সুবিধা আদায়ে ইইউকে হুমকি দিচ্ছে তিউনিশিয়া?

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:০০ পিএম | আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:০০ পিএম

 

 

আফ্রিকা থেকে ইউরোপে অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে তিউনিশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। এই চুক্তি থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছে তিউনিশিয়া।

 

গত সপ্তাহে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিউনিশিয়ার স্ফাক্স উপকূল থেকে প্রায় সাত হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী ইটালির লাম্পেদুসায় পৌঁছান। স্ফাক্স থেকে লাম্পেদুসার দূরত্ব ১৮৮ কিলোমিটার হওয়ায় আফ্রিকা থেকে ইউরোপে যেতে চাওয়া অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কাছে এটি একটি জনপ্রিয় রুট। একসঙ্গে এত অভিবাসনপ্রত্যাশী লাম্পেদুসায় পৌঁছার পর সেখানে সফরে যান ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতা উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন। তাদের সফর শেষ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে স্ফাক্স উপকূল থেকে প্রায় ৫০০ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে প্রত্যন্ত এলাকা ও অন্যান্য শহরে সরিয়ে নেয় তিউনিশিয়ার কর্তৃপক্ষ।

 

এ পদক্ষেপকে ইইউকে একটি সংকেত দেয়ার চেষ্টা বলে দেখা যেতে পারে, বলে মনে করছেন জার্মানির ফ্রিডরিশ এবার্ট ফাউন্ডেশনের টিউনিশ অফিসের প্রধান ইওহানেস কাডুরা। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘স্পষ্টতই তারা (তিউনিশিয়ার কর্তৃপক্ষ) দেখাতে চান যে, মানবপাচারকারীদের নিয়ন্ত্রণ করা ও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সাগর পাড়ি দেয়া ঠেকানো তাদের পক্ষে সম্ভব।’

 

তিউনিশিয়া বিপরীতধর্মী সংকেতও পাঠাতে পারে। কাডুরা বলেন, ইইউর সঙ্গে সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে তিউনিশিয়ার সরকার সন্তুষ্ট নয় বলেও অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন। তাদের ধারণা, ইউরোপীয়দের আরও চাপ দিতে তিউনিশিয়ার কর্তৃপক্ষ আরও কিছু অভিবাসনপ্রত্যাশীকে ইউরোপের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার অনুমতি দিতে পারে। অর্থাৎ তিউনিশিয়া দেখাতে চাইছে সহযোগিতা যেমন সম্ভব, তেমনি বিরোধিতাও। ‘এভাবে তিউনিশিয়ার সরকার দেখাতে চাইছে যে, তারা বিভিন্ন পথ খোলা রাখতে চায়,’ বলেন কাডুরা।

 

গত জুলাই মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন রাজনীতিবিদ তিউনিশিয়া সফর করেন। সেই সময় দুই পক্ষ অবৈধ অভিবাসন বিষয়ে ভবিষ্যতে একটি চুক্তি সই করতে সম্মত হয়। এর আওতায় চলতি বছর টিউিনিশিয়াকে ইইউর প্রায় ১,১৭৭ কোটি টাকা দেয়ার কথা। সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, মানবপাচার রোধ এবং তল্লাশি ও উদ্ধার কর্মকাণ্ডে এই অর্থ খরচ করার কথা। এছাড়া ভবিষ্যতে তিউনিশিয়াকে আরও অর্থনৈতিকসহ অন্যান্য সহযোগিতা দেয়া হবে বলে দুই পক্ষ একমত হয়েছেন। তবে খসড়া এই চুক্তি কার্যকর করতে এর অনুমোদন পেতে হবে। কিন্তু তিউনিশিয়ায় কাইস সাঈদের নেতৃত্বাধীন স্বৈরাচারী প্রকৃতির সরকার ক্ষমতায় থাকায় তাদের সঙ্গে কোনো চুক্তি করার বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে।

 

ইটালির কর্মকর্তারা বলছেন, এই বছর এখন পর্যন্ত এক লাখ ২৭ হাজারের বেশি অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশী ইটালি পৌঁছেছেন। গতবছর একই সময়ে সংখ্যাটি ছিল মাত্র সাড়ে ৬৫ হাজার। এই বছর শেষে মোট সংখ্যা ২০১৬ সালের চেয়ে বেশি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ২০১৬ সালে এক লাখ ৮১ হাজার অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশী ইটালি পৌঁছেছিলেন, যা এখন পর্যন্ত একবছরে সর্বোচ্চ।

 

জার্মানির বেয়ার্টেল্সমান ফাউন্ডেশনের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিয়ান হানেল্ট ডয়চে ভেলেকে বলেন, ইটালির মেলোনি আর তিউনিশিয়ার সাঈদের ভাগ্য একে অন্যের সঙ্গে জড়িত। সাঈদ আশা করছেন, মেলোনি ভোটারদের অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার অঙ্গীকার করে ক্ষমতায় এসেছেন, তাই ইটালি অনেক বেশি শর্ত ছাড়াই তিউনিশিয়াকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাবে। ‘তিনি (সাঈদ) আশা করছেন ইইউ তিউনিশিয়ার নিরাপত্তা কাঠামো ও কোস্টগার্ডকে আরও উন্নত করে দিবে,’ বলেন হানেল্ট।

 

তিনি বলেন, সাঈদ আরও আশা করছেন যে, স্বৈরাচারী আচরণের কারণে তিনি যে আন্তর্জাতিক পরিসরে অনেকটা একা হয়ে পড়েছেন, সেই অবস্থা থেকেও তাকে বের করতে সহায়তা করবেন মেলোনি ও ইইউ নেতারা। কিন্তু আর্থিক সহায়তার সঙ্গে রাজনৈতিক, মানবাধিকার ও অর্থনৈতিক সংস্কারের বিষয়গুলো জড়িত হওয়ায় মেলোনির পক্ষে খুব বেশি কিছু করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন হানেল্ট। সূত্র: ডয়চে ভেলে।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১৩ কিলোমিটার যানজট

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১৩ কিলোমিটার যানজট

মোবাইল ইন্টারনেটে সুখবর ‘শর্ত শিথিল’, থাকছে ১ ঘণ্টার প্যাকেজও

মোবাইল ইন্টারনেটে সুখবর ‘শর্ত শিথিল’, থাকছে ১ ঘণ্টার প্যাকেজও

গভীর রাতে গরিব অসহায় শীতার্ত  মাঝে ইউএনও'র কম্বল বিতরন

গভীর রাতে গরিব অসহায় শীতার্ত মাঝে ইউএনও'র কম্বল বিতরন

বরিশালে ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে

বরিশালে ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে

সেবা বঞ্চিত হলে অভিযোগ করা যাবে ইসির বিরুদ্ধে

সেবা বঞ্চিত হলে অভিযোগ করা যাবে ইসির বিরুদ্ধে

এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরও ৩ হাজার শিক্ষক

এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরও ৩ হাজার শিক্ষক

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নবনিযুক্ত সচিব ছাগলনাইয়ার সন্তান সামছু উদ্দিন

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নবনিযুক্ত সচিব ছাগলনাইয়ার সন্তান সামছু উদ্দিন

বাংলাদেশে শনাক্ত হলো 'রিওভাইরাস’, রোগটি সম্পর্কে যা জানা যায়

বাংলাদেশে শনাক্ত হলো 'রিওভাইরাস’, রোগটি সম্পর্কে যা জানা যায়

আন্দোলনের মুখে পাঠ্যবই থেকে বাদ পড়লো ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি

আন্দোলনের মুখে পাঠ্যবই থেকে বাদ পড়লো ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি

মাসের শেষে আবারো আসছে শৈত্যপ্রবাহ

মাসের শেষে আবারো আসছে শৈত্যপ্রবাহ

বর্ষসেরা ফটোগ্রাফার হিসাবে পুরস্কার পেলেন, আলোকচিত্রী ও সাংবাদিক মুগনিউর রহমান মনি

বর্ষসেরা ফটোগ্রাফার হিসাবে পুরস্কার পেলেন, আলোকচিত্রী ও সাংবাদিক মুগনিউর রহমান মনি

রাজশাহীর সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ

রাজশাহীর সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ

বেড়া কৈটোলা নির্মাণ বিভাগের অফিসিয়াল ও উন্নয়ন কাজে স্থবিরতা

বেড়া কৈটোলা নির্মাণ বিভাগের অফিসিয়াল ও উন্নয়ন কাজে স্থবিরতা

গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বাইডেন-নেতানিয়াহুর ফোনালাপ

গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বাইডেন-নেতানিয়াহুর ফোনালাপ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা

না ফেরার দেশে নির্মাতা রায়হান রাফির বাবা

না ফেরার দেশে নির্মাতা রায়হান রাফির বাবা

এলিফ্যান্ট রোডে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা, গ্রেপ্তার ২

এলিফ্যান্ট রোডে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা, গ্রেপ্তার ২

ছাগলনাইয়ায় খালে ভাসছিল নারীর অর্ধগলিত লাশ

ছাগলনাইয়ায় খালে ভাসছিল নারীর অর্ধগলিত লাশ

ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতায় ৫ দিনে গাজায় নিহত ৭০ শিশু

ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতায় ৫ দিনে গাজায় নিহত ৭০ শিশু

ঘরে বসে মাত্র ১০ দিনেই মিলবে থাইল্যান্ডের ভিসা

ঘরে বসে মাত্র ১০ দিনেই মিলবে থাইল্যান্ডের ভিসা