মমতার সফর থেকে কী পেল পশ্চিমবঙ্গের?
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৫৩ পিএম | আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
ভারতের পশ্চিমবঙ্গকে বিনিয়োগবান্ধব রাজ্য হিসেবে তুলে ধরে এখানে লগ্নির আহ্বান জানাতে মুখ্যমন্ত্রী বিদেশ সফরে গিয়েছিলেন। সফরের প্রথম পর্বে তিনি যান ইউরোপের স্পেনে। বৈঠক করেন রাজধানী মাদ্রিদ ও বার্সেলোনায়। দ্বিতীয় পর্বে তিনি প্রতিনিধিদলকে নিয়ে গিয়েছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাণিজ্য নগরী দুবাইয়ে।
মাদ্রিদের অভিজাত ওয়েস্টইন হোটেলে বেশ বড় আকারে আয়োজিত হয় বঙ্গ শিল্প সম্মেলন। স্পেনের একাধিক বণিকসভার প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের শিল্পপতিদের সঙ্গে স্পেনের বাণিজ্য জগতের সেতু তৈরি করে দেয় মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর। ভারতের বিনিয়োগ করে স্পেনের আড়াইশোর মতো সংস্থা। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত মাত্র তিনটি সংস্থা। এই পরিস্থিতি বদলাতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "পশ্চিমবঙ্গ বিনিয়োগের সেরা জায়গা। আমাদের নীতি শিল্পবান্ধব। সহজে শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি মেলে। জমির সমস্যা নেই। বনধ, অবরোধ নেই। শ্রমদিবস নষ্ট হয় না।"
এই সম্মেলনেই ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নতুন কারখানা গড়ার কথা প্রকাশ্যে আনেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের কারখানায় আড়াই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। সৌরভ বিদেশি শিল্পপতিদের পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। এই সফরে ফুটবল নিয়েও কথাবার্তা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। লা লিগা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। কলকাতায় ফুটবল একাডেমি গড়তে আগ্রহ দেখিয়েছে তারা। সেজন্য দরকার একটি স্টেডিয়াম। গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামকে শুধু একাডেমির কাজে ব্যবহারের ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করছে রাজ্য সরকার।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ ক্লাবের স্টেডিয়াম সান্তিয়াগো বার্নেবু ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। কীভাবে আটতলা স্টেডিয়াম অত্যাধুনিক পরিকাঠামোয় সেজে উঠেছে, তা পর্যবেক্ষণ করেন। শিক্ষাক্ষেত্রে বোঝাপড়া হয়েছে স্পেন ও বাংলার দুই প্রতিষ্ঠানের। স্পেনের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে 'মউ' স্বাক্ষর করেছে কলকাতার সিস্টার নিবেদিতা বিশ্ববিদ্যালয়।
মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার সফর সেরে মুখমন্ত্রী যান মেরুদেশে। দুবাইয়ের শিল্প সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী একাধিক বৈঠক করেছেন। এই শহরের 'দি রিতজ কার্টন' হোটেলে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে আমিরশাহির বৈদেশিক বাণিজ্যমন্ত্রী ড. থানি বিন আহমেদ আল জেইদির সঙ্গে। আগামী নভেম্বরে বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে আমিরশাহির সহযোগী দেশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কলকাতার সেই সম্মেলনে জেইদির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল যোগ দিতে পারেন।
সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গেও কথা বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পৃথিবী বিখ্যাত 'লুলু' শিল্পগোষ্ঠীর ম্যানেজিং ডিরেক্টর আশরাফ আলির সঙ্গে তার কথা হয়। সামাজিক মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতি অনুযায়ী নিউটাউনে শপিং মল খুলতে পারে 'লুলু'। এই গোষ্ঠীর বিশ্বজোড়া বিভিন্ন আউটলেটে পশ্চিমবঙ্গে তৈরি বিশ্ববাংলার সামগ্রী রাখার ব্যাপারে কথা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন, মাছ ও মাংস প্রক্রিয়াকরণ, দুধ, পোলট্রি-সহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে 'লুলু' গোষ্ঠী।
মুখ্যমন্ত্রীর সফর ঘিরে স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছে শাসক শিবিরে। বিরোধীরা বলছে, অতীতে মুখ্যমন্ত্রী সিঙ্গাপুর, ইংল্যান্ড, ইতালি, জার্মানি-সহ বিভিন্ন দেশ সফরে গিয়েছেন। তখনও বিনিয়োগের অনেক আশ্বাস শোনা গিয়েছিল। কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে? একই প্রশ্ন উঠেছে বিশ্ববঙ্গ সম্মেলনে স্বাক্ষরিত একগুচ্ছ 'মউ' ঘিরে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, "সর্বাধিক সংখ্যক মউ স্বাক্ষর করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার গিনেস বুকে নাম তুলেছে, কিন্তু তার বাস্তবায়ন হয়নি। বিষয়গুলি থিতিয়ে যাওয়ার পর দেখা যাবে, কতগুলি 'মউ' আবর্জনা স্তূপে চলে গিয়েছে, আর কতগুলি অগ্রসর হয়েছে।"
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী রাজ্য সরকারের রিপোর্ট উদ্ধৃত করে বলেছেন, "বাংলায় শিল্প কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল প্রায় ৬১ হাজার সেটা এখন কমে ৪০ হাজারেরও কম। কমেছে বড় শিল্পের সংখ্যাও। শিল্প সম্মেলনে এতো বিনিয়োগ নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে।" শিল্পে খরা, অর্থনীতির মন্দা, কর্মসংস্থানের অভাব শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয় গোটা ভারতেরই সমস্যা। তার জেরে এ রাজের পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যাও বেড়েছে। অন্য রাজ্যে বেশি পারিশ্রমিকের টানে তারা চলে যাচ্ছেন। এই পরিস্থিতির বদল ঘটাতে পারবে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগ?
প্রাপ্তির হিসাব-নিকাশ এখনই করতে চাইছেন না মমতা। যাত্রার আগেই তিনি বলেন, "জ্বালার আগে প্রদীপে তেলটা তো ভরতে হবে, সলতেটা দিতে হবে। সেই জন্যই যাচ্ছি।" আইআইএম-এর অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ অনুপ সিনহা বলেন, "চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এখনই ফল মিলবে এটা আশা করা যায় না। উদ্যোগ জরুরি।"
গত এক দশকে রাজ্যের শিল্পের ছবিটা বদলায়নি। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এগোলেও বড় শিল্প তেমন গড়ে ওঠেনি, বন্ধ কারখানার দরজা খোলেনি। তা হলে উদ্যোগের ফল কি মিলছে না? বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ী বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীর অতীতের সফর থেকে তেমন ফল মেলেনি। আপনি বিদেশে গিয়ে আসুন-আসুন বললেই আসবে না। যা করলে আমাদের রাজ্যে ব্যবসায়ীরা নিজেরাই আসতে চাইবেন, আমাদের সেটাই করতে হবে। তাই এই সফর থেকে আমি খুব বেশি প্রত্যাশা করি না।" সূত্র: ডয়চে ভেলে।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
মিজানুর রহমান আজহারীর ব্যাখ্যা
বিতর্কিত চিন্ময় কাণ্ড: আত্মসমর্পণের পর জামিন পেলেন ৬৩ আইনজীবী
শরীয়তপুরে ১০ বছরেও নির্মাণ হয়নি আদালত ভবন
শুভেন্দুর হুঙ্কার : ‘বাংলাদেশকে জবাব দিতে পাঁচ-সাতটি ড্রোনই যথেষ্ট’
ষড়যন্ত্র ও হয়রানির বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের আবেদন বঞ্চিত বিধবার
মার্কিন মুদ্রার বিপরীতে ভারতীয় রুপির সর্বনিম্ন রেকর্ড
দোয়ারাবাজারে অভিযুক্ত বাঁধে বালু অপসারণ!
তালেবান শাসনকে বৈধতা না দেওয়ার আহ্বান নোবেলজয়ী মালালার
ফের সচিবালয়ের সামনে অবস্থান অব্যাহতি পাওয়া এসআইদের
ঢাকার বাইরে প্রথম নরসিংদীতে রয়েল এনফিল্ড লঞ্চ
ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমেই দেশ ও জাতির কল্যাণ সাধিত করা সম্ভব
অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে না : হাইকোর্ট
বিদ্যুৎ প্লান্টের পাঁচ লাখ টাকার লোহা তামা স্টিল সামগ্রী চুরির দায়ে ৫০ জনের নামে মামলা
নেত্রকোনা গত ১ বছরে ২৩২টি অস্বাভাবিক মৃত্যু
মেহেরপুর শহরে অবৈধ গাড়ির দৌরাত্ম ফুটপথ দখল, সরু সড়ক, যানজট লেগেই থাকে
অ্যাপলের ডাইভার্সিটি নীতি , বৈচিত্র্য রক্ষার লড়াইয়ে বোর্ডের বার্তা
ঢাবি,ভিকি,এনএসইউ ওয়েটিং লিস্টে থাকে,বান্নাহ খাওয়া মাল খায় না'
দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা না করলে আন্দোলনে নামার ঘোষণা কর্নেল অলির
আশুলিয়া থানা জমিয়তের কমিটি গঠন
বাংলাদেশের সীমান্তে ১৬০ জায়গায় কাটাতারের বেড়া দিয়েছে ভারত : রিজভী