নতুন শীতলযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ এএম

এ বছরের আগস্টে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাটকীয়ভাবে ক্ষমতা হারানোয় দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক আবহাওয়ায় অস্থিতিশীলতার বাতাস লেগেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দক্ষিণ এশিয়ার এ অঞ্চলগুলোর রাজনীতি এখন বৈশ্বিক ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে বলে তাদের ধারণা। বিশেষ করে এ অঞ্চলে মার্কিন উপস্থিতি একটি স্নায়ুযুদ্ধের ইঙ্গিত দিচ্ছে। যার সঙ্গে ভারতও অগ্রসর হচ্ছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতা হারিয়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন শেখ হাসিনা। ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি’র এক খবরে বলা হয়েছে, হাসিনা অভিযোগ করেছেন যে- তিনি দেশ ছাড়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাননি। তাকে একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। এ সময়ের মধ্যে তিনি দেশ ছেড়ে দিল্লিতে চলে যান। হাসিনার দাবি- ‘আমি পদত্যাগ করেছি। কারণ আমি লাশের সারি দেখতে চাই না। তারা ছাত্রদের লাশ মাড়িয়ে ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি তা হতে দেইনি। আমি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। আমি ক্ষমতায় থাকতে পারতাম যদি আমি সেন্টমার্টিন দ্বীপের সার্বভৌমত্ব আত্মসমর্পণ করতাম এবং আমেরিকাকে বঙ্গোপসাগরের উপর কর্তৃত্ব করতে দিতাম। আমি আমার দেশের জনগণের কাছে অনুরোধ করছি, দয়া করে মৌলবাদীদের দ্বারা প্রতারিত হবেন না।’ যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হাসিনার এই অভিযোগ গুরুতর। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে হাসিনার এই অভিযোগ একাধিকবার প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। তবে হাসিনার এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। দ্য লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সের ওয়েবসাইটে ‘সাউথ এশিয়া: নেভিগেটিং দ্য নিউ কোল্ড ওয়ার’- শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, হাসিনার এই বক্তব্য দক্ষিণ এশিয়ার শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনে ‘বিদেশি হস্তক্ষেপের’ ধারণাকে পুনরুজ্জীবিত করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর যেখানেই রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতার পরিবর্তন হচ্ছে সেখানেই এমন বিদেশি হস্তক্ষেপের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। যেমন, ২০২২ সালে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করার পরও এর সঙ্গে বিদেশি গোয়েন্দাদের (মার্কিন গোয়েন্দা) হাত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। বর্তমানে দুর্বল হয়ে পড়া জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (এনএএম) শীতল যুদ্ধের সময় দক্ষিণ এশিয়ার সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির কিছু স্তরে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল। এই জোট পরাশক্তিগুলোর মধ্যে উত্তেজনা নিরসনে কাজ করেছিল এবং তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রতিরোধে সহায়তা করেছিল। জোটের অনেক অপারগতা থাকা সত্ত্বেও এনএএম কম এগিয়ে থাকা রাষ্ট্রগুলোকে সম্মিলিত পরিচয় এবং কোনো পরাশক্তির সাহায্য ছাড়াই মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়া এখন চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের নিজ নিজ মিত্রদের মধ্যে একটি নতুন শীতল যুদ্ধের ঝুঁকিতে রয়েছে। পরাশক্তি রাষ্ট্রগুলোর পক্ষপাতিত্ব বেছে নিতে এখন যে চাপের মধ্যে পড়েছে এই অঞ্চল তাতে এসব রাষ্ট্রের সম্প্রীতি ও স্থিতিশীলতা হুমকির দ্বারপ্রান্তে। দক্ষিণ এশিয়ার বেশক’টি দেশ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আফগানিস্তান থেকে শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ এবং অতি সমপ্রতি বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা এর বড় প্রমাণ। স্নায়ুযুদ্ধ যুগের মতো, বন্ধুত্বহীন সরকার উৎখাত করে সেখানে অকার্যকর নেতাদের বসানো পরাশক্তিগুলোর জন্য আঞ্চলিক রাজনীতি গঠন এবং তাদের স্বার্থ রক্ষায় কৌশলগত হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। এই কৌশলের মাধ্যমে প্রায়ই কাক্সিক্ষত ফলাফল অর্জনের জন্য পরাশক্তিগুলো সাইবার যুদ্ধ, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং বিভ্রান্তিমূলক প্রচারাভিযান সহ আরও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পদ্ধতির আশ্রয় নেয়। চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি পরিবর্তনকারী একটি খেলায় পরিণত হয়েছে। পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং সমপ্রতি মালদ্বীপে চীনের অর্থনৈতিক পদচিহ্ন এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপকে নতুন আকার দিয়েছে। যা এখন ভারতের আঞ্চলিক প্রভাবকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এনডিটিভি।

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

হবিগঞ্জের সড়কে প্রাণ গেল তিন নারী পোশাক শ্রমিকের

হবিগঞ্জের সড়কে প্রাণ গেল তিন নারী পোশাক শ্রমিকের

বরিশালে জাতীয় মহাসড়কের ওপর নির্মিত পাক অপসারণে নগর ভবনকে সড়ক অধিদপ্তরের চিঠি

বরিশালে জাতীয় মহাসড়কের ওপর নির্মিত পাক অপসারণে নগর ভবনকে সড়ক অধিদপ্তরের চিঠি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হাতাহাতি, আহত ৩

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হাতাহাতি, আহত ৩

দুইবার আবেদন করেও দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় মাল্টার নাগরিকত্ব পায়নি তারিক সিদ্দিকের পরিবার

দুইবার আবেদন করেও দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় মাল্টার নাগরিকত্ব পায়নি তারিক সিদ্দিকের পরিবার

মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

এবি পার্টির জাতীয় কাউন্সিল শুরু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

এবি পার্টির জাতীয় কাউন্সিল শুরু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

মায়ের জন্য রান্না করা খাবার নিয়ে হাসপাতালে তারেক রহমান

মায়ের জন্য রান্না করা খাবার নিয়ে হাসপাতালে তারেক রহমান

রাজশাহীতে এবেলা ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

রাজশাহীতে এবেলা ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

লোহিত সাগরে হুথিদের হামলায় পিছু হটল মার্কিন যুদ্ধজাহাজ

লোহিত সাগরে হুথিদের হামলায় পিছু হটল মার্কিন যুদ্ধজাহাজ

আশুলিয়ায় মেরামতের নাম করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে

আশুলিয়ায় মেরামতের নাম করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে

'বিয়ের গন্ডগোল' নিয়ে জোভান–তটিনী আত্মপ্রকাশ

'বিয়ের গন্ডগোল' নিয়ে জোভান–তটিনী আত্মপ্রকাশ

ভারতে বসে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন ফ্যাসিস্টের দোসর আলাউদ্দিন নাসিম

ভারতে বসে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার চেষ্টা করছেন ফ্যাসিস্টের দোসর আলাউদ্দিন নাসিম

রুশ জ্বালানিখাতে আবারও যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা

রুশ জ্বালানিখাতে আবারও যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা

সিরিয়ার দামেস্কের মসজিদে পদদলিত হয়ে নিহত ৪ জন

সিরিয়ার দামেস্কের মসজিদে পদদলিত হয়ে নিহত ৪ জন

কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসছে লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল

কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসছে লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল

খাদ্য পরিস্থিতির ওপর নিয়মিত নজর রাখতে পুনর্গঠন হলো এফপিএমসি

খাদ্য পরিস্থিতির ওপর নিয়মিত নজর রাখতে পুনর্গঠন হলো এফপিএমসি

দেশে অস্তিত্বহীন দলবাজরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করছে: জয়নুল আবদিন ফারুক

দেশে অস্তিত্বহীন দলবাজরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করছে: জয়নুল আবদিন ফারুক

ফরিদপুরে যুবককে কুপিয়ে ও চোখ উপড়ে হত্যা

ফরিদপুরে যুবককে কুপিয়ে ও চোখ উপড়ে হত্যা

ভারতে কারাভোগ শেষে দেশে ফিরলেন ১২ বাংলাদেশি

ভারতে কারাভোগ শেষে দেশে ফিরলেন ১২ বাংলাদেশি

লন্ডন ক্লিনিকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সবশেষ যা জানা গেল

লন্ডন ক্লিনিকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সবশেষ যা জানা গেল