মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে শুরু করেছে চীন

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

১৮ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:০৯ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:১৫ পিএম

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং জো বাইডেনের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পাঁচ বছর ধরে চলা বাণিজ্য ও প্রযুক্তি বিধিনিষেধের পরে এবার চীন পশ্চিমা স্বার্থকে লক্ষ্য করে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে।

গত দুই মাসে, চীনা কর্মকর্তারা মার্কিন অস্ত্র কোম্পানি লকহিড মার্টিন এবং রেথিয়নের উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, মার্কিন চিপমেকার মাইক্রনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে, মার্কিন ডিউ ডিলিজেন্স ফার্ম মিন্টজে অভিযান চালিয়ে স্থানীয় কর্মীদের আটক করেছে, জাপানের অ্যাস্টেলাস ফার্মা গ্রুপের একজন সিনিয়র নির্বাহীকে আটক করেছে এবং লন্ডন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডেলয়েটকে রেকর্ড জরিমানা করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনা অনুসারে, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের প্রশাসন এখন বৈশ্বিক গাড়ি শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ এবং প্রযুক্তিগুলোতে পশ্চিমাদের কাছে বিক্রি করা বন্ধের কথা বিবেচনা করছে।

বেইজিং যাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ‘প্রযুক্তি অবরোধ’ হিসাবে বর্ণনা করেছে, তার প্রতিক্রিয়ায় চীনের স্বার্থের প্রায় কোনরকম ক্ষতি না করেই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের শিল্প ও সংস্থাগুলোকে আঘাত করার অসাধারণ কৌশল প্রকাশ করে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের চীন বিষয়ক উপদেষ্টা পল হেনলে বলেছেন, ‘চীন বিস্তৃত প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তার সংযমের কৌশল ত্যাগ করেনি, তারা এখন তাদের ক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য পাল্টা আঘাত করতে চলেছে।

যাইহোক, অভিযান পরিচালনা এবং বিদেশী কোম্পানির কর্মীদের আটক করার সিদ্ধান্তটি এ আভাস জাগিয়েছে যে, পশ্চিমের সাথে সম্পর্কের অবনতি হলে বেইজিং জিম্মি কূটনীতিকে বাড়িয়ে তুলবে। বিদেশী ঝুঁকি পরামর্শদাতা গোষ্ঠীর দুজন ব্যক্তি বলেছেন, মিন্টজ এবং অ্যাস্টেলাসের ঘটনাগুলো কর্মচারীদের সুরক্ষার একটি জরুরি পর্যালোচনা এবং চীনে কিছু ভ্রমণ পরিকল্পনা অবিলম্বে স্থগিত করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, জাপান বেইজিংয়ের জিম্মি কূটনীতির জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল কারণ তাদের নিজস্ব একটি অত্যাধুনিক গোয়েন্দা সংস্থার অভাব রয়েছে এবং তার নাগরিকদের প্রত্যাবর্তনের জন্য আলোচনার জন্য সরঞ্জামের অভাব রয়েছে।

২০১৪ সালে চীনে একটি পাল্টা গুপ্তচরবৃত্তি আইন পাস করার পর থেকে ১৭ জন জাপানি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অ্যাস্টেলাসের কর্মচারী সহ তাদের মধ্যে পাঁচজন আটকে রয়েছেন। ফেব্রুয়ারিতে, বেইজিং দুটি বৃহত্তম মার্কিন প্রতিরক্ষা সংস্থা লকহিড এবং রেথিয়নের উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এ পদক্ষেপটি তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রির জন্য চীনা বিরোধিতাকে প্রতিফলিত করেছিল তবে গোষ্ঠীগুলিকে চীনের কাছে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করার অনুমতি দেয়া হয়নি বলে বাণিজ্যিক প্রভাব কম ছিল।

জাতীয় নিরাপত্তার ভিত্তিতে গত মাসে শুরু হওয়া মাইক্রোনের বিরুদ্ধে বেইজিংয়ের তদন্তকে শির প্রতিশোধ সংগ্রহের গতির স্পষ্ট সংকেত হিসাবে দেখা হয়। ওয়াশিংটনের থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র ফেলো ডেক্সটার রবার্টস বলেছেন যে, চীনকে মূল চিপমেকিং প্রযুক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য মার্কিন নেতৃত্বাধীন প্রচারণার কারণে বেইজিংয়ের সংযম দেখে তিনি বিস্মিত হয়েছেন। কারণ এটি ‘চীনের বিশ্বব্যাপী উন্নত প্রযুক্তির কেন্দ্রস্থল হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষায় আঘাত করেছে’।

বেইজিংয়ের ক্ষোভ সত্ত্বেও, শির অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকারীরা মহামারীর পরে চীনা অর্থনীতি পুনরায় চালু করতে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের ব্যবহার করার প্রচেষ্টাকে দুর্বল করার বিষয়ে সতর্ক। এর অর্থ বেইজিং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে দেখা কোম্পানি এবং শিল্পের বিরুদ্ধে কাজ করা থেকে বিরত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সিআইএ-এর সাবেক বিশ্লেষক এবং এশিয়া বিশেষজ্ঞ সু কিম আশঙ্কা করেন যে, বেইজিংয়ের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপগুলো আরও প্রসারিত হবে কারণ মার্কিন-চীন সম্পর্কের নিকটবর্তী কোনো সমাধান নেই বলে মনে হচ্ছে। ‘মার্কিন-চীন প্রতিযোগিতায় বেইজিংয়ের হাতে অনেক অস্ত্র রয়েছে যা তারা ব্যবহার করতে পারে,’ তিনি বলেছিলেন, ‘তার যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র এবং অংশীদারদের উপরেও চাপ প্রয়োগ করতে পারে যাদের অর্থনীতি চীনের সাথে বাণিজ্যের উপর নির্ভরশীল।’ সূত্র: ফিনান্সিয়াল টাইমস।

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

মানবিক চিকিৎসক আবু সাফিয়াকে বিনা বিচারে আটক, বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড়
গাজায় ইসরায়েলি হামলার মধ্যেই ব্যাপক বিক্ষোভ ফিলিস্তিনিদের
ঈদের পর হবে ইমরান-বুশরার মামলার শুনানি
যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত পূরণেই সিরিয়ার নিষেধাজ্ঞা শিথিলের সম্ভাবনা
সপ্তমবারের মতো বেলারুশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে লুকাশেঙ্কোর শপথ গ্রহণ
আরও
X

আরও পড়ুন

একাত্তরের অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করতেই ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান- আসিফ মাহমুদ

একাত্তরের অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা করতেই ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান- আসিফ মাহমুদ

মানবিক চিকিৎসক আবু সাফিয়াকে বিনা বিচারে আটক, বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড়

মানবিক চিকিৎসক আবু সাফিয়াকে বিনা বিচারে আটক, বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড়

গাজায় ইসরায়েলি হামলার মধ্যেই ব্যাপক বিক্ষোভ ফিলিস্তিনিদের

গাজায় ইসরায়েলি হামলার মধ্যেই ব্যাপক বিক্ষোভ ফিলিস্তিনিদের

২০২৭ বিশ্বকাপ পর্যন্ত বাংলাদেশের দায়িত্বে সিমন্স

২০২৭ বিশ্বকাপ পর্যন্ত বাংলাদেশের দায়িত্বে সিমন্স

জাতীয় স্মৃতিসৌধে ঢাকা জেলা যুবদলের শ্রদ্ধা নিবেদন

জাতীয় স্মৃতিসৌধে ঢাকা জেলা যুবদলের শ্রদ্ধা নিবেদন

জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রধান বিচারপতির শ্রদ্ধা

জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রধান বিচারপতির শ্রদ্ধা

ইসরাইলি সেনাদের হাতে অস্কারজয়ী ফিলিস্তিনি নির্মাতা অপহরণ

ইসরাইলি সেনাদের হাতে অস্কারজয়ী ফিলিস্তিনি নির্মাতা অপহরণ

ঈদের পর হবে ইমরান-বুশরার মামলার শুনানি

ঈদের পর হবে ইমরান-বুশরার মামলার শুনানি

মঙ্গল শোভাযাত্রায় আবু সাঈদের ‘ভাস্কর্য’ চায় না পরিবার

মঙ্গল শোভাযাত্রায় আবু সাঈদের ‘ভাস্কর্য’ চায় না পরিবার

ব্রাজিলকে নিয়ে ছেলেখেলা করল আর্জেন্টিনা

ব্রাজিলকে নিয়ে ছেলেখেলা করল আর্জেন্টিনা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গণহত্যা দিবস’ পালিত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গণহত্যা দিবস’ পালিত

যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত পূরণেই সিরিয়ার নিষেধাজ্ঞা শিথিলের সম্ভাবনা

যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত পূরণেই সিরিয়ার নিষেধাজ্ঞা শিথিলের সম্ভাবনা

জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদন

জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদন

সপ্তমবারের মতো বেলারুশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে লুকাশেঙ্কোর শপথ গ্রহণ

সপ্তমবারের মতো বেলারুশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে লুকাশেঙ্কোর শপথ গ্রহণ

হিলিতে মহান স্বাধীনতা দিবস পালিত

হিলিতে মহান স্বাধীনতা দিবস পালিত

বাংলাদেশের জনগণকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিনন্দন

বাংলাদেশের জনগণকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিনন্দন

জাবালিয়া ছাড়তে ফিলিস্তিনিদের চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি, হামলার হুমকি ইসরায়েলের

জাবালিয়া ছাড়তে ফিলিস্তিনিদের চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি, হামলার হুমকি ইসরায়েলের

সদরপুরে জামায়াতের ইফতার মাহফিলে আওয়ামীলীগ নেতা! জনমনে কৌতূহল

সদরপুরে জামায়াতের ইফতার মাহফিলে আওয়ামীলীগ নেতা! জনমনে কৌতূহল

রাতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেয়ে ঘুষ খাওয়ার চেষ্টা, ঘেরাও করে কাস্টমস কর্মকর্তাকে মারধর

রাতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেয়ে ঘুষ খাওয়ার চেষ্টা, ঘেরাও করে কাস্টমস কর্মকর্তাকে মারধর

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মেঘনায় মাছ শিকার করায় রায়পুরে ১২ জেলের অর্থদণ্ড

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মেঘনায় মাছ শিকার করায় রায়পুরে ১২ জেলের অর্থদণ্ড