তুরস্কে আগামী পাঁচ বছরও ক্ষমতায় থাকবেন এরদোগান

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

১৬ মে ২০২৩, ১২:৪২ পিএম | আপডেট: ১৬ মে ২০২৩, ১২:৪২ পিএম

তুরস্কে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়াই প্রায় নিশ্চিতভাবেই দ্বিতীয় ধাপে গড়াচ্ছে, আর এই লড়াইয়ে দুই প্রার্থীই বলছেন, বিজয় তাদের হাতে মুঠোয়। বিশ বছর ধরে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোগান তার দলের সদর দপ্তরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে বলছেন, আগামী পাঁচ বছর ক্ষমতা যে তারই সেটা নিশ্চিত।

অন্যদিকে, তার প্রতিপক্ষ কামাল কুলুচদারুলুর জন্য এই নির্বাচনে জয় পাওয়ার জন্য সব হিসেব মিলে গেছে বলে দৃশ্যত মনে হচ্ছে। কিন্তু ভোটের অসম্পূর্ণ ফলাফলের জন্য প্রথম রাউন্ডে তিনি প্রেসিডেন্টের পেছনে পড়ে গেছেন। এই দ্বিতীয় দফার ভোট আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপে এরদোগান পেয়েছেন ৪৯.৪% ভোট, তার প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছেন ৪৫% এরও কম ভোট। প্রথম পর্বে জিততে হলে প্রার্থীদের অন্যূন ৫০% ভোট পেতে হবে। ওদিকে এরদোগানের নেতৃত্বাধীন জোটও পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বলে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার দেয়া প্রাথমিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী জানা যাচ্ছে। ফলে নির্বাচনে দ্বিতীয় দফা ভোটে যেতে এই ফলাফল তাকে উৎসাহ জোগাতে পারে।

দু’হাজার ষোল সালে ২০১৬ সালে এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর এরদোগান নাটকীয়ভাবে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছেন। গত কয়েক মাস ধরে তুরস্কের বিভিন্ন বিরোধী দল একত্রিত হয়ে প্রবলভাবে চেষ্টা করেছে তার শাসনের অবসান ঘটাতে। এবারের এই নির্বাচনটি পশ্চিমা দেশগুলো খুব ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। কারণ কুলুচদারুলু তুরস্কে গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত করার পাশাপাশি তার নেটো মিত্রদের সাথে সুসম্পর্কের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ইসলামপন্থী সরকার পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে তার পতনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছে। সোমবার ভোরবেলা, কুলুচদারুলু মিত্রদের সাথে নিয়ে আঙ্কারায় তার দলের সদর দফতরে একটি মঞ্চে এসে দাঁড়ান এবং ভোট নিয়ে খুব আশাবাদী দেখানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। "যদি গোটা জাতি [ভোটে] দ্বিতীয় রাউন্ডের কথা বলে, তাহলেও আমরা দ্বিতীয় রাউন্ডে জিতব," বলেন তিনি।

দলীয় সদর দফতরের বাইরে সমর্থকরা বার বার করে কুলুচদারুলুর একটি স্লোগান দিচ্ছিলেন: "সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে," কিন্তু সেটা যে কী হবে তা ঠিক পরিষ্কার না। এর আগে তিনি বিরোধীদের শক্ত ঘাঁটিগুলিতে সরকারকে বারবার চ্যালেঞ্জ করেন এবং ক্রুদ্ধভাবে অভিযোগ করেন যে সরকার “গণরায়কে ঠেকিয়ে দিতে” চাইছে। তার দলের দুই উদীয়মান তারকা – ইস্তাম্বুল ও আঙ্কারার মেয়রও ভোটারদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে এটি এমন একটি কৌশল যা এরদোগানের একে পার্টি আগেও ব্যবহার করেছিল।

ভোটের সময় যাতে অপ্রীতিকর কোন ঘটনা না ঘটে তা নিশ্চিত করতে ব্যালট পেপার পাহারা দিয়েছিলেন যে বিরোধীদলীয় স্বেচ্ছাসেবকদের বিশাল দল তারা তাদেরও প্রশংসা করেন। চুয়াত্তর-বছর বয়সী কুলুচদারুলু রিপাবলিকান পিপলস পার্টির নেতা হিসাবে আগে বেশ ক’টি নির্বাচনে হেরেছেন, কিন্তু রাষ্ট্রপতির মাত্রাতিরিক্ত ক্ষমতা বাতিল করার প্রশ্নে তার বার্তাটি জনমনে গভীর দাগ কেটেছে। তুরস্কের অর্থনীতিতে এখন ৪৪% মূল্যস্ফীতি চলছে। ফলে মানুষ জীবনযাত্রার ব্যয়-সঙ্কটে ভুগছে। এরদোগানের অপ্রথাগত অর্থনৈতিক নীতির ফলে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে।

এই চার্টে তুরস্কে ২০২৩ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম ধাপের ফলাফল দেখানো হয়েছে

এর পাশাপাশি, গত ফেব্রুয়ারি মাসে পর পর দু’বার ভূমিকম্পের সময় ধীর উদ্ধার তৎপরতার জন্য মি. এরদোগানের সরকারকে দায়ী করা হয়েছে। তুরস্কের ১১টি প্রদেশে ঐ ভূমিকম্পে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান। তবে ঐ ঘটনার পর খুব কঠিন ক’মাস পর হলেও তুরস্কের প্রভাবশালী প্রেসিডেন্ট এখনও জনপ্রিয়তা বজায় রেখেছেন বলে দৃশ্যত মনে হচ্ছে। ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত আটটি শহরে প্রেসিডেন্টের প্রতি সমর্থন মাত্র দুই থেকে তিন পয়েন্ট কমে যাওয়ার ইংগিত পাওয়া যাচ্ছে। এই আটটি শহরের মধ্যে সাতটিতে তার সমর্থন ৬০%-এর ওপরে ছিল। শুধুমাত্র গাজিয়ানটেপেই তার সমর্থন ৫৯%-এর নিচে নেমে গেছে।

দু’সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যাশিত দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে ভোটের ব্যবধান যাই থাকুক না কেন, এরদোগান অনেক পোলস্টারের ভবিষ্যৎবাণীকে মিথ্যে প্রমাণ করেছেন, যারা বলেছিলেন যে নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী এগিয়ে থাকবেন এবং এমনকি প্রথম ধাপেই সরাসরি জয়লাভ করতে পারেন। কামাল আতাতুর্কের হাতে আধুনিক তুর্কি প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার ১০০ বছর পর তুর্কি সমাজ এখন যে কতটা বিভক্ত, ভোটের এই ফলাফল সেটাই নিশ্চিত করছে।

তবে দ্বিতীয় দফা ভোট কতটা কাছাকাছি হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়, এবং এই নির্বাচনের তৃতীয় প্রার্থী উগ্র-জাতীয়তাবাদী সিনান ওগানের প্রতি ৫% ভোটের কী হবে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট জল্পনা-কল্পনা রয়েছে। তিনি জানেন, এখন দুই পক্ষই তার মন জয়ের চেষ্টা করবে এবং এব্যাপারে তিনি কিছু কঠোর শর্ত আরোপ করবেন তা নিশ্চিত। তবে যেটা এখনও নিশ্চিত নয় তা হলো, তিনি কোনো প্রার্থীর প্রতি সমর্থন জানালেও প্রথম দফায় তার ভোটাররাও একই কাজ করবেন কি না। সূত্র: বিবিসি।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

চীনে চাকরির বাজারের সংকট ,উচ্চশিক্ষিত যুবকরা কম যোগ্যতার চাকরি নিচ্ছে
নিজের মৃত্যুদণ্ড দ্রুত কার্যকর করতে বন্দী অ্যারন ব্রায়ান গাঞ্চেসের আবেদন
বিদায়বেলায়ও ইসরাইলকে আরও ৮০০ কোটি ডলার সামরিক সহায়তা দিচ্ছেন বাইডেন
চিলির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বোরিকের ঐতিহাসিক দক্ষিণ মেরু সফর
নিউ অরলিন্সে গাড়ি হামলায় ব্রিটিশ নাগরিক নিহত
আরও

আরও পড়ুন

দেবহাটায় তিনটি বিদেশি পিস্তল -গুলিসহ একজন আটক

দেবহাটায় তিনটি বিদেশি পিস্তল -গুলিসহ একজন আটক

হরিরামপুরে নাশকতা মামলার আসামী দিনমজুর কাঠমিস্ত্রির নিত্য সরকারের কারাগারে মৃত্যু

হরিরামপুরে নাশকতা মামলার আসামী দিনমজুর কাঠমিস্ত্রির নিত্য সরকারের কারাগারে মৃত্যু

টঙ্গীবাড়ীতে রাস্তার উপরেই বিদ্যুতের খুঁটি!

টঙ্গীবাড়ীতে রাস্তার উপরেই বিদ্যুতের খুঁটি!

চীনে চাকরির  বাজারের সংকট ,উচ্চশিক্ষিত যুবকরা কম যোগ্যতার চাকরি নিচ্ছে

চীনে চাকরির বাজারের সংকট ,উচ্চশিক্ষিত যুবকরা কম যোগ্যতার চাকরি নিচ্ছে

রাজবাড়ীতে এফিডেভিট এর ফাঁদে বাল্য বিয়ে

রাজবাড়ীতে এফিডেভিট এর ফাঁদে বাল্য বিয়ে

বিয়ে এখনও হয়নি,কেবল ছবি তোলা হয়েছে: তাহসান খান

বিয়ে এখনও হয়নি,কেবল ছবি তোলা হয়েছে: তাহসান খান

জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের দাবিতে ৬ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা

জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের দাবিতে ৬ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা

ওবায়দুল কাদের ও তার ভাই এ জনপদকে সন্ত্রাসের জনপদ বানিয়েছিল-ফখরুল ইসলাম

ওবায়দুল কাদের ও তার ভাই এ জনপদকে সন্ত্রাসের জনপদ বানিয়েছিল-ফখরুল ইসলাম

মধ্যরাতে  শিক্ষার্থীরা বুলডোজার দিয়ে ছাত্রলীগের কার্যালয় গুঁড়িয়ে দিলেন

মধ্যরাতে শিক্ষার্থীরা বুলডোজার দিয়ে ছাত্রলীগের কার্যালয় গুঁড়িয়ে দিলেন

ভারতে যাচ্ছেন আরও ৫০ বিচারক

ভারতে যাচ্ছেন আরও ৫০ বিচারক

হাত পা বেধে একটি কারখানায় ডাকাতি ৪০ লাখ টাকার মালামাল লুট

হাত পা বেধে একটি কারখানায় ডাকাতি ৪০ লাখ টাকার মালামাল লুট

চলতি মৌসুমে শতকোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা গদখালীর চাষিদের

চলতি মৌসুমে শতকোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা গদখালীর চাষিদের

বৃষ্টি ও তাপমাত্রা নিয়ে নতুন বার্তা

বৃষ্টি ও তাপমাত্রা নিয়ে নতুন বার্তা

কাপ্তাইয়ে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় শীতের প্রকোপ বেড়েছে

কাপ্তাইয়ে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় শীতের প্রকোপ বেড়েছে

মালয়েশিয়ার দুই রাজ্যে বাংলাদেশিসহ ১৩৮ অভিবাসী আটক

মালয়েশিয়ার দুই রাজ্যে বাংলাদেশিসহ ১৩৮ অভিবাসী আটক

নিজের মৃত্যুদণ্ড দ্রুত কার্যকর করতে বন্দী অ্যারন ব্রায়ান গাঞ্চেসের আবেদন

নিজের মৃত্যুদণ্ড দ্রুত কার্যকর করতে বন্দী অ্যারন ব্রায়ান গাঞ্চেসের আবেদন

বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী মোতায়েন চান ফ্যাসিস্ট হাসিনার হিন্দু নিপীড়নে চুপ থাকা জিবিএইচসি

বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী মোতায়েন চান ফ্যাসিস্ট হাসিনার হিন্দু নিপীড়নে চুপ থাকা জিবিএইচসি

চিত্রনায়িকা অঞ্জনা রহমানের মৃত্যুতে শোকের ছায়া

চিত্রনায়িকা অঞ্জনা রহমানের মৃত্যুতে শোকের ছায়া

বিদায়বেলায়ও ইসরাইলকে আরও ৮০০ কোটি ডলার সামরিক সহায়তা দিচ্ছেন বাইডেন

বিদায়বেলায়ও ইসরাইলকে আরও ৮০০ কোটি ডলার সামরিক সহায়তা দিচ্ছেন বাইডেন

রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারীর ছেলে পরিচয়ে প্রতারণা, যুবক গ্রেপ্তার

রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারীর ছেলে পরিচয়ে প্রতারণা, যুবক গ্রেপ্তার