ভারতের এক চাল-ভোজী হাতির বাড়ি ফেরার করুণ কাহিনী
১২ জুন ২০২৩, ০৮:১১ পিএম | আপডেট: ১৩ জুন ২০২৩, ১২:০২ এএম
এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ভারতের একটি বন্য হাতিকে দুই দুইবার আটক করা হয়েছে, একাধিকবার তার ওপর ঘুম পাড়ানি ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে এবং খাবারের সন্ধানে সে যাতে মানুষের বসতির কাছে না যায় সে জন্য ২৮০ কিলোমিটার দূরের অরণ্যে তাকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। কিন্তু এরপরও সে ফিরে আসতে চাইছে নিজ আবাসভূমে।
মালয়ালম ভাষায় হাতিটির নাম আরিকোমবান, যার অর্থ "চালের গজদন্ত।" চাল খাওয়ার জন্য স্থানীয় দোকানগুলিতে সে হানা দিতো বলে তার এই নাম দেয়া হয়েছে। তার জন্য একটি স্থায়ী আবাস খুঁজতে ভারতের বন কর্তৃপক্ষ এখন দৌড়ঝাঁপ করছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালা এবং তামিলনাড়ু থেকে আরিকোমবানকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা হয়েছে। ঐ দুটি রাজ্যে আইনি লড়াই এবং প্রাণী অধিকার নিয়ে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতেও পরিণত হয়েছে এই হাতি।
কেরালায় আরিকোমবান হয়ে উঠেছে "অবিচারের মুখে প্রতিরোধের মূর্ত প্রতীক," বলছেন বন্য প্রাণী অধিকার কর্মী শ্রীদেবী এস. কার্থা। "তাকে ঘিরে ঘটনাগুলি প্রমাণ করেছে যে একটি হাতিকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া কতখানি নৃশংস হতে পারে," বিবিসিকে বলছিলেন তিনি, "রাজ্যের মানুষের বিবেকবুদ্ধিকেও জাগিয়ে তুলেছে এই হাতি।"
এবছরের শুরুর দিকে কেরালার ইদুক্কি জেলার চিন্নাকানালের অরণ্যে আরিকোমবানের আদি আবাসস্থলের কাছাকাছি স্থানীয়দের গ্রামবাসীদের একটি দল হাতিটিকে সরিয়ে নেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছিল। তাদের অভিযোগ, মানুষের সাথে হাতিটির ঘন ঘন সংঘর্ষ হচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে বেশ ক’জন মানুষ এরই হাতির কবলে পড়ে প্রাণ হারিয়েছে। কিন্তু স্থানীয় উপজাতিরা এই দাবি প্রত্যাখ্যান করছেন। এরপর কেরালার বন বিভাগ ঘোষণা করেছিল যে আরিকোমবানকে ধরে তারা পোষ মানানোর পরিকল্পনা করছে।
আরিকোমবানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে প্রাণী অধিকার কর্মীরা উচ্চ আদালতে একটি পিটিশন দায়ের করেন। পিপল ফর অ্যানিম্যালস-এর সদস্য মিসেস কার্থা ছিলেন আদালতে আবেদনকারীদের একজন। তিনি বলছেন, হাতিটি যে মানুষ হত্যা করেছে এমন কোন প্রমাণ সরকার দাখিল করতে পারেনি। গত এপ্রিল মাসে আদালতের নিয়োগ করা একটি কমিটির বিশেষজ্ঞরা সিদ্ধান্ত নেন যে হাতিটিকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেয়াই ভাল হবে।
দু'দিন ধরে ১৫০ জন কর্মকর্তা আরিকমবানকে আটক করার লক্ষ্যে চিন্নাকানাল অরণ্য-জুড়ে ব্যাপক অভিযান চালান। এরপর ২৯ এপ্রিল হাতিটিকে ধরে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে পেরিয়ার টাইগার রিজার্ভে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু মাত্র এক মাসের মধ্যে ঐ সংরক্ষিত অরণ্য ছেড়ে আরিকোমবান প্রতিবেশী রাজ্য তামিলনাড়ুতে ঢুকে পড়ে। তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়ার জন্য তামিলনাড়ুর বন কর্মকর্তারা একই ধরনের অভিযান চালান।
হাতিটিকে তামিলনাড়ুর কাম্বুম শহরে দেখা যায় ২৭ মে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিওতে দেখা গেছে, আরিকোমবান ঘনবসতিপূর্ণ শহরের মধ্য দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে, বাড়িঘর এবং যানবাহনের ক্ষতি করছে। এসময় তিন ব্যক্তি আহত হয়। এদের মধ্যে একজন, ৬৫-বছর বয়সী আহত এক ব্যক্তি দু’দিন পর মারা যান। আরিকোমবানকে আটক করার চেষ্টায় কর্তৃপক্ষ সেখানে কারফিউ জারি করে। এরপর আরিকোমবানকে ঘিরে শুরু হয় আইনি লড়াই।
একজন রাজনৈতিক নেতা হাতিটিকে তাদের রাজ্যে ফিরিয়ে আনার জন্য কেরালা হাইকোর্টে আবেদন করেন। কিন্তু তামিলনাড়ুতে আরিকোমবান যেসব ক্ষয়ক্ষতি করেছিল তার জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করে মাদ্রাজ হাইকোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করা হয়। কেরালার বন মন্ত্রী এ. কে. সাসেন্দ্রন বলছেন, আরিকোমবানকে পোষ মানানোর জন্য সরকারের যে পরিকল্পনা ছিল এই সঙ্কট তার পক্ষে যুক্তিকেই প্রমাণ করেছে। হাতিটিকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেয়ার জন্য তিনি প্রাণী অধিকার কর্মীদের দায়ী করেন। কিন্তু কাম্বুম শহরের ঘটনায় দেখা গেছে যে আরিকোমবান মোটেও মানুষের জীবনের জন্য হুমকি নয়, বলছিলেন মিসেস কার্থা, "[সেখানে] তার ওপর আঘাত করা হয় এবং তাকে তাড়া করা হয়। কিন্তু এরপরও সে মানুষের ওপর কোন ধরনের আক্রমণ চালায়নি।"
গত ৫ জুন তামিলনাড়ুর বন কর্মকর্তারা ঘুম পাড়ানি ওষুধ ব্যবহার করে আরিকোমবানকে ধরে ফেলেন। আরিকোমবানের সর্বশেষ আটক করার ঘটনায় যেসব ছবি প্রচারিত হয়েছে তার ফলে বার বার করে তার ওপর ট্রাংকুইলাইজার ব্যবহার করা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তাকে আটক করে একটি খোলা ট্রাকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় আরিকোমবান কতবার আঘাত পেয়েছে, সম্পর্কেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
একজন প্রাণী রক্ষা কর্মী স্টিফেন ড্যানিয়েল বলছেন, অরণ্যে হাতি চলাচলের পথের ওপর মানুষের বসতি গড়তে দেয়ার যে সরকারি নীতি, আরিকোমবান এখন সেই সিদ্ধান্তের মূল্য দিচ্ছে। "প্রাণীটি যে মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, তা অকল্পনীয়। এবং দুই রাজ্যের বন বিভাগের কর্মকর্তাদের এজন্য অনেক জবাবদিহি করার আছে," বলছিলেন তিনি। ওদিকে, কেরালার চিন্নাকানালের আদিবাসী গোষ্ঠীগুলি দাবি করেছে যে হাতিটিকে তার মূল আবাসস্থলে ফিরিয়ে আনা উচিত। হাতিটিকে কেরালায় ফিরিয়ে আনতে তারা আদালতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে।
"যদি হাতিটিকে এমনভাবে কষ্ট দেয়াই হবে, তাহলে কেন তাকে ধরে নিয়ে বাঘের অভয়ারণ্যে সরিয়ে নিতে হবে?" টিভি নিউজ চ্যানেল মালায়ালা মনোরমায় এই প্রশ্ন তোলেন একজন প্রতিবাদকারী। তামিলনাড়ুর বন বিভাগ বলছে, আরিকোমবানকে কাম্বুম থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে কালাক্কাদ মুন্ডনথুরাই টাইগার রিজার্ভের গভীরে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, ঐ রিজার্ভের আশেপাশে বসবাসকারী গ্রামবাসীরও তার স্থানান্তরের প্রতিবাদ করেছে। তাদের আশঙ্কা হাতিটি তাদের বসতি ভাঙচুর করতে পারে। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইইউভুক্ত দেশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের হুমকি কাতারের
দক্ষিণ কোরিয়ার সৌন্দর্যের পেছনে ছুটে বিপদের ফাঁদে পর্যটকরা
ঢাকার বাতাস আজ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’
২৮ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদ
হিরো নয় কারিনার ছেলের চরিত্রে অভিনয় করতে পারি
রাওয়ার নেতৃত্বে আবদুল হক ও ইরশাদ সাঈদ
স্লোভাক প্রধানমন্ত্রীর মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক
কুমিল্লায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৩ কিশোর নিহত
গাজীপুরে কারখানা থেকে দগ্ধ আরও এক লাশ উদ্ধার
সিরিয়ার আকাশে নিষিদ্ধ হলো ইরানের বিমান
বিমানে ‘ঘুমিয়ে’ ছিলেন বাইডেন : সেনাদের লাশ পেতে অপেক্ষায় স্বজনরা
ভারতে পণ আইন নিয়ে বিতর্ক, এক ব্যক্তির আত্মহত্যা ঘিরে আলোড়ন
ভারত সীমান্তের শূন্যরেখায় পড়ে ছিল বাংলাদেশির গুলিবিদ্ধ লাশ
এক্সপ্রেসওয়েতে কভার্ডভ্যান ও প্রাইভেটকার সংঘর্ষে নারী নিহত, আহত ৫
ব্রাজিলে বাড়ির ওপর বিমান বিধ্বস্ত, সব যাত্রী নিহত
চুয়াডাঙ্গার রামদিয়ায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে একজনকে হত্যা, আহত ৫
চীনের নতুন বাঁধ প্রকল্পে তিব্বতিদের প্রতিবাদ, দমন-পীড়ন ও গ্রেফতার
গাজীপুরে চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় যুবকের মৃত্যু
সউদীতে এক সপ্তাহে ২০ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার
শহীদ মিনারে ছাত্র আন্দোলনে নিহত আরাফাতের জানাজা বিকালে