ঢাকা   শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৯ পৌষ ১৪৩১

মিয়ানমারে সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগ : এক বিধবার কষ্টের গল্প

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক :

১২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম

২০২১ সালে মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটি গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।এর মধ্যে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে,সামরিক জান্তা বাধ্যতামূলকভাবে সেনা নিয়োগের ঘোষণা দেয়,যার ফলে সারা দেশ থেকে লাখ লাখ পুরুষ ও নারীকে সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে।এর মধ্যে চাও সু নামে এক বিধবা তার স্বামীকে হারিয়েছেন।তার স্বামী সেনাবাহিনীতে নিয়োগ পাওয়ার পর সম্মুখযুদ্ধে নিহত হন। তার হৃদয়বিদারক গল্পটি মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতির এক মর্মান্তিক চিত্র তুলে ধরে। চাও সু, ২৫ বছর বয়সী এক বিধবা,মার্চ মাসে তার স্বামীকে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেওয়ার পর শেষবারের মতো তাদের দেখা হয়েছিল।তিনি জানান তার স্বামীকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য বাধ্য করা হয়েছিল, এবং পরে তিনি কেরেন রাজ্যে যুদ্ধের সম্মুখভাগে গিয়ে নিহত হন।চাও সু আরও বলেন, আমরা সবসময় দরিদ্র ছিলাম এবং সংগ্রাম করতাম, কিন্তু তিনি ছিলেন আমার জীবনের শক্তি। তার স্বামীকে হারানোর পর,এখন তিনটি ছোট শিশুকে নিয়ে একা অসহায় অবস্থান দিন যাপন করছেন। তার স্বামীর যুদ্ধে নিহত হওয়ার খবর পাওয়ার পর তার জীবন পুরোপুরি বদলে যায়। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বাধ্যতামূলক সেনা নিয়োগ শুরু করে,যেখানে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী পুরুষ এবং ১৮ থেকে ২৭ বছর বয়সী নারীদের দুই বছর পর্যন্ত সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে বলা হয়।সামরিক জান্তা ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছিল এবং দেশজুড়ে প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়ে একদিকে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে এবং অন্যদিকে সেনা নিয়োগ প্রক্রিয়া জোরদার করেছে।এপ্রিল মাসে প্রথম প্রশিক্ষণ শিবির শুরু হয়, এবং এরপর থেকে সেনাবাহিনীতে যোগদান করা নাগরিকদের যুদ্ধের অগ্রভাগে পাঠানো হয়। চাও সু জানিয়েছেন, তার স্বামী যখন সেনাবাহিনীতে নিয়োগ পান,তখন তারা প্রথমে কিছু টাকা পান,তবে পরে কোনো সাহায্য কিংবা বেতন আর পাননি। জান্তা কর্তৃপক্ষ দাবি করে যে, নিয়োগপ্রাপ্ত সেনাদের মৃত্যুর পর ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা থাকলেও,বাস্তবে প্রক্রিয়া জটিলতার কারণে তা বিলম্বিত হচ্ছে। প্রায় একই পরিস্থিতিতে আছেন আরো অনেক পরিবার,যারা তাদের প্রিয়জনদের সম্পর্কে কোনো তথ্য পান না।সোসো আয়ে নামক এক বিধবা বলেন,তিনি তার ছেলে সম্পর্কে ৬ মাস ধরে কোনো খবর পাননি,যে কিনা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য হয়েছিল। এদিকে, সেনাবাহিনীতে নিয়োগ পাওয়ার পর যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই সেনাবাহিনীর প্রতি ঘৃণা বেড়ে গেছে।ক্যান হতো লুইন নামে এক তরুণ সেনা বাহিনীতে যোগ দিয়ে পরে পালিয়ে যান।তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ ছিল অত্যন্ত কঠিন, এবং আমাদের বলা হয়েছিল যে, কেউ যদি পালিয়ে যায়, তাদের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু‘ তিনি সুযোগ পেলেই পালিয়ে যান এবং পরে প্রতিবিপ্লবী গ্রুপে যোগ দেন। তার মতে,অনেক তরুণ বিক্ষোভের অংশ হয়ে দাঁড়াচ্ছেন,কারণ তারা জান্তা শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। মিয়ানমারের মহিলারাও এই পরিস্থিতিতে প্রভাবিত হচ্ছেন। যুউযুউ নামক এক তরুণী, যিনি চীনা ভাষায় অনুবাদক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন,সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন।তিনি বলেন, ্রআমার লক্ষ্য এখন একটাই, সামরিক শাসনের অবসান ঘটানো,।” একদিকে মিয়ানমারের সাধারণ মানুষ দুঃখ-দুর্দশা সহ্য করছে, অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডে পালিয়ে যাওয়া মিয়ানমারের নাগরিকরা সেখানে অল্প মজুরিতে শ্রমের কাজ করছেন।মিন মিন নামক এক প্রকৌশলী, যিনি থাইল্যান্ডে পালিয়ে গেছেন,তিনি জানান, আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে আমি অবৈধভাবে থাকতে হবে,আর তখন আমি কোথাও কাজ পাবো কিনা জানি না। চাও সু বর্তমানে গ্রামে নানা কাজ করে কোনোরকমে তিনটি শিশুকে লালন-পালন করছেন, তবে তার আয় তা-ও পর্যাপ্ত নয়। বিবিসি।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

তিউনিসিয়ায় দুই নৌকাডুবিতে ২৭ অভিবাসীর মৃত্যু
লাস ভেগাসে সাইবারট্রাক বিস্ফোরণ: বিশেষ বাহিনীর সেনার আত্মহত্যা
দ.কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউনকে গ্রেপ্তার অভিযানের প্রস্তুতি, বিক্ষোভে উত্তাল দেশ
গাজায় চিকিৎসা সংকট সমাধানে ডব্লিউএইচও প্রধানের আহ্বান
ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় নিহত আরও ৭১ ফিলিস্তিনি
আরও

আরও পড়ুন

থেমে থাকা কাভার্ড ভ্যানের পেছনে বাসের ধাক্কায় এক্সপ্রেসওয়েতে নিহত ২, আহত ৫

থেমে থাকা কাভার্ড ভ্যানের পেছনে বাসের ধাক্কায় এক্সপ্রেসওয়েতে নিহত ২, আহত ৫

সোমবার লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া

সোমবার লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া

৭ বিয়ে নিয়ে যা বললেন সোহেল তাজ

৭ বিয়ে নিয়ে যা বললেন সোহেল তাজ

তিউনিসিয়ায় দুই নৌকাডুবিতে ২৭ অভিবাসীর মৃত্যু

তিউনিসিয়ায় দুই নৌকাডুবিতে ২৭ অভিবাসীর মৃত্যু

লাস ভেগাসে সাইবারট্রাক বিস্ফোরণ: বিশেষ বাহিনীর সেনার আত্মহত্যা

লাস ভেগাসে সাইবারট্রাক বিস্ফোরণ: বিশেষ বাহিনীর সেনার আত্মহত্যা

৮ ডিগ্রিতে নামলো তেঁতুলিয়ার তাপমাত্রা, বাড়ছে জনদুর্ভোগ

৮ ডিগ্রিতে নামলো তেঁতুলিয়ার তাপমাত্রা, বাড়ছে জনদুর্ভোগ

আরিচা-কাজিরহাট ফেরি ৬ ঘণ্টা পর আবার চলাচল শুরু

আরিচা-কাজিরহাট ফেরি ৬ ঘণ্টা পর আবার চলাচল শুরু

আজিমপুর কবরস্থানে চাঁদাবাজি, বিএনপি নেতা বহিষ্কার

আজিমপুর কবরস্থানে চাঁদাবাজি, বিএনপি নেতা বহিষ্কার

দ.কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউনকে গ্রেপ্তার অভিযানের প্রস্তুতি, বিক্ষোভে উত্তাল দেশ

দ.কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউনকে গ্রেপ্তার অভিযানের প্রস্তুতি, বিক্ষোভে উত্তাল দেশ

ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে ঢাবিতে বিক্ষোভ

ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে ঢাবিতে বিক্ষোভ

গাজায় চিকিৎসা সংকট সমাধানে ডব্লিউএইচও প্রধানের আহ্বান

গাজায় চিকিৎসা সংকট সমাধানে ডব্লিউএইচও প্রধানের আহ্বান

ঢাবি শিবিরের নতুন সভাপতি ফরহাদ, সেক্রেটারি মহিউদ্দিন

ঢাবি শিবিরের নতুন সভাপতি ফরহাদ, সেক্রেটারি মহিউদ্দিন

ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় নিহত আরও ৭১ ফিলিস্তিনি

ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় নিহত আরও ৭১ ফিলিস্তিনি

ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে দাবি আদায়ে তুমুল যুদ্ধ: অবশেষে সংস্কারের আশ্বাস দিলেন এডিএম

ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে দাবি আদায়ে তুমুল যুদ্ধ: অবশেষে সংস্কারের আশ্বাস দিলেন এডিএম

সীতাকুণ্ডে হাত-পায়ের রগ কেটে শ্রমিক দল নেতাকে হত্যা

সীতাকুণ্ডে হাত-পায়ের রগ কেটে শ্রমিক দল নেতাকে হত্যা

আমরা একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই: হাসনাত আবদুল্লাহ

আমরা একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই: হাসনাত আবদুল্লাহ

যুবদল কর্মী হত্যার ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যাচার ও শিবির সভাপতির উপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ

যুবদল কর্মী হত্যার ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যাচার ও শিবির সভাপতির উপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ

এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ

এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ

টাঙ্গাইলে ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

টাঙ্গাইলে ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

শিক্ষা ও গবেষণায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার

শিক্ষা ও গবেষণায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার