি কেউ যায়, তাহলে তাদেরকে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়। সরকার যেসব ক্ষেত্রে অনুমতি দেয়, সেসব ক্ষেত্রে বিদ্রোহীদের বিষয়গুলো শোনার উপায় নেই। বিবিসি।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বাইডেন প্রশাসনের শেষ সময়ে বড় পদক্ষেপ, চিকিৎসা ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি পেল সাধারণ মানুষ
তিব্বতে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২৬, নিখোঁজ অনেকে
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৫ শিশুসহ ৪৯ ফিলিস্তিনি নিহত
ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে লস অ্যাঞ্জেলেস
ফ্রান্সের উগ্র ডানপন্থী রাজনীতিবিদ মারি লা পেনের মৃত্যু
আরও

আরও পড়ুন

পলিটিক্যাল প্রশ্ন করবেন না: রজনীকান্ত

পলিটিক্যাল প্রশ্ন করবেন না: রজনীকান্ত

মোংলায় ১১ কেজি হরিণের মাংসসহ ৬ চোরাচালানকারীকে আটক করেছে কোস্ট গার্ড

মোংলায় ১১ কেজি হরিণের মাংসসহ ৬ চোরাচালানকারীকে আটক করেছে কোস্ট গার্ড

বাইডেন প্রশাসনের শেষ সময়ে বড় পদক্ষেপ, চিকিৎসা ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি পেল সাধারণ মানুষ

বাইডেন প্রশাসনের শেষ সময়ে বড় পদক্ষেপ, চিকিৎসা ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি পেল সাধারণ মানুষ

সীমান্ত পেরিয়ে মৈত্রী ! দিল্লি কি অবশেষে ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক সহজ করতে চাইছে?

সীমান্ত পেরিয়ে মৈত্রী ! দিল্লি কি অবশেষে ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক সহজ করতে চাইছে?

বিজিএমইএর প্রশাসকের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা, হাইকোর্টে রিট

বিজিএমইএর প্রশাসকের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা, হাইকোর্টে রিট

সুদের টাকা আদায়ে ঝগড়া ফেরাতে একজন খুন, আহত চার

সুদের টাকা আদায়ে ঝগড়া ফেরাতে একজন খুন, আহত চার

সালথায় কলেজ ছাত্রকে হাতুড়িপেটা

সালথায় কলেজ ছাত্রকে হাতুড়িপেটা

বাংলাদেশের ভেতরে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ বিএসএফের, দু’দিন ধরে উত্তেজনা চলছে

বাংলাদেশের ভেতরে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ বিএসএফের, দু’দিন ধরে উত্তেজনা চলছে

পঙ্গু হাসপাতালে আগুন, ফায়ার সার্ভিস যাওয়ার আগেই নির্বাপণ

পঙ্গু হাসপাতালে আগুন, ফায়ার সার্ভিস যাওয়ার আগেই নির্বাপণ

কত তারিখে কোথায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির জনসংযোগ

কত তারিখে কোথায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির জনসংযোগ

তিব্বতে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২৬, নিখোঁজ অনেকে

তিব্বতে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২৬, নিখোঁজ অনেকে

খালেদা জিয়া দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন : মির্জা ফখরুল

খালেদা জিয়া দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন : মির্জা ফখরুল

বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করলেন জামায়াত আমির

বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করলেন জামায়াত আমির

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৫ শিশুসহ ৪৯ ফিলিস্তিনি নিহত

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৫ শিশুসহ ৪৯ ফিলিস্তিনি নিহত

প্রত্যর্পণের চাপের মধ্যেই হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়াল ভারত

প্রত্যর্পণের চাপের মধ্যেই হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়াল ভারত

বগুড়ার টপ টেরর যুবলীগ নেতা আলহাজ শেখ গ্রেপ্তার

বগুড়ার টপ টেরর যুবলীগ নেতা আলহাজ শেখ গ্রেপ্তার

ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে লস অ্যাঞ্জেলেস

ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে লস অ্যাঞ্জেলেস

সাতক্ষীরায় অপহৃত তরুণী উদ্ধার, যুবদল নেতাসহ গ্রেপ্তার দুই

সাতক্ষীরায় অপহৃত তরুণী উদ্ধার, যুবদল নেতাসহ গ্রেপ্তার দুই

পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে ইইউর সহায়তা চাইলেন- পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে ইইউর সহায়তা চাইলেন- পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিদেশ সফর, দেশবাসীর নিকট দোয়া চাইলেন কায়কোবাদ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিদেশ সফর, দেশবাসীর নিকট দোয়া চাইলেন কায়কোবাদ