ইমরান-সমর্থক পাকিস্তানি সাংবাদিককে হত্যা, এবার জাতিসংঘের দ্বারস্থ তার স্ত্রী
১০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৩৬ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:০২ পিএম
কেনিয়ায় নিহত একজন খ্যাতনামা পাকিস্তানি অনুসন্ধানী সাংবাদিকের স্ত্রী তার স্বামীকে গুলি করে হত্যার ঘটনার স্বাধীন তদন্তের জন্য জাতিসংঘের কাছে আবেদন করেছেন। জাভেরিয়া সিদ্দিক বলেছেন, আরশাদ শরীফের ওপর গুলি চালানোর তদন্তটিকে কেনিয়ান এবং পাকিস্তানি পুলিশ ব্যর্থ করে দিয়েছে।
গত বছরের অক্টোবর মাসে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির উপকণ্ঠে রাস্তা অবরোধ করে পুলিশ শরীফকে গুলি করে হত্যা করে। বিবিসির সংবাদদাতা ইমানুয়েল ইগুনজা জানাচ্ছেন, জাভেরিয়া সিদ্দিক গত বছর তার স্বামী আরশাদ শরীফের হত্যাকাণ্ডের স্বাধীন তদন্তের জন্য জাতিসংঘের একজন বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার নিয়োগের অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেছেন, ঐ হত্যার ঘটনায় কেনিয়ার পুলিশ সদস্যদের জড়িত থাকার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে কেনিয়ান এবং পাকিস্তানি পুলিশ।
জাতিসংঘের কাছে পাঠানো ঐ চিঠিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানসহ পাকিস্তানের বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য ও রাজনীতিবিদও সই করেছেন। মৃত্যুর আগে আরশাদ শরীফ পাকিস্তানের ক্ষমতাবান শ্রেণির কথিত দুর্নীতির ওপর তদন্ত করছিলেন। প্রাণনাশের হুমকি পাওয়ার পর গত আগস্ট মাসে তিনি বিদেশে পালিয়ে যান। কেনিয়া যাওয়ার আগে শরীফ ব্রিটেন এবং দুবাই সফর করেছিলেন।
শরীফ কবে প্রথম কেনিয়ায় গিয়েছিলেন, কিংবা ব্যবসায়িক বা পর্যটন ভিসায় তিনি ভ্রমণ করছিলেন কিনা - তা স্পষ্ট নয়। পাকিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সোচ্চার সমর্থক হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন এবং দেশ ছাড়ার আগে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিলেন। মতার আইনজীবী শোয়েব রাজ্জাক বলেছেন, পাকিস্তান সরকার শরীফকে পাকিস্তানে প্রত্যর্পণ করার জন্য দুবাই কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করেছিল।
এটা জানার পর শরীফ দ্রুত কেনিয়াতে গিয়ে সুরক্ষা চেয়েছিলেন। কারণ, কেনিয়ায় তিনি সহজেই ভিসা পেতে পারেন এবং সেখানে তার বন্ধু ও পরিচিতরা তাকে আশ্রয় দিতে পারেন, বলছিলেন রাজ্জাক। শরীফের মৃত্যুর সময় কেনিয়ার বাসিন্দা আরেকজন পাকিস্তানি নাগরিকও তার সঙ্গে গাড়িতে ছিলেন।
কেনিয়ার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জন অ্যালান নামু জানিয়েছেন, শরীফ কাজ করছেন এমন একটি তথ্যচিত্রের জন্য তার সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। তথ্যচিত্রটির একটি ট্রেলার থেকে জানা যাচ্ছে যে পাকিস্তানে দুর্নীতির একটি ঘটনা উন্মোচন করার জন্যই তথ্যচিত্রটি তৈরি করা হচ্ছিল। তবে কেনিয়ার সাথে এই তথ্যচিত্রটি কী যোগসূত্র তা অবশ্য স্পষ্ট নয় এবং নামু পরে ব্যাখ্যা করেছেন যে কেনিয়ায় তার সাক্ষাৎকার নেয়া হলেও তার সাথে মি. শরীফের কোন মুখোমুখি সাক্ষাৎ হয়নি।
শরীফের হত্যাটি একটি দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনাও হতে পারে, কিন্তু তার মৃত্যু এবং জুলাই মাসে দু’জন ভারতীয় নাগরিক এবং তাদের গাড়ি চালকের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় নয় জন পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করার পর কেনিয়ার পুলিশকে নিয়ে আবারও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। গত কয়েক দশক ধরে কেনিয়ার পুলিশের বিশেষ বাহিনী, যেমন অধুনালুপ্ত স্পেশাল সার্ভিসেস ইউনিট (এসএসইউ)-এর বিরুদ্ধে বিচার-বহির্ভূত হত্যা, অপহরণ এবং সন্দেহভাজনদের নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
এসব ঘটনা কেনিয়ায় ওপেন সিক্রেট ছিল। কিন্তু এসএসইউ বন্ধের ওপর নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি উইলিয়াম রুটোর ঘোষণায় প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে পুলিশের হাতে সংঘটিত নৃশংসতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন কোনও রাষ্ট্রপ্রধান। আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় এনজিওদের একটি কনসোর্টিয়াম জানিয়েছে, স্বাধীন তদন্ত থেকে জানা যাচ্ছে যে পুলিশের বিশেষ ইউনিটগুলির সাথে ৬০০টিরও বেশি হত্যাকাণ্ডের সম্পর্ক রয়েছে৷ কিছু কিছু পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অপরাধীদের কাছে তাদের অস্ত্র ভাড়া দেয়া বা অর্থের বিনিময়ে হত্যাকাণ্ড ঘটানোরও অভিযোগও রয়েছে। কিন্তু এসব ঘটনায় কাউকেই এখনো বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থক এবং সেনাবাহিনীর সমালোচক হিসেবে শরীফের অনেক শত্রু ছিল। পাকিস্তান ত্যাগ করার আগে তিনি সম্ভাব্য রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগের সম্মুখীন হন। গত বছরের এপ্রিল মাসে ইমরান খানকে অপসারণের সাথে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী জড়িত ছিল বলে ইঙ্গিত করার পর তার টিভি অনুষ্ঠানটি নিষিদ্ধ করা হয়। তার হত্যার কারণ নিয়ে নানা ধরনের তত্ত্ব বাতাসে উড়ছে।
ইমরান খান সরকারের এক সময়ের মন্ত্রী ফয়সাল ভাওদা অভিযোগ করেন যে যদিও শরীফকে কেনিয়াতে হত্যা করা হয়, কিন্তু পরিকল্পনাটি তৈরি হয়েছিল পাকিস্তানের ভেতরে। তার কাছে এর প্রমাণ রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। ইমরান খান নিজে বলেছিলেন যে গত বছরের গোড়ার দিকে তিনি হত্যার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে জানতে পারেন এবং তিনি তাকে পাকিস্তান ছেড়ে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
এক বিরল পদক্ষেপে পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাদিম আহমেদ আঞ্জুম সাংবাদিকদের জানান, মিডিয়ার সিনিয়র ব্যক্তিত্বসহ অনেকে, যারা শরীফের গতিবিধি সম্পর্কে জানতেন, কোনও না কোনোভাবে তারাই তার মৃত্যুর সাথে জড়িত থাকতে পারেন। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী আরশাদ শরীফের জীবনের প্রতি হুমকি ছিল না বলে তিনি দাবি করেন। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কুলাউড়ায় পুলিশকে মারধর করে আসামি ছিনতাই
রোববার থেকে নগর ভবনে দাপ্তরিক কাজ করবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় : উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
গণহত্যার টপ কমান্ডারদের বিচার এক বছরের মধ্যে শেষ হবে: চিফ প্রসিকিউটর
কনস্টাস কাণ্ডে কোহলির দোষ দেখছেন অস্ট্রেলিয়ার বোর্ড প্রধান
চরমোনাই মাদরাসা ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের অস্থায়ী ক্যাম্প: মাসুম বিল্লাহ
বগুড়ায় বালু ব্যবসায়ী হত্যা, লাশ নিয়ে বিক্ষোভ
মাগুরার শ্রীপুরে জোড়া শিশুর জন্ম
রিক্সা ভ্যানে চলন্ত ট্রাকের ধাক্কায় বাবা মেয়ে সহ নিহত ৩
পদ্মা নদীর ভয়ঙ্কর আগ্রাসনে হুমকির মুখে কুষ্টিয়া-রাজশাহী মহাসড়ক
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা: চালকসহ গ্রেপ্তার ২
গোপালগঞ্জ আড়াই শ’ বেডের আরএমও জেল -হাজতে
বিপ্লবকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না, প্রয়োজনে আবারও মাঠে নামতে হবে: ধর্ম উপদেষ্টা
সাংবাদিক আনিসুর রহমানের মৃত্যু
নিউজিল্যান্ডের কাছে শ্রীলঙ্কার অবিশ্বাস্য পরাজয়
রাশিয়ার উপর আজারবাইজানের বিমান ভূপাতিতের অভিযোগ : যুক্তরাষ্ট্রের ইঙ্গিত
ফিরে দেখা ২০২৪: সংস্কারের বছরে মাঠের ক্রিকেটে হতাশা
মানুষ সুন্দর ও কল্যাণের অপেক্ষায় আছে : হাজী ইয়াছিন
সিএনজি স্টেশন খোলা রাখার সময় বাড়ছে
সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ দেশে ফিরেছেন
ঘাটাইলে ইসলামী ব্যাংকের ৪০০তম শাখার উদ্বোধন করলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর