নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্য পূরণে অনিশ্চয়তা

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৫ এএম | আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৫ এএম

গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রয়েছে আবহাওয়া পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক লড়াই। এ বিষয়ে বিভিন্ন দেশ ও ফোরামের রয়েছে সাহসী অঙ্গীকার। তা সত্ত্বেও কপ২৮ আবহাওয়া সম্মেলনে দেয়া নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি কতটা পূরণ হবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ওই সময় পক্ষগুলো বলেছিল, ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য জ্বালানি সক্ষমতা তিন গুণ হবে, যা প্রাক-শিল্প পরবর্তী বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখতে সাহায্য করবে। সাম্প্রতিক বছরে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ গ্রীষ্মে ইউরোপ, এশিয়া ও উত্তর আমেরিকাজুড়ে রেকর্ড তাপমাত্রা দেখা যাচ্ছে। এ সময়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে মিশ্র চিত্র দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাজ্যের এনার্জি ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৩ সালে বিশ্বে মোট জ্বালানির মধ্যে ৮১ দশমিক ৫ শতাংশ দখলে রেখেছিল কয়লা, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি। অন্যদিকে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ ও রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও নবায়নযোগ্য খাতে হিস্যা সামান্য বেড়ে ১৪ দশমিক ৬ শতাংশে পৌঁছে। এ মন্থরগতি সম্পর্কে সতর্ক করে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) বলছে, চলমান নীতি ও প্রবণতা অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য জ্বালানি সক্ষমতা তিন গুণের পরিবর্তে প্রায় দ্বিগুণ হতে চলেছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে অনেক দেশ নীতি প্রণয়ন ও কর্মসূচি চালু করেছে। আরইপাওয়ারইইউ অনুসারে ইউরোপীয় ইউনিয়নে মোট জ্বালানির মধ্যে নবায়নযোগ্য অংশ ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৫ শতাংশে উন্নীত হবে। এর অংশ হিসেবে নবায়নযোগ্য হাইড্রোজেন উৎপাদন বছরে এক কোটি টনে উন্নীত হবে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি হ্রাস আইনের আওতায় বায়ু, সৌর, জলবিদ্যুৎ ও ইভি অন্যান্য নবায়নযোগ্য প্রযুক্তিতে কর প্রণোদনা চালু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৫ সাল নাগাদ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন ৫০ শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়েছে চীন। নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব পাচ্ছে সৌর খাত। এ খাতে বিনিয়োগ ও সরবরাহ বাড়ার পাশাপাশি দাম কমেছে সৌর প্যানেলের। দুবাইভিত্তিক ইয়েলো ডোর এনার্জির গ্রুপ চিফ এক্সিকিউটিভ জেরেমি ক্রেন জানান, বর্তমানে নবায়নযোগ্য খাতে সৌর প্যানেলের আধিপত্য চলছে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রণোদনা সফল হলে উৎপাদন আরো বাড়বে। তবে সৌর সরঞ্জামের বর্তমান কম খরচ কতদিন বজায় থাকবে তার ভবিষ্যদ্বাণী করা খুব কঠিন। সোলার ফটোভোলটাইক্সের (পিভি) বিশ্বব্যাপী খরচ কমিয়ে আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীন। কিন্তু এ খাতে বেইজিংয়ের আধিপত্য কমাতে পশ্চিমা তৎপরতা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। দেশীয় শিল্প রক্ষায় মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। এতে সেমিকন্ডাক্টর ও সোলার সেলের ওপর শুল্ক ৫০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি ও স্টিলের মতো অন্যান্য কৌশলগত পণ্যের ওপর নতুন ২৫ শতাংশ শুল্ক চালু করেছে। ইইউ-কানাডাও একই ধরনের শুল্ক আরোপ করেছে পরবর্তী সময়ে। তবে ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও একমাত্র সৌরশক্তিই নবায়নযোগ্য উৎস, যা ২০৫০ সালের নিট শূন্য লক্ষ্য পূরণের পথে রয়েছে, গত বছরের এক প্রতিবেদনে বলেছে আইইএ। বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ কমাতে অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত বায়ু শক্তি সাম্প্রতিক বছরগুলোয় উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও সরবরাহ চেইনসংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছে। তবে নরওয়েভিত্তিক পরামর্শক সংস্থা রিস্টাড এনার্জি জানিয়েছে, এ খাতে ২০২৩ সালে আগের বছরের তুলনায় নতুন শক্তি উৎপাদন সক্ষমতা ৭ শতাংশ বেড়েছে। চলতি বছর সক্ষমতা ৯ শতাংশ বেড়ে ১১ গিগাওয়াটের বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর শিল্পের কারণে পুরনো ক্লিন এনার্জিতে রূপান্তর এখনো জটিল একটি প্রক্রিয়া। ক্লিন এনার্জিনির্ভর প্রযুক্তির ক্রমাগত রূপান্তর ও বিকাশের মাঝেও ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি জানিয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির বৈশ্বিক চাহিদা সর্বোচ্চ হবে। এ বাস্তবতায় জ্বালানি তেল উৎপাদক গোষ্ঠী ওপেকের মহাসচিব হাইথাম আল ঘাইস জুলাইয়ের এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সামনেও শক্তির উৎস হিসেবে গুরুত্ব পাবে জ্বালানি তেল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পেট্রোলিয়াম পণ্যগুলো বিদ্যুৎসহ অন্যান্য খাতের জন্য অপরিহার্য উপাদান। তাই জ্বালানি উৎসগুলোকে পরস্পরের বিরুদ্ধে দাঁড় না করিয়ে এর বাস্তব প্রয়োজন ও আন্তঃসম্পর্ক বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা নিতে পারেন নীতিনির্ধারকরা।’ বর্তমানে বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের প্রায় এক-পঞ্চমাংশের কারণ জ্বালানি তেল ও গ্যাস শিল্প। এ অবস্থার পরিবর্তনে মিথেন হ্রাস, কার্বন ক্যাপচার ও সাশ্রয়ী জ্বালানির বিকাশে জ্বালানি তেল জায়ান্টের পাশাপাশি বড় কিছু রাষ্ট্রচালিত সংস্থায়ও অগ্রাধিকার দিচ্ছে। অনেক কোম্পানি ক্লিন এনার্জির অস্থায়ী সমাধান হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর তাদের মনোযোগ বাড়াচ্ছে। একে প্রায়ই কয়লা ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চেয়ে কম দূষণকারী বিকল্প হিসেবে দেখা হয়। আইইএর পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৫ সাল থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস প্রকল্প বাড়তে পারে, যা ২০৩০ সাল নাগাদ বার্ষিক ২৫ হাজার ঘন মিটারের বেশি নতুন সক্ষমতা যোগ করবে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ সতর্ক করেছেন, প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর নির্ভরতা ক্লিন এনার্জির দিকে দীর্ঘমেয়াদি রূপান্তরকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। দ্য ন্যাশনাল।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

সংস্কারের ৩১দফায় তারেক রহমান শিক্ষকদের অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন  - ডা. মাজহার

সংস্কারের ৩১দফায় তারেক রহমান শিক্ষকদের অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন - ডা. মাজহার

৪৩তম বিসিএসের ২৬৭ জনকে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন

৪৩তম বিসিএসের ২৬৭ জনকে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন

মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্ম জয়ন্ত ও মধুমেলা উপলক্ষে আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক সভা

মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্ম জয়ন্ত ও মধুমেলা উপলক্ষে আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক সভা

পাকিস্তানের সামরিক আদালতের বিচারকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন

পাকিস্তানের সামরিক আদালতের বিচারকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন

রেকর্ড ও পরিসংখ্যানের আয়নায় তামিম

রেকর্ড ও পরিসংখ্যানের আয়নায় তামিম

আমরা বিগত ১৮ বছর আওয়ামী জাহেলিয়াতের যুগ পার করেছি- মাওলানা এ টি এম মা’ছুম

আমরা বিগত ১৮ বছর আওয়ামী জাহেলিয়াতের যুগ পার করেছি- মাওলানা এ টি এম মা’ছুম

টঙ্গীতে নূরুল ইসলাম সরকারের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও মহাসড়ক অবরোধ

টঙ্গীতে নূরুল ইসলাম সরকারের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও মহাসড়ক অবরোধ

দোয়ারাবাজারে সেনাবাহিনীর শীতবস্ত্র বিতরণ

দোয়ারাবাজারে সেনাবাহিনীর শীতবস্ত্র বিতরণ

ক্যাম্পাস সমূহ র‌্যাগিং ও মাদকমুক্ত রাখতে হবে: প্রফেসর ড. মাছুমা

ক্যাম্পাস সমূহ র‌্যাগিং ও মাদকমুক্ত রাখতে হবে: প্রফেসর ড. মাছুমা

নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে নবীনদের বরণ করে নিলো শহীদ নূর আলী কলেজ

নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে নবীনদের বরণ করে নিলো শহীদ নূর আলী কলেজ

ঈশ্বরগঞ্জে শহীদ পরিবার ও আহতদের মাঝে আর্থিক সহায়তা

ঈশ্বরগঞ্জে শহীদ পরিবার ও আহতদের মাঝে আর্থিক সহায়তা

ডনবাসের তিনটি এলাকা মুক্ত করেছে রাশিয়া

ডনবাসের তিনটি এলাকা মুক্ত করেছে রাশিয়া

মার্চের মধ্যে সাড়ে ৪ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হবে: পরিবহন উপদেষ্টা

মার্চের মধ্যে সাড়ে ৪ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হবে: পরিবহন উপদেষ্টা

খনন ফিল্ডে প্রত্নতাত্ত্বিক তারিখ নির্ধারন সংক্রান্ত মাঠ কর্মশালা

খনন ফিল্ডে প্রত্নতাত্ত্বিক তারিখ নির্ধারন সংক্রান্ত মাঠ কর্মশালা

বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ফরিদপুরে যুব সমাবেশ

বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ফরিদপুরে যুব সমাবেশ

ফ্যাসিস্ট দোসর তাপসকে হঠাৎ হিরো বানানোর চেষ্টা!

ফ্যাসিস্ট দোসর তাপসকে হঠাৎ হিরো বানানোর চেষ্টা!

আ’লীগের নিবন্ধন থাকবে কি না সময় বলে দিবে: সিইসি

আ’লীগের নিবন্ধন থাকবে কি না সময় বলে দিবে: সিইসি

সিনিয়র জুনিয়র দ্বন্দ্ব ব্যাডমিন্টন খেলা নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ৪ নিহত ১

সিনিয়র জুনিয়র দ্বন্দ্ব ব্যাডমিন্টন খেলা নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ৪ নিহত ১

দিনাজপুরের প্রখ্যাত লেখক, গবেষক ও সাঁওতাল লোকসংস্কৃতিবিদ গণেশ সরেন আর নেই

দিনাজপুরের প্রখ্যাত লেখক, গবেষক ও সাঁওতাল লোকসংস্কৃতিবিদ গণেশ সরেন আর নেই

ফ্যাসিস্টরা জয়ী হলে ২ লাখ মানুষকে জেলে যেতে হতো : প্রেস সচিব

ফ্যাসিস্টরা জয়ী হলে ২ লাখ মানুষকে জেলে যেতে হতো : প্রেস সচিব