ঢাকা   শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩ পৌষ ১৪৩১

মোদী সরকারের নীতিতে বেশি লাভবান হয়েছে ভারতের পাঁচ বৃহৎ গোষ্ঠী

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

০২ এপ্রিল ২০২৩, ০৩:২০ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৫৫ পিএম

ভারতীয় অর্থনীতিতে বৃহৎ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাধান্য বেশি। দেশের বাণিজ্যে বৃহৎ গোষ্ঠীগুলির বড় অংশীদারিত্ব আছে। কিন্তু এটা অর্থনীতির জন্য ঠিক নয়। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন ডেপুটি গভর্নর ভিরাল আচারিয়া যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্রুকিংস ইন্সটিটিউশনের এক নতুন গবেষণা পত্রে এ কথা বলেছেন।

রিলায়েন্স, আদানি, টাটা, আদিত্য বিড়লা এবং ভারতী এয়ারটেল – যদি এই পাঁচটি বৃহৎ শিল্প গোষ্ঠীর ২০২১ সালের অবস্থার দিকে তাকানো যায়, তাহলে দেখা যাবে যে আর্থিক ক্ষেত্রের বাইরে তাদের সম্পত্তির অংশীদারিত্ব প্রায় ১৮ শতাংশে পৌঁছে গেছে। ১৯৯১ সালে এর পরিমাণ ছিল দশ শতাংশ। ভিরাল আচারিয়া বলছেন, ‘এই সংস্থাগুলো যে শুধু ছোট ছোট সংস্থাকে শেষ করে দিয়ে নিজেরা বড় হয়েছে, তা নয়। এই পাঁচটি সবথেকে বড় সংস্থা নিজেদেরও ক্ষতি করেই বড় হয়েছে। বাজারে এই সংস্থা পাঁচটির অংশীদারিত্ব ১৮ শতাংশ থেকে কমে নয় শতাংশ হয় গেছে।’

গবেষণা পত্রে লিখেছেন আচারিয়া লিখেছেন, ‘যদি আমরা চাই যে ভারতে ব্যবসা বাণিজ্যে প্রতিযোগিতা বাড়ুক আর বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলি তাদের উৎপাদিত পণ্য বা পরিষেবা বেশি দামে না বিক্রি করে, তাহলে ওই বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীগুলির আকার ছোট করতে হবে।’ বর্তমানে নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টার্ন স্কুল অব বিজনেসের অর্থনীতির অধ্যাপক আচারিয়ার মতে, ১৯৯১ সালে অর্থনীতির উদারীকরণের পর থেকেই ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল কনসেন্ট্রেশন’ কমে আসছিল।

‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল কনসেন্ট্রেশন’ এমন একটা অবস্থা, যেখানে দেশের মোট উৎপাদনের ওপরে কয়েকটি মাত্র সংস্থা আধিপত্য বিস্তার করে ফেলে। তবে ২০১৫ সালের পর থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল কনসেন্ট্রেশন আবারও বাড়তে শুরু করেছে। অধ্যাপক আচারিয়ার মতে এর পেছনে একাধিক কারণ আছে। বড় সংস্থাগুলো যেমন সমস্যায় পড়া ছোট সংস্থা কিনে নেয়া বা অধিগ্রহণ করার ক্রমবর্ধমান আকাঙ্ক্ষা যেমন একটা কারণ, তেমনই আবার সরকারের পক্ষ থেকে এমনভাবেই শিল্পনীতি তৈরি করা হয়, যাতে বড় সংস্থাগুলোকেই সরকারী প্রকল্পগুলো ভাগ করে দেয়া যায়। আবার ওইসব বড় সংস্থাগুলো তাদের উৎপাদিত পণ্য বা পরিষেবার মূল্য অকল্পনীয় ভাবে কম রাখে, আর সরকারী নিয়ন্ত্রক এজেন্সিগুলো সাধারণত এসব না দেখার ভান করে।

ভিরাল আচারিয়া লিখছেন, ‘এই প্রবৃত্তি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে ক্রোনি ক্যাপিটালিজম তৈরি হয়, যেখানে রাজনৈতিক সম্পর্ককে ব্যবহার করে ব্যবসায়িক প্রকল্প যোগাড় করে ফেলা যায়।’ এই অবস্থায় কর্পোরেট সংস্থাগুলির অভ্যন্তরেই বেআইনি লেনদেন হতে থাকে। সরকার বা রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে সখ্যতা আছে, এমন সংস্থাগুলোকে ব্যাঙ্কও বেশি বেশি করে ঋণ দেয়। সংস্থাগুলো সেই ঋণের অর্থে নিজেদের ব্যবসা বাড়িয়ে চলে, অন্যদিকে প্রতিযোগী সংস্থাগুলোর পক্ষে লড়াইটা অনেক কঠিন হয় দাঁড়ায়।

আইএমএফের প্রাক্তন ভারত-প্রধান জোশ ফেলম্যান বিবিসিকে এই প্রসঙ্গে বলেছিলেন, এধরনের ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন সংস্থাগুলো খুব সহজেই ওভার লেভারেজ হয়ে যায় আর তারপরে একটা সময়ে সংস্থাগুলো ধরাশায়ী হয়ে যায়। সম্প্রতি ভারতে আদানি গোষ্ঠীর সম্বন্ধের হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টে প্রয়োজনের থেকে বেশি লেভারেজের ব্যাপারেও প্রশ্ন তোলা হয়েছিল।

ফেলম্যান বলছিলেন, ‘এর ফলে একটি দেশের অর্থনীতির ওপরে বড়ধরনের ক্ষতি হয়ে যায়। বেশ কিছু এশীয় দেশে আমরা এটা হতে দেখেছি। যেমন ১৯৯৮ সালে ইন্দোনেশিয়ায় হয়েছিল।’ অর্থনীতিবিদ নোরিয়েল রোবিনি ফেব্রুয়ারিতে এক প্রবন্ধে লিখেছেন যে ভারতে, ‘জাতীয় চ্যাম্পিয়ন’ এবং বৃহৎ ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক পরিবারগুলির হাতে অর্থনীতির একটা বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। ‘এই নীতিতে চলার কারণে ওইসব বৃহৎ ব্যবসায়িক পরিবারগুলি নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রটিও দখল করে ফেলেছে আর তা থেকে নিজেরা লাভবান হচ্ছে,’ লিখেছেন রোবিনি। সূত্র: বিবিসি।

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ
কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের
৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী
৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান
আরও

আরও পড়ুন

পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন

কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন

গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ

মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ

কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের

কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের

৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী

৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী

৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান

৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান

তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ

তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ

ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?

ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?

মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি

মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি

গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের

গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের

পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি

পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি

আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান

আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান

শুধু নারীদের জন্য

শুধু নারীদের জন্য

নিথর দেহ

নিথর দেহ

আত্মহননে

আত্মহননে

জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী

জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী

মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়

গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়

শুধু নামেই জিমনেসিয়াম

শুধু নামেই জিমনেসিয়াম