ভারতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা কি একই ছকে হচ্ছে?
০৭ এপ্রিল ২০২৩, ০৩:৫০ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:২৫ পিএম
ভারতে রামনবমীর মিছিল থেকে যে সাম্প্রদায়িক সংঘাত প্রতিবছরই হচ্ছে, তার শুরুটা হয়েছিল ২০১৮ সালে আসানসোল রাণীগঞ্জের দাঙ্গা দিয়েই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা একটা নির্দিষ্ট প্যাটার্ন।
‘২০১৮তে যখন পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন ছিল, বা তার পরের বছর ২০১৯ এ লোকসভার ভোট ছিল, তখনও ঠিক এভাবেই রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে এরকম ঘটনা হয়েছে। আবার ২০২৩-এ এসেও আমরা দেখছি রামনবমীকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ। কয়েকমাস পরে আবারও পঞ্চায়েত নির্বাচন, আবার পরের বছর লোকসভা নির্বাচন। একই প্যাটার্নে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষগুলো হচ্ছে। কাকতালীয় ব্যাপার মোটেই নয় এগুলো,’ বলছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরী।
তিনি ব্যাখ্যা করছিলেন, সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ বাঁধলে ধর্মীয় মেরুকরণ হয়, আর তার প্রভাব পড়ে কাছাকাছি সময়ে থাকা নির্বাচনের ফলাফলে।রামনবমীকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা আর তা থেকে ধর্মীয় মেরুকরণের ফল ২০১৮র পঞ্চায়েত ভোট আর ২০১৯ এর লোকসভা ভোটে পেয়েছিল বিজেপি। ‘এ নতুন ধরণের মেরুকরণের প্রচেষ্টায় একদিকে যেমন বিজেপির স্বার্থ আছে, তেমনই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসেরও স্বার্থ আছে,’ বলছিলেন অধ্যাপক বসুরায়চৌধুরী।
সম্প্রতি মুর্শিদাবাদ জেলার মুসলমানপ্রধান বিধানসভা কেন্দ্র সাগরদিঘীতে উপনির্বাচন হয়েছিল। কেন্দ্রটি ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে। তবে এবারে সেই আসনে জিতেছে কংগ্রেস-বাম জোটের প্রার্থী। এর আগে যেখানে তৃণমূল কংগ্রেস প্রায় ৫০ হাজার ভোটে জিতেছিল, সেই আসনে এবারের জয়ী কংগ্রেস প্রার্থী প্রায় ২৫ হাজার ভোটে জিতেছেন, অর্থাৎ তৃণমূল কংগ্রেসের দিক থেকে প্রায় ৭৫ হাজার ভোট ‘সুইং’ করে বা ঘুরে গিয়ে বিরোধীদের পক্ষে গেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের বৃহত্তর অংশ তৃণমূল কংগ্রেসকেই ভোট দেন। কিন্তু সাগরদিঘীর ফলাফলের পরে তৃণমূল কংগ্রেস চিন্তায় পড়েছে যে মুসলমান ভোট কি তাহলে তাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে! ‘সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা, যার মধ্যে সাগরদিঘীর ফলাফলও আছে, তা থেকে ইঙ্গিত পেয়ে তৃণমূল কংগ্রেস সম্ভবত আশঙ্কা করছে যে সংখ্যালঘু ভোট, যার বেশিরভাগটাই তারাই পেত, সেই ভোট বিভাজন হয়ে যেতে পারে। তাই এধরণের পরিস্থিতি উভয় পক্ষের কাছেই অত্যন্ত জরুরী যে ধর্মের ভিত্তিতে একটা রাজনৈতিক মেরুকরণ ঘটানো,’ বলছিলেন সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরী। তিনি তাই মনে করেন হাওড়ার শিবপুর, রিষড়া বা উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলায় রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে যা হয়েছে, তা বিচ্ছিন্ন নয়।
এবছর রামনবমীর সন্ধ্যায় যতগুলি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে, সেগুলোর পুলিশী তদন্ত চলছে, কিন্তু ঘটনাক্রম দেখে মনে হচ্ছে একই কায়দায় সহিংসতা ছড়িয়েছে। মগরিবের নামাজ চলাকালীন, অথবা ইফতারের সময়ে মসজিদ বা মুসলমান এলাকার সামনে দিয়ে রামনবমীর মিছিল গেছে আর ঠিক সেখানেই সংঘর্ষ বেঁধেছে। মেহতাব আজিজ নামে স্থানীয় একজন জানান, ‘আগেও তো রামনবমীর মিছিল দেখেছি। তারা তাদের ভগবানের গান বাজিয়ে মিছিল নিয়ে চলে যেত। তবে এবার যেসব গান বাজানো হচ্ছিল, সেগুলি খুবই উস্কানিমূলক। যেমন একটা গান চলছিল হিন্দুস্তানে থাকতে গেলে কী কী করতে হবে – এইসব গান ‘
২০১৮ সালে রামনবমীর মিছিল থেকে বড়সড় দাঙ্গা ছড়ায় কয়লা আর শিল্পাঞ্চল আসানসোল-রাণীগঞ্জে। সেই দাঙ্গার সূত্রপাত হয়েছিল গান থেকে, রামনবমীর মিছিল থেকে যেসব গান বাজানো হয়েছিল সেখানে, তা মুসলমান সমাজকে উত্তেজিত করার জন্য যথেষ্ট।
রামনবমীর মিছিলের জন্যই ডি জে বা ডিস্ক জকিদের দিয়ে নানারকম সাউন্ড ট্র্যাক মিশিয়ে তৈরি হয়েছে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে থাকা ওইসব গানগুলি। বেশীরভাগ গানই শুরু হয়েছে পাকিস্তানের প্রতি বিষোদগার দিয়ে। জয় শ্রীরাম ধ্বনি আর পাকিস্তান-বিরোধী স্লোগান বা ছোট্ট ভাষণ দিয়ে শুরু হলেও গানগুলির বাকি অংশে অবশ্য যেসব কথা রয়েছে, সেখানে আর পাকিস্তান নেই। কোথাও বলা হয়েছে – ‘যেদিন হিন্দুরা জেগে উঠবে, সেদিন টুপীওয়ালারাও মাথা নত করে বলবে জয় শ্রীরাম’, কোনও গানে লেখা হয়েছে, ‘যেদিন আমার রক্ত গরম হবে, সেদিন তোমাকে দেখিয়ে দেব - সেদিন আমি নয়, কথা বলবে আমার তলোয়ার’।
সাউন্ডট্র্যাকের সঙ্গে মেশানো হয়েছে ছোট ছোট ভাষণও - যা পুরোটা ভাল করে শুনলে বোঝা যাবে যে সেগুলো পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে বলা, কিন্তু একটা অংশ বিচ্ছিন্নভাবে শুনলে মনে হতেই পারে যে কথাগুলো মুসলমান সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে। গানগুলোতে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান, ‘ভারতমাতা কি জয়’, ‘বন্দে মাতরম’ সব কিছুই। এভাবেই উস্কানির মাধ্যমে ভারতে ধর্মীয় বিভাজন ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছেন রাজনীতিবিদরা। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কোন দল ও কোন গোষ্টি কাউকে ক্ষমা করার এখতিয়ার রাখেনা_ সেক্রেটারি জাহিদুল ইসলাম
পেশাদারিত্ব না বিশ্বাসঘাতকতা?
নাসিকের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির দাবিতে নগর ভবন ঘেরাও
মাগুরার শ্রীপুরে দুগ্রুপের সংঘর্ষে ১০ জন আহত বাড়িঘর ভাঙচুর
মহেশপুরে গাজী টিভির সাংবাদিকের উপর হামলা
ব্রহ্মপুত্র চরে কৃষক প্রশিক্ষণ এবং গাজর-টমেটোর বীজ ও চারা বিতরণ
হাজারীবাগে ছুরিকাঘাতে আহত ছাত্রদল নেতা জিয়াউর রহমান মারা গেছেন
সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নিবন্ধনসহ যা করতে হবে পর্যটকদের
রাখাইন রাজ্যে মধ্যরাত থেকেই বিস্ফোরণের শব্দে কাঁপল টেকনাফ সীমান্ত।
আমিনপুরে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত।
একদিনে ডেঙ্গুতে আরো ৫ মৃত্যু, শনাক্ত ১০৩৪
চট্টগ্রামে শেখ হাসিনাসহ ১৮৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা
অধ্যক্ষ সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানীকে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের ফুলের শুভেচ্ছা
ফের সিন্ডিকেটের আনাগোনা
রাজধানীতে ফের বসছে জমকালো বক্সিং আসর
প্রকাশ্যে এলো চবি ছাত্রশিবিরের কমিটি
চাচাত ভাইয়ের মেয়ে কে বিবাহ করা প্রসঙ্গে।
কাপাসিয়ার ছাত্র জনতার উপর হামলার ঘটনায় আওয়ামীলীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান খোকন গ্রেফতার
ইসলামি বইমেলা হেরার জ্যোতির পথ দেখায় ধর্ম উপদেষ্টা খালিদ হোসেন
মৎস্য উৎপাদন গবেষণা আরো জোরদার করতে হবে: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা