জাতিসংঘ আদালতের রায়

আর ঘোষণা নয়, পদক্ষেপ চান ফিলিস্তিনিরা

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক :

২৬ মে ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ২৬ মে ২০২৪, ১২:০৮ এএম

ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) অভিযানে নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে রাফায় আশ্রয় নেওয়া ফিলিস্তিনি নারী সালওয়া আল-মাসরি মনে করেন, গত ৭ মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজার ফিলিস্তিনিরা যে দুর্দশার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন- জাতিসংঘ আদালতের রায়ে তার পরিবর্তন ঘটার তেমন সম্ভাবনা নেই। উত্তর গাজার বাসিন্দা সালওয়া আল-মাসরির শরণার্থী জীবনের শুরু গত ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর অভিযান শুরুর পর। ইসরাইলি বাহিনীর বোমা থেকে প্রাণ বাঁচাতে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিদের মতো সালওয়াও নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত শহর রাফায় আশ্রয় নেন। বর্তমানে শহরের দেইর আল বালাহ এলাকয় একটি অস্থায়ী শিবিরে থাকছেন সালওয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা।

শুক্রবার জাতিসংঘভিত্তিক আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর অভিযান বন্ধের আদেশ দিয়ে রায় দেন। শরণার্থী শিবিরে নিজেদের তাঁবুর বাইরে খোলা আকাশের নিচে রান্নারত সালওয়া রয়টার্সকে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এ রায় একদম সঠিক এবং সময়োপযোগী। তবে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এসব সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন দেখতে চাই, কার্যকর পদক্ষেপ চাই। কারণ, যতই দিন যাচ্ছে, গাজায় নিহতের সংখ্যা বাড়ছে।’

গত ডিসেম্বরে জাতিসংঘের আদালতে গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর অভিযান বন্ধের আর্জি জানিয়ে মামলা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। গত মাসে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু রাফায় সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা ঘোষণা দেন। মে মাস থেকে রাফায় অভিযান শুরু করে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী।

এদিকে, বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ঘোষণার পর অভিযান বন্ধে আবেদন করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে শুক্রবার এক রায়ে রাফায় অভিযান বন্ধ করার আদেশ দেন জাতিসংঘ আদালত। তবে আদালতের এ রায় প্রত্যাখ্যান করে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার নেতৃত্বাধীন যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্যরা বলেছেন, হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের উদ্ধার করতে রাফায় অভিযান চালানো জরুরি। গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জন মানুষকে হত্যা করে হামাস যোদ্ধারা। সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় ২৪২ জনকে। জবাবে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী, যা এখনও চলছে। গত সাত মাসের যুদ্ধে গাজায় ইতোমধ্যে ৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭০ হাজার। হতাহতদের ৫৬ শতাংশই নারী এবং শিশু। এছাড়া বাড়িঘর হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখ লাখ ফিলিস্তিনি।

ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় গত সাত মাসে চারবার বাস্তুচ্যুত শাবান আবদুর রউফ রয়টার্সকে বলেন, ‘ইসরাইল বৈশ্বিক জনমতকে পাত্তা দেয় না। মার্কিন প্রশাসন সবসময় তাদের পাশে আছে, তাই নিজেদের বরাবরই আইনের উর্ধ্বে বলে মনে করে ইসরাইল।’ ‘আর দুঃখজনক হলেও সত্য হলো- ইসরাইলি বাহিনীর হাতে নিহত হওয়া থেকে ফিলিস্তিনিদের বাঁচানোর জন্য বিশ্ব এখনও প্রস্তুত নয়।’ গাজায় ক্ষমতাসীন ইসলামপন্থি সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে।

তবে এক বিবৃতিতে গোষ্ঠীটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর অভিযান বন্ধে এই রায় যথেষ্ট নয়। রাফায় আশ্রয় নেওয়া আরেক ফিলিস্তিনি নাবিল দিয়াব বলেন, ‘আমরা অতীতেও এমন অনেক ঘোষনা শুনেছি যেগুলো কেবল ঘোষণাই থেকে গেছে। তাই এখন আর সিদ্ধান্ত বা ঘোষণা নয়, আমরা বাস্তব পদক্ষেপ দেখতে চাই।’ সূত্র : রয়টার্স।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ট্রাম্প-মাস্কের বন্ধুত্বে চিড়! অভিবাসন নীতি নিয়ে দ্বন্দ্ব তুঙ্গে
ভারতে বড়দিন উদযাপন করায় ২ নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে যৌন নিপীড়ন-মারধর
জুতার জন্য চাকরি হারিয়ে পেলেন ৪৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ!
বিশ্বকে হতভম্ব করে ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান প্রদর্শন চীনের
মনমোহন সিংয়ের মৃত্যুতে শোকবার্তা বাইডেনের
আরও

আরও পড়ুন

ফিরে দেখা ২০২৪: ফুটবলে ঘটনাবহুল বছর

ফিরে দেখা ২০২৪: ফুটবলে ঘটনাবহুল বছর

সচিবালয়ে অস্থায়ী প্রবেশ পাসের জন্য বিশেষ সেল গঠন

সচিবালয়ে অস্থায়ী প্রবেশ পাসের জন্য বিশেষ সেল গঠন

বিএনপির দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে লিপ্ত হলে কাউকে ছাড় নয়: শাহ সুলতান খোকন

বিএনপির দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে লিপ্ত হলে কাউকে ছাড় নয়: শাহ সুলতান খোকন

দেশে এলো ভিভোর নতুন ফ্ল্যাগশিপ এক্স২০০

দেশে এলো ভিভোর নতুন ফ্ল্যাগশিপ এক্স২০০

পাবনার আমিনপুরে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে আগুন, শঙ্কিত পরিবার

পাবনার আমিনপুরে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে আগুন, শঙ্কিত পরিবার

টোল প্লাজায় দুর্ঘটনা: বাসের ব্রেকে সমস্যা ছিল, চালক নেশা করতেন

টোল প্লাজায় দুর্ঘটনা: বাসের ব্রেকে সমস্যা ছিল, চালক নেশা করতেন

দেশের বিরাজমান সংকট উত্তরণে জাতির আস্থা তারেক রহমান : মীর হেলাল

দেশের বিরাজমান সংকট উত্তরণে জাতির আস্থা তারেক রহমান : মীর হেলাল

বিরক্তিকর সময়কে গুডবাই বলুন! এন্টি ডোট হিসেবে সেরা অ্যাপ (পর্ব-১)

বিরক্তিকর সময়কে গুডবাই বলুন! এন্টি ডোট হিসেবে সেরা অ্যাপ (পর্ব-১)

পিরোজপুর প্রেসক্লাব নির্বাচন শামীম সভাপতি ও তানভীর সম্পাদক

পিরোজপুর প্রেসক্লাব নির্বাচন শামীম সভাপতি ও তানভীর সম্পাদক

৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামোর বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে: আমিনুল হক

৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামোর বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে: আমিনুল হক

আখাউড়ায় বাসের ধাক্কায় অটোচালক নিহত

আখাউড়ায় বাসের ধাক্কায় অটোচালক নিহত

২০২৬ সালের এসএসসির সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ও মানবণ্টন প্রকাশ

২০২৬ সালের এসএসসির সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ও মানবণ্টন প্রকাশ

ইনসাফ কায়েমকারী ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ১৩ দফা দাবিতে মানববন্ধন

ইনসাফ কায়েমকারী ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ১৩ দফা দাবিতে মানববন্ধন

বিপিএলে অনিশ্চিত মাশরাফি

বিপিএলে অনিশ্চিত মাশরাফি

বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাই বিপিএল তারকা: আফ্রিদি

বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাই বিপিএল তারকা: আফ্রিদি

মানিকগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

মানিকগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

হেলিকপ্টার বিলাস নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ও উপদেষ্টা আসিফের কৈফিয়ত

হেলিকপ্টার বিলাস নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ও উপদেষ্টা আসিফের কৈফিয়ত

উত্তরার তুরাগে নোহা গাড়ির ধাক্কায় নারীর মৃত্যু

উত্তরার তুরাগে নোহা গাড়ির ধাক্কায় নারীর মৃত্যু

ট্রাম্প-মাস্কের বন্ধুত্বে চিড়! অভিবাসন নীতি নিয়ে দ্বন্দ্ব তুঙ্গে

ট্রাম্প-মাস্কের বন্ধুত্বে চিড়! অভিবাসন নীতি নিয়ে দ্বন্দ্ব তুঙ্গে

নুরানী বোর্ডের ফলাফল প্রকাশ পাসের হার ৮৫.২৫ শতাংশ

নুরানী বোর্ডের ফলাফল প্রকাশ পাসের হার ৮৫.২৫ শতাংশ