ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

ইউক্রেনের বাঁধ ভেঙ্গে কারা লাভবান হচ্ছে?

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

০৭ জুন ২০২৩, ০১:২১ পিএম | আপডেট: ০৭ জুন ২০২৩, ০১:২১ পিএম

দক্ষিণ ইউক্রেনে রাশিয়ার দখলকৃত এলাকায় একটি বড় আকারের বাঁধ ভেঙ্গে বিশাল এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এই বাঁধ ভাঙ্গার ঘটনার জন্য পরস্পরকে দায়ী করেছে ইউক্রেন আর রাশিয়া। কিন্তু বাধ ভেঙ্গে দেয়ার ফলে কোন পক্ষ সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে?

যেভাবে দুই পক্ষ একে অপরকে বাঁধ ভাঙ্গার জন্য দায়ী করছে, তাতে গত বছরের অমীমাংসিত নর্ডস্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইন বিস্ফোরণের ঘটনার সাথে মিল পাওয়া যায়। উভয় ঘটনাতে শুরুতেই পশ্চিমাদের সন্দেহ পড়ে রাশিয়ার ওপরে। কিন্তু দুইবারেই রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘এটা আমরা করিনি। আমরা কেন এটা করবো? কারণ এতে আমাদেরই ক্ষতি।’ কাখভকা বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার ঘটনায় রাশিয়া দাবি করতে পারে যে, অন্তত দুইভাবে তাদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

বন্যার পানি ছড়িয়ে পড়ার কারণে ভাটার দিকে খেরসন এবং নিপ্রো নদীর আশেপাশের এলাকা থেকে বেসামরিক লোকজনের সাথে সাথে তাদের সৈন্যদের সরিয়ে নিতে হয়েছে। এটা হয়তো খেরসনের বাসিন্দাদের জন্য সাময়িক স্বস্তিও এনে দিয়েছে যে, যাদের সারাক্ষণ রাশিয়ার গোলাবর্ষণ আর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সঙ্গে দিন কাটাতে হয়। দ্বিতীয়ত, বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে রাশিয়ার দখলে থাকা ক্রিমিয়ায় পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন তৈরি করবে। কারণ ওই উপদ্বীপের বাসিন্দা পরিষ্কার পানির জন্য একটি ছোট খালের ওপর নির্ভরশীল, যেটি ভেঙ্গে যাওয়া বাধের কাছাকাছি রয়েছে।

অবৈধভাবে ২০১৪ সালে ক্রাইমিয়া ভূখণ্ড রাশিয়া নিজেদের সাথে সংযুক্ত করে নেয়ার পর এটিকে তারা সুরক্ষিত একটি এলাকায় পরিণত করেছে, যে এলাকাকে দুই দেশই নিজেদের বলে দাবি করে। কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে কাখভকা বাধ ভেঙ্গে যাওয়ার ঘটনাকে আরেকটি বিস্তৃতভাবে দেখা দরকার। আরও স্পষ্ট করে বললে, গ্রীষ্মকালে ইউক্রেন যে পাল্টা-অভিযান শুরুর কথা জানিয়েছিল, এবং যা শুরু হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে, সেই দিক থেকে দেখা দরকার।

ওই পাল্টা অভিযান সফল করতে হলে গত বছর পূর্ব ডনবাস এলাকাকে ক্রাইমিয়ার সাথে যে ভূখণ্ডের মাধ্যমে রাশিয়া সংযুক্ত করেছিল, সেই এলাকায় তাদের নিয়ন্ত্রণ ভাঙ্গতে হবে। ইউক্রেন যদি জাপোরিশার দক্ষিণে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভাঙ্গতে পারে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকা দুই ভাগে বিভক্ত করে ফেলতে পারে, তাহলে তারা ক্রাইমিয়া বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারবে। সেটা হবে কৌশলগতভাবে বড় একটি বিজয়। কিন্তু গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পুরাদস্তুর হামলা শুরু করার পর রাশিয়া অনেক কিছু শিখেছে। তারা মানচিত্রের দিকে তাকিয়ে ধারণা করার চেষ্টা করেছে যে, ইউক্রেন কোন কোন এলাকায় সম্ভাব্য হামলা চালাতে পারে। বিশেষ করে আজভ সাগরের দিকে যাতে ইউক্রেন এগিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য সত্যিকারের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।

এর মানে এই না যে, ইউক্রেন তাদের সৈন্যদের ঐ শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পশ্চিম দিকে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। কিয়েভে বসে যারা যুদ্ধের পরিকল্পনা করছে, তারা সবসময় তাদের পরিকল্পনা নিয়ে রাশিয়াকে একটি বিভ্রান্তির মধ্যে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু যারাই এটা করুক না কেন, এর ফলে বিকল্পগুলো অনেক সীমিত হয়ে গেছে। ইউক্রেনের দক্ষিণ এলাকায় পৌঁছে নিপ্রো নদী অনেক প্রশস্ত হয়ে গেছে। ইউক্রেনিয় বাহিনীর জন্য রুশ কামান, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার মুখে একটি সাঁজোয়া ব্রিগেডকে এই নদী পার করা এমনিতেই বিপজ্জনক।

এখন সেই নদীর ওপর বাঁধটি ভেঙ্গে যাওয়ায় এবং খেরসনের বিপরীতে পূর্ব তীরের ভাটির বিশাল এলাকা প্লাবিত হওয়ায় ওই এলাকা কার্যত একটি অগম্য এলাকায় পরিণত হয়েছে। এই এলাকায় বাঁধ নিয়ে রাশিয়ার অতীত ইতিহাসও রয়েছে। ১৯৪১ সালে নাৎসি সৈন্যদের অগ্রযাত্রা রোধ করতে সোভিয়েত সৈন্যরা এই নদীর ওপরে একটি বাঁধ উড়িয়ে দিয়েছিল। এর ফলে তৈরি হওয়া বন্যায় হাজার হাজার সোভিয়েত নাগরিক মারা গিয়েছিল।

তবে মূল কথা হলো, যে পক্ষই কাখভকা বাধ ভেঙ্গে দিয়েছে, তারা দক্ষিণ ইউক্রেনের কৌশলগত অবস্থানগুলো বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। উভয় পক্ষই বেশ কিছু ক্ষেত্রে নতুন করে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ইউক্রেন যে পাল্টা অভিযান শুরুর কথা বলে আসছে, এর ফলে সম্ভবত সেক্ষেত্রেও বিলম্ব তৈরি হবে। সূত্র: বিবিসি।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান