ইউক্রেন যুদ্ধে কতটা ভূমিকা রাখবে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান?
১৯ আগস্ট ২০২৩, ০১:০১ পিএম | আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২৩, ০১:০১ পিএম
আমেরিকায় তৈরি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ইউক্রেনে পাঠানোর জন্য নেদারল্যান্ডস ও ডেনমার্ককে অনুমতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনের পাইলটদের এফ-১৬ চালানোর প্রশিক্ষণ শেষ হলে বিমানগুলো ইউক্রেনের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘এখন ইউক্রেন তাদের নতুন অস্ত্র সম্ভারের পুরো সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবে।’ এর আগে ইউক্রেনে এফ-১৬ দেয়ার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। সে সময় তারা বলেছিল যে ইউক্রেনকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিলে তা পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন রাশিয়ার সথে তাদের যুদ্ধকে আরো ভয়াবহ করে তুলবে। তবে এখন বিমান পাওয়ার অনুমোদন দেয়া হলেও এই এফ-১৬ ব্যবহার করা শুরু করতে কিয়েভের আরো অন্তত মাসখানেক সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডস - দুই দেশকে এফ-১৬ বিমান হস্তান্তরের ‘আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত’ জানানো হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিভাগের একজন মুখপাত্র তার বক্তব্যে জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘ইউক্রেনের পাইলটদের প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণ শেষ হলেই’ যুদ্ধবিমান হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। ধারণা করা হচ্ছে, নেদারল্যান্ডস তাদের বিমান বহর থেকে ২৪টি এফ-১৬ সরিয়ে নেবে এবং সেগুলোর জায়গায় আরো আধুনিক যুদ্ধবিমান দিয়ে বিমান বাহিনী সাজাবে।
ডেনমার্কও তাদের বিমান বহরে থাকা ৩০টি এফ-১৬ বিমানের একটি অংশ সরিয়ে আরো আধুনিক বিমান যোগ করবে বলে বলা হচ্ছে। নেদারল্যান্ডেসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওপকে হোয়েকস্ত্রা যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে মন্তব্য করেছেন যে ‘এর ফলে ইউক্রেন তাদের দেশ ও দেশের মানুষ রক্ষা করতে সক্ষম হবে।’ ‘এখন আমরা আমাদের ইউরোপীয় সহযোগীদের সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করতে পারবো’, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স’এ এমন মন্তব্য পোস্ট করেন তিনি। ডেনমার্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জেকব এলেম্যান-জেনসেন একই ধরণের কথা বলেছেন।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ওলেকসি রেজনিকভ যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তকে ‘দারুণ খবর’ বলে সাধুবাদ জানিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স’এ তিনি লিখেছেন: “আমাদের সেনাবাহিনী প্রমাণ করেছে যে তারা দ্রুতগতিতে শিখতে পারে। আমরা প্রমাণ করবো যে ইউক্রেনের জয়ও অবশ্যম্ভাবী। যুক্তরাষ্ট্র, নেদাল্যান্ডস ও ডেনমার্ককে ধন্যবাদ।”
ইউক্রেনের মিত্র দেশগুলো থেকে তৈরি ১১ জন সদস্যের একটি প্রশিক্ষক দল এই মাসের শেষদিকে ইউক্রেনের পাইলটদের প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করবে। আগামী বছরের মধ্যে তাদের প্রশিক্ষণ শেষ হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আসন্ন শীত ও শরৎ ঋতুর মধ্যে কিয়েভ এফ-১৬ ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হতে পারবে না বলে এ সপ্তাহে মন্তব্য করেছিলেন ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইউরি ইহনাত। ইউক্রেনে ২০২২ সালে পুরোদমে সেনা অভিযান শুরু করা রাশিয়া এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।
‘এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন’ যুদ্ধবিমানকে পৃথিবীর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ফাইটার জেট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৭০ এর দশকে এই বিমানটি যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজারের মত এফ-১৬ তৈরি করা হয়েছে। ভূ-পৃষ্ঠে লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে আঘাত করা ও আকাশে প্রতিপক্ষের বিমান ধ্বংস করায় পারদর্শিতার কারণে পাইলটদের কাছে জনপ্রিয় এটি। একবার জ্বালানি নিয়ে এই বিমান যুতটুকু পথ পাড়ি দিতে পারে, একই ধরণের অন্য যে কোনো বিমানের তুলনায় তা সর্বোচ্চ। অর্থাৎ, যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের বিমানের চেয়ে বেশি সময় অবস্থান করতে পারে এটি।
যে কোনো আবহাওয়া পরিস্থিতিতে, এমনকি রাতেও এই বিমান যুদ্ধক্ষেত্রে কার্যকর। ধ্বংসাত্মক ক্ষমতার কারণে মার্কিন পাইলটরা এটিকে ‘ভাইপার’ নাম দিয়েছেন। আমেরিকার বিমান বাহিনীর কাছে এই মুহুর্তে ৭০০টি কার্যকর এফ-১৬ রয়েছে। ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস সহ অনেক দেশই এটি ব্যবহার করে। যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, এই বিমানকে নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সম্ভব, এমন প্রেসিশন গাইডেড মিসাইল ও বোমা দিয়ে সজ্জিত করা যায়। এই বিমান ঘণ্টায় ১,৫০০ মাইল (২,৪০০ কিলোমিটার/ঘণ্টা) বেগে ছুটতে পারে।
এফ-১৬ বিমান থাকলে ইউক্রেনের বিমানবাহিনী রাশিয়ার বাহিনীর বিরুদ্ধে যে কোনো মৌসুমে যুদ্ধ করতে পারবে। এছাড়া এই বিমানের সাহায্যে রাতেও যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবে তারা। এই বিমানগুলোর মিসাইল ১৫০ কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে, ফলে ইউক্রেন বাহিনী রাশিয়ান এয়ারক্র্যাফটকে আক্রমণেও সক্ষম হবে। যখন রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করেছিল, তখন ইউক্রেনের হাতে ১২০টির মতো যুদ্ধবিমান ছিল বলে ধারণা করা হয়।
তবে এর বেশিরভাগই ছিল সোভিয়েত আমলের পুরনো মিগ-২৯ এবং সু-২৭। এর মধ্যে যুদ্ধে অনেকগুলোই ধ্বংস বা অকেজো হয়ে গেছে। ইউক্রেন মনে করে, রাশিয়ার বিমান বাহিনীর সঙ্গে টেক্কা দিতে হলে তাদের ২০০ জেট বিমান দরকার, অর্থাৎ এখন তাদের যা আছে তার চেয়ে অন্তত পাঁচ-ছয় গুন বেশি। ইউক্রেন বলছে, তারা দেড়শা পাইলটকে চিহ্নিত করে রেখেছে, এফ-১৬ বিমান পাওয়ার সাথে সাথেই যেন তাদের প্রশিক্ষণ শুরু করে দেয়া যায়। কিন্তু এফ-১৬ চালানোর প্রশিক্ষণ বেশ দীর্ঘমেয়াদী, এবং এসব পাইলটকে তখন যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে লম্বা সময়ের জন্য প্রশিক্ষণ নিতে চলে যেতে হবে। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সীমান্ত দিয়ে পাচারকালে ৭টি ভারতীয় গরু জব্দ
১৫ পুলিশ হত্যা মামলা : কারাগারে পাঠানো হলো সাবেক মন্ত্রী লতিফ বিশ্বাসকে
পেকুয়া প্রেসক্লাব পরিদর্শন করেন কক্সবাজার প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দ
সুপ্রিম কোর্টে আরও এক হেল্পলাইন চালু, মিলবে আইনি সেবা
চলতি সপ্তাহে টানা দুদিন বৃষ্টির আভাস দিল আবহাওয়া অফিস
ভারতের ছত্তিশগড়ে সেপটিক ট্যাংক থেকে সাংবাদিকদের লাশ উদ্ধার
বিএনপি নেতা এস এ খালেকের মৃত্যুতে বাসায় ছুটে গেলেন জামায়াত আমির
এনআইডি সেবা নিশ্চিতে কর্মকর্তাদের প্রধান ফটকে অফিস করার নির্দেশ
ছাত্রদল আমাদেরকে প্রতিপক্ষ মনে করে : শিবির সভাপতি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির কর্মসূচি শুরু আজ
জকিগঞ্জের সন্তানরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নেতৃত্ব দিচ্ছে : ব্যারিস্টার সাইফ উদ্দিন খালেদ
এইচএমপিভি ভাইরাসের সংক্রমণ এবার মালয়েশিয়ায়
গণ-অভ্যুত্থানে হত্যা : চিকিৎসক-নার্সসহ বিএসএমএমইউর ১৫ জন বরখাস্ত
ভারতে পালানোর সময় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার
চলতি সপ্তাহেই পদত্যাগ করতে পারেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো
সাভার ও আশুলিয়ায় খাঁটি খেজুরের রস খেতে দূর দূরান্ত থেকে আসছে মানুষ
‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু নিয়ে আজও দূষণের শীর্ষে ঢাকা
ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর হলে কী প্রভাব পড়তে পারে আগামী নির্বাচনে?
রাজধানীতে অটোরিকশায় মোটরসাইকেলের ধাক্কা, প্রাণ গেল দুই যুবকের
নবীনগর - চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ