আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচি বিলম্ব হওয়ায় তহবিল সংগ্রহে এখন বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে পাকিস্তান। কয়েক দফা আলোচনার পরও আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটি থেকে ঋণ পেতে স্টাফ লেভেল চুক্তিতে পৌঁছাতে না পেরে গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে দিন গুণছে দেশটি।
পাকিস্তান ভিত্তিক এআরওয়াই নিউজ জানিয়েছে, আইএমএফ ঋণ কর্মসূচি চালু করতে আর্থিক সংকটে থাকা পাকিস্তানকে বেশকিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছে, যেগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করে যাচ্ছে দেশটির সরকার। তবে এ বছরের ৩০ জুনেই এই ঋণ কর্মসূচির মেয়াদ শেষ হবে, যে কারণে শর্ত নবায়নের ভিত্তিকে একটি নতুন ঋণ কর্মসূচির কথাও ভাবছে পাকিস্তান।
ইসলামাবাদের সঙ্গে নবম দফা পর্যালোচনার পর থেকে আইএমএফের এই ঋণ বিলম্বিত হচ্ছে। পাকিস্তানকে তার বর্তমান ঋণ পরিশোধে চাপ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলো থেকেও আরও তহবিল সংগ্রহ করতে বলেছে আইএমএফ। ইমরান খান সরকারের মেয়াদেও ঋণ কর্মসূচির চালুর জন্য আইএমএফের ‘কঠিন’ দাবিতেও একমত হয়েছিল পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ।
আইএমএফের কাছ থেকে ২০১৯ সালে সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলার ঋণের জন্য আবেদন করে তখনকার ইমরান খান সরকার। আইএমএফ তখন প্রাথমিক সম্মতিও দেয়। কিন্তু মহামারীর মধ্যে ওই ঋণের বিষয়টি আটকে যায়। এর মধ্যে পাকিস্তানে সরকার যায় বদলে।
মহামারী পরিস্থিতির উন্নতি হলে আবার ঋণ আলোচনা শুরু হলেও পাকিস্তান সরকার প্রাক শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় চূড়ান্ত চুক্তির বিষয়টি আটকে আছে। সময়মত চুক্তি হলে ওই সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে প্রথম কিস্তিতে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার কথা ছিল আইএমএফ এর। এখন তা আর পাচ্ছে না পাকিস্তান।
রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে চলা পাকিস্তান চরম অর্থ সংকটে ধুঁকছে। দেশটির বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ২০১৪ সালের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। এ অবস্থার মধ্যে আইএমএফের ঋণ জরুরি পাকিস্তানের জন্য। অন্যদিকে বিদেশি ঋণ পরিশোধে এক বছর অন্তত ২২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন দেশটির।
আইএমএফ বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ থেকে তহবিল সংগ্রহ করতে বলেছে পাকিস্তান সরকারকে। পাকিস্তানের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল বিদেশি অর্থায়নের অভাব, যা দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয় এবং বাণিজ্যিক ঋণদাতাদের সাহায্য ছাড়া সম্ভব না। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, আইএমএফ সদস্যরা পাকিস্তানকে ঋণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গেও সাক্ষাত করেছেন।
চীন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত পাকিস্তানকে যে ঋণ দেওয়ার কথা বলেছে, সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের বিষয়ে আশ্বাস খুঁজছিল আইএমএফ। সেইসঙ্গে বিদ্যমান ঋণ পুনর্গঠনের অনুরোধের পাশাপাশি আরো দেড় হাজার কোটি ডলার অতিরিক্ত ঋণ দিতে চীনকে অনুরোধ জানিয়েছে পাকিস্তান। যদিও চীন একের পর এক বাণিজ্যিক ঋণ প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।