ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

ঘরে অশরীরী কিছুর উপস্থিতি, কি বলছে বিজ্ঞান?

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

১৪ এপ্রিল ২০২৩, ০১:০০ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:১২ পিএম

রাতে অশরীরী কিছুর উপস্থিতি নিয়ে পৃথিবীর নানা দেশে নানা বিশ্বাস প্রচলিত আছে। যেমন আমরা বলি ঘুমের মধ্যে ভূতে পাওয়া বা জিনে ধরা। পর্তুগালে বিশ্বাস আছে ‘হাতে ফুটো কোন অপদেবতা’ স্বপ্নের মধ্যে বুকে চেপে বসে, পশ্চিম আফ্রিকার ইউরোবারা এই প্রক্রিয়াকে বলে ওগান অরু যা ঘুমের মধ্যে কোন ভূতের উপদ্রব। নাইজিরিয়ানদের বিশ্বাস ঘুমের মধ্যে অপঘাতে মৃত কেউ মানুষের শরীরে ভর করলে এমন অবস্থা হয়।

কিন্তু ঘুমের মধ্যে পেশি অচল হয়ে গেলে কারোর উপস্থিতি কেন মানুষ অনুভব করে? কোন কোন গবেষক বলছেন এরকম পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে মানুষ যখন জেগে ওঠার চেষ্টা করে তখন মনের মধ্যে তারা বিশেষ একটা কিছুকে অবলম্বন করতে চায়। তাই তারা কিছু একটা দেখে বা শোনে। স্লিপ প্যারালিসিস অনেকের জন্য বেশ ভয়ের একটা অভিজ্ঞতা।

ঘুম বিষয়ে গবেষক জে অ্যালেন চেইনি এবং টড জিরার্ড ২০০৭ সালে যুক্তি দেন যে ঘুমের মধ্যেকার প্যারালাইজড বা পেশির জড় অবস্থা থেকে যখন আমরা জাগি তখন আমরা একটা ভয়ের অবস্থায় থাকি- আমাদের মন বলে কিছু একটা খারাপ ঘটবে। মনের ভেতরে একটা শূন্য অবস্থা তৈরি হয়। এ অবস্থায় সেই শূন্য জায়গাতে একটা ছবি বা পরিস্থিতি তৈরির সুযোগ মস্তিষ্কে গড়ে ওঠে।

আরেকটা ব্যাখ্যায় বলা হচ্ছে এধরনের অশরীরী কিছুর অস্তিত্ব বা এধরনের অনুভূতি শুধু যে হিপনোগগিয়া অবস্থায় এবং ঘুমের মধ্যকার প্যারালিসিসের সময় হচ্ছে তাই নয়, এমনটাও দেখা গেছে যে পার্কিনসন এবং সাইকোসিস রোগে, মুত্যুর মুখোমুখি পড়ার সময় এবং প্রিয়জনের মৃত্যুর পর মানুষের এমন অতীন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা হয়েছে।

স্নায়বিক রোগের চিকিৎসায় ব্রেনকে উদ্দীপ্ত করার পরীক্ষা থেকে দেখা গেছে যে শরীরকে নির্দেশ দিলে মন এরকম অশরীরী কিছুর উপস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। যেমন, ২০০৬ সালে নিউরোলজিস্ট শাহার আর্জি এবং তার সহকর্মীরা এক পরীক্ষায় এক নারীর মস্তিষ্কের এক বিশেষ অংশে বৈদ্যুতিক কারেন্ট পাঠিয়ে তার সামনে একটি ‘ছায়া মূর্তি’ সৃষ্টি করতে সক্ষম হন। নারীটির শরীর যে অবস্থানে রয়েছে তার প্রতিবিম্ব হিসাবে আসে ওই ছায়ামূর্তি। ওই পরীক্ষায় দেখা যায় মস্তিষ্কের বিশেষ ওই অংশটি উদ্দীপিত হলে তা অনুভূতি ও শারীরিক অবয়ব তৈরি করতে পারে।

২০১৪ সালে পরপর চালানো কয়েকটি পরীক্ষায় আরও দেখা যায় যে, মানুষ তার ইন্দ্রিয় দিয়ে যা দেখার প্রত্যাশা করছে তা এমনকি সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রেও বদলে দেয়া সম্ভব। যেমন গবেষকরা রোবট ব্যবহার করে তার চলাফেরার সাথে মানুষের চলাফেরায় সামঞ্জস্য তৈরি করে দেখেছেন, মানুষ যখন ওই রোবটের গতিবিধির সাথে একাত্ম হয়ে যায়, তখন হঠাৎ করে রোবটের চলাফেরায় সামান্য হেরফের ঘটালে মানুষ মনে করে রোবটটা তো ছিল। অর্থাৎ রোবট না থাকলেও মানুষ ধরে নেয় রোবট আছে- যেটা হ্যালুসিনেশন- মানসিক বিভ্রম।

এ গবেষকরা অশরীরী কিছুর দেখার প্রক্রিয়ার পেছনে এটাকেই যুক্তি হিসাবে তুলে ধরছেন। অর্থাৎ স্লিপ প্যারালিসিসের সময় আমাদের শরীর ও মস্তিষ্কের কাজ যেহেতু বিঘ্নিত হয় তার ফলে তৈরি হয় একটা হ্যালুসিনেশন আর সেটাই আমাদের চারপাশে - বিশেষ করে আমাদের পেছনে অশরীরী ছায়ার মত কিছুর উপস্থিতি তৈরি করে। আমরা ভাবি ঘরে আর কেউ। কিন্তু ওই ‘আর কেউ’ আসলে আমরাই- আমাদের মনের ফসল।

মনস্তত্ত্ববিদ ড. বেন অল্ডারসন-ডে তার এই গবেষণা নিবন্ধে বলেছেন ২০২২ সালে তার নিজস্ব গবেষণায় অশরীরীর উপস্থিতি নিয়ে তিনি রোগীদের দেয়া বিবরণ, আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার বিবরণ এবং খেলাধুলার জগতেও এধরনের অভিজ্ঞতার বর্ণনা তুলনা করে দেখেন। এই প্রতিটি ক্ষেত্রেই হ্যালুসিনেশন বা কিছু দেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি দেখেন সবগুলো ক্ষেত্রেই অভিজ্ঞতার বেশ কিছু মিল রয়েছে। যেমন, সব ক্ষেত্রেই যাদের এই অভিজ্ঞতা হয়েছে তারা কারোর উপস্থিতি অনুভব করেছেন তাদের একেবারে পেছনে।

তিনটি গোষ্ঠির মানুষই এই ‘দেখা’কে ঘুমের সাথে সম্পর্কিত বলে বর্ণনা করেছেন। তারা আরও বলেছেন মানসিক আবেগের মুহূর্তে এই ‘দেখা’র ঘটনা ঘটেছে- যেমন দুঃখের মুহূর্তে বা প্রিয়জনের মৃত্যুর সময়। যদিও অশরীরীর উপস্থিতি মানুষ অনুভব করে এসেছে আজ বহু শতাব্দী ধরে, কিন্তু এনিয়ে যথাযথ বৈজ্ঞানিক গবেষণা সবে শুরু হয়েছে। আরও বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়ত আমাদের সাধারণ কোন একটা ব্যাখ্যা দেবে অথবা কেন কেউ কেউ ঘরের মধ্যে অশরীরী কারোর উপস্থিতি টের পান সে বিষয়ে আসবে নতুন নতুন একাধিক তত্ত্ব।

আপাতত বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে নিশ্চিত যে মানুষ ভূত দেখার যেসব কাহিনি বলে, তারা মৃত মানুষের অশরীরী প্রেতাত্মা নয়, তারা জিন-ভূত নয়। তারা মানুষের মস্তিষ্কের প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে অবচেতন থেকে উঠে আসা কিছু ছবি। দ্য কনভারসেশন নামে এক গবেষণা ওয়েবসাইটে ড. বেন অল্ডারসন-ডে-র গবেষণা বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে এই রিপোর্ট। সূত্র: বিবিসি।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা