মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ আটকে দিয়েছে চীনের বাণিজ্য রুট
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
দক্ষিণ-পশ্চিম ভারত মহাসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত হতে মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে বাণিজ্য রুট তৈরিতে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে চীন। এ উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের লক্ষ্য হলো, মিয়ানমারের পাশাপাশি বহির্বিশ্বের সঙ্গে নতুন রুটে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার ও বাণিজ্য সহজতর করা। কিন্তু ২০২১ সালের সেনা অভ্যুত্থানের পর শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধ সে পরিকল্পনাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে। একই সঙ্গে মিয়ানমারের শাসক ও বিদ্রোহীদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে গিয়ে তৈরি হয়েছে উভয় সংকট। চীনের সঙ্গে মিয়ানমারের সীমানা প্রায় দুই হাজার কিলোমিটারের। এ সীমান্ত হয়ে যোগাযোগ চীনের জন্য অত্যাবশ্যক, তাই বাণিজ্য করিডোর স্থাপনে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে দেশটি। আলোচিত বাণিজ্য রুটে গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত শহর হলো চীনের ইউনান প্রদেশের রুইলি ও মিয়ানমারের মিউজ। বেইজিংয়ের অর্থায়নে নির্মিত চীন-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোরের দৈর্ঘ্য প্রায় ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার। বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি, অবকাঠামো ও বিরল খনিজ সংগ্রহের ক্ষেত্রে রুটটি চীনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ করিডোরের কেন্দ্রস্থলে হয়েছে রেলপথ, যা চীনের ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিং থেকে মিয়ানমারের পশ্চিম উপকূলে কেয়াকফিউয়ে চীনের নির্মাণাধীন গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত। বঙ্গোপসাগরের তীরের এ বন্দর রুইলি ও এর বাইরে শিল্পপণ্যকে ভারত মহাসাগর ও তারপর বিশ্ব বাজারে প্রবেশের সুযোগ দেবে। বন্দরটি জ্বালানি তেল ও গ্যাস পাইপলাইনের সূচনাবিন্দুও, যা মিয়ানমার হয়ে ইউনানে জ্বালানি পরিবহন করবে। গত কয়েক বছরে করিডোরটি মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। রুইলির সীমান্ত একসময় বাঁশের বেড়ার মতো সাধারণ বাধা দিয়ে সীমানা চিহ্নিত হলেও এখন কাঁটাতার, নজরদারি ক্যামেরাসহ উঁচু ধাতব বেড়া দিয়ে সুরক্ষিত। এর আগে মহামারীর বিধিনিষেধ সীমান্তজুড়ে চলাচল সীমিত করেছিল, আর এখন মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের তীব্রতা স্থানীয়দের পারস্পরিক নির্ভরশীল অর্থনৈতিক অবস্থাকে আরো খারাপ দিকে নিয়ে গেছে। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, সামরিক জান্তা ও বিদ্রোহী বাহিনী উভয়ের ওপরই চীনের প্রভাব রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি পক্ষগুলোর মধ্যে যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে বেইজিং। এর জবাবে সীমান্তে সামরিক মহড়া বাড়িয়েছে এবং মিয়ানমারের নেতৃত্বের কাছে উদ্বেগের কথা জানাতে কূটনীতিক পাঠিয়েছে চীন। বেইজিংয়ের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়লে সম্প্রতি বিদ্রোহী বাহিনী লাশিও শহরে ঢুকে পড়ে, এটিই এখন পর্যন্ত তাদের সবচেয়ে বড় বিজয়। আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের মিয়ানমার বিষয়ক পরামর্শক রিচার্ড হরসির মতে, ‘লাশিওর পতন মিয়ানমারের সেনা ইতিহাসে সবচেয়ে অপমানজনক পরাজয়ের একটি।’ এ সাফল্য সত্ত্বেও বিদ্রোহীরা মিউজের দিকে হাত বাড়ায়নি। এর একমাত্র কারণ হলো, সম্ভবত চীনকে বিরক্ত করবে এমন পদক্ষেপ নিতে চায় না তারা। রিচার্ড হরসি বলেন. ‘মিউজে লড়াই হলে তা চীনের বিনিয়োগকে প্রভাবিত করবে।০চীন কয়েক মাস ধরে সেখানে পুনরায় কাজ শুরুর আশা করছিল। মিয়ানমার সরকার উত্তরের শান রাজ্যের প্রায় পুরোটিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। এখন মিউজ বাদ রয়েছে, যা রুইলির ঠিক পাশে অবস্থিত।’ মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শুরু থেকে কৌশলগত অবস্থান নিয়েছে চীন। জান্তারা অং সান সু চিকে ক্ষমতা থেকে সরতে বাধ্য করার পর চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতেই জোর দিয়েছে বেশি। এ কারণে অভ্যুত্থানের নিন্দা করতে অস্বীকার করেন এবং মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জন্য অস্ত্র বিক্রি অব্যাহত রাখেন। কিন্তু মিন অং হ্লাইংকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে স্বীকৃতি দেননি বা তাকে চীনে আমন্ত্রণ জানাননি। এ গৃহযুদ্ধ যত দীর্ঘ হবে চীনের জন্য ক্ষতি বাড়বে। আবার সেনা শাসনের পতন হলে এ অঞ্চলে বিশৃঙ্খলা নতুন রূপ নেবে। কারণ মিয়ানমারের ওপর এ বাণিজ্য রুট শুধু অর্থনীতি প্রভাবিতই নয়, বৃহত্তর ভূরাজনৈতিক কৌশল হিসেবেও চীনকে ধরে রাখতে হবে। বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বিমানে ‘ঘুমিয়ে’ ছিলেন বাইডেন : সেনাদের লাশ পেতে অপেক্ষায় স্বজনরা
ভারতে পণ আইন নিয়ে বিতর্ক, এক ব্যক্তির আত্মহত্যা ঘিরে আলোড়ন
ভারত সীমান্তের শূন্যরেখায় পড়ে ছিল বাংলাদেশির গুলিবিদ্ধ লাশ
এক্সপ্রেসওয়েতে কভার্ডভ্যান ও প্রাইভেটকার সংঘর্ষে নারী নিহত, আহত ৫
ব্রাজিলে বাড়ির ওপর বিমান বিধ্বস্ত, সব যাত্রী নিহত
চুয়াডাঙ্গার রামদিয়ায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে একজনকে হত্যা, আহত ৫
চীনের নতুন বাঁধ প্রকল্পে তিব্বতিদের প্রতিবাদ,দমন-পীড়ন ও গ্রেফতার
গাজীপুরে চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় যুবকের মৃত্যু
সউদীতে এক সপ্তাহে ২০ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার
শহীদ মিনারে ছাত্র আন্দোলনে নিহত আরাফাতের জানাজা বিকালে
নিউইয়র্ক সাবওয়েতে নারীকে পুড়িয়ে হত্যা
ঘনকুয়াশার কারণে ৭ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৫০
আওয়ামী পন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপি নেতার মতবিনিময়
পরিসংখ্যান ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শরিফুলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ
আ.লীগের দোসর সালাম আলী এখন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী!
ঘুস নেওয়ার অভিযোগ, টিউলিপ সিদ্দিককে যুক্তরাজ্যে জিজ্ঞাসাবাদ
তালাক নিয়ে যুক্তরাজ্যে যেতে চান বাশার আল-আসাদের স্ত্রী
গভীর রাতে মেসে ছাত্রীদের বিক্ষোভ, মালিকের দুই ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস