পাকিস্তানি তরুণীকে বিয়ে করতে গিয়ে ঝড় বয়ে গেছে ভারতীয় যুবকের জীবনে
০২ মে ২০২৩, ১১:৫৬ এএম | আপডেট: ০২ মে ২০২৩, ১১:৫৬ এএম
প্রেমে পড়ে অন্ধ হয়ে যাওয়া কাকে বলে, তা এই ঘটনাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পাকিস্তানি তরুণীর প্রেমে পড়েছিলেন ভারতীয় যুবক। যত দিন গড়িয়েছে, ততই গাঢ় হয়েছে সেই প্রেমের সম্পর্ক। তবে ওই প্রেম পরিণতি পায়নি। ঠিক উল্টোটাই হয়েছে। পাক তরুণীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে ওই যুবকের জীবনে ঝড় বয়ে গেছে। গুপ্তচরবৃত্তিতে জড়িয়ে হাতকড়া পরতে হয়েছিল ওই যুবককে।
ঝাড়খণ্ডের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান বিশাল। ২০০৪ সালে পড়াশোনার জন্য পুণেতে যান তিনি। সেখানকার একটি কলেজে ভর্তি হন।
ঝাড়খণ্ড থেকে পুণেতে গিয়েই বিশালের জীবন বদলে যায়। ২০০৫ সালে ‘ইয়াহু মেসেঞ্জার’-এ এক পাক তরুণীর সঙ্গে আলাপ হয় বিশালের। করাচির বাসিন্দা ওই তরুণীর নাম ফতিমা সাল্লাহউদ্দিন শাহ।
অল্প কয়েক দিনের আলাপের মধ্যেই চ্যাটে বিশালের সঙ্গে ফতিমার ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। ফতিমার সঙ্গে চ্যাট করতে সাইবার ক্যাফেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটাতেন বিশাল।
চ্যাটে দু’জন দু’জনের সম্পর্কে নানান কথা ভাগ করে নিতেন। কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়ালে ঠিক যেমনটা হয়ে থাকে। ফতিমা জানিয়েছিলেন যে, তার বাবা পাকিস্তানের অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা।
এরপরই ফতিমার প্রেমে পড়েন বিশাল। তাকে বিয়ের প্রস্তাবও দেন। ওই প্রস্তাব গ্রহণও করেন ফতিমা। এরপর আরও কাছাকাছি আসেন বিশাল এবং ফতিমা। নিজের একটি ব্যক্তিগত ফোন নম্বর (যেটি পাকিস্তানের নম্বর) বিশালকে দেন ফতিমা।
স্থানীয় এসটিডি বুথ থেকে ফতিমার ওই নম্বরে ফোন করতেন বিশাল। চ্যাট থেকে এভাবেই তাদের কথোপকথন শুরু হয় ফোনে। এসটিডি বুথ থেকে ফতিমাকে ফোন করতে গিয়ে বিশালের বিল হয়েছিল দেড় লাখ ভারতীয় রুপি। তবে মাত্র ৪০ হাজার টাকা বিশাল মিটিয়েছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছিলেন ওই বুথের মালিক।
ফোনে ফতিমার বাবা-মায়ের সঙ্গেও কথা বলতেন বিশাল। শুরুতে বিশালের বাবা-মা এই সম্পর্ক মেনে নেননি। পরে একটি শর্তে রাজি হন তারা। শর্তটি ছিল, বিশালকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে হবে। এই প্রস্তাবে রাজিও হয়েছিলেন বিশাল।
এরপরই বিশালকে পাকিস্তানে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ফতিমা এবং তার বাবা। শুধু তা-ই নয়, বিয়ের পর ফতিমা এবং বিশাল লন্ডনে থাকবেন এবং সেখানে ব্যবসা সামলাবেন, এমন প্রস্তাব দিয়েছিলেন ফতিমার বাবা।
ফতিমার বাবার কথা শুনে স্বাভাবিকভাবেই আনন্দে ছিলেন বিশাল। প্রেমিকাকে জীবনসঙ্গী বানানোর জন্য তখন মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন তিনি। পাকিস্তানের ভিসার জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সেই আবেদন বাতিল হয়ে যায়।
এরপর ফতিমার বাবা সাল্লাহউদ্দিন নয়া দিল্লিতে পাকিস্তান হাইকমিশনের এক কর্মীর ফোন নম্বর দেন বিশালকে। ওই কর্মীর নাম সৈয়দ এস হুসেন তিরমিজি। এরপর তিরমিজির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন বিশাল।
পুলিশ জানিয়েছিল, পাক ভিসা পাওয়ার জন্য নিজের বিভিন্ন নথি তিরমিজির হাতে তুলে দিয়েছিলেন বিশাল। সেই সময় দিল্লির পাহাড়গঞ্জ এলাকায় একটি লজে থাকতেন বিশাল। ফতিমা এবং তার বাবার কাছ থেকে টাকাও পেয়েছিলেন তিনি।
বিশালকে পাকিস্তানের ভিসা জোগাড় করে দেওয়ার কাজে তিরমিজির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন পাক হাইকমিশনের আরও এক কর্মী জাভেদ ওরফে আব্দুল লতিফ। তারাই বিশালকে ভিসার ব্যবস্থা করে দেন।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছিল যে ওই ভিসা নিয়ে দু’বার পাকিস্তানে গিয়েছিলেন বিশাল। ২০০৬ সালের অক্টোবর মাসে চার দিনের জন্য পাকিস্তানে ছিলেন তিনি। এরপর, ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে দু’সপ্তাহের বেশি সে দেশে ছিলেন বিশাল।
২০০৭ সালের ৮ এপ্রিল পুণে সিটি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন বিশাল। চরবৃত্তির অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পাকিস্তান থেকে বিশাল যখন ফিরেছিলেন, সেই সময় তার কাছ থেকে পুণের বিভিন্ন এলাকায় সামরিক প্রতিষ্ঠান এবং ধর্মীয় স্থানের ছবি এবং গোপন নথি উদ্ধার করা হয়েছিল।
পুলিশ জানিয়েছিল, ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি, বম্বে ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ, সাদার্ন কমান্ড-সহ ভারতীয় সেনার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছবি উদ্ধার করা হয়েছিল বিশালের কাছ থেকে। এছাড়াও বিভিন্ন ধর্মীয় স্থান, পুণেতে আরএসএসের সদর দফতরের ছবিও উদ্ধার করা হয়েছিল বিশালের কাছ থেকে।
শুধু তা-ই নয়, ভারতীয় সেনা কর্মকর্তাদের ফোন নম্বরের প্রতিলিপি, ফতিমার ছবি, সালাহউদ্দিনের উদ্দেশে লেখা একটি খামও পাওয়া গিয়েছিল বিশালের কাছ থেকে।
পুণের ডেকান থানায় বিশালের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০ বি ধারা এবং অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে যে, পুণেতে ভারতীয় সেনার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ধর্মীয় স্থানের ছবি তুলে বিশালকে পাঠাতে বলেছিলেন সালাহউদ্দিন। পাকিস্তান থেকে পুণেতে ফিরে সেই মতো কাজ করেছিলেন বিশাল। তারপর তথ্য সংগ্রহ করে ছবি তুলে তা পাকিস্তানে পাঠিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।
ইসলাম ধর্ম গ্রহণের জন্য পুণেতে মৌলভিদের সঙ্গে বিশাল যোগাযোগ করেছিলেন বলে দাবি করেছিল পুলিশ। পুণের এক মৌলভি পুলিশকে জানিয়েছিলেন যে সালাহউদ্দিনের সঙ্গে তার ফোনে কথা হয়েছিল। সালাহউদ্দিন জানিয়েছিলেন যে বিশাল ইতোমধ্যেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। তার নাম দেওয়া হয়েছে বিলাল।
এই ঘটনায় পাকিস্তান হাইকমিশনের কর্মীদের ভূমিকা খতিয়ে দেখার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েছিল পুণে সিটি পুলিশ। কিন্তু ‘ভিয়েনা কনভেনশন’-এর নিয়ম মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পারেনি তারা।
২০০৭ সালের জুলাই মাসে বিশালের বিরুদ্ধে পুণে আদালতে চার্জশিট জমা দেয় ভারতীয় পুলিশ। চরবৃত্তির অভিযোগ অস্বীকার করেন বিশাল। তিনি দাবি করেন যে প্রেমের সম্পর্কের কারণেই দু’বার পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। তথ্যপ্রমাণ দেখে আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল যে ‘গভীর ষড়যন্ত্রে’ জড়িয়ে পড়েছিলেন বিশাল।
২০১১ সালের ২৯ মার্চ বিশালকে দোষী সাব্যস্ত করে সাত বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়। মেয়াদ শেষ হলে তিনি মুক্তি পান।
সূত্র : এবিপি
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
লিসান্দ্রো মার্তিনেজকে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পাচ্ছেনা আর্জেন্টিনা
খালাস পেলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক এপিএস অপু
পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে ব্যাপক তল্লাশি
আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ১৮.৪৬ বিলিয়ন ডলার
অফিস-আদালতসহ সর্বত্রই দুঃশাসনের চিহ্ন রাখা উচিত নয় : রিজভী
পার্লামেন্টে ক্ষমা
ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিরাপত্তায় নতুন প্রহরী: রোবট কুকুর!
লুকিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করায় মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা থেকে বহিস্কার
মাকে হত্যা করে লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখা ছেলে গ্রেফতার
সীমান্তে ৪ বাংলাদেশী নারী আটক
গুলি বর্ষণকারী ৭৪৭ পুলিশ শনাক্ত গ্রেফতারের উদ্যোগ নেই
সিলেটে মতবিনিময় সভা করলো নেজামে ইসলাম পার্টির
স্বামী স্ত্রীকে শর্ত লাগিয়ে তালাক দেওয়ার পর শর্ত উঠিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে।
আন্তঃনগর ট্রেনের সময় পরিবর্তন করুন
জনপ্রশাসনে মেধাশূন্যতা : কারণ ও প্রতিকার
ভারতীয় হেজিমনি ও আওয়ামী লীগের আত্মঘাতী রাজনীতি
বিতর্ক পরিহার করতে হবে
ইসরাইলি বাহিনী হিজবুল্লাহর সঙ্গে অস্ত্রবিরতিতে যাবে না
নির্বাচনে হারার পর প্রথমবার জনসমক্ষে বাইডেন ও কমলা