ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১

গোয়েন্দা হতে চেয়ে সফল, দাবি অর্থশাস্ত্রে নোবেলজয়ীর

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

১১ অক্টোবর ২০২৩, ১০:২১ এএম | আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৩, ১০:২১ এএম

অপেক্ষা করতে হল ৫৪ বছর। ১৯৬৯ সালে চালু হয় অর্থশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার। ৫৫ তম বর্ষে প্রথম একক প্রাপক হিসেবে ঘোষিত হল এক নারীর নাম। এক অর্থে, প্রথম একক মহিলা প্রাপক হিসেবে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির অর্থনৈতিক ইতিহাস ও শ্রম অর্থনীতির অধ্যাপক ক্লডিয়া গোল্ডিনের (৭৭) নোবেলপ্রাপ্তি কাব্যিক। কারণ, তার আজীবনের গবেষণার বিষয় হল, শ্রমের বাজারে মেয়েদের বঞ্চনা। যুক্তরাষ্ট্রের দুই শতাব্দীব্যাপী পরিসংখ্যান গবেষণা করে তিনিই জানিয়েছিলেন, ঠিক কোন কোন কারণে কর্মক্ষেত্রে মেয়েরা পিছিয়ে পড়েন। ‘কাজের বাজারে মেয়েদের পরিস্থিতি বোঝার ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ অবদানের জন্য ক্লডিয়া গোল্ডিনকে পুরস্কার দেয়া হল’, জানিয়েছে নোবেল কমিটি।

 

তার গবেষণা আমেরিকার শ্রমের বাজার নিয়ে। কিন্তু, সেই গবেষণার মূল প্রশ্নটির অনুরণন শোনা যাবে উপমহাদেশের যে কোনও গ্রামে বা শহরে কান পাতলেই। চা শ্রমিক, বিড়ি শ্রমিক, মাটি তোলার কাজ থেকে শুরু করে ধান কাটা— প্রায় প্রতিটি কাজেই পুরুষের চেয়ে নারী শ্রমিকের মজুরি কম। অন্য দিকে, বলিউডেও খোঁজ মিলবে, রণবীর কপূর বা রণবীর সিংহের চেয়ে আলিয়া ভট্ট বা দীপিকা পাড়ুকোন কাজ করতে বাধ্য হন কম পারিশ্রমিকেই। আবার, মাত্র দেড় দশক আগেও উইম্বলডনের মতো ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পুরুষ বিজয়ীর চেয়ে মহিলা বিজয়ীর আর্থিক পুরস্কারের পরিমাণ কম ছিল। এ বৈষম্যের কারণ কী, তার হদিস মিলতে পারে ক্লডিয়া গোল্ডিনের কাজে।

 

ক্লডিয়া জানিয়েছেন, তিনি চিরকাল গোয়েন্দা হতে চেয়েছিলেন, এত দিনে সফল হলেন। তার গোয়েন্দাগিরি পরিসংখ্যানের দুনিয়ায়। যখন গবেষণা আরম্ভ করেন, তার পথে প্রথম বাধা ছিল পরিসংখ্যান। মেয়েরা শ্রমের বাজারে কতখানি যোগ দিতেন, সেই তথ্য রাখাই হত না বহু ক্ষেত্রে। বিভিন্ন কৌশলে পরিসংখ্যান খুঁজে বার করতে হয়েছে সেই তথ্য। বাধা ছিল তাত্ত্বিক ক্ষেত্রেও। তার আগে অর্থশাস্ত্রীদের মধ্যে প্রচলিত বিশ্বাস ছিল, আর্থিক উন্নয়ন ঘটলেই কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের যোগদানের হার বাড়ে। তথ্যের অস্ত্রে সেই তত্ত্বকে ভ্রান্ত প্রমাণ করে ক্লডিয়া দেখিয়েছেন, শ্রমের বাজারের চাহিদা-জোগানের সমীকরণ ছাড়াও কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের উপস্থিতি নির্ভর করে আরও অনেক কিছুর উপরে— কাজের ধরন, প্রযুক্তির পরিবর্তন থেকে পরিবারের প্রত্যাশা, গর্ভনিরোধক বড়ির মতো বিষয়, অর্থশাস্ত্রের দুনিয়ায় যার অধিকাংশই বিবেচ্য বলে গণ্য হত না। ‘পথপ্রদর্শক গবেষণা’-র এক আশ্চর্য উদাহরণ তার কাজ।

 

তার শুরুর দিকের কাজে ক্লডিয়া দেখিয়েছেন, কাজের বাজারে মেয়েদের ভবিষ্যৎ বিষয়ে আগের প্রজন্মের ধারণা কী, তার উপরে বহুলাংশে নির্ভর করে পরের প্রজন্মের মেয়েদের চাকরির সাফল্য। বিশ শতকের শুরুতে আমেরিকায় সন্তানের জন্মের পরেই মেয়েরা সাধারণত সরে আসতেন কর্মক্ষেত্র থেকে। সামাজিক ভাবেও সেটাই প্রত্যাশিত ছিল। সেই মায়েরা (এবং পরিবারের পুরুষ সদস্যরা) যখন কন্যাসন্তানের শিক্ষা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেন, শিক্ষায় বিনিয়োগ করা হত তাদের অভিজ্ঞতালব্ধ ধারণা থেকে। অর্থাৎ, মেয়েরা সন্তানের জন্ম দেয়ার পরে চাকরি ছেড়ে দেবে ভেবে। ফলে, তুলনায় কম শিক্ষা নিয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেছেন পরের প্রজন্মের মেয়েরা। তার ফল মিলেছে উন্নতির অভাবে।

 

গর্ভনিরোধক বড়ি সহজলভ্য হওয়ায় সন্তানধারণের সময়ের উপরে মেয়েদের নিয়ন্ত্রণ এল। ফলে তারা দীর্ঘমেয়াদি কেরিয়ারের কথা মাথায় রেখে লেখাপড়া করলেন। তার ফলও মিলল। উন্নত দুনিয়ায় এখন গড় শিক্ষাগত যোগ্যতায় মেয়েরা এগিয়ে, কর্মক্ষেত্রে উপস্থিতিও কার্যত সমান-সমান। কাজে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, পরিষেবা ক্ষেত্রের গুরুত্ব বৃদ্ধি ইত্যাদির ফলে ছেলে-মেয়ের শারীরিক ফারাকও চাকরির বাজারে কম তাৎপর্যপূর্ণ হয়েছে। কিন্তু একই কাজে বেতনের ফারাক আছে এখনও, পদোন্নতির ক্ষেত্রেও মেয়েরা পিছিয়ে। কেন, সেই কারণ নির্দেশ করেছেন ক্লডিয়া। জানিয়েছেন, কেরিয়ারের মাঝপথে সন্তানধারণের জন্য বেশ কিছু দিন কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হন মেয়েরা; কাজে ফিরে এসেও পরিবার আর চাকরির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখেই চলতে হয়। তার প্রভাব পড়ে তাঁদের উন্নতির সম্ভাবনায়। অদৃশ্য ‘গ্লাস সিলিং’-এ আটকে যায় তাদের দৌড়।

 

কাচের দেয়াল ভাঙার উদাহরণ অবশ্য ক্লডিয়ার জীবন জুড়েই। প্রবল পুরুষ-অধ্যুষিত অর্থশাস্ত্রের দুনিয়ায় তিনি অনেক কিছুতেই প্রথম। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির অর্থশাস্ত্র বিভাগে প্রথম স্থায়ী মহিলা অধ্যাপক; তিনটি আইভি লিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে (প্রিন্সটন, পেনসিলভেনিয়া এবং হার্ভার্ড) অর্থশাস্ত্রের স্থায়ী অধ্যাপক হওয়ার প্রথম কৃতিত্বও তার। এ বার প্রথম মহিলা হিসেবে অর্থশাস্ত্রে একক নোবেল জয়ও।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়

ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়

কোহলি রিভিউ না নেওয়ার যে কারণ জানালেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার

কোহলি রিভিউ না নেওয়ার যে কারণ জানালেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার

মাঠের বাইরে নতুন পরিচয়ে মেসি

মাঠের বাইরে নতুন পরিচয়ে মেসি

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন