প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যবসায়ীদের জন্য বিনিয়োগের বড় সুযোগ তৈরি করেছে বাংলাদেশ। তাই এখানে যারা বাংলাদেশী আছেন তাদেরকে আহ্বান জানাবো এখানকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুণ। আপনাদের জন্য সকল সুযোগ আছে।
বুধবার (২৩ আগস্ট) দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড বিজনেস সামিট’ শীর্ষক রোড শোতে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। এবারের রোড শোটি বিএসইসি এবং বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) যৌথভাবে আয়োজন করছে। এ ছাড়া, পার্টনার হিসবে রয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সহযোগিতায় রয়েছে আলিফ গ্রুপ। দক্ষিণ আফ্রিকায় সবচেয়ে বৃহত্তম শহর জোহানেসবার্গের ও আর টাম্বোর রেডিসন হোটেল অ্যান্ড কনভেনশন সেন্টারে স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় রোড শো শুরু হয়। এ আয়োজন চলবে স্থানীয় সময় বিকাল ৩টা পর্যন্ত। দুইটি পর্বে রোড শোটি আয়োজন করা হয়েছে। এতে দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত বাংলাদেশি ও দেশটির বিনিয়োগকারীরা যোগ দেবেন। বিএসইসির চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অধিবেশনটি অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সবচেয়ে উদার পরিবেশ রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যবসায়ীদের স্বাগত জানাতে বংলাদেশ প্রস্তুত রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বন্ধুত্ব ঐতিহাসিক।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট ও ব্রিকসের বর্তমান চেয়ার সিরিল রামাফোসার আমন্ত্রণে ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে বর্তমানে জোহানেসবার্গে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে আজ আফ্রিকার দেশগুলোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের আয়োজিত ‘বাংলাদেশ দূত সম্মেলনে’ও যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। পরে হোটেল হিলটন স্যান্ডটনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তাঁর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কথা রয়েছে। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ব্রিক্সের বর্তমান প্রধান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের দেয়া ‘রাষ্ট্রীয় ভোজসভায়’ যোগ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী ২৪ আগস্ট, ৭০টি দেশের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ব্রিক্স বন্ধু নেতৃবৃন্দ সংলাপ (ব্রিক্স-আফ্রিকা আউটরিচ এবং ব্রিক্স প্লাস ডায়ালগ) ‘ব্রিক্সের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক’ এর সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে ভাষণ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী ব্রিক্স সম্মেলনের ফাঁকে কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। ওইদিন সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী ২৬ আগস্ট ঢাকার উদ্দেশ্যে জোহানেসবার্গ ত্যাগ করবেন এবং দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতির পর ২৭ আগস্ট সকালে দেশে পৌঁছাবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড বিজনেস সামিট’ শীর্ষক রোড শোতে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্য বিভিন্ন ধরণের ব্যবসার সুযোগ রয়েছে। তবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই সময়েও একই ধরণের দেশ হওয়া সত্ত্বেও দুই দেশের বাবসায়িক সম্পর্ক ভালো নয়। সরকার এবং বিজনেস কমিউনিটি কেউই দায় এড়াতে পারেনা।
দিন ব্যাপি রোড শোতে সরকার, নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের বিশিষ্টজন, প্রতিনিধি এবং ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যবসায়ী সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে এ রোড শো অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়াসহ বিএসইসি’র প্রতিনিধিরা।
এবারের রোড শো'তে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারী এবং স্টেকহোল্ডাররা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে আগত অতিথিরা বিভিন্ন সেক্টর নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। সেখানে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সরকারের বিনিয়োগবান্ধব নীতি, শেয়ারবাজার ও সার্বিক অর্থনীতির পরিস্থিতি এবং এফডিআই’র বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা অতিথিদের সামনে তুলে ধরা হয়।
এছাড়া, দেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তুলতে বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হবে। বিশেষ করে প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কীভাবে শেয়ার বাজারে সরাসরি বিনিয়োগ করবেন তার কৌশল ও সার্বিক নিরাপত্তার বিষয় তুলে ধরা হয়। দেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের উপযুক্ত স্থান হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশ ও শহরগুলোতে ধারাবাহিক রোড শো করার পরিকল্পনা করেছে বিএসইসি। এর আগে প্রথম দফায় দুবাইতে, দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রে, তৃতীয় দফায় সুইজারল্যান্ড, চতুর্থ দফায় যুক্তরাজ্য, পঞ্চম দফায় কাতার ও ষষ্ঠ দফায় জাপানে সফলতার সঙ্গে রোড শো সম্পন্ন করেছে বিএসইসি। এছাড়া ফ্রান্স, সিঙ্গাপুর, জার্মানি, কানাডা, রাশিয়া, ইতালি, হংকং, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ধারাবাহিকভাবে রোড শো আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে।